নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বন্ধু তোমার লাল টুক টুক স্বপ্ন বেচো না

জন্মের প্রয়োজনে ছোট ছিলাম এখন মৃত্যুর প্রয়োজনে বড় হচ্ছি

চতুরঙ্গ

করর্পরেট চাকর... সাধারন ভাবনা

চতুরঙ্গ › বিস্তারিত পোস্টঃ

মৃত্যু, হত্যা কিংবা আত্মহত্যা

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২১ দুপুর ২:৫৯

দুদিন হল গার্মেন্টেস এর কাজ থেকে ছুটি নিয়েছে খবিরুন। অনেকটা হাতে পায়ে ধরে ছুটি নেওয়া। তাও বিনা বেতনে। এ মাসের বেতনটাও দিবে কিনা সন্দেহ। হাতে কোন টাকাই নেই। স্বামী লাবলুকে এত করে বলেছিল যে অন্তত এই সপ্তাহে দূরের কোন কাজ না নেই। কিন্তু লাবলু কথাই শুনলোনা। ট্রাক নিয়ে চলে গেছে মংলায় ডিউটি দিতে। আসতে আরো ৩ দিন লাগবে। লাবলুকে দোষ দিবে সেটাও পারেনা। বাচ্চা হবে, অনেক খরচ সামনে। এই দুর্মূল্যের বাজারে পরিশ্রম ছাড়া টিকে থাকাই দায়। লাবলু দিন রাত ট্রাক চালাচ্ছে একটানা গত বেশ কিছুদিন ধরেই। যাবার আগে খবিরুন কে বলেছিল, এই বার আইসা আগামী এক মাস আর কোন কাম লমুনা, বাবু রে লইয়া বইয়া থাকুম আর তোমার দেখশুন করুম। মালিক রে কইছি, আমারে একমাসের বেতন না দিলেও হইব, কিন্তু ছুটি দেওনই লাগব।"

বেতন না পাইলে আমরা চলুম কেমনে? কত খরচ হইব সামনে হিসাব আছে? খালি বাবুরে লইয়া পইড়া থাকলে তো পেট ভরব না। হেসে বলল খবিরুন।

তোমার এত ভাবনের দরকার নাই। টেহার ব্যবস্থা করতেছি। এইবার গিয়া আসলে বেতনের বাইরেও আরো ৯ হাজার টেহা পামু। জমছে মালিকের কাছে। মালিক কইছে তুই ঘুইরা আয়া টাহা লইয়া যাইছ। মালিক টা ভালো। আমারে খুব পছন্দ করে। তুমি ভাইবো না। বাবু আইলে দেখবা আমগো কফাল খুইল্লা যাইব। আমি সব লক্ষন দেখতাছি। ভাত খেতে খেতে কথাগুলো বলছিল লাবলু। ভাত খাওয়া শেষ করেই লাবলু চলে গেল ডিউটিতে। আজ ৪ দিন হলো, লাবলুর কোন খোঁজ নেই। কি হল লোকটার। ভাবতে ভাবতেই অজানা আশংকায় বুকে কেমন যেন ধাক্কা খেল।

ডাক্তার বলেছিল আগামী মাসের প্রথম দিকে বাচ্চা ডেলিভারি হতে পারে। আজকে মাসের ২৩ তারিখ। কিন্তু শরীর টা গত দুদনি ধরেই খারাপ যাচ্ছে। কেন জানি মনে হচ্ছে আগামী মাস পর্যন্ত যাবে কিনা সন্দেহ। এদিকে লাবলুর কোন খবর নাই। একা বাসায় যদি হঠাৎ করে ব্যাথা উঠে কি করবে ভেবেই মনে মনে অস্থির হয়ে যাচ্ছিল। তিন কূলে কেই নেই। এখানে বাসা নিয়েছে তাও মাস হয়নি। বাবুর যেনো কষ্ট না হয় সেজন্য লাবলু জোর করে এই বাসা নিল। এখন সব ভালোয় ভালোয় শেষ হলেই ভালো। "লাবলু, তাড়াতাড়ি ফিরা আসো, আল্লাহ, আমারে তুমি বিপদে ফালাইওনা" মনে মনে কথাগুলো বলে চোখ বন্ধ করল। একটু ঘুমাতে পারলে ভালো লাগবে।

বাইরে বেশ বৃষ্টি হচ্ছে। খবিরুন এপাশ ওপাশ করছে, কিন্তু ঘুম আর আসছে না। অস্থিরতা একটু একটু করে বাড়ছেই। শরীরটা যেনো অসাড় হয়ে আসছে। হঠাৎ খুব বমি পেল খবিরুনের। বিছানায় শুয়েই বমি করে ফেলল। উঠে বসে পানি খেলো। হঠাৎই কেমন জানি শ্বাস কষ্ট হচ্ছে, গা গুলাচ্ছে। খবিরুন ঘামতে লাগলো। আবার শুয়ে চেষ্টা করল স্বাভাবিক হতে। মিনিট খানেকও হয়নি, তীব্র ব্যথা শুরু হলো। খবিরুন বুঝতে পারল তার প্রসব বেদনা শুরু হয়ে গেছে।

ঠিক যে ভয়টা পাচ্ছিল তাই হলো। মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। কোন মতে হাতড়ে হাতড়ে আগের প্রেসক্রিপশন টা নিল। একটা কৌটার মধ্যে সামান্য কিছু টাকা আছে, সেগুলো নিয়ে শাড়ির আঁচলে বাঁধল। বাইরে তুমুল বৃষ্টি আর বজ্রপাত হচ্ছে। আগষ্ট মাস, বর্ষা কালের বৃষ্টি, থামার কোন লক্ষন নেই।

খবিরুনের আর ভাবার কিছু নেই, একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে দরজায় তালা দিয়ে রাস্তায় বেরেয়ে পড়ল। সন্ধ্যা নামে নামে করছে। বৃষ্টির কারনে রাস্তায় এক হাটু পানি। প্রচন্ড ব্যাথায় দম বন্ধ হয়ে আসছে খবিরুনের। তবুও পানি ঠেলে আস্তে আস্তে বড় রাস্তার দিকে এগুতে লাগল। কোথাও রিক্সারও দেখা নেই। বেশ খানিকটা এগুনের পর একটা রিক্সা পেল। রিক্সা ওয়ালা চাচা বেশ আন্তরিক মানুষ। খবিরুনের অবস্থা দেখে নিজেই ধরে ধরে রিক্সায় ওঠালো। খুব সাবধানে থানা স্বাস্থ্য কম্প্লেক্সে নিয়ে গেলো।

খবিরুনের মনে সাহস ফিরে এসেছে। হাসপাতালে চলে এসেছে। আর কোন ভয় নাই। খবিরুন গুটি গুটি পায়ে হাসপাতালের করিডোরে চলে আসল। সন্ধ্যা হয়ে গেছে। চারদিকে অন্ধকার, কারেন্টও নেই। বৃষ্টি পাল্লা দিয়ে আরো বাড়ছে। একটা লোককে আসতে দেখেই খবিরুন বলল, ভাই, ও ভাই, ডাক্তার সাবের রুম কোন দিকে? লোকটি কোন উত্তর না দিয়ে ইশারায় দেখিয়ে দিল। খবিরুন দাতে দাত চেঁপে সেই রুমের ভেতরে গিয়েই ধপাস করে চেয়ারে বসে পড়ল। তার নিঃশ্বাস নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে।

ডাক্তার মাথা তুলে খবিরুনকে দেখল। প্রেগনেন্সি কেইস। আজ ডিউটি তে সেই আছে। সিনিয়র কেউ নেই। কম্প্লেক্সে খুব বেশি সুযোগ সুবিধাও নেই। তবুও ডাক্তার একজন নার্সকে ডাকল। ধরে শুইয়ে দিল বেড এ। বাচ্চার কোন মুভমেন্ট টের পাচ্ছেনা, রোগীর শ্বাস কষ্ট হচ্ছে। অক্সিজেন প্রয়োজন। অবস্থা যা তা দেখে নরমাল ডেলিভারি সম্ভব না। সিজার করার মত অবস্থাও এখন এখানে নেই। না আছে গাইনি স্পেশালিষ্ট, না আছে সরঞ্জাম।

ডাক্তার খানিকটা বিরক্তই হল। এভাবে কি সামলানো যায় স্বাস্থ্য কম্প্লেক্স। খবিরুনকে বলল, আপনার সাথে কে আছে? খবিরুন ব্যাথায় কোকাতে কোকাতেই বলল, লগে কেউ নাই সার, আমি একলাই আইছি। ডাক্তারের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ল। জিজ্ঞেস করল, সাথে টাকা পয়সা আছে? খবিরুন বলল, লগে তেমুন টেহাও নাই, ১৭০ টেহা আছিল, রিক্সা ভাড়া দিছি ৯০ টেহা। সার, টেহা লইয়া ভাইব্বেন না, বাবুর বাফে ২ দিনের মইদ্দে আইয়া পড়ব। আফনে আমারে বর্তি কইরা লন। আফনার সব টেহা বাবুর বাফে আইয়া দিয়া দিব। বলতে বলতে কেঁদে ফেলল খবিরুন।

ডাক্তারের কপালে চিন্তার ভাঁজ বাড়লো। একেতো একলা রোগী, রোগীর কন্ডিশনও ভালো না, যে ট্রিটমেন্ট দরকার সেটাও দেওয়া সম্ভব না। এটা শ্রমিক অধ্যুসিত এলাকা। যদি কোন দূর্ঘটনা ঘটে তাহলে শ্রমিকরা এসে ভাংচুর করবে। ডাক্তার কি করবে ভেবেই পাচ্ছেনা। নার্সকে ডেকে অক্সিজেন দিতে বলল। একটু স্টেবল না করলে তো কোথাও পাঠানোও যাচ্ছেনা।

খবিরুন অক্সিজেন পেয়ে ভাবলো, যাক। ডাক্তার সাব চিকিৎসা শুরু করে দিছে, আর চিন্তা নাই, বাবু, একটু ধৈর্য্য ধর, একটু পরই তুই আমারে দেখতে পারবি, তোর বাফেও আইয়া পড়ব, একটু ধৈর্য্য ধর। ভাবতে ভাবতেই চোখ বন্ধ করে ফেলল।

ডাক্তার সাহেব পনের মিনিট অপেক্ষা করলেন। রোগীকে এখন একটু স্টেবল মনে হচ্ছে। কিন্তু খারাপ হতে সময় লাগবে না। দ্রুতই সিজার করতে হবে। ডাক্তার উঠে গিয়ে খবিরুনকে বলল, দেখেন, আপনার চিকিৎসা এখানে করানো সম্ভব না। আপনি এখুনি ঢাকা মেডিকেল এ চলে যান। তা না হলে সমস্যা হবে।

খবিরুন আবার ঘাবড়ে গেলো। সে এখন কিভাবে যাবে এতদূর। কোথায় সাভার আর কোথায় ঢাকা মেডিকেল। তার উপর বাইরে আবহাওয়ার অবস্থা খুবই খারাপ, টাকাও নেই। সে ডাক্তারের হাত চেপে ধরল। ডাক্তার সাব, আমরার কাছে কুনু ট্যহা নাই। এই ঝড় বাদলায় মেডিক্যালে যামু কেমনে ? আমি মইরা যামু। আমারে বাঁচান।

ডাক্তার হাত সরিয়ে নিলো। এখানে আবেগ দেখানোর সুযোগ নেই। যেটা করতে পারবে না সেটা নিয়ে পড়ে থাকা কেবল বোকামী্। ডাক্তার খুব শান্তভাবেই বলল, আপনি কথা বুঝেন, আমার এখানে আপনার ট্রিটম্যান্ট করার সুযোগ নাই। আপনি দেরি না করে রওনা দেন। বাস পাবেন, বাসে করে চলে যান।

খবিরুন কোন কিছুই শুনতে নারাজ। সে কাঁদতে কাঁদতে বলল, আমারে না পারেন, বাবুরে বাাঁচন। আমারে ভর্তি কইরা লন, আল্লাহর দোহাই লাগে।

ডাক্তার বুঝলো তাকে বোঝানো সম্ভব না। পিয়ন আর নার্সকে ডাকল। ওদের বলে দিল রোগীকে একটা রিক্সা ডেকে বাস স্ট্যান্ডে পাঠানোর ব্যবাস্থা করতে। এখানে যতক্ষন থাকবে ততই বিপদ বাড়বে। যা করার দ্রুত করতে হবে। বলে ডাক্তার অন্য রোগীর কাছে চলে গেল। এখানে থাকলে বরং নার্স আর পিয়নদের কাজটাও কঠিন হয়ে যাবে।

নার্স আর পিয়ন কিছু না বলেই খবিরুনকে বিছানা থেকে ওঠালো। খবিরুন কিছুই বুঝতে পারছে না কি হচ্ছে। পিয়নটা কোত্থেকে একটা রিক্সা নিয়ে এলো। খবিরুন নার্সের পা চেপে ধরল। বইন, আমারে বাইর কইরা দিয়েন না, আমার শইল্ল্যে কুন বল নাই, আমি যাইতে পারুম না অদ্দুর। আমারে দয়া করেন, একটু ব্যবস্থা করেন। বলেই হাউমাউ করে কাঁদতে লাগল। আশপাশের অন্য রোগীর স্বজনরাও জড় হয়ে গেছে। নার্স আর পিয়ন বুঝলো যত দেরি হবে সমস্য তত বাড়বে। তারা কোন কথা না শুনেই একরকম টেনে হেঁচড়ে রিক্সায় উঠিয়ে দিল।

রিক্সাওয়ালাও খুব বিরক্ত। এইটা আবার কোন ঝামেলায় পড়লাম। সে দ্রুত রিক্সা চালিয়ে বাস স্ট্যান্ডের কাছে নিয়ে এলো। খবিরুন কে নামিয়ে দিয়েই দ্রুত চলে গেল, ভাড়াও চাইলো না।

তুমুল বৃষ্টি। রাত প্রায় ১১ টা। খবিরুন আইল্যান্ডের উপর বসে আছে। কতক্ষন ধরে বসে আছে তাও জানেনা। যেখানে আগে মানুষের জন্য হাটাই যেতোনা, আজ বৃষ্টির জন্য সেই রাস্তায় কোন মানুষ নাই। প্রসবের প্রচন্ড ব্যথায় দু পা এর আঙ্গুল দিয়ে পিচ খুটছে যেনো সব পিচ পায়ের নখ দিয়ে তুলে ফেলবে। যন্ত্রনায় মুখ বিকৃত হয়ে যাচ্ছে। ব্যথায় একবার প্রচন্ড চিৎকার দিয়ে উঠে। কিন্তু বৃষ্টির শব্দে তা যেনো চাপা পড়ে যায়।

এদিক সেদিক তাকায়। কিন্তু কাউকেই দেখতে পায়না। শাড়ীর আঁচল দিয়ে একটু আশ্রয় নেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু বাতাস যেনো তাও সহ্য করতে পারেনা। খবিরুন ডুকরে কেঁদে ওঠে। দু-হাত দিয়ে মুখ ঢেকে চিৎকার দিয়ে কাঁদতে থাকে। বাসে ওঠার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু কন্ডাক্টার রা বাসে উঠতে দেয়নি। সবার কাছেই খবিরুন একটা সমস্যার নাম। কেউ রিক্স নিতে চায় না। কান্না থামিয়ে খবিরুন চারপাশে তাকায় একটু খানি আশ্রয়ের খোঁজে। কিন্তু কিছুই দেখতে পায়না। মাঝে মাঝে দু একটা গাড়ি প্রচন্ড গতিতে পানি ছিটিয়ে দিয়ে চলে যায়। খবিরুনের ব্যাথাও বৃষ্টির সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। আর সহ্য করতে না পেরে আইল্যন্ডের পাশেই কাঁত হয়ে শুয়ে পড়ে। অঝর ধারায় বৃষ্টি পড়ছেই। হঠাৎ একটা প্রাইভেট কার দ্রুতবেগে এসে খবিরুনের কাছে দাড়িয়ে গেল। ভেতর থেকে হাই ভলিয়্যুম এ গানের শব্দ আসছে। খবিরুন ঘোর লাগা চোখ খুলে দেখল সাদা একটা গাড়ি দাড়িয়েছে। খবিরুন উঠে দাড়াল, ভাবল আল্লাহ তার সাহায্যের জন্য ব্যবস্থা করেছে, আর গাড়ির ভেতরে বসা মানুষটি দেখলো যাকে সে বারবনিতা ভেবে গাড়ি থামিয়েছিল সে আসলে একজন গর্ভবতী মহিলা। ঠিক যেভাবে সে থেমেছিল, সেভাবেই সাই করে চলে গেল সেখান থেকে।

খবিরুন স্তব্ধ হয়ে গেল। আবার চারপাশে তাকায় একটু খানি আশ্রয়ের খোঁজে। কিন্তু কিছুই দেখতে পায়না। হঠাৎ একটি ফুট ওভার ব্রিজ চোখে পড়ে। খবিরুন শরীরের সমস্ত শক্তি জড় করে উঠে দাঁড়ায়। কিন্তু পরক্ষনেই পড়ে যেতে নেয়। কোনভাবে নিজেকে একটু সামলে এক হাত দিয়ে পেট ধরে অন্য হাত রাস্তার পাশে থাকা দেয়াল হাতঁড়ে হাতঁড়ে দাতে দাত চেপে এগুতে থাকে। কোন মতে ব্রীজের গোড়ায় এসেই যেনো তাঁর সমস্ত শক্তি শেষ হয়ে যায়। ব্যাথায় যেনো কাঁদতেও ভুলে গিয়েছে এখন। হাত দিয়ে ইচ্ছে মত ব্রীজের ধাপ গুলোতে বাড়ি মারতে থাকে। কিন্তু সেই ব্য্যথাও কোন ভাবেই তার প্রসব ব্যাথাকে ছাড়িয়ে যেতে পারেনা। অস্থির খবিরুন কেবল একটু সাহায্যের জন্য দিক বিদিক শুন্যের মত এদিক সেদিক তাকায়। কিন্তু কাউকেই দেখতে পায়না। থেমে থেমে বৃষ্টির তীব্রতা যেনো বাড়তেই থাকে। বৃষ্টি যেনো আজ সব কিছুই ভাসিয়ে নিয়ে যাবে।

অসহায় খবিরুন বুঝতে পারে সে মারা যাচ্ছে। অঝর ধারায় বিলাপ করে কাঁদতে থাকে। সে কান্না শোনার মতও কেউ নেই তার পাশে। খবিরুন ধীরে ধীরে মাথা তোলে। যেনো পৃথিবীর সমস্ত বোঝা তার মাথায় দেয়া। আস্তে আস্তে ঘুরে বসে। দু -হাত দিয়ে ব্রীজের রেলিং আকড়ে ধরে। আস্তে আস্তে শরীরকে টেনে তোলার চেষ্টা করে। একটা একটা করে সিড়ি ভেঙ্গে উপরে উঠতে থাকে। তার প্রতিটি পদক্ষেপ যেনো বিগত দিনের এক একটি ঘটনার বিক্ষিপ্ত বর্ননা করতে থাকে। এভাবে একটু একটু করে ব্রীজের উপরে উঠে যায় খবিরুন। দাড়িয়ে থাকার সমস্ত শক্তি সে হারিয়ে ফেলেছে। তবুও খবিরুন দাড়িয়ে থাকে ব্রীজের রেলিং ধরে। দমকা বাতাসে শরীরে কষ্ট মুছে ফেলার যেনো প্রানান্তকর চেষ্টা। বুক ভরে বাতাস নেয়। একবার পেটে হাত দিয়ে তার যক্ষের ধনকে দেখতে পাওয়ার চেষ্টা করে। তার কত স্বপ্ন, কত আনন্দ ঘিরে থাকা এই অনাগত শিশু। খবিরুন আস্তে আস্তে আঁচলে বেঁধে রাখা কয়েকটি টাকার নোট খুলে হাতে নেয়। টাকা গুলো বৃষ্টির সাথে সাথে নিচে ফেলে দেয়। জাগতিক সমস্ত সম্পদই আজ তার কাছে মূল্যহীন হয়ে গেছে। উবু হয়ে বৃষ্টির পানিতে ভেসে যাওয়া টাকা গুলো দেখে খবিরুন।

পৃথিবীর উপর তার সব রাগ হঠাৎই বৃষ্টির পানির সাথে ধুয়ে গেল। কার উপর রাগ করবে। নাহ! আর কারো উপর রাগ নাই। খবিরুন এর চোখ ভরা পানি। শুধু একটাই আফসোস। বাবুকে দেখা হলোনা, বাবুকে চুমু খাওয়া হলোন, বাবুকে বুকে জড়িয়ে আদর করা হলোনা। খবিরুন পেটে হাত বুলালো। পেটের দিকে তাকিয়ে বললো, "বাবুরে এই দুইন্যা আমগো যা দিবার পারেনাই, ওই দুইন্যা আমগোরে তা দিবার পারবো। ওই দুইন্যায় গিয়াই তোরে কোলে নিমু। তুই আমার লগেই থাকিস।"

সাভার থানা পুলিশ সেদিন রাতে প্রায় দুটার দিকে সাভার বাজার ফুটওভার ব্রিজ এর নিচ থেকে এক মা ও নবজাতকের লাশ উদ্ধার করেন। খবিরুন ফুটওভার ব্রিজ থেকে ঝাপ দেয়, এতে তার পেটের বাচ্চা বের হয়ে আসে।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৪:১২

চাঁদগাজী বলেছেন:


বেশী কষ্টকর করে ফেলেছেন।

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৪:৩৯

চতুরঙ্গ বলেছেন: আপনি কষ্টকরে পড়েছেন পুরোটা সেজন্য ধন্যবাদ।

২| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৪:৩৮

চতুরঙ্গ বলেছেন:

@ চাঁদগাজী, কষ্ট করে পড়ার জন্য ধন্যবাদ। মূল ঘটনাটি হয়ত এর চেয়েও কষ্টকর। নিউজটা অনেক পুরোনো যদিও। প্রথম আলো, বিশাল বাংলা, তারিখ ২৪ আগষ্ট ২০১০।

৩| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৪:৫০

চাঁদগাজী বলেছেন:



ইহা বাংলাদেশে সম্ভব; কিছু কিছু বাংগালী বলেন যে, বাংগালীরা নরম প্রকৃতির ও দয়ালু; ইহাতে আমার বিশ্বাস ছিলো না; ইউরোপ ও আমেরিকা দেখার পর বুঝলাম, ইহা ভয়ংকর নির্মম জাতি।

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৫:০২

চতুরঙ্গ বলেছেন: আমরা কেবল স্বার্থপর। যখন প্রয়োজন দয়া, দয়ালু, উপকারী যত বিশেষন এর প্রয়োজন পড়ে সব ব্যবহার করি। যেখানে স্বার্থ নাই সেখানে টিনের চশমা পড়ে ফেলি।

৪| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৫:৩৮

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ইহাই নিয়তি , ইহাই বাস্তবতা আমাদের সমাজ এবং গরীবের জন্য ।

কেউ কোন দায়িত্ব নিতে চায়না, সবাই যার যার দায় এড়াতে চায় ।আর খবিরুনের মত গরীব-অহসহায় হলেত কথাই নেই।

৫| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৫:৩৯

রাজীব নুর বলেছেন: দুঃখজনক।

৬| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ৮:১৮

জ্যাকেল বলেছেন: আমরা অভিযোগ করি, কেন আমাদের দেশ উন্নয়ন হয় না, নাগরিক অধিকার প্রতিষ্টিত হয় না। অথচ মানুষের মধ্যে বিবেক বোধ, মানবিকতা আজ শুন্যের কোটায়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.