নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পরের জায়গা, পরের জমি, ঘর বানাইয়া আমি রই। আমি তো সেই ঘরের মালিক নই।

না মানুষী জমিন

পরের জায়গা, পরের জমি, ঘর বানাইয়া আমি রই। আমি তো সেই ঘরের মালিক নই।

না মানুষী জমিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প: রুপকথা

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:১৭




রাত প্রায় ১১ টা। পাড়ার মোড়ের সব দোকানই বন্ধ হয়ে গেছে। শুধু লাবুর চায়ের দোকানটাই এখনো খোলা। সেও বন্ধ করার পায়তারা করছে। পারছেনা শুধু জামান সাহেবের জন্য। এই ভদ্রলোক এখনও বসে রয়েছেন। দেখেতো যাবেন বলে মনে হচ্ছেনা, আজীবন এইখানেই থেকে যাবে। ভদ্রলোক হলেও কয়দিন যাবত তার ভাবগতিক সুবিধার মনে হচ্ছেনা। আপন মনে বিড়বিড় করে, কার সাথে যেন কথা বলে। বিষয়টা এখনো তেমন কেউ বুঝতে না পারলেও লাবু জানে, সে খেয়াল করে দেখেছে।
- ভাইজান বাড়িত যাবেন না। রাইত তো অনেক হইল।
- যাব। আরেকটা চা দাও।
- হইব না। বন্ধ। বাড়িত যানগা।
- বাসায় লোডশেডিং। অনেক গরমও পড়েছে।
- তাতে কি?
- মেয়েটা গরমে খুব কষ্ট পায় তাই বাসায় যেতে চাচ্ছেনা। ওর জন্যই তো বসে আছি। এত জেদ হয়েছেনা মেয়েটার।
- মাইয়া কই!! আপনার লগে তো কেউ নাই। কিসব কইতাছেন? আউলা কথাবার্তা।
- কেন? আমার পাশেই তো বসে আছে। তুমি দেখতে পারছোনা? কত খুনসুটি করছে। কত কথা বলছে। বাসায় যেতেই চায়না।
এসব শুনে লাবুমিয়া বেশ ভয় পেয়ে গেল। জোর করে দোকানের ঝাপ ফেলে দিয়ে জামান সাহেবকে রীতিমত বেরই করে দিল।
জামান সাহেবও আর পিছন ফিরে না তাকিয়ে অশরীরী কারো সাথে খুনসুটি আর কথা বলতে বলতে অন্ধকারে মিলিয়ে গেল। সেই থেকে লাবুমিয়ার ভয় আর কাটছেই না।


বাস কাউন্টারে লম্বা লাইন। কিন্তু আধঘন্টা ধরে বাসের কোন পাত্তাই নাই। প্রচণ্ড গরমে সবাই অস্থির। জামান সাহেবও লাইনে দাঁড়িয়ে। ঘেমে নেয়ে একসা। হাতে তার দুটো টিকিট। যদিও মানুষ তিনি একজনই।
বাসে উঠেই কোন রকমে একটা সিট পেয়ে বসে পড়লেন কিন্তু জানলার পাশে সিট পাননি বলে মনটা বেজার। তাই বলে কি হবে! তার পাশে কাউকেই আর দাঁড়াতে দিচ্ছেন না। লোকজন তো মহাবিরক্ত। এমনিতেই বাসে জায়গা নাই। তার উপর এই লোকটা সিট পেয়েও পাশে একটা জায়গা দখল করে রেখেছে। আজব পাবলিক। পাশের জন জিজ্ঞাসা করতেই জামান সাহেব বললেন, " জ্বি, আমার পাশে আমার মেয়ে দাঁড়ানো। খুব দুষ্টু হয়েছে।"
পাশের ব্যক্তিটি ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে বললেন, " কি বলেন!! আপনার সাথে তো কেউ নাই"। পাগল ভেবে আর বেশি ঘাঁটালেন না।
কিন্তু পরের স্টপেজে গিয়েই বাঁধল বিপত্তি।
পিছনের একলোক তাড়াহুড়ো করে নামতে গিয়ে, সামনের জনের সাথে ধাক্কা খেতেই সেই লোক পড়তে পড়তে কোন রকমে সামলে নিলেও, জামান সাহেবের পাশে এসে প্রায় পড়েই গেলেন। যেন তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন জামান সাহেব।
- কি ভাই কি পেয়েছেন? এভাবে হুমড়ি খেয়ে আমার মেয়েটার গায়ের উপর পড়লেন। বাচ্চা মেয়ে। কত ব্যথা পেল। কান্না করছে। সরেন! সরেন!!
এমনিতেই ভিড় বাসে পড়ে গিয়ে লোকটার অবস্থা খারাপ। তার উপর এই মানুষটার কথা শুনে আরো চটে গেলেন।
- এই কন্ডাকটর!! কি সব পাগল ছাগল লোক বাসে তুলছেন। নামান এরে, নামান। যত্তসব।
- ওই মিয়া পাগল কারে বলেন! চিনেন আমারে! চিনেন! চিৎকার করে উঠলেন জামান সাহেব।
- আর চিনা লাগবো না। শুধু কি পাগল! কি সব ভয়ংকর কথা কয়!! সাথে কেউ নাই তাও কয় কে জানি সাথে আছে।
জামান সাহেবের পাশের সিটে বসা লোকটি জোরে জোরে বলতে থাকে। এই শুনে আশেপাশের লোকজন কন্ডাকটরকে বলল লোকটাকে নামিয়ে দিতে।
প্যাসেঞ্জাররা ক্ষেপে যাচ্চে ভেবে জামান সাহেবকে কন্ডাকটর জোর করে নামিয়ে দিলেন। অনিচ্ছা সত্ত্বেও রাগে গজগজ করে নেমে গেলেন। নেমেই অশরীরী কারো সাথে কথা বলতে থাকেন। আশে পাশের লোকজন ভয় আর জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন। সাধারণ পাগল ভাবলে হয়ত এই ব্যস্ত নগরীর লোকদের এ ব্যাপারে কোন কৌতুহল হত না। কিন্তু জামান সাহেবের বেশভূষা সে কথা বলে না।


প্রতিদিন দু'বেলা করে এই বাসায় আসা ইদানিং এই ব্যক্তিটির রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। নেহায়েত নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে তাই সম্ভব হচ্ছে। কিছুক্ষণ পত্রিকা পড়া, টিভির চ্যানেলগুলো ঘুরানো আর নিজের অসুস্থ ছোট বোনটার পাশে কিছু সময় কাটানো। সবদিন না আসলেও চলে তবু মনতো মানেনা। একটাই বোন তার। এখন শয্যাশায়ী। আর মানসিকভাবে পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়েছে।
কিছুদিন পূর্বে তার এই বোনটার জীবনে যা ঘটে গেল তাতে যে সে এখনো বেঁচে আছে সেটাই এক বিস্ময়! নিজের চোখের সামনেই যদি এমন ঘটনা ঘটে আর জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদটাই হারিয়ে যায় তবে তো বেঁচে থাকাটাই অর্থহীন হয়ে যায়।
সেই থেকে এই মানুষটা নিজের বাসা ছেড়ে বোনের বাসার কাছাকাছি বাসা নিয়েছেন যাতে সবসময় দেখাশোনা করা যায়। তার স্ত্রীও প্রতিদিন একবার করে ঘুরে যান। আর বোনের জা এসে রয়েছেন এই বাসায়। সব ধরনের সেবা শুশ্রূষা করে যাচ্ছেন। এই সময়টায় পাশে থাকাটা খুব জরুরী।
- কেমন আছেন ভাইজান? কখন আসলেন?
- এই তো একটু আগে। আছি কোন রকম। রুনা, কেমন আছে এখন?
- আগের মতই। ভিতরে যান। দেখে আসেন। মাত্রই খাইয়ে দিয়েছি।
- যাচ্ছি। তুমি জা হয়ে যা করছ, আজকাল কেউ এত করে না।
- কি যে বলেননা ভাইজান। বিয়ের পর থেকেই, আমরা সব জায়েরা বোনের মতই একজন আরেকজনের সুখে দুখে পাশে থেকেছি।
- হুম। কোথা থেকে যে কি হয়ে গেল।
- মনটাকে কোনভাবেই মানাতে পারছিনা। সব কষ্ট ছাইচাপা দিয়ে রেখেছি।
- আচ্ছা, জামান কই? ওকে তো দেখছিনা! কয়দিন ধরে তেমন একটা দেখাও হচ্ছেনা।
- ওর কথা আর বলবেননা। সারাদিন যে কই থাকে, কি করে, কে জানে! সকালে বের হয়, ফেরে অনেক রাত করে। ঠিকমতন অফিস করে কিনা তাও জানিনা। জিজ্ঞেস করলে ভালো করে কিছু বলেও না। ওর ও কি আর মাথার ঠিক আছে।
এমন সময় বাড়ির কাজের লোক রফিক বাইরে থেকে হাঁপাতে হাঁপাতে এসে হাজির।
- কি রে রফিক, কি হয়েছে! এভাবে হাঁপাচ্ছিস কেন?
- বড় ভাবি, পাড়ার মোড়ের ওই লাবুর দোকানে বিরাট গ্যাঞ্জাম। ভাইকে নিয়ে সবাই হাসাহাসি করছে আর বলছে ভাই নাকি পাগল, উম্মাদ হয়ে গেছে। আর ভাই ও সবার মাঝে থেকে কেমন জানি করছে! রুপকথা, রুপকথা, বলে চিৎকার করছে।
-সর্বনাশ!! কি বলছিস এইসব!! চলতো, গিয়ে দেখি।
রুনার ভাই, শফিকুর রহমান রুনার জা কে থামিয়ে দিয়ে বললেন, আরে! তুমি কই যাচ্ছ? দাঁড়াও, এত উতলা হলে চলে। এমনিতেই মন মেজাজ কিছুই ঠিক নেই, তার উপর আবার এইসব.....
.... এই রফিক, ( রফিকের দিকে ফিরে) চল, গিয়ে দেখি কি হয়েছে!! শোন লায়লা, তুমি রুনার কাছেই থাক। আমি গিয়ে দেখছি কি হয়েছে।
এই বলে শফিক সাহেব দ্রুতবেগে পাড়ার মোড়ের উদ্দেশ্যে বের হয়ে গেলেন।



পাড়ার মোড়টায় অনেক জটলা বেঁধে আছে। জামান সাহেবকে ঘিরেই এই জটলা। এদের মধ্যে কেউ যেমন তার পরিচিত, তেমনি অপরিচিত কেউ কেউ আছেন। চায়ের দোকানদার লাবু উচ্চস্বরে কথা বলছে। একধরনের ভয় আর বিরক্তি মিশিয়ে সে চিৎকার করেই যাচ্ছে।
- এই লোকডা হেইদিন রাইতেও আমারে ভয় দেখাইছিলো। আউলা কথাবার্তা কয়। দেখন যায় না, তাও কয় হের মাইয়া হের লগে ঘুরে, কথা কয়।
কেউ কেউ তার কথায় সায় দিলো। বলল, তারাও নাকি গত কয়েক দিনে বিভিন্ন জায়গায়, জামান সাহেবকে দেখেছেন অদৃশ্য কারো সাথে কথা বলতে। একজন তো জোরে জোরে বলতে লাগল, আরে এই লোকতো গতকাল বাসেও এইরকম ঝামেলা পাকিয়েছিল। আমি ছিলাম সেই বাসে।
কিন্তু জামান সাহেবের সেই এক কথা, অদৃশ্য কেন হবে? তার মেয়েই তার সাথে কথা বলে। একসংগে ঘুরে বেড়ায়। এমনকি এই মূহুর্তেও সে তাদের সাথেই আছে।
তার এইসব অসংলগ্ন আচরণ আর কথাবার্তায় কেউ নানান টিপ্পনী কাটতে লাগল, কেউ হাসাহাসি করতে লাগল।
ভিড়ের মধ্যে বয়স্ক একজন অস্হির হয়ে উঠা জামান সাহেবকে বুঝানোর চেষ্টা করলেন। বললেন, জামান, দেখো, আমরা যতটুকু তোমায় চিনি, তুমি খুব ভালো একজন মানুষ। কেন এমন করছ? লোক হাসাচ্ছ। কয়দিন আগেও তো তোমাকে এমন দেখিনি। তোমার কোন সমস্যা থাকলে তুমি আমাদের সাথে শেয়ার করতে পারো।
কিন্তু কে শোনে কার কথা। এত ভিড়ের মধ্যে অস্হির জামান আরো অস্হির হয়ে হঠাৎ করেই খুব প্রতিক্রিয়া দেখাতে শুরু করল।
কান্না জড়ানো গলায় জোরে আওয়াজ করে বলতে লাগল, আরে ও আমার মেয়ে, রুপকথা। রুপকথা। ও ভাল আছে। কিছু হয়নি ওর। সবসময় আমার সাথেই থাকে। আপনারা কেন কিছু বুঝতে চাচ্ছেন না?
- দূর, এই হালায় তো পুরাই পাগল, উম্মাদ হইয়া গেছে। হেরে পাবনা পাঠাইয়া দাও। জোরে জোরে কেউ বলতে লাগলেন।
- আরে আমি পাগল না, বলেই তাদেরকে মারতে উদ্যত হলেন।
পরিস্হিতি ক্রমশ: খারাপের দিকে যাচ্ছিল। ঠিক সেই সময় শফিক সাহেব এসে সামলানোর চেষ্টা করলেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। খুব উত্তেজিত অবস্থায় হঠাৎ করেই জামান সাহেব মাথা ঘুরে পড়ে গেলেন।


একটা প্রাইভেট কোম্পানির হেড অফিসে ভালো পোষ্টে জব করেন জামান সাহেব। সাদা সিধে, নির্ভেজাল, মিশুক চরিত্রের কারণে কমবেশি সবাই এই লোকটিকে পছন্দ করে। আজকাল যেখানে কেউ কারোর খবর নেয় না, সেইখানে, সবার খবরাখবর নেয় আর খুব মিশুক বলে সারা পাড়ায় জামান সাহেবকে অনেকেই চিনে। তার হঠাৎ এমন অস্বাভাবিকতা তাই অনেকের কাছে খুব কৌতুহলের কারণ হয়ে উঠল।
মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার পর সবাই ধরাধরি করে বাসায় নিয়ে আসলো উনাকে। দেখতে দেখতে বাসায় বেশ ভিড় জমে গেল। তারপরই অনেক অজানা খবর বের হয়ে আসতে লাগল।
রুনা, জামান সাহেবের স্ত্রী ,যে প্রায় দুই মাস যাবত অসুস্থ এটিই কেউ জানত না!! আর রুপকথাকেও বাসায় কেউ দেখল না। কোথায় রুপকথা? কি হয়েছে তার? এত গোপনীয়তার কি কারণ থাকতে পারে?
শেষ পর্যন্ত সবার সব প্রশ্নের উত্তর দিতেই হল। লায়লা, জামান সাহেবের বড় ভাবী, সব রহস্য আর গোপনীয়তার অবসান ঘটালেন।


প্রায় দুই মাস আগের ঘটনা। পরীক্ষা শেষে রুপকথার স্কুল ছুটি ছিল। ৫ম শ্রেণীর ছাত্রী সে। বাসার সবাই এই কয়দিন তার ছোট চাচীর বাবার গ্রামের বাড়িতে এক অনুষ্টানে যাওয়া স্হির করল। অনুষ্টান শেষে বাকী ছুটিটা ঔখানেই কাটিয়ে আসবে।
নতুন জায়গা দেখার আনন্দে রুপকথা খুবই উল্লসিত। স্বভাবে এমনিতেই একটু চঞ্চল সে। একমাত্র আদরের সন্তান। আদর করে তাই নাম রাখা হয়েছিল রুপকথা।
ওর ছোট চাচীর বাবার সচ্ছল গেরস্ত বাড়ী। অনেকগুলো ঘর থাকলেও তাদের অপেক্ষাকৃত ভাল ঘরটাতেই থাকতে দেয়া হয়েছিল। যদিও ঘরটা অন্য ঘরগুলো থেকে অনেকটা তফাতে, একদম এক সাইডে। ওদের আদর যত্নে খুব খুশি হল জামান। রুপকথারও সমবয়সী বন্ধু জুটে যাওয়াতে বেশ আনন্দেই কাটছিল সময়গুলো। বাড়ি ভরতি অনেক মেহমান।
কিন্তু অনুষ্টানের সময় এলাকার চেয়ারম্যানের বখাটে ছেলে দাওয়াত খেতে এসে বাড়ির এবং বেড়াতে আসা মেয়েদের খুব উত্ত্যক্ত করার চেষ্টা করেছিল। রুপকথাকেও নিয়েও বখাটে ছেলেটা অশালীন মন্তব্য করেছিল। পরে অনেকের মধ্যস্থতায় পরিস্হিতি সামাল দেওয়া হয়েছিল।
এর দুইদিন পর রাত প্রায় ১০ টার সময় ( এই সময়টায় গ্রাম দেশে রাত অনেক গভীর মনে হয়) বাড়ির পুরুষ মানুষরা সবাই যাত্রাপালা শুনতে উত্তর পাড়ায় চলে গিয়েছিল। ওদের সাথে জামানও গিয়েছিল।
ঠিক সেই সুযোগে সেই রইছ উদ্দীন, চেয়ারম্যানের বখাটে ছেলে তার দলবল নিয়ে নিরবে কোন শব্দ না করেই বাড়ির ভেতর ঢুকে পড়ল। ঢুকেই তারা ঘরগুলোর বাইরের ছিটকিনি লাগিয়ে দিল। এরপর কৌশলে তারা যে ঘরটাতে রুনা আর রুপকথা ছিল তাতে ঢুকে পড়ল।
ঢুকেই কোন কিছু বুঝতে না দিয়ে প্রথমে দুইজনের হাত, মুখ বেঁধে ফেলল। রুনাকে একটা খুঁটির সাথে বেঁধে রেখে তিনজন তাকে ধরে রাখল আর রইছ সহ বাকি তিনজন মিলে আমাদের ফুলের মত নিষ্পাপ রুপকথাকে পাশবিকভাবে নির্যাতন করতে লাগল। রুনা নিজেকে ছাড়াতে চাইলে ওরা তাকে বেশ মারধর করল।আওয়াজ করার কোন সুযোগ দিল না। নিজের চোখের সামনে একজন মা কিভাবে এই দৃশ্য সহ্য করতে পারে বলেন? কিন্তু ওদের শক্তির কাছে পরাস্ত হল। আশেপাশে সবাই ঘুমিয়ে ছিল বলে কেউ টের পেলনা।
প্রায় ঘন্টাখানেক ধরে চলল, এই উম্মত্ত পাশবিকতা। পুরো ঘর রক্তে সয়লাব। একসময় মা, মেয়ের চিৎকারে পাড়া প্রতিবেশী ছুটে আসলে পাষণ্ডগুলো পালিয়ে যায়।
সেই রাতেই সদর হাসপাতালে দুইজনকে ভর্তি করা হল। পুলিশ তো কোন মামলা নিলই না, উল্টো শুরু হল চেয়ারম্যানের হুমকি ধামকি। আমার ছোট জায়ের বাবার সাথে জমি সংক্রান্ত বিরোধ থাকায়, ওরা আরো বেশী পেয়ে বসল। তাড়াতাড়ি এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বলল।
সইতে না পেরে রুনা স্ট্রোক করে বসল। আর সারারাত পাঞ্জা লড়ে ভোর বেলায় আমাদের রুপকথা এই পৃথিবী ছেড়ে রুপকথার দেশে চলে গেল।
- কিন্তু এতবড় ঘটনা এতদিন কেউ জানলনা!! পাড়ার সেই বয়স্ক ব্যক্তিটি বললেন।
- কি করে জানবে বলেন? পুলিশ, লোকাল মিডিয়া কেউ কোন টু শব্দ পর্যন্ত করলনা চেয়ারম্যানের ভয়ে। এখনো পর্যন্ত হুমকি দিয়ে যাচ্ছে শয়তানগুলো। ঐ এলাকার নই বলে, ভয়ে কেউ কিছু বলার সাহসও পেল না। সব খবর কি আর মিডিয়াতে আসে।
তারউপর, আমরাও ব্যস্ত হয়ে পড়লাম রুনাকে নিয়ে। বিশ্বাস করবেন! মান-সম্মান আর জীবনের ভয়ে লুকিয়ে রাতের আঁধারে রুনাকে আমরা বাসায় নিয়ে আনি। পুরো বিষয়টা চেপে গেলাম শত কষ্ট বুকে চেপে। এই পাড়ায় কাউকে বুঝতে দিইনি। জিজ্ঞাস করলে বলেছি, রুপকথা ওর ছোট মামার বাড়িতে।
কিন্তু এতদিন তো জামান শক্তই ছিল। বাসায় রুনাকেই সময় দিত। তবে গত এক সপ্তাহ ধরে সারাদিন বাসায় থাকত না। তাই তেমন কোন অস্বাভাবিকতা আমার চোখে পড়েনি। এখন সবতো শুনলাম।
সবটা জানার পর পাড়ার লোকেরাই ঠিক করল তারা এর একটা বিহিত করবে। এভাবে একটা পরিবার ধ্বংস হয়ে যেতে পারে না।
আরো কতশত রুপকথার জীবনে প্রতিনিয়তই এমন ঘটছে। সবটা আমরা জানতেও পারিনা। কিন্তু এইভাবেই কি চলতে থাকবে? পৃথিবীর সব আলো দেখার আগেই কি রুপকথারা সব হারিয়ে যাবে???

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:৪৮

হাসান মাহবুব বলেছেন: এই কুৎসিত পৃথিবীতে রুপকথাদের আসার কোন দরকার নেই। কোন মানে নেই।

২| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:৫৮

আদিম যোদ্ধা বলেছেন: মনটা ভেংগে গেল | :(

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.