নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পরের জায়গা, পরের জমি, ঘর বানাইয়া আমি রই। আমি তো সেই ঘরের মালিক নই।

না মানুষী জমিন

পরের জায়গা, পরের জমি, ঘর বানাইয়া আমি রই। আমি তো সেই ঘরের মালিক নই।

না মানুষী জমিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ নীরা (দ্বিতীয় পর্ব)

২২ শে জুন, ২০১৭ সকাল ৭:২৭

(১)
: এই যে, মিস্টার, হুম। কি হচ্ছে এইসব ? এভাবে বার বার ফলো করছেন কেন?
: না...মা..নে..কই..নাতো..
: এভাবে আমতা আমতা করছেন কেন? আবার...মাথা চুলকানো হচ্ছে! কি মিথ্যুক আপনি! কাল রাত থেকে দেখছি আমাকে সমানে ফলো করছেন। আমি কিন্তু ভাইয়াকে সব বলে দিব।

বলেই উঠোন পেরিয়ে বারান্দার পাশে এসে রাগি রাগি মুখ করে দাঁড়ালো।
.... কি হল, কথা কানে যাচ্ছে না? এভাবে চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে আকাশের দিকে কি দেখছেন!! আজব তো!
মাথাটা নামিয়ে নীরা'র মুখের কাছে এনে মুখ, চোখ সব ত্যাড়াব্যাকা করে নিচু স্বরে ইমরান বলল,
: আপনার বক্তৃতা যদি শেষ হয়ে থাকে তাহলে কি এক কাপ চা খাওয়াতে পারেন? আমার গলাটাই শুকিয়ে গেছে আপনার কথা শুনে।
: কি! আমার কথাগুলো আপনার কাছে বক্তৃতা মনে হয়? এইভাবে জোকারের মত তাকিয়ে আছেন কেন!
বলেই গটগট করে হেঁটে রান্নাঘরের দিকে চলে গেল।
যাওয়ার সময় ইমরান পেছন থেকে ফোঁড়ন কেটে বলল, রাগলে কিন্তু তোমাকে, ইয়ে মানে আপনাকে দারুন লাগে দেখতে!

তিন বন্ধু নাস্তা শেষ করে গেল গ্রামের বাজারে। বাজারের মাঝখানে একটা বড় বটগাছ। তার চারপাশ ঘিরেই বাজার। মোটামুটি বড়ই আছে। ঘুরেটুরে ভাল একটা চায়ের দোকানে রাশেদ নিয়ে গেল ওদের।
চায়ের অর্ডার দিতেই রাহাত ইমরানকে উদ্দেশ্য করে বলল,
: দিনে কয়বার চা খাস রে তুই?
: কই, আমিতো তেমন চা-টা খাই না।
: কেন রে! ভোর বেলা যে ফার্স্টক্লাস চা খেলি একা একা, কই আমাকে তো ডাকিসনি? আমার বুঝি আর চা খেতে ইচ্ছা করে না?
: হারামজাদা, তুই না তখন ঘুমাচ্ছিলি? তোকে কে বলল, আমি চা খেয়েছি?
: দোস্তরে, আমার এক চোখ ঘুমাচ্ছিল আর এক চোখ বাইরের বক্তৃতার ভিডিও ফুটেজ দেখছিল। হা..হা..
: চুপ শালা, একদম জবাই করে ফেলব!
: কি রে, রাহাত? তোরা দুইজন কি নিয়ে কথা বলছিস? বক্তৃতা, ভিডিও ফুটেজ, মানে কি? আমি ওইপাশে এক চাচার কথা শুনছিলাম, তাই তোদের কথা ঠিক শুনতে পাইনি।
চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে রাহাত বলল,
: আর শুনে কাজ নাই। হাজার হোক, তুই এখন বড়ভাই মানুষ!
: মানে কি?
: বাদ দে। রাশেদ শোন, মানুষ কখন মিথ্যা বলে জানিস?
: কখন? তুই বল!
: আরে ব্যাটা, যখন চুরি করে আর যখন প্রেমে পড়ে। বুঝলি কিছু?
এই কথা শুনেই ইমরান প্রায় ক্ষেপে উঠল।
: রাহাত, তোকে না চুপ করতে বললাম। ওর কথায় একদম কান দিবিনা রাশেদ। চল, যাওয়া যাক। গ্রামটা ঘুরে ফিরে দেখি।

গ্রামের রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময়, আশেপাশের গ্রামীণ পরিবেশ দেখে ধীরে ধীরে গ্রামটাকে ভালো লাগতে শুরু করল ইমরানের।
: গ্রাম অনেক সুন্দর, রাশেদ! কোনদিন গ্রাম দেখিনি তাই বুঝিনি। অবজ্ঞা করতাম।
: হুম, তোর কি হয়েছে বলত? কেমন যেন লাগছে?
: না রে, কিছু না। মাস্টার্স তো শেষ হলো। এরপর কে কোন দিকে চলে যাব। আবার কখনো এভাবে একসাথে হব কিনা, কে জানে?
: এত ভাবিস নাতো। চল, আমার ছোট চাচার বাড়ি এই..তো, সামনেই। ওদের সাথে দেখা করে আসি।
এই শুনে রাহাত ইমরানের দিকে দুষ্টুমি ভরা হাসি দিয়ে বলল,
: চল, চল। আবার কখনো এভাবে একসাথে হবি কিনা! আর কখনো দেখা হবে কিনা! তার চেয়ে এখনি গিয়ে সব কিছু ফাইনাল...
কথা শেষ হওয়ার আগেই ইমরানের হাতের বিশাল চাঁটি গিয়ে পড়ল রাহাতের মাথায়।

(২)
ছোট একটা নদী বয়ে গেছে গ্রামের পাশ দিয়ে। এককালে অনেক বড় ছিল নদীটি। এর দুই পাড় উঁচু করে বাঁধানো। এক পাড় জুড়ে বিস্তৃত ফসলি জমি। আর একপাড়ে সবুজ বৃক্ষরাজি শোভিত অঞ্চল। পাড় ঘেঁসে রাস্তা চলে গেছে গ্রামের ভিতর।
সেই রাস্তা ধরে ইমরান আর নীরা পাশাপাশি হাঁটছে।
: এইভাবে এখানে, এই দুপুর বেলা আসাটা কি ঠিক হয়েছে?
: জানি না। রাশেদ ঘুমাচ্ছিল আর রাহাত দেখলাম তোমার বাবার সাথে আড্ডা জুড়ে দিয়েছে।
: আর তাই সেই সুযোগের সুবিধা নিয়ে নিলেন?
: না, তা হবে কেন? তোমাদের গ্রামে বেড়াতে এসছি, তুমি গ্রামটা আমাকে ঘুরিয়ে দেখাতেই পারো, তাই না?
: তাই কি? নাকি আরো কিছু জানতে চান? আপনার চোখ মুখ কিন্তু অন্য কথা বলছে!
: ও, বাবা! তুমি তো দেখি চোখ মুখের ভাষা বুঝতে পার। ভাল, বেশ ভাল!
: কেন? ভুল কিছু বলেছি বলে তো মনে হয় না।
: এখন শুধু তোমার সাথে ঘুরতে এসছি। কোন জটিলতায় জড়াতে নয়।
: কিন্তু তাই বলে সেটা আড়াল করেও তো রাখতে পারছেন না।
: উফ! প্লিজ! চল তো, ওই গাছগুলোর নিচে গিয়ে বসা যাক।

গাছের ছায়ায় গিয়ে বসল ওরা। বেশ কিছুক্ষণ দুইজনেই চুপ করে থাকল। শুধু দূর থেকে কৃষকদের কথা বলার আওয়াজ, নদীর তীরে পানির আঁচড়ে পড়ার শব্দ, থেকে থেকে পাখির ডাক আর বাতাসের শোঁ শোঁ শব্দ ছাড়া চারপাশটা কেমন নীরব, নি:শ্চুপ, শুনশান হয়ে রইল।
: কি ব্যাপার? কিছু বলছেন না যে?
: দেখ! কি দারুন তাই না!
: কি?
: এই যে, সবকটা গাছের ফাঁকেফাঁকে সূর্যের আলো এসে ছায়াঘেরা জায়গায় কি সুন্দর প্যাটার্ন তৈরি করেছে। আবার সেগুলো বাতাসে পাতার তালে তালে দুলছে।
: আর সামনের এই নদী, ওই দূরে যতদূর চোখ যায় শুধু ফসল আর ফসল।
: এমন একটা জায়গায় ঘর বানিয়ে থাকতে পারলে মন্দ হত না, কি বল?
: আপনার ঘর আপনি বানাবেন। আমাকে বলছেন কেন?
: হুম, সেটাই।... আচ্ছা, আমরা তিনজন, শুধু দেখা করতে গিয়ে তোমাদের বাসায় একেবারে দুপুরের খাওয়া সেরে ফেললাম, খুব অসুবিধা করে ফেলেছি, তাই না?
: কই, অসুবিধার কিছু দেখলেন কি? বরং আপনার তো সুবিধা বেশি হল।
: খোঁচা মেরে কথা বলা কি তোমার অভ্যাস?
: হ্যা, তাই তো দেখতে পাচ্ছেন।
: তুমি আর রাশেদ আপন কাজিন, ওদের এত বড় বাড়ি, তারপরেও তোমরা আলাদা থাকো কেন?
: ওমা, আপনি দেখছি এখন ইতিহাস ঘেঁটে আমাদের খোঁজ খবরও নেয়া শুরু করে দিয়েছেন!
: কি যে বল? আমি কি এমনি জানতে চাইতে পারিনা!
: যেটা জানতে চান সেটা সরাসরি বললেও তো পারেন। অত ইতিহাসে আগ্রহ দেখাচ্ছেন কেন?
: জিজ্ঞেস করলাম, তোমার ইচ্ছা হলে বল। বলতে না চাইলে থাক।
: তেমন কিছু না, দাদার সাথে আমার বাবার ভাল বনিবনা ছিল না। প্রায়ই ঝগড়া চলত দুইজনের। বড় চাচাকে আবার দাদা খুব পছন্দ করত। বাবার আবার সেটা সহ্য হত না। আর আমার বাবার রাগ, অভিমান খুব বেশি। একদিন দাদার সাথে তুমুল ঝগড়া ফ্যাসাদ করে বাবা আলাদা হয়ে যায়। দাদা মারা গেছে সেই কবে, কিন্তু বাবা আর ওই বাড়িতে ফেরেনি। চাচা অনেক জোর করেছিল, তাও গেলনা।
: রাশেদের বাবা মারা যাওয়ার পর তোমরা ভাইবোনেরা কিছু বলনি?
: বলেছি। তাও কাজ হয়নি। চাচি একা বাড়িতে থাকে, তাই আমি প্রায়ই এসে থাকি।
: ওরে বাবা! একজন লোকের এত রাগ!
: সেজন্যই তো, যা করবেন, প্লিজ, ভেবে চিনতে করবেন।
: শুধু আমার কথা বলছ? অত রাগ করেও তো সকালবেলা চা খাওয়ালে। আর, একবার বলাতেই এই দুপুরবেলা আমার সাথে একা ঘুরতে চলে আসলে। এত কিছুর পর কি বুঝব আমি? বল?
: কিছুই বুঝতে হবে না। চলুন যাওয়া যাক।
: এখনি! আর একটু থাকি।... তুমি তো গানও গাইতে পারো। বাড়িতে দেখলাম হারমোনিয়াম, তবলা সবই আছে। এইরকম পরিবেশে একটা গান হলে বেশ হত। এখন একটা গান শোনাবে, প্লিজ। (....চলবে)

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে জুন, ২০১৭ সকাল ৯:১৯

সামু পাগলা০০৭ বলেছেন: শেষে চলবে লিখেছেন। হ্যাএএ, প্লিজ চলান। জলদিই পরের পর্বগুলো দিন। বেশ মজার লাগছে পড়তে! :)
শুভেচ্ছা!

২২ শে জুন, ২০১৭ দুপুর ২:২৩

না মানুষী জমিন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। শীঘ্রই পেয়ে যাবেন পর্বগুলো।

২| ২২ শে জুন, ২০১৭ সকাল ৯:৪৮

অশ্রুকারিগর বলেছেন: ফ্ল্যাশব্যাকে ভালোই তো চলছিল। তাড়াতাড়ি সব পর্ব দেন, একটু একটু করে পড়তে ভালো লাগে না।

২২ শে জুন, ২০১৭ দুপুর ২:২৩

না মানুষী জমিন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। শীঘ্রই পেয়ে যাবেন পর্বগুলো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.