নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পরের জায়গা, পরের জমি, ঘর বানাইয়া আমি রই। আমি তো সেই ঘরের মালিক নই।

না মানুষী জমিন

পরের জায়গা, পরের জমি, ঘর বানাইয়া আমি রই। আমি তো সেই ঘরের মালিক নই।

না মানুষী জমিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ নীরা (প্রথম পর্ব)

২১ শে জুন, ২০১৭ বিকাল ৫:২৪

(১)
একমাত্র ছেলের বিয়েতে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোঃ সানোয়ার সাহেব কোন কিছুর কমতি রাখেননি। বিশাল ডুপ্লেক্স বাড়িটি আজ তিনদিন ধরে বাহারি আলোক সজ্জায় সজ্জিত। পুরো বাড়ি নতুন করে সাজানো হয়েছে। আত্মীয় অনাত্মীয় অনেকের উপস্হিতিতে সারা বাড়ি যেন গিজগিজ করছে। সবদিকেই উৎসব মুখর পরিবেশ।

এত কিছুর পরও সানোয়ার সাহেবের স্ত্রী রওশন আরা'র মনে তার ছেলের জন্য দুশ্চিন্তা রয়েই গেল। যদিও কাউকে সেটা বুঝতে না দিয়ে, মুখে হাসি ধরে রেখে সবকিছু সামাল দিচ্ছেন। কারণ ছেলেকে বিয়েতে রাজি করাতে কম ঝামেলাতো আর পোহাতে হয়নি।
শেষ পর্যন্ত বিয়ের দিন দুপুর বেলা রওশন আরা'র দুশ্চিন্তাটাই যেন সত্যি হল। যখন তার ছেলের অনেক পুরনো এক বন্ধু ওই সময় হঠাৎ বিয়ে বাড়িতে এসে উপস্হিত হল।

রাতে বিয়ে। দুপুরের খাওয়া সেরে তাই কিছুটা বিশ্রাম নেওয়ার চেষ্টা করছে ইমরান। নিজের রুমে দরজা জানালা সব বন্ধ করে আলোটা নিভিয়ে একান্তে একলা কিছু সময় কাটাতে চায় সে। বাইরের হৈ চৈ, চিৎকার চেঁচামিচি কিছুই তার ভাল লাগছেনা। যেন সবকিছু ছেড়ে দূরে কোথাও চলে যেতে পারলেই বাঁচে।
বিয়ে নামক যে ব্যাপারটা আজ চার-পাঁচ বছর ধরে এড়িয়ে চলছিল সে, তাই আজ তার ঘাড়ে চেপে বসতে চলেছে। এত চেষ্টা করেও নিজের বাবার জেদের কাছে তাকে হার মানতে হল। প্রাক্তন ভালোবাসাটাকে মনের গভীরে চেপে রেখেই সারাটা জীবন কাটাতে হবে।
কিন্তু কি করার আছে? এই পাঁচ বছরে অনেকবার চেষ্টা করেও নীরার কোন হদিশ বের করা গেল না। আসলে যে হারিয়ে যায়, তাকে খুঁজে পাওয়া হয়ত সম্ভব। আর যে লুকিয়ে থাকে, ধরা দিতে চায় না, তাকে ফিরে পাওয়া দুষ্কর।
হঠাৎ দরজায় শব্দ হতেই সম্বিৎ ফিরল ইমরানের।
: ছোট সাহেব,দরজাটা খুলুন, আপনার একজন বন্ধু দেখা করতে এসেছেন।
: উফ! রহমত, তোমাকে না বললাম, এখন কারো সাথে দেখা করতে পারব না।
: বলেছি, কিন্তু বলছে অনেক নাকি জরুরি দরকার।
: ঠিক আছে, দাঁড়াও। খুলছি।
দরজা খুলতেই ইমরান বুঝতে পারল দরজার ওপাশে কি বিস্ময় তার জন্য অপেক্ষা করছিল। যার জন্য সে কোনভাবেই প্রস্তত ছিল না।
: রাহাত তুই!! এত বছর বাদে!! আমারতো বিশ্বাসই হচ্ছে না!!!
: কি, আমাকে দেখে খুব সারপ্রাইজড, তোর জন্য আরো সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে! কিন্তু এতসব দিন থাকতে শেষে কিনা বেছে বেছে এই বিয়ের দিনটাতেই আসতে হল।
: কি হয়েছে? এত দিন পরে হঠাৎ? আর কি সারপ্রাইজ, আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না। বল, তাড়াতাড়ি বল!
এক নি:শ্বাসে বলতে লাগল ইমরান আর খুব অস্হির হয়ে উঠল।
: তোর, নীরা' র কথা মনে আছে? অবশ্য মনে থাকারই কথা। শুনেছি ওর জন্যই নাকি তুই এতদিন বিয়ে করিসনি। তোর নীরা' র খোঁজ পাওয়া গেছে ইমরান।

কথাটা শুনেই মাথায় যেন বাজ পড়ল ইমরানের। কোনভাবেই নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে পারছিল না। আলো ঝলমল চারপাশটা কেমন অন্ধকার হয়ে গেল। যেন এখনি শুরু হবে প্রচন্ড কালবৈশাখী।

বাড়ি ভর্তি লোকজন সবাই দেখল, রাতে যার বিয়ে সে কিনা এই ভরদুপুরে বেরিয়ে গেল কোন এক বন্ধুকে সাথে নিয়ে! সবার আপত্তি সত্ত্বেও কারো কোন কথা না শুনে, লোকজন যারা বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করল তাদের সবাইকে উপেক্ষা করে নিজের গাড়ি নিয়ে চলে গেল ইমরান। শুধু একজনই কোন বাঁধা দিল না, আর মন থেকে চাইল যেন নীরার দেখা পাওয়া যায়। সে হল রওশন আরা।
: কি রে, দোস্ত। বিয়ের দিন জামাই যাচ্ছে তার প্রাক্তন প্রেমিকার খোঁজে, হুম, হেব্বি ফিলিংস, তাই না!!
: এই, তুই চুপ করত, দেখে শুনে ঠিকমত গাড়িটা চালা। আর কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস কিছুইত বলছিস না।
: ধীরে বৎস, ধীরে, গেলেই দেখতে পাবে।
: এই রাহাত, তোর মনে আছে? এইভাবে সেইদিন আমরা রাশেদ এর গ্রামে গিয়েছিলাম।
: কি বলিস! মনে থাকবেনা। তুই আর আমি ঠিক এইভাবে গাড়ি চালিয়ে হলের সামনে থেকে রাশেদকে নিয়ে সবাই একসাথে ওদের বাড়িতে গিয়েছিলাম। তোকে তো বাড়ি থেকে যেতেই দিবে না। শেষে কত সত্যি মিথ্যা বলে বের হয়েছিলাম।
: হুম, পাঁচ বছর। মনে হয় এইতো সেদিন। আর ওইখানেই নীরা' র সাথে প্রথম দেখা।

(২)

: কিরে লাল্টুস, মি: মোমেরপুতুল, আমাদের গ্রামে এসে কেমন লাগছে?
: দেখ রাশেদ, তোকে অনেকবার বলেছি, আমাকে রাগাবিনা আর ওইসব ফালতু নামে ডাকবিনা। আমি এখানে সারাজীবন থাকতে আসিনি।
: হুম, সে তো জানি। এত বড় শিল্পপতির ছেলে তুমি, গ্রামে এসে কি আর ভেরেণ্ডা ভাজবি!!
: জি মিস্টার, আমি জাস্ট তোদের সাথে ঘুরতে আসছি। কখনো গ্রাম-ট্রাম দেখিনি তাই। আর,এই যে এই, উফ!! কি ধুলা, বালি, কাদা, মাটির সরু রাস্তা। আরেকটু হলে গাড়িটা তো পুকুরেই পড়ে যেত! গ্রামে যে কি করে মানুষ থাকে!! যতসব গাঁইয়া ভূতের বাস।
: শালা, গ্রামের কি বুঝিসরে তুই! খুব তো বলছিলি গ্রাম দেখব, এডভেঞ্চার হবে। এখন আসতে না আসতেই নাক সিটকানো শুরু করে দিলি।
: আঃ তোরা দুইজন কি খালি ঝগড়া করবি নাকি? আমি আর ইমরান, আমরা দুইজন তোর গ্রামে এখন কিন্তু গেষ্ট। হোষ্ট হয়ে গেষ্টের সাথে ঝগড়া করা কিন্তু ঠিক নয় রাশেদ।
: ওকে জনাব, যথা আজ্ঞা। একটু কষ্ট করে যান। সামনের রাস্তা কিন্তু অনেক ভাল। আর কিছুক্ষণ বাদেই আমাদের বাড়ি পৌঁছে যাব।

রাশেদের বাড়ি পৌঁছাতে প্রায় বিকেল গড়িয়ে গেল। যেমন ভেবেছিল ইমরান আর রাহাত, তেমন নয়। রাশেদের বাড়িটা কিন্তু বেশ সুন্দর। দোতলা পাকা বাড়ি। যদিও চাল টিনের। অনেকগুলো ঘর। বাড়ির আশেপাশে বেশ অনেকটা জায়গা নিয়ে ভিটেবাড়ি। গাড়ি রাখার কোন অসুবিধা নাই। আর সবচেয়ে বড় ব্যাপার এখানে বিদ্যুৎ আছে। সব মিলিয়ে ভালই।
রাতের খাওয়াটা খুব ভাল লাগল ওদের। যদিও তাড়াহুড়োয় আয়োজন ছিল সামান্য।
: ইমরান, খাবার কেমন লাগলরে? তোকে নিয়েতো ভয়েই ছিলাম! বড়লোকের ছেলে তুই।
: ভালই তো লাগল। আসলে কি জানিস, রাহাত, মনে হয় পৃথিবীর সব মায়েদের হাতের রান্নাই চমৎকার। তা সে যত সামান্যই হোক।
: হুম, ঠিকই বলেছিস!
: সেই কবে ছোটবেলায় মায়ের হাতে খাবার খেয়েছি। আর আজ এখানে রাশেদের মায়ের। এখনতো বাবুর্চি ছাড়া....
কথাটা শেষ করার আগেই কিসের যেন শব্দে ইমরানকে থামতে হল। খাওয়া শেষ করে ওরা দুইজন উঠানের একপাশে বাগানের ধারে কথা বলছিল।
আলো আঁধারিতে ভালো দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু কারো পায়ের নূপুরের শব্দ পাওয়া যাচ্ছিল। আস্তে আস্তে শব্দটা কাছে এগিয়ে এসে একেবারে ইমরান আর রাশেদের সামনে এসে দাঁড়ালো।
ভূত দেখার মত করে চমকে উঠল ওরা দুইজন।
: কে আপনি? কে! এইভাবে বাড়ির ভিতরে ঢুকে পড়েছেন। চিৎকার করে বলে উঠল ইমরান।
আওয়াজ শুনে ঘরের ভিতর থেকে বেরিয়ে আসল রাশেদ।
: আরে নীরা তুই! কেমন আছিস? এতক্ষণে বুঝি তোর আসার সময় হল।
: না, ভাইয়া, মানে।
: আর মানে মানে করতে হবে না। ভিতরে চল। ও, শোন, ওরা হচ্ছে আমার বন্ধু। বেড়াতে এসছে। আর ইমরান, রাহাত ও হচ্ছে আমার কাজিন, ছোট চাচার মেয়ে। নীরা।

সেই রাতে ইমরানের কিছুতেই ঘুম হল না। নীরা'র সেই মায়াবী মুখটা কিছুতেই ভুলতে পারছিল না। কি সুন্দর তার চোখদুটো! টানা টানা। ফর্সা, লম্বাটে মুখ খানা দেখতে ভারি মিষ্টি। ঠোঁটের নিচে একপাশে ছোট্ট একটা কালো তিল। দু'গালে টোল পড়া হাস্যোজ্জ্বল মুখখানা দেখে ইমরানের বুকের ভিতরটা হাহাকার করে উঠল। প্রথমবার দেখাতেই প্রেমে পড়ে গেল সে।

এত ভোরে ঘুম থেকে উঠার অভ্যেস নেই যদিও, তারপরেও ইমরান বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ল। শেষ রাতে কিছুটা ঘুম হয়েছিল। রাশেদ আর রাহাত তখনো ঘুমে। বাইরে বের হয়ে আসল ইমরান। বারান্দার রেলিংয়ে হাত দুটো রেখে দাঁড়িয়ে থেকে দেখছিল গ্রামের সকাল, যা সে জীবনে প্রথম দেখল। আশেপাশে তাকাতেই চোখে পড়ল বাগানে ফুলের গাছগুলোতে পানি দিচ্ছে নীরা। নীল রঙের সালোয়ার পরে বেশ দেখাচ্ছে ওকে। খোলা চুলগুলো যখন বারবার তার ফর্সা মুখটাকে ঢেকে দিচ্ছিল তখন কোথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছিল সে। এই পৃথিবী ছেড়ে অন্য এক পৃথিবীতে তলিয়ে যাচ্ছিল তার সমস্ত হৃদয়। ....(চলবে)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.