নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পরের জায়গা, পরের জমি, ঘর বানাইয়া আমি রই। আমি তো সেই ঘরের মালিক নই।

না মানুষী জমিন

পরের জায়গা, পরের জমি, ঘর বানাইয়া আমি রই। আমি তো সেই ঘরের মালিক নই।

না মানুষী জমিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ নীরা (তৃতীয় পর্ব)

২২ শে জুন, ২০১৭ দুপুর ২:৩০

(১)
: উম! দারুন! গরম গরম তেলের পিঠা। হেব্বি টেষ্ট! খালাম্মার হাতের জবাব নেই।
: হুম! আমি তো বাড়ি এলেই খাই। এবার সব তোদের খাওয়াব, আমার মায়ের হাতের রান্নার যত জাদু আছে, সব!
: আমি তো সেই খাওয়া খাচ্ছি! কিন্তু রাজপুত্তুরের যে কোন খবর নাই, সে খেয়াল আছে তোর?

: তাই তো! কোথায় গেল বলতো? বিকালেই তো ছিল। আশ্চর্য!
: আরে, তুই তখন, বাজারে গেলি না! এরপরেই ও বেরিয়েছে।
: সে তো বিকেল বেলা! এখন তো সন্ধ্যা হয়ে গেছে! একা একা কোথায় ঘুরছে?
: এত টেনশন করছিস কেন? টুরিস্টের সাথে একজন গাইডও আছে! চিন্তা করিসনা।
: কে? নীরা! তাহলেই হয়েছে। এমনিতেই গ্রামের লোক কথা ছড়ানোর তালে থাকে। এখন যদি দেখে ওরা দুইজন সন্ধ্যা পর্যন্ত একসাথে...
: ওই তো, এসে গেছে ওরা! তুই খালি খালি...
: কি রে কোথায় গিয়েছিলি তোরা, এভাবে, সন্ধ্যা পর্যন্ত?
: আ: এসেই তো গেছে। আবার খামোখা জিজ্ঞেস করার কি আছে?..এই ইমরান, বস তো আমার পাশে। খেয়ে দেখ, দারুন পিঠা।
: নীরা, যা, গিয়ে মাকে একটু হেল্প করনা।...তোরা বস, আমি একটু আসছি।... .

...বলেই রাশেদ বাইরে চলে গেল। ইমরান চুপচাপ বসে পিঠা খেতে লাগল। রাহাত জানলার বাইরে তাকিয়ে থেকে হালকা শিস দেওয়ার চেষ্টা করে বার বার ইমরানের দিকে তাকাচ্ছিল।
: কি রে? বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কোথায় ছিলি?
: কোথাও না। এই, আশেপাশেই ছিলাম।
: হুম, আর দুপুরবেলা? কি গান শোনাচ্ছিল? রবীন্দ্র সংগীত নাকি হিন্দি আইটেম সং!! কোনটা?
: তুই কি আমার উপর স্পাইগিরি শুরু করেছিস নাকি?
: কি যে বলিস? জানের দোস্ত প্রেম করবে, আর তার প্রটেকশন দেয়া লাগবে না!
: হারামজাদা, আমি চেয়েছি তোর প্রটেকশন!
: রেগে যাচ্ছিস কেন? দেখ, তোদের দুইজনের ব্যাপারটা আমার কিন্তু খারাপ লাগছে না। হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে, নীরা রাজিও হয়ে গেছে। কিন্তু রাশেদ কিভাবে নেবে সেটাও দেখার দরকার!
: কেন? অতসব ভাবলে কি চলে?
: না। আমি তা বলছিনা। আমার কেবল মনে হচ্ছে এই সময় আর এই পরিবেশটা ঠিক উপযুক্ত না।
: তাতে কি হয়েছে? তাই বলে কি...
: শোন, কয়দিনের জন্য বেড়াতে এসে হঠাৎ এইরকম সম্পর্কে জড়ানো কি ঠিক হচ্ছে? আর তাছাড়া...
: তাছাড়া কি? বল?
: দুপুরে রাশেদ যখন ঘুমিয়ে পড়ল, তখন আমি ইচ্ছা করেই নীরার বাবার সাথে আড্ডা শুরু করেছিলাম। যাতে তোরা বের হতে পারিস। পরে যদিও আমি তোদের দুইজনকে ফলো করেছিলাম। কিন্তু ওর বাবার সাথে কথা বলে একটুও ভাল লাগেনি। খুব রগচটা মানুষ। সবকিছুর উল্টো মানে করে। এখন তোদের ব্যাপারটা নিয়ে বড় কোন ঝামেলা হয়ে গেলে, তখন আমাদের এতদিনের বন্ধুত্বটাও নষ্ট হয়ে যাবে। সেটা কি ভাল হবে?
: দেখ, ওর বাবার বিষয়টা আমি জানি। কিন্তু তাই বলে নিজেকে তো আর ঠকাতে পারব না। নীরা কেও না। তাছাড়া ওর বাবাও জানে না আমার ফ্যামিলি স্ট্যাটাস।
: যা ভাল বুঝিস তাই কর।
: দূর, কি বানিয়েছে এইসব হাবিজাবি পিঠা! ফালতু একদম!
: এখন তো প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিস। অন্য কিছু খেতে কি আর ভাল লাগবে!
: চুপ করবি তুই! দেখ তোর ফোনটা বাজছে।
: হুম, দেখছি।
: কি রে! কে ফোন করেছে? ও, বাবা! তোর আবার কি এত গোপন কথা, একেবারে বাইরে গিয়ে কথা বলছিস!
: আ: ইমরান; থাম না, জরুরি কল।
বারবার রান্না ঘরের দিকে উঁকিঝুঁকি মেরে, ইমরান পিঠা সাবাড় করাতে মন দিল।

(২)
এর এক দিন পর, বিকেলবেলা :

অত্যন্ত অস্হির ভাবে বারান্দা আর ঘরে বাইরে পায়চারি করছে রাশেদ। রাহাত বসে রয়েছে মিউজিয়ামে রাখা পাথরের মূর্তির মত। এইরকম একটা কাজ ইমরান কিভাবে করতে পারল, তা কোনভাবেই মাথায় আসছে না! গ্রামের নানান জনে বারবার ফোন করতে থাকল আর রাশেদ এটা সেটা বুঝিয়ে যাওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করে চলল। গতকাল বিকেলের পর থেকে ইমরান আর নীরা, দুইজনের কোন খোঁজ মিলছে না!

: রাশেদ, প্লিজ! একটু শান্ত হয়ে বস। আশেপাশে লোক তো লাগিয়ে দিয়েছিস, দেখনা ওরা কি নিউজ আনে?
: না রে! আমি আর নিতে পারছি না।
: কাল রাতে ঘুমাসনি, এদিক ওদিক খুঁজে বেড়িয়েছিস। সকাল থেকে ভাল করে কিছু খাসনি। এখন কিছু খেয়ে, বিশ্রাম নেয়ার চেষ্টা কর।
: চুপ! কোন কথা বলবি না! সব দোষ তোর। তুই ইমরান কে সাপোর্ট দিয়েছিস। আর আমাকে বোকা বানানোর চেষ্টা করেছিস।
: দেখ! তুই অযথা ভুল বুঝছিস। কোন বন্ধু প্রেমে পড়লে, সবাই সাপোর্ট দেয়। আর তুই আমাদের বন্ধু, নীরার বড়ভাই। তাই মনে হয়েছে, কোন সমস্যাই হবে না। পরে তোকে সব বুঝিয়ে বলা যাবে।
: ও, সেজন্য পরশুদিন সন্ধ্যায়; যখন বাড়ির বাইরে থেকে ফোন দিয়ে আমার সন্দেহের কথা তোকে বললাম, তখনো তুই আমাকে এটা সেটা বুজিয়ে দিয়েছিস।
: হুম, তাই বলে ইমরান এমন কাজ করবে সেটা বুঝব কি করে বল!
: শোন, এই বাড়িতে থেকে তুই আসল অবস্থাটা ঠিক বুঝতে পারছিসনা। ব্যপারটা নিয়ে গ্রামের ভিতরে অনেক ঘোলাটে পরিস্থিতি...

কথাটা শেষ হওয়ার আগেই হুট করে ইমরান এসে হাজির। ওকে দেখামাত্রই রাশেদ নিজেকে আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারল না। দুই হাতের সমস্ত শক্তি দিয়ে ওর শার্টের কলার চেপে ধরল।

: বল, কি ক্ষতি করেছি আমি তোর? এতবড় কান্ডটা কেন করলি? বল? জবাব দে?
: রাশেদ, প্লিজ! থাম। এভাবে হবে না। ওকে বলতে দে। কিরে তুই একা? নীরা কোথায়?
: তুই, চুপ করে আছিস কেন? কথা কানে যাচ্ছে না? আমার মাথায় কিন্তু খুন চেপে গেছে! কোথায় ছিলি কাল? কি করেছিস?
: আমি খুব টায়ার্ড। সব কথা এখন বলতে পারবনা। পরে সব বলছি।
: মানে! কি ভেবেছিস তুই নিজেকে? আমরা কি তোর সাথে ইয়ার্কি করছি? দেখ, ইমরান, ভাল হবে না বলছি! ভালই ভালই সব বলে দে। এক্ষুনি বল।
: রাশেদ, তুই একটু শান্ত হয়ে বসতো। এত উত্তেজিত হলে শেষে তুই নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়বি।
: না না, ঠিক আছি আমি।
: কি রে! তুই তো আমাদের কথার কোন গুরুত্বই দিসছিস না। এমন ভাব করছিস যেন, কিছুই হয়নি!
: বললাম না, আমি টায়ার্ড।
: যতই টায়ার্ড হ, তোর এখনি সব বলা উচিত। গ্রামে এই নিয়ে অলরেডি অনেক ঝামেলা হয়ে গেছে। পুরো প্রেশারটা স্বাভাবিকভাবে, রাশেদের উপরেই আসছে।
: ঠিক আছে বাবা, আমাকে একটু ফ্রেশতো হতে দিবি।
: ঠিক আছে। নীরা কোথায় আছে, সেটা তো অন্তত বল?
: নীরাকে ওদের বাসায় দিয়ে এসেছি। আর, গ্রামের লোকজন না হয় ভুল বুঝছে, সেটা স্বাভাবিক। তাই বলে তোরাও! এদ্দিনে এই চিনলি আমাকে! বাদ দে। তোরা বস, আমি আসছি। তারপরেই সবকিছু বলছি।

ঠিক তখনি গ্রামের একদল লোক হইচই করে রাশেদের বাড়ি এসে হাজির হল। চিৎকার চেঁচামেচি করে সবাই বিশৃঙ্খল এক পরিস্হিতি সৃষ্টি করল। কেউ কেউ জোর করে বাড়ির ভিতরে ঢুকে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। কিছুতেই তাদের শান্ত করা যাচ্ছিল না। তাদের এক কথা, ইমরান তাদের গ্রামের মেয়েকে নিয়ে যে জঘন্য কাজটা করেছে, তার কোন ক্ষমা নাই। তাকে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হোক। তারাই যা করার করবে। রাহাত আর রাশেদ মিলে যতই তাদের থামানোর চেষ্টা করছে, তারা তত বেশি উত্তেজিত হয়ে উঠছে। কোন কথাই তারা শুনতে রাজি নয়। শেষে গ্রামের লোকজনই ঠিক করল, তারা শালিস ডাকবে। আর সেটা হবে চেয়ারম্যানের বাড়িতে। সেখানেই সবকিছুর ফয়সালা হবে। প্রয়োজনে পুলিশের সহায়তা নেয়া হবে। যেহেতু চেয়ারম্যান এখন গ্রামে নেই, তাই রাতে তিনি আসামাত্রই শালিস শুরু করবে। দেরি করা ঠিক হবেনা।... (চলবে)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.