নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পরের জায়গা, পরের জমি, ঘর বানাইয়া আমি রই। আমি তো সেই ঘরের মালিক নই।

না মানুষী জমিন

পরের জায়গা, পরের জমি, ঘর বানাইয়া আমি রই। আমি তো সেই ঘরের মালিক নই।

না মানুষী জমিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ মানিব্যাগ

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৩৮



মানিব্যাগটা তাঁর পাশেই পড়ে ছিল। এবড়োথেবড়ো আর নোংরা কাদা মাখানো। চিত হয়ে হাত পা ছড়ানো অবস্হায় পড়ে রয়েছে দেহটা। নীল রঙের চেক শার্টটায় ছোপ ছোপ রক্তের দাগ। শরীরের অনেক জায়গায় আঘাতের চিহ্ন আর কাদায় মাখামাখি। বিলের এক ধারে জংলামত জায়গায় গত রাতে কে বা কারা ফেলে দিয়ে গেছে তাঁকে।
ভোর হওয়ার সাথে সাথে নিথর দেহটাতেও যেন প্রাণ সঞ্চারিত হল। অনেক কষ্টে উঠে চারপাশে ফ্যালফ্যাল করে তাকাতে লাগল সে।
অজানা, অচেনা, শুনশান এই জায়গায় কিছুই ঠাহর করা গেল না। কিভাবে কি হল, তাও ঠিকমত মনে করতে পারলনা। সবই যেন আবছা আর ধোঁয়াশা। পাশে তাকাতেই হঠাৎ চোখ গেল মানিব্যাগটার দিকে।
মনে পড়ল, এটা তার নিজের। মানিব্যাগটা নিয়ে খোঁড়াতে খোঁড়াতে হাঁটতে লাগল। কিছুদূর গিয়ে একটা গ্রামের ভিতর প্রবেশ করল সে। এত সকাল বেলা বাইরের একজন ছেলেকে এই অবস্হায় দেখে সবাই কৌতুহলী হয়ে উঠল। গ্রামের মধ্যেই ছোট্ট একটা চায়ের দোকানে চা চাইল ছেলেটা। ততক্ষণে লোকজনের ভিড় জমে গেল।
- এ ভাই, আপনে কেডা! কইথেকা আইছেন অকাম, কুকাম কইরা!! শরীরের এই অবস্হা কেন? একজন জিজ্ঞেস করল।
- ভাই, আমি অনেক বিপদে পড়েছি।ভাল করে সবটা মনেও করতে পারছি না। এখান থেকে শহরে যাওয়ার রাস্তাটা বলতে পারেন?
ভালো মানুষ সত্যি বিপদে পড়েছে ভেবে একজন বলল, " এইখান থেইক্কা হাফ কিলো দূরে নয়াবাজার বাস ষ্ট্যান্ড। সেইখানে গেলেই বাসে কইরা বড় শহরে যাইতে পারবেন।"
দেরি না করে সে আবার হাঁটতে শুরু করে দিল। আর ভাবতে লাগল এই বাসষ্ট্যান্ডের নামটা চেনা চেনা লাগছে। কিন্তু ঠিক মনে করতে পারছেনা। পথিমধ্যে একটা নলকূপে কোন রকমে নিজেকে পরিষ্কার করে নিল।
কিন্তু বাসষ্ট্যান্ডে গিয়েই সে আশাহত হল। মানিব্যাগে মাত্র খুচরো কিছু টাকা। বাকি টাকা, এটিএম কার্ড আর মোবাইল অনেক আগেই শালারা হাপিস করে দিয়েছে। মানিব্যাগটা শুধু কতগুলো ভিজিটিং কার্ড আর কাগজে ভরতি।
এই অপরিচিত জায়গায় কিভাবে, কার সাহায্য নিবে, ভেবে যখন কোন কূল কিনারা পেলনা, তখন হঠাৎ অন্যমনস্কভাবে ঘাঁটতে থাকা মানিব্যাগটার ভিতর একটা কার্ড তাকে আলোর হদিস দেখালো।
দুই বছর আগে এই মানিব্যাগটা সাহানা ওকে গিফট দিয়েছিল আর বলেছিল, সবসময় যেন ওটা মোটাসোটা হয়ে থাকে। পাতলা মানিব্যাগ নাকি তার একদমই ভাল লাগেনা।
- আরে দূর! আমি স্টুডেন্ট মানুষ। এত টাকা কই পাব যে মানিব্যাগটা আমার মত পাতলা নাহয়ে, তো-মা-র মত হবে।
- চুপ। নো ফালতু কথা।
তখন থেকে কারো সাথে পরিচিত হলেই তার বিজনেস কার্ড অথবা শপিং করতে গেলে কিছু কিনুক আর নাইকিনুক ঐ দোকানের কার্ড নিয়ে রাখত সে। দেখতে দেখতে মানিব্যাগটা মোটাসোটাই হয়ে গেল। ভালই লাগত। ভিড় বাসে উঠলে মনে হত কোন পকেটমার এই মানিব্যাগ নিতে পারবেনা।
একদিন শপিং করতে গিয়ে এক দোকানে মানিব্যাগটা ভুলে ফেলে এসেছিল। গ্রাউন্ড ফ্লোর থেকে এক দৌড়ে থার্ড ফ্লোরে গিয়ে দেখে ওটা হারায়নি। দোকানদার রেখে দিয়েছিল। সেই থেকে তার সাথে দোকানদারের খাতির হয়ে গেল। প্রায় ঐ দোকান থেকেই কেনাকাটা করত।তারই সমবয়সী। সেও স্টুডেন্ট। পাশাপাশি বিজনেস করছে। নাম শাহজাহান। এর বাড়ি সেই নয়াবাজার বাসষ্ট্যান্ডের পূর্বপাশে। প্রায়ই বলত বেড়াতে যেতে।
বি ব্লকের নয় নম্বর রোড দিয়ে এক বিকেলে সে আপনমনে হাঁটছিল। কোত্থকে রমিজের গ্রুপের এক ছেলে দৌড়ে এসে তাকে একটা কাগজ দিয়ে তাড়াতাড়ি সটকে পড়ল। যাওয়ার সময় বলল, কাগজটা যেন সন্ধ্যায় ওকে আবার দিয়ে দেয়। আর তাকেও এখান থেকে সরে যেতে বলল। আশেপাশেই রহমানের লোকজন ঘোরাফেরা করছে। কাগজটা ফেলে না দিয়ে মানিব্যাগে রেখেই সে সরে পড়ল। সন্ধ্যায় ছেলেটাকে দিয়েও দিল।
ঐ রাতেই রহমানের ছেলেরা তাকে ধরে নিয়ে গিয়ে টর্চারিং করতে লাগল।
-ঔ তোর মানিব্যাগে যে কাগজটা রাখছোস, হেইডা কই? দিয়া দে নইলে জানে শেষ কইরা ফালামু। তোরা কেউ হের মানিব্যাগটা সার্চ কর।
সে যতই বলতে লাগল, তার কাছে নাই, ততই টর্চারিং বাড়তে লাগল।
একজন বলল, বস, ঐটা যদি রমিজের লোক পাইয়া যায় আর পুলিশরে দিয়া দেয়, তাইলেত আমরা নাই।
শেষে একজন এসে খবর দিল, কাগজটা এর কাছে নাই। যে ছেলেটা চুরি করছে ওর কাছেই আছে।
- তাইলে হেরেই ধইরা নিয়া আয়। আর এরে মাইরা মুইরা শহর থেইক্কা দূরে ফালাইয়া দিয়া আয়। টাকা, মোবাইল যা পাবি নিয়া নিবি।
মানিব্যাগ থেকে শাহজাহানের কার্ডটা বের করে উল্টো পিঠে দেখলো ওর বাড়ীর ঠিকানা লেখা। খুঁজে বের করে সেখানে উপস্হিত হল সে। বাড়ীর লোককে পরিচয় দিয়ে সেখান থেকে শাহজাহানকে ফোন দিল।
- আরে!! রাকিব। তুমি ওইখানে? কেমনে কি?
সবকিছু বলার পর, শাহজাহানের বাড়ী থেকে গাড়ি ভাড়া নিয়ে আর দেরী না করে শহরের দিকে রওনা দিল রাকিব। ক্লান্ত শরীর তবুও ভিড় বাসে দাঁড়িয়েই যেতে হল। বেঁচে থাকার কি আনন্দ তা হাড়ে হাড়ে টের পেল সে।
কিন্তু কন্ডাকটর যখন বাস ভাড়া নিতে আসল তখন প্যান্টের পেছন থেকে মানিব্যাগ নিতে গিয়েই পুরো বোকা বনে গেল সে।
কোথায় মানিব্যাগ!!! হায় হায়!! ওটাতো পকেটমার হয়ে গেছে।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৫৩

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: জটিল মানিব্যাগ কড়চা :)

ঈদের শুভেচ্ছা!

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৫৭

না মানুষী জমিন বলেছেন: ধন্যবাদ জানবেন। আপনাকেও ঈদের শুভেচ্ছা রইল।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.