নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আসল নাম নাহিদ হোসেন, ব্লগ যেহেতু সীমিত তাই আমাকে নক করতে পারেন এই ঠিকানায়: about.me/nahidh

নাহিদ০৯

ভালোবাসি বাংলা

নাহিদ০৯ › বিস্তারিত পোস্টঃ

হে মাইরজীবন - রীতিমতো অপমান

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:৩০

প্রাইমারি স্কুল, হাই স্কুল, কলেজ, স্নাতক, স্নাতকোত্তর মিলিয়ে গড় আয়ুর প্রায় অর্ধেক ই শেষ করে ফেলেছি। দি লাঞ্চবক্স সিনেমায় একটা সুন্দর ডায়ালগ শুনেছিলাম, বলার মানুষ না থাকলে নাকি মানুষ তার ঘটনা ভুলে যায়। আমার ও ভুলে যাওয়া ঘটনা বলার জন্য মনে পড়লো নতুন করে।



আমার প্রাইমারী স্কুলে আবুল কাশেম স্যার হেড মাস্টার ছিলেন। আমার যতটুকু মনে পড়ে তিনি কথা বলতেন কম, এক্সপ্রেশনিস্ট ছিলেন বেশি। তাঁর ইয়া বড় শরীর, কখনো কখনো শুধু নাম ই ভয় পাইয়ে দিতো আমাদের। দুই আঙ্গুলে পেট এর চামড়া চিমটি দিয়ে ধরা উনার মজার একটা শাস্তি ছিলো। ব্যাথা তে কোঁকানোর মতো সাহস ও ছিলো না আমাদের। স্যার গত হয়েছেন কয়েক বছর হলো। তবে স্কুলে সবচাইতে বেশি মজার শাস্তি দিতেন গোলাম কাবির স্যার, এক আঙ্গুলে কানের লতি তে থাপ্পড় দেওয়ার মতো এক বৈজ্ঞানিক কৌশল এর জনক ছিলেন বলা যায়।

প্রায় ক্লাশ থ্রি তে এক শিক্ষিকা এসে আমাদের অবাক করে দিলেন। তিনি কখনো মারতেন বলে মনে পড়ে না, এমনকি একটু আধটু ধমক ও মনে পড়ে না। তাঁর এই নতুন থিওরি আমাদের কাছে বিস্ময়কর ছিলো। তিনি আমাদের “উই শ্যাল ওভার কাম” শেখালেন, স্কুলের বই এর বাইরেও অনেক বই পড়ার ব্যাপারে উৎসাহ দিলেন, মজার মজার কিছু বোর্ড গেইম ও নিয়ে এসেছিলেন আমাদের জন্য। আমরা তো স্বপ্নে আছি এরকম একটা পরিস্থিতি। এর পরে আরো ২ জন শিক্ষক পেয়েছিলাম যাঁরা নিতান্তই নীরিহ মানুষ। মারতেন না কখনো।

ক্লাস সিক্স এ ভর্তি’র প্রথম দিনেই মন্জুর স্যার নামের স্যার এর শাস্তি দেওয়ার কথা মনে পড়ে। স্যার শরীরে অনেক খাটো ছিলেন, বামুন। কাউকে মারার আগে তাঁর লেভেলে নিচু হতে বলতেন। তারপর উনার কনুই দিয়ে সজোরে ঘুষি মারতেন। মাইরে কোন শব্দ হতো না, ভেতর থেকে ক্ষীন একটা কুঁ শব্দ পেতাম শুধু। স্যার এর ভয়ে সবাই এত ভীত ছিলো যে এক আঙ্গুল তুলতেই এসেমব্লির লাইন ঠিক হয়ে যেতো। হেড স্যার ও এত পাওয়ার ফুল ছিলেন না মনে হয়।



স্কুলের ধর্ম স্যার ছিলেন, মাইর এর আগে বা পরে কোন কথা বলতেন না। উনার নির্দেশনা উনি প্রথম দিনেই পরিস্কার করে দিয়েছিলেন আমাদের কাছে। পড়া পারলে বসবে, না পারলে নিজে থেকেই নীল ডাউন হয়ে হাঁটুর ভরে সীট বেঞ্চে শাস্তি ভোগ করবে। ক্লাশ শেষ হওয়ার ৫ মিনিট আগে উনি বেত নিয়ে পেছন থেকে আসতেন আর সপাৎ সপাৎ করে শব্দ করে একেক জনকে বসাতেন। আমি প্রায় ৯০% দিন ই মার খেয়েছি এই স্যারের ক্লাশে।

ইয়াং স্যার আসছিলেন স্কুলে একজন, স্যার এখনো আছেন যাঁর অভিনব আবিস্কার হাত উঠিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা। আমি প্রথম ২-৩ দিন দর্শক হিসেবে দেখে এটাকে খুবই হালকা শাস্তি ভেবে নিয়েছিলাম। তারপর একদিন হাঁসির কারনে ধরা খেয়ে বুঝলাম প্রায় ঘন্টাখানেক হাত সামনে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা খুব একটা সহজ না। অভিনব কিছু শাস্তির জনক ছিলেন তিনি।

ক্লাশ সেভেন এ বিশালি রকমের রেজাল্ট খারাপ করায় বাড়ি থেকে একটা প্রাইভেট সেন্টারের সাথে বাবা-মা এর হাড় মাংসের চুক্তি করা হলো। ওই প্রাইভেট তখন মাইর এর শীর্ষে। চুক্তি হলো যে মাংস তোমার আর হাড় আমাদের। মেরে ধুয়ে ফেললেও বাসা থেকে কোন আপত্তি নাই। একবার আমার মনে আছে, মার এর দাগ লুকানোর জন্য আমি গরমের শার্ট গায়ে দিয়ে ঘুরে বেড়াতাম। বাড়িতে দেখলে হয়তো আরো ডাবল থেরাপী দিতো। তবে একটা জিনিস ভালো হয়েছিলো তখন। আমার ইংরেজী বেইজ এর প্রায় ৭০% ই তৈরি হয়েছিলো এই প্রাইভেট সেন্টারে।



কলেজ এ আঙ্গুল এর ইশারায় সবাইকে পাথর বানিয়ে দেওয়ার কারিগর আরেক স্যার কে পেয়েছিলাম। কেমিস্ট্রি এর শিক্ষক কাম আমাদের ক্লাশ টিচার কাম হেয়ার স্টাইলিস্ট। আমি যে কলেজে পড়তাম সেটা ধনী’র বিগড়ে যাওয়া দুলালদের জন্য মুটামুটি একটা শোধনাগার হিসেবেই পরিচিত ছিলো। আমরা কোনদিন ক্যামেরা ফোন নিয়ে গেইট পাস করার কথা ভাবিনি। পাসপোর্ট সাইজ ছবি ছাড়া কলেজের সময়কার আর কোন ছবি নাই আমার। ক্লাশ টিচার ক্লাসে আসতেন মার্কার, খাতা আর একটা কাঁচি নিয়ে। ক্লাশ শেষে কাউকে না কাউকে চুল এর কিয়দাংশ সাইজ করে দিতেন, বাকিটা সেলুনে না কাটিয়ে মুখ দেখানোর উপায় থাকতো না।

এত মার খেয়েছি, এক পাঁ খাড়া করে সবার সামনে মাঠের মধ্যে দাঁড়িয়ে থেকেছি, মাথায় বেত এর বাড়ি খেয়েছি, ব্যাঙ, টিকটিকি, মুরগি কত কিছু হয়েছি সব এখন মনেও পড়ে না। টিফিন খেয়ে সব ভুলে গেছি, বাসায় গিয়ে বাবা মাকে বলার সাহস মনেও আনতে পারিনি তখন। অপমান বোধ তো দূরেই থাক। এর পর ও কোনদিন মনেই হয়নি শিক্ষকরা ভুল করেছেন।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:৩১

ফেইরি টেলার বলেছেন: হা হা ! আরে ভাই এরকম মাইর কত খেয়েছি ! এমনও ঘটনা গেছে ক্লাসে কথা বলার জন্য আমাদের একজনকে আরেকজনের কানে ধরে স্টুডেন্টের সামনে দাড় করিয়ে রাখতেন স্যারেরা , লেকচার দিতেন, সে অবস্থাতেই আমাদের প্রশ্ন করতেন এই তোরা বুজছিস =p~ আমরা কান ধরাধরি করে দাড়িয়ে থাকতাম, কখনো নীল ডাউন করে থাকতাম, কিন্তু লজ্জা পেতাম না কখনো । কারণ শিক্ষকদের সাথে আবার অপমানবোধ কি ? তারা আমাদের গুরু ! শাস্তি দিয়ে আবার স্যারেরাই আমাদের জড়িয়ে ধরে আদর করতেন ।

কিন্তু এখনকার ছেলেমেয়েদের আত্মসম্মানবোধ এতো বেশি , একটু কটু কথা বললেই তারা চেহারা উলটে দেয় :D

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:৩৮

নাহিদ০৯ বলেছেন: ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য। একজনকে আরেকজনের কান ধরে দাড় করিয়ে রাখার ঘটনাটা বেশ মজার।

২| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ ভোর ৬:২৭

অগ্নিবেশ বলেছেন: যারা মারে তারাও সিক, যে মাইর খাইয়াও চুপচাপ হজম করে সে ও সিক।

৩| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:৩৭

রাজীব নুর বলেছেন: জীবন যখন তার চির সাথী আত্মার সন্ধান পায় তখন জীবনের কাছে রাজ প্রাসাদ ও গাছ তলা একই মনে হয়।

৪| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:০৯

ইসিয়াক বলেছেন: ভালো

৫| ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:২৬

সোহানী বলেছেন: কও কি........ এতো মাইর খেয়েছো কিভাবে????? হাত পা ঠিক আছে তো!!!

শুনো, মাইর না দিয়েও কিভাবে পড়া আদায় করা যায় তা দেখার জন্য তোমাকে দেশের বাইরে আসতেই হবে.....................

২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:৫৪

নাহিদ০৯ বলেছেন: আরো কিছু আছে। বললে মান সম্মান থাকবে না তাই চেপে গেছি। দেশের ভেতরেও মাইর খাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। শেষ মাইর কলেজ জীবনে খেয়েছিলাম।

আমি একবার একটা ক্লাশে মুটামুটি নাস্তানাবুদ হয়ে যাচ্ছিলাম। দুইজন শিক্ষক মিলে ক্লাশ নিতে হতো ওখানে। আমার মতো একজন যিনি টেকনিক্যাল বিষয় বোঝাবেন, আর আরেকজন যিনি মূলত ফরমালিটিজ এর জন্য থাকেন। বাকি শিক্ষার্থী ২৩ জনই স্কুল পর্যায়ের আইসিটি শিক্ষক।

ক্লাশে খুব সুন্দর করে বোঝাচ্ছি ঠিক কিভাবে ক্লাশ মজাদার করা যায়। আইসিটি এর কঠিন বিষয়গুলা কিভাবে উদাহরন দিয়ে সহজ করা যায়। কিন্তু কিসের কি, সবাই কথা বলতেই ব্যস্ত, কথা শুনে এদের অভ্যেস নাই। সেদিন রাতে আমার সেকেন্ড টিচার আমাকে বো্ঝালেন ঝাড়ির উপরে কোন ঔষধ নাই এদের জন্য। আপনার ক্লাশ অনেক চমৎকার, কিন্তু অর্ধেক ই আছে ত্যাঁদড় যারা বাকি অর্ধেক কে ডিস্টার্ব করে চলেছে।

পরের দিন থেকে বাপ বয়সি সবাইকে পুলাপাইন মনে করে ক্লাশ নিয়েছিলাম। একজন কে দাঁড় করিয়ে পড়া ধরেছিলাম ৫ মিনিট এর মতো। ৭ দিনের সেসব শিক্ষক কাম শিক্ষার্থী এখনো কল দেয় মাঝে মাঝে।

৬| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:৪৫

কালীদাস বলেছেন: পোস্টের ইনার ম্যাসেজটা আমি শতভাগ সমর্থন করি। আপনার পোস্টের লাস্ট লাইনটা বর্তমান শিক্ষা রিলেটেড সব নীতিনির্ধারকের জন্য চপেটাঘাত ছাড়া কিছু না। এক্সাক্টলি। দুয়েকজন ভূতের মত পেটালেও আমাদের আদব কায়দা, বিবেক/নীতির গোড়ার লেসনটা স্কুলে থাকতেই হৃদয়ে খোদাই করে দিয়ে দেয়া হত। এখন আইন করে সবরকম শাসন বন্ধ করেছে, ফাইন, বাট ডিটেনশনের অল্টারনেটিভ কি হবে সেটা কোন মহাপন্ডিত ভাবেনি। এর ফল সামনে আরও খারাপ হবে।

কাশেম স্যারের কথায় আমার নিজের স্কুল লাইফের কাশেম স্যারদের কথা মনে পড়ে গেল। মতিঝিল মডেলে পড়তাম, কাশেম স্যার ছিলেন দুইজন- গরম কাশেম (মোটা বেত ইউজ করতেন, গলাও ছিল বাঘের মত) আর ঠান্ডা কাশেম (সাধারণত রাগতেন না, মারধরও তেমন করতে না; যদিও এনাকেই আমার কাছে ক্রিটিকাল মনে হত পয়লা জনের চেয়ে)।

পোস্টটা চমৎকার :)

০১ লা জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১২:৩৫

নাহিদ০৯ বলেছেন: অনেক ভালো একটা পয়েন্ট তুলে ধরেছেন। এদের কে ডিটেনশনের অল্টারনেটিভ শেখানোর জন্য যদিও কিছু ট্রেইনিং কোর্স করানো হয়, তবে তাতে টাকা বা ভাতা টাই প্রাধান্য পায় বেশি।

যারা মারতেন না তাদের কে নিয়েই বেশি ভয় থাকতো। যারা মারতেন তাদের তো মাপা হয়েই গেছিলো। :)

৭| ০১ লা জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১২:৩৯

আর্কিওপটেরিক্স বলেছেন: মাইর :D :D :D

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.