নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পরের জায়গা, পরের জমি, ঘর বানাইয়া আমি রই। আমি তো সেই ঘরের মালিক নই।

না মানুষী জমিন

পরের জায়গা, পরের জমি, ঘর বানাইয়া আমি রই। আমি তো সেই ঘরের মালিক নই।

না মানুষী জমিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

উপমা

১১ ই জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৫:০৬

এমন আনন্দের উপলক্ষ্য উপমার জীবনে খুব কম এসেছে। আজ তিন বছর পরে তার স্বামী ইরফান সুইডেন থেকে পি এইচ ডি করে ফিরছেন। আর দুই পরেই কিনা ঈদ। আনন্দে একেবারে আত্মহারা। কয়দিন যাবৎ যেন সে হাওয়ায় ভাসছে আর স্বপ্নরাজ্যে বাস করছে; যখন ইরফানের দেশে আসা কনফার্ম হয়েছে।
কত পুরানো স্মৃতি তার বারবার মনে পড়ে যাচ্ছে। সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের দিন গুলোতে প্রেম, কত কাঠখড় পুড়িয়ে তা বিয়ে পর্যন্ত গড়ানো। দুই পরিবারের মেনে না নেওয়া, চাকরি না হওয়ার সময় গুলোতে দুইজনেরই অস্হির উৎকণ্ঠিত মুহুর্তগুলো কাটানো। নানান জনের নানা মন্তব্য সত্বেও নিজেদের লক্ষ্য থেকে সরে না দাঁড়ানো।
আজ বিকেলের ফ্লাইটে ফিরছে ইরফান। ইশ! কতদিন পর। ওর বাবা অসুস্থ বলে যায়নি সে। দেশেই ছিল। অনেক কষ্ট হয়েছে একাকী এই সময়গুলো পার করতে। তারপরও হাসিমুখেই মেনে নিয়েছে সুন্দর আগামীর কথা ভেবে। এতকিছুর সুফল আজ পেতে চলেছে উপমা।
দুটো সারপ্রাইজড গিফট কিনে রেখেছে সে ইরফানের জন্য। একটা ঈদের জন্য আর অন্যটা ওর ফিরে আসা উপলক্ষে। এছাড়াও কত আয়োজন! ওর যত পছন্দের খাবার আছে সব নিজ হাতে তৈরি করা। সারা বাড়ি পরিপাটী করে সাজানো। কত কি! ঈদের দুইদিন পর সব বন্ধুদের নিয়ে একটা পার্টিরও আয়োজন করে রেখেছে উপমা। দুইজনে একসাথে বেড়ানোরও অনেক পরিকল্পনা।
কিন্তু বিকেলে এয়ারপোর্ট যাবার মুহুর্তেই উপমার বাবা আবার হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লেন। বাসায় আর কেউ ছিলনা। ইরফানের বাড়ির লোকজন থাকে গ্রামে। তারা কেউ এখনো এসে পৌঁছায়নি। তাই বাধ্য হয়েই বাবাকে হাসপাতালে নিয়ে গেল সে। আই সি ইউ তে ভর্তি করাতে হল। অনেকটা সময় তাতে পেরিয়ে গেল। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা। হাসপাতালের ব্যস্ততা, টেনশন সব মিলিয়ে উপমা খেই হারিয়ে ফেলল। কখন যে তার মুঠোফোনের চার্জ শেষ হয়ে অফ হয়ে গেল টেরই পেলনা।
এদিকে ইরফানের ফ্লাইট ল্যান্ড করল বিকেলের পরিবর্তে সন্ধ্যায়। উপমাকে বাসায় না পেয়ে ওর বাড়ির লোকজন সরাসরি এয়ারপোর্ট চলে আসল। উপমার সাথে যোগাযোগে ব্যর্থ হল তারা।
ইরফান উপমাকে না দেখতে পেয়ে আর মোবাইল অফ দেখে খুব আপসেট হয়ে পড়ল। তার এতদিনের প্রতীক্ষা বড় একটা ধাক্কা খেল। বাসা বন্ধ পেয়ে অনিচ্ছা সত্ত্বেও বাড়ির লোকদের জোরাজোরিতে গ্রামের পথে রওনা হয়ে গেল। পরিচিতদের সাথে যোগাযোগ করেও লাভ হলনা। ছুটিতে সবাই বাড়ি চলে গিয়েছে।
মোটামুটি একটু গুছিয়ে নিয়ে যখন রাত আটটা নাগাদ উদভ্রান্ত উপমা এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে তড়িঘড়ি করে হাসপাতাল থেকে বের হচ্ছিল ঠিক তখনি তার জীবনের সবচেয়ে ভয়ংকর অনাকাঙ্ক্ষিত ফোনকলটা এল। ইরফানের এক চাচা কল করে জানালো, যে মাইক্রোবাস করে ওরা গ্রামে যাচ্ছিল তা হাইওয়েতে এক্সিডেন্ট করেছে। কেউ আর বেঁচে নাই।
শোনামাত্রই উপমা হাসপাতালের গেইটের কাছে সংজ্ঞা হারিয়ে পড়ে গেল। কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে সব ওলট পালট হয়ে গেল।
দুইদিন পার হওয়ার পর উপমার জ্ঞান ফিরল। কিন্তু কিছুতেই ঘোর কাটছিল না। কি থেকে কি হয়ে গেল। যে মানুষটার জন্য এত প্রতীক্ষা, এত কিছু সেই যখন নেই তখন এই জীবনের কোন মানে থাকতে পারে না। কি ভেবেছিল আর কি হয়ে গেল! বিদেশ থেকে নিজ দেশে ফিরতে না ফিরতেই এভাবে সব শেষ হয়ে যাবে! না! এ মেনে নেওয়া তারপক্ষে কিছুতেই সম্ভব না। কিছুতেই সে বিশ্বাস করে না। কোনভাবেই না।
কিছু সময় পরে পরিচিত কন্ঠের শব্দে উপমা সজাগ হয়ে উঠল। ফোনে কথা বলতে বলতে তার কেবিনেই প্রবেশ করছে লোকটি। রুমের আলো আঁধারিতে ঠিক ঠাওর করা যাচ্ছে না। কাছে আসতেই ভূত দেখার মত চমকে উঠল উপমা।
- ইরফান তুমি বেঁচে আছো! বেঁচে আছো তুমি! বলেই হুহু করে কাঁদতে লাগল।
- কি ভেবেছিলে আমি মরে গেছি। তোমাকে ছাড়া আমি কি মরতে পারি। তোমার দেখা না পেয়ে ওভাবে গ্রামে যেতে মন কিছুতেই সায় দেয়নি। ওরা জোর করলেও কিছুদূর গিয়ে আমি নিজেই জোর করে গাড়ি থেকে নেমে যাই। পরে জানতে পারি ঐ গাড়ি এক্সিডেন্ট করেছে। হাসপাতালগুলোতে খবর নিয়ে শেষে এখানে তোমার দেখা পাই। এই কদিন কিভাবে যে পার করেছি নিজেও জানি না।
- আমাকে ছেড়ে তুমি আর কোথ্থাও যাবে না।
ইরফান উপমার চোখ মুছে দিয়ে বললেন, আর কেঁদোনা প্লিজ। এইতো আমি তোমার পাশেই।
উপমা ইরফানের হাতদুটো নিজের কাছে টেনে নিল পরম নির্ভাবনায়।







মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.