নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পরের জায়গা, পরের জমি, ঘর বানাইয়া আমি রই। আমি তো সেই ঘরের মালিক নই।

না মানুষী জমিন

পরের জায়গা, পরের জমি, ঘর বানাইয়া আমি রই। আমি তো সেই ঘরের মালিক নই।

না মানুষী জমিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

রতন ফটো স্টুডিও (পর্ব ১)

০৯ ই জুলাই, ২০২০ বিকাল ৪:০২


(১)
বাসে করে ঢাকা থেকে ফিরছি। ঢাকার অদূরেই আমার বর্তমান চাকরি স্থল। সঙ্গত কারনেই জায়গার নামটা উল্লেখ করলাম না। তবে বলা যায় না, কোন এক ফাঁকে টাস করে বলেও ফেলতে পারি।
নানান জায়গায় বদলি হতে হতে আপাতত এই জায়গায় এসে পড়লাম। যেহেতু ঢাকার কাছাকাছি চলে আসছি , তাই আশা করছি নেক্সট টাইম ঢাকাতেই হবে হয়ত। সে মত কথাও বলে রেখেছি। পরেরটা পরে দেখা যাবে। আর তাই ফ্যামিলি ওখানেই রেখেছি। আমার ছোট ফুফাতো বোন আর আমরা পাশাপাশি ফ্ল্যাট নিয়েছি। যত কষ্টই হোক, বাচ্চাদেরতো ভাল স্কুলের দরকার আছে। প্রতি সপ্তাহে না হলেও, অন্তত দুই তিন সপ্তাহ পরপর অবশ্যই যাই। আমার পরিবার কষ্ট করে এখন আর মফস্বল এরিয়ায় থাকতে রাজি নয়। অনেক তো হল! এখন রাজধানীর চাকচিক্য তাকে খুব টানছে।
তবে গ্রাম মতন মফস্বলের এই জায়গায় একা একা থাকতে খুব একটা খারাপও লাগেনা। বছর দুই হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে তাই সবার সাথে বেশ জমিয়ে ফেলেছি। মফস্বল হলেও জায়গাটা কিন্তু বেশ জমজমাট। এই কারনে অফিসের পরের সময়টা ভালই কাটে। কয়েকটা সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জোনাল অফিস আর বড় একটা বাজার আছে এখানে। সাথে মসজিদ, মন্দির, হাই স্কুল, কোনটারই কমতি নেই। এমনকি বাজারের সাথে লাগোয়া দুই তিনটা ফটো স্টুডিও আর ফটোস্ট্যাট মেশিনের দোকানও আছে! অনেক মফস্বল এলাকায় অন্যান্য অনেক কিছু থাকলেও, এইসমস্ত দোকান এখনও অনেক জায়গায় খুব বেশি পাওয়া যায় না। অথবা, ভালো সার্ভিস দিতে পারে না। অনেক দূরে বা সদরে গিয়ে কাজ সেরে নিতে হয়। তবে পরিবর্তনের হাওয়াও কিন্তু লাগতে শুরু করেছে।
এই গল্পের মূল চরিত্র রতন, তারও একটা নিজস্ব ফটো স্টুডিও রয়েছে। আগে ছিলনা, এখন হয়েছে। কত বয়স হবে ওর? এই ধরুন, তেইশ কি চব্বিশ। যেমন ভাল ছবি তুলতে পারে, তেমন ফটোশপের কাজও ভালই পারে ছেলেটা। একজনের ঘাড়ে আরএকজনের মাথা বসিয়ে সুন্দর ছবি বের করতে পারে সে। তাই অফিসিয়াল ছবির জন্য এখন আর কষ্ট করে টাই পরে ছবি তোলা লাগেনা। অন্যরা পারলেও রতন কাজগুলো অনেক যত্নসহকারে করে। কাজের মান অনেক ভাল। আর ব্যবহারও খুব অমায়িক ছেলেটার।
উপরওয়ালা যাদের বেশি করে ধন-দৌলতের সুখ থেকে বঞ্চিত রেখেছেন, তাদের গভীর ক্ষতযুক্ত কষ্টগুলোর আড়ালে হয়ত অমায়িক ব্যবহার আর সবসময় মুখে সুন্দর একটা হাসি লেপ্টে দিয়েছেন। যাতে আমরা বাইরে থেকে সেটা টের না পাই।
রতনের সাথে আমার প্রথম পরিচয় এমনি একদিন ঢাকা থেকে ফেরার পথে। তখন নতুন নতুন জয়েন করেছি মাত্র। মাঝ রাস্তায় গাড়ি খারাপ হওয়ায় নেমে গিয়ে একটা লোকাল বাসে উঠে পড়ি। কিছুসময় দাঁড়িয়ে থাকার পর একটা সিট খালি পেয়ে সাথে সাথে বসে পড়লাম। মাঝরাস্তায় গাড়ি খারাপ হওয়ার মত ঝক্কি আর নেই।
পাশে বসে দেখলাম, হাতে প্যাকেট নিয়ে একটা ছেলে জানলার পাশে তাকিয়ে রয়েছে। বাতাসে তার চুলগুলো উড়ছে। ফর্সা, দেখতে মায়াবী মত চেহারা। দেখলেই মনে হয়, বয়স তেমন বেশি না। ভাড়া দেয়ার সময় বুঝলাম আমরা একই গন্তব্যের যাত্রী। বোর ফিল করছিলাম, তাই কিছুক্ষণ পর যেচে কথা বলতে লাগলাম। নাম জিজ্ঞেস করলে পর জানালো, ওর নাম রতন।
: রতন, কি করেন আপনি?
: আপনি অনেক সিনিয়র। প্লিজ তুমি করে বলবেন আমাকে।
: ও আচ্ছা, ঠিক আছে।
: আমি একটা ফটোস্টুডিওতে কাজ করি।
: হুম, বাজারে দেখলাম কয়েকটা দোকান আছে। তা, এই প্যাকেটটা বুজি...
: হ্যাঁ, এখানেতো সেরকম ভাল প্রিন্ট হয়না। তাই সদরে যেতে হয়। ছবি তোলা আর কিছু এডিটিং এর কাজ করি। বাদবাকিগুলো সদরেই করতে হয়।
: তা, এখন যে দোকানে আছো, কতদিন হল?
: আমি প্রথম এই দোকানেই কাজ শিখি। সেটা প্রায় সাত-আট বছর আগে। কিন্তু তার এক দেড় বছর পর দোকানের মালিক বিদেশ চলে যায়। তখন পাশের আরেকটা দোকানে কাজ করি।
: ও, তারপর?
: সেই মালিক ততটা ভাল ছিল না। তিন বছর পর এখন যে মালিক, শফিক চাচা, উনি বিদেশ থেকে ফিরে আবার দোকান শুরু করে। তাই আমি আবার তার কাছে কাজ করতে থাকি।
: আচ্ছা, আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করাতে তুমি এতগুলো কথা আমাকে বলছ, তাও প্রথম দেখাতেই!
: আসলে, আমি আপনাকে কয়েকবার বাজারে দেখেছি। আপনি হয়ত খেয়াল করেননি।
: ও, তাই বল! আমি কদিন হল মাত্র তোমাদের এখানে ট্রান্সফার হয়ে এসেছি।
: হুম। আসবেন দোকানে। আসলে খুশি হব।
: ঠিক আছে, আসব। কিন্তু তুমি অত কম বয়স থেকে এই কাজ করছ! কারণ কি?
: কি আর বলব, বলুন। সে অনেক কথা! আসলে.... আরে, আমরা তো আমাদের স্ট্যান্ডে এসে পড়েছি। চলুন, নামা যাক। দোকানে আসবেন একদিন। তখন কথা বলা যাবে।
এই ছিল তার সাথে আমার প্রথম আলাপ। মায়াবী মুখটায় একটা অমলিন হাসি দিয়ে সেদিনের মত বিদায় নিল সে।
ও, হ্যাঁ, ভাল কথা! এতক্ষণতো বলতেই ভুলে গিয়েছিলাম। এই জায়গাটার মত রতনের অরিজিনাল নামটাও অপ্রকাশিত রাখলাম। ছদ্মনাম দিলাম। সেটা ওর অনুরোধেই। আপনারা যেমন পড়ছেন, তেমন পড়তে থাকুন। দয়া করে বারবার নামটা জিজ্ঞেস করবেন না। তাহলে হয়ত মুখ ফসকে বলেও দিতে পারি! সেটা মনে হয়, ভাল দেখাবে না। আর নামে কিইবা আসে যায়। তবুও টাইটেল সহ ছদ্মনামটা বলা যায়। ওর নাম রতন কুমার ঘোষ।
(২)
এরপর কয়েকদিন ব্যস্ততার কারনে, রতনের কথা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম। ওর সাথে বাজারে কোনভাবে দেখা হয়ে যাবে, সেরকমও কিছু হয়নি।
একদিন বিকাল বেলা স্কুল মাঠে বসে কয়েকজন কলিগ আড্ডা দিচ্ছিলাম। একসময় দূর থেকে সাইকেল চালিয়ে রতনকে আসতে দেখে, হাত দিয়ে ইশারা করলাম। কাছে আসতেই নিজেকে আড্ডাচ্যুত করে ওর দিকে গেলাম।
সেই হাসি মাখা মুখে সে বলল, "কেমন আছেন? আপনি তো দোকানে আসবেন বলে, আরতো এলেন না।"
ছোট্ট করে বললাম, " ব্যস্ত ছিলাম।"
রতন বলল, " আমিও মাঝে কয়দিন এখানে ছিলাম না। "
বললাম," ও, তাই নাকি!"
দুজনে হাঁটতে হাঁটতে প্রায় বাজারের কাছাকাছি চলে আসলাম। সাইকেলটা সাথে নিয়েই রতন হাঁটছিল।
" চলুন, চা খাই।"
" হুম, চল।"
চা খেতে খেতে ওকে জিজ্ঞেস করলাম," ওই দিনতো আর শোনা হয়নি। আজকে বল। অবশ্য যদি কিছু মনে না কর, তাহলে!"
সে বলল, " না, মনে করার কিছু নাই। কিন্তু এটা বুঝতে পারছি, আপনার আগ্রহ অনেক বেশি। কারণটা কি জানতে পারি?"
বললাম," অবশ্যই। কেন নয়! কিন্তু সেটা অন্য একসময় বলব। আজকে তোমারটা জানতে চাই।"
চা-টা শেষ করে রতন আমার কৌতুহল মেটাতে মনোনিবেশ করল। বুঝলাম, আমার যেমন জানার ইচ্ছাটা প্রবল; ঠিক তেমনি তার বলার আগ্রহেরও কমতি নেই। এই মুহূর্তে সেই কারণটা জানতে না পারলেও, এইটা অনন্ত বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না যে আমাদের দুইজনের মধ্যেই একটা আস্থার জায়গা তৈরি হচ্ছে এবং সেটা অল্প সময়ের পরিচয়েই। যাক, এখন অত কারণ আর ব্যাখ্যা নিয়ে সময় নষ্ট নাইবা করলাম।
" আমি কিন্তু মাত্র ক্লাস নাইন পাশ।", বলল রতন।
অবাক হয়ে বললাম, " তাই নাকি! তোমাকে দেখেতো সেটা মনে হয়না। কিন্তু কেন? "
" আপনি অনেক শিক্ষিত লোক। আমি ক্লাস নাইন পাশ জেনে আর হয়ত আমার সাথে কথা বলবেন না, তাই না?" মুখটা ফ্যাকাশে করে রতন বলল।
উত্তরে আমি বললাম," না, না, তা হবে কেন! কিন্তু কি জানতো, লোকজন লেখাপড়া না করলে বা কম করলে সেটা আমার ঠিক ভাল লাগেনা। কিন্তু তুমি কেন সেই দলে?"
" আমি যখন ক্লাস এইটে পড়ি, সেই সময় আমার মা অ-নেক অসুস্থ হয়ে পড়ে।"
" ও! তারপর?"
" তারপর...আসলে, প্রথম প্রথম তো বুঝা যায়নি। বিভিন্ন সময় সদরের বিভিন্ন ডাক্তার দেখানো হয়েছে। পরে ঢাকায় নিয়ে গিয়ে জানা গেল, ক্যান্সার।"
" মাই গড! তারপর কি হল?"
"ওখানে বেশ কিছুদিন চিকিৎসা চলেছিল। ক্যান্সারের তো অত ভাল চিকিৎসাও ছিল না। ততদিনে টাকা-পয়সাও কম খরচ হয়নি।"
আমি বললাম," তোমাদের কোন রিলেটিভের কাছ থেকে সাহায্য নাওনি?"
" ও, হ্যাঁ! আপনাকে তো বলা হয়নি। আমার দাদু-ঠাকুমা মানে দাদা-দাদী আমাদের সাথে আছে। বড় জ্যাঠা সদরে বাড়ি করে আলাদা থাকে। আমাদের খোঁজ খবর তেমন নেয় না। এক পিসি মানে ফুফু, তারও বিয়ে হয়ে গেছে অনেক আগেই। সেই বিয়েতেও নাকি অনেক ধারদেনা হয়েছিল।" রতন বলল।
" জায়গাজমি কিছু ছিলনা?"
" ছিল। পরে পাড়ার লোকজন, আত্মীয়-স্বজন পরামর্শ দিল কলকাতা নিয়ে যেতে। সেখানে আমার দুই মামা থাকে। বাবা জায়গাজমি যা ছিল বেশিরভাগ সে সময় বিক্রি করে মাকে মামাদের কাছে নিয়ে গেল। আমি রয়ে গেলাম এখানে দাদু-ঠাকুমার কাছে। আমি তখন ক্লাস নাইনে। আর সেই সময় শুরু হল আমার কষ্টের দিনগুলো।"
" না, মনটাই খারাপ হয়ে গেল।"
" জানেন! এর আগে কষ্ট কি জিনিস সেটাই জানতাম না। আর সব বাচ্চাদের মত আমার শৈশবটাও অনেক মধুর ছিল। সারাদিন কত মজা করে বেড়াতাম। যখন যা চেয়েছি তাই পেয়েছি। আর্থিক কোন সমস্যা ছিল বলে মনে হয়নি। বাবা যেমন ব্যবসা করত, ঠিক তেমনি জায়গাজমিও ছিল ভালোই। কখনো খাওয়া পড়ার অভাব ছিল না। একমাত্র সন্তান বলে মা কখনো চোখের আড়াল করত না। কি আদর যত্নটাই না করত!" বলেই রতন উদাস মুখে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকল।
আমিও পশ্চিমাকাশে গোধূলির শেষ রক্তিম আভাটার দিকে তাকিয়ে চুপ করে রইলাম। বুকটার মধ্যে কেমন হুহু করতে লাগল। আসলে যার হারিয়ে যায়, সেই শুধু বোজে কেমন লাগে।
নীরবতা ভেঙ্গে রতন বলে উঠল, " আমার বাবা, জ্যাঠা দুইজনই নাকি ভালো ছাত্র ছিলেন। এমনকি আমার মা, সেও পড়ালেখা জানত। ক্লাস এইটেও আমার রেজাল্ট অনেক ভালো ছিল। অংক খুব ভালো পারতাম আমি। অনেক পড়ালেখা করার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু আজ দেখুন, আমি কোথায় পড়ে আছি।" বলেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
" রতন, চল। সন্ধ্যা হয়ে গেছে। মন খারাপ করো না। "
" না, এখন সব অভ্যেস হয়ে গেছে। আরো অ-নে-ক ঘটনা আছে। শুনলেত আক্কেলগুড়ুম হয়ে যাবে আপনার। সেটা আরেকদিন বলব। চলুন, যাওয়া যাক।"
(৩)
আমার ছোট ছেলেটার হঠাৎ করে টাইফয়েড ধরা পড়ল। ছুটি নিয়ে ঢাকায় রয়ে গেলাম বেশ কিছুদিন। রতনের সাথে তাই দেখা সাক্ষাৎ সাময়িক বন্ধ। গত কয়দিনে অবশ্য ওর সাথে দেখা করতাম সময় পেলেই। দোকানে গিয়ে বসে বসে ওর কাজ দেখতাম। ভাল একটা হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক হয়ে গেল। বয়সের এই অসম বন্ধুত্ব অনেকের কাছেই চক্ষুশূল হয়ে দাঁড়ালো।
আমার অসুস্থ ছেলেটাকে এখন কোলে নিয়ে হাঁটছি বাসার বারান্দায়। ব্যাপারটা মোটামুটি রুটিনে দাঁড়িয়ে গেছে। নাহলে ঘুমায় না ছেলেটা। এখনও গায়ে বেশ জ্বর। অনেকক্ষণ ধরে কান্নাকাটি করে, এখন কি পরম নিশ্চিন্তে আমার গলা জড়িয়ে ঘুমাচ্ছে! ওর দিকে তাকালেই একটা কথা বারবার মনে হতে লাগল। আচ্ছা, আমার যদি কখনো কিছু হয়ে যায়, তাহলে রতনের মত ওদের ও লেখাপড়া, আদর যত্ন সব হারিয়ে যাবে না তো! অনেক কিছু থাকার পরও শুন্যতা বুকে নিয়ে বেঁচে থাকতে হবে না তো!
এরমধ্যেই একদিন কি হল! আমাকে অসম্ভব অপ্রত্যাশিতভাবে হতবাক করে দিয়ে; আমার ঢাকার বাসায় রতন এসে হাজির বিনা নোটিশে। ব্যাপার কি জিজ্ঞেস করাতে বলল, আমার ছেলেকে দেখার জন্য নাকি চলে এসেছে।
একসাথে খেতে বসে কথা হচ্ছিল ওর সাথে। জানালো, এখন সে নিজেই নাকি দোকান দিবে। আমার পরামর্শ জানতে চায়।
বললাম," কই! কয়দিন আগেও তো তোমার সাথে কথা হচ্ছিল। তখন তো কিছু বললে না।"
" না, আসলে অনেকদিন থেকেই মনে মনে চাইছিলাম নিজের একটা দোকান হোক। তবে এর মধ্যেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম। কিছুদিনের মধ্যে পাশের একটা দোকান খালি হচ্ছে তো তাই। ",বলল রতন।
আমি বললাম," টাকা পাবে কোথায়?"
সে বলল, তার বাবা নাকি টাকা পাঠাবে।
বললাম, "টাকা পাঠাবে মানে! কোথায় সে?"
ও জানালো, হরিপদ ঘোষ, মানে রতনের বাবা নাকি কলকাতায় থাকে।
ওর কথা শুনে আমি অবাক হয়ে বললাম, "দেখো রতন, তোমার মাকে কলকাতা নিয়ে যাওয়ার পর কি কি হয়েছিল সেটা কিন্তু আর জানা হয়নি। দোকানে প্রায়ই সময় কাষ্টমার থাকে, দোকানের মালিক থাকে। সেজন্য আর জিজ্ঞেসও করিনি। তাই তোমার ভাষায় আমার আর আক্কেলগুড়ুম হওয়াটা সম্ভব হয়নি। এখন যদি সবটা বল, আমার কৌতুহলটাও কমে আর সবদিক বিবেচনা করে একটা পরামর্শও দেওয়া যাবে। তোমার বাবা এখন কি অবস্থায় আছে, কিছুইতো জানি না। আশা করি বুঝতে পারছ আমার কথা।"
আমার কথায় রতন সায় দিল। খাওয়া দাওয়া শেষ করে, সে আ-বা-র আমাকে সাথে করে নিয়ে তার সেই অতীতে ফিরে গেল।
"মাকে নিয়ে বাবা কলকাতা চলে যাওয়ার পরে আমি খুব একা হয়ে গেলাম। দাদু-ঠাকুমা দুইজনেই সাধ্যমত চেষ্টা করতে লাগল আমাকে সঙ্গ দেওয়ার। কিন্তু কদিন না যেতেই বুঝতে পারলাম ভালমত খাওয়ানো পড়ানোর সামর্থ্যটুকুই তারা হারিয়ে ফেলেছেন। আগের মত আদর যত্ন আর কিভাবে সম্ভব। কারণ মায়ের জন্য বাবা বেশিরভাগ বিক্রিবাট্টা করে উল্টো অনেক ধারদেনা করে রেখে গেছেন। আর্থিক সংকট, নিঃসঙ্গতা সব মিলিয়ে ঐ বয়সেই আমি মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়তে শুরু করলাম। আর ওরা আড়ালে চোখের জল ফেলত। মায়ের খবরাখবর আসলে মনটা আরো খারাপ হয়ে যেত।", বলল রতন।
"হুম, তারপর?।"
"এরকম অবস্থায় একদিন শফিক চাচা, যিনি বাবার বন্ধু হন, বাড়িতে এসে দাদুকে বুঝাতে লাগল আমাকে যেন তার দোকানে কাজ করতে বলে। কি করব কিছু ভেবে না পেয়ে রাজি হয়ে গেলাম।"
"প্রথম প্রথম ফায়-ফরমায়েশ খাটলেও আস্তে আস্তে ক্যামেরার কাজ শিখতে লাগলাম। ছবি তুলতে কিন্তু ভালই লাগত। খুব মজা পেয়ে গেলাম কাজটাতে। স্টুডিওতে মানুষ জনের ছবি তুললেও আড়ালে আবডালে আশেপাশের অন্যান্য ছবিও তুলতাম।", বলল রতন।
"কিন্তু এরমধ্যে তুমি তোমার মাকে দেখতে যাওনি?" বললাম আমি।
" হুম, গিয়েছিলামতো। শফিক চাচা পাসপোর্ট, ভিসা সবকিছু ঠিকঠাক করে দিয়েছিল।"
"ও, তারপর?"
" কলকাতায় গিয়ে যখন মাকে প্রথম দেখলাম, তখন দেখামাত্রই আমি ভীষণ ভয় পেয়ে গেলাম। এই কি চেহারা হয়েছে আমার মায়ের! মাত্র ক'মাসে একটা মানুষের শরীর এত বদলে যেতে পারে! লক্ষী প্রতিমার মত দেখতে আমার মায়ের সমস্ত শরীর তখন শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। মাথায় একটাও চুল নেই। অজান্তেই আমার চোখ দিয়ে গরগর করে জল পড়তে লাগল। এতদিন পর নিজের ছেলেকে কাছে পেয়ে আমার মাও আবেগ সামলাতে পারলো না। হাউমাউ করে কাঁদতে লাগল আমাকে জড়িয়ে ধরে।"
" কতদিন ছিলে তুমি ওখানে?" আমি জিজ্ঞেস করলাম।
" মাসখানেক ছিলাম। ভিসার ঝামেলা-টামেলা ছিল তাই।"
" তুমি যখন গিয়েছিলে তখন কয়টা কেমো দেওয়া হয়েছিল, তোমার মায়ের?"
" দুইটা। বাবা বলেছিল আরো নাকি দিতে হবে।"
" কিন্তু তাতে অবস্থার পরিবর্তনের কোন সম্ভাবনা ছিল কি?"
" বাবা আমাকে সে ব্যাপারে কিছু না বললেও, মামারা বলছিল..."
" কি বলেছিল?"
" খুব একটা লাভ হবে না। তারপরও চেষ্টা করে দেখা আর কি।"
বিকেলে চা-টা খেয়ে রতনকে বললাম আজকের দিনটা থেকে যেতে। প্রথমে রাজি না হলেও শেষে হঠাৎ করে খুব ঝড়বৃষ্টি শুরু হওয়াতে ওকে আর যেতে দিলাম না। নির্ঘাত অনেক জায়গায় পানি জমে যাবে আর যানজট তো আছেই। ঢাকা শহরের যা অবস্থা এখন!
(৪)
ছেলেটা সুস্থ হয়ে যাওয়ার পর আমি আবার ফিরে গেলাম। অনেক কাজ জমে যাওয়ার কারনে স্বভাবতই বেশ ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। তাই, রতন যে দোকানে কাজ করে তার মালিক শফিক মিয়ার বারবার জরুরি তলব স্বত্ত্বেও, কয়েকদিন বাদেই দেখা করতে গেলাম।
" দু:খিত, মাফ করবেন। নানান ঝামেলা থাকায় তখন আসতে পারিনি। প্লিজ, কিছু মনে করবেন না।"
" না, না। কিছু মনে করিনি।", বলল, শফিক মিয়া।
" তা, কি এত দরকার যদি বলতেন?", বললাম আমি।
" না, মানে, ঐ আর কি। রতন বলছে সে নিজেই দোকান দিতে চায়। বুঝতে পারছিলাম না কি বলব। তাই ভাবলাম, আপনার সাথে একটু পরামর্শ করি। ও আবার, আপনাকে অনেক মানে। আমার শরীরও ভালো যাচ্ছে না। আর বেশিদিন কাজও করতে পারব না। ", কাশতে কাশতে বলল শফিক মিয়া।
" হুম, রতন বলছিল। আমি ঠিক রাজি হয়েছি তাও না, আবার নাও করিনি। তা... ওর বাবা যখন টাকা দিচ্ছে, তাহলে আমরা আর কি বলব বলুন! তাছাড়া ওর মধ্যে অনেক ট্যালেন্ট আছে। ভাল কিছুওতো হতে পারে।"
" ঠিক আছে। করুক। ওর যা মন চায়।"
এরপর পুরো উদ্যমে দোকানের কাজে নেমে পড়ল রতন ঘোষ। চোখে মুখে তখন একটা বিশ্বজয়ের উম্মাদনা। ওর এত বেশি উজ্জ্বলতা, এর আগে এতটা আমার নজরে পড়েনি। আসলে প্রত্যেক মানুষই যার যার নিজের একটা জায়গা খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা করে, সে যতই ক্ষুদ্র বা বিশাল হোক না কেন! বিশেষ করে রতনদের মত যারা। এরা অপ্রাপ্তিটুকু নিয়ে বসে থাকতে চায় না। এটা ছিল না বলে, ওটা করতে পারিনি...এই সব অজুহাতের পসরা সাজিয়ে হাত পা গুটিয়ে বসে থাকতে রাজি নয় এরা। সুযোগ পেলেই, তা করতে পিছপা হয় না। কিছু করার একটা অদম্য জেদ বুকের মাঝে লালন করে বেড়ায়। স্বপ্ন বুননের পাশাপাশি স্বপ্ন রচনা করে বাস্তব পৃথিবীতে তাকে নামিয়ে আনতে পারে। হয়ত, অনেকের কাছে অর্জনটুকু কিছুই না। নেহায়েত মফস্বল এলাকাতে সামান্য একটা দোকান মাত্র। কিন্তু সেটাতো বুকের মাঝে বয়ে চলা একটি খরস্রোতা স্বপ্ননদী। তবে ওদের মত করে সবাই তা পারে না। এই যেমন আমি! যাক, সেটা অন্য প্রসঙ্গ।
রতনের এই উৎফুল্লতা, ভীষণ ব্যস্ত হয়ে পড়া আমি খুব উপভোগ করতে লাগলাম। অবসর সময়ে আমিও ওকে সময় দিতে লাগলাম। ও তেমনি বিভিন্ন ব্যাপারে সময় অসময়ে আমার পরামর্শ নিতে লাগল। দোকান সাজানো, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনা সবকিছুই আমার সাথে শেয়ার করত। কখনো কখনো আমি নিজেও ওর সাথে গিয়ে কেনাকাটা করতাম। কোথাকার কে আমি; রক্তের সম্পর্কবিহীন একজনের কাছে ওর এত নির্ভরতা মাঝে মাঝে খুব অবাক করে দেয়!
ওর চিন্তা ভাবনাও দেখলাম বেশ ইউনিক। অপ্রতুলতার কারনে বাকি যে কয়টা দোকান আছে; তারা এতদিন মোটামুটি সাদামাটাভাবে দোকান চালাচ্ছিল। আর বারবার কষ্ট করে সদরে গিয়ে কাজ চালাতো। এতে করে কাষ্টমারকে অনেক সময় নিয়ে কাজ বুঝিয়ে দেওয়া লাগতো। এই ধরনের দীর্ঘসূত্রিতা সত্ত্বেও দোকানের মালিকরা কোন রিস্ক নিতে চাইতো না। মফস্বল এলাকার অজুহাতটাই তাদের কাছে আগে। যদিও আশপাশের এলাকায় গ্রাহকের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। তারাও সেটা মেনে নিয়েছে সুবিধা না পাওয়ার কারনে । কিন্তু সময় পাল্টেছে। ব্যস্ততা বেড়েছে। সবাই এখন হাতের কাছে সব ধরনের সুবিধা পেতে চায়।
আর রতনও এই মনস্তত্ত্বটা বুঝতে পেরে সেই রিস্কটাই নিয়ে নিল। উন্নতমানের দামী প্রিন্টার, হাই কনফিগারেশনের কম্পিউটার থেকে শুরু করে বেশ ভালো মানের ক্যামেরা সবই সে তার দোকানের জন্য নিল। এমনকি ক্যামেরার জন্য একটা ট্রাইপট, সেটাও সে ভালো মানেরটাই কিনল। অনেকের কাছে এইসব বেশি বেশি মনে হলেও, আমার তা মনে হয়নি। কাস্টমার সার্ভিসের মান ভালো না হলে এখনকার সময় টিকে থাকা মুশকিল। আর গ্রাম মতন এই মফস্বল এলাকায় এতসব কিছুর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কেউ প্রশ্ন করলেও, কাউকে না কাউকে তো এগিয়ে যেতে হয়।
দেখতে দেখতে রতনের দোকানটা দাঁড়িয়ে গেল। পরিপাটি সুন্দর করে সাজানো। শুভ দিন দেখে, একদিন দোকান উদ্বোধন করা হয়ে গেল। ওর দাদু, ঠাকুমার চোখে মুখেও সেদিন দেখলাম অনেক আনন্দের আবহ। পুরনো অনেক কাস্টমারের সাথে আস্তে আস্তে নতুন কাস্টমারের সংখ্যাও বাড়তে লাগলো। ভালো মানের কাজের পাশাপাশি ফেইস ভ্যালুরও একটা মুল্য আছে; সেটা মানতেই হবে! ওর কারনে অন্য দোকানদারদের অবস্থা হঠাৎ করে বেশ কিছুটা বেগতিক হয়ে পড়েছে তা বলাই বাহুল্য। তারাও রতনের দেখাদেখি সাধ্যমতো দোকানের অনেক কিছুতে পরিবর্তন আনতে লাগল।
এখন মোটামুটি প্রতিদিনকার একটা রুটিন হয়ে গেছে আমার। আর তা হলো, অফিস ছুটির পর রতনের দোকানে গিয়ে বিকাল বেলা সময় কাটানো। বসে বসে ওর নানান রকমের ব্যস্ততা দেখি। সময়ে সময়ে কিছু কিছু পরিবর্তন খুব দ্রুত হয়ে যায়। একসময় যে রতন অন্যের দোকানে ফায়-ফরমায়েশ খাটত, সেই আজকে তার নিজের দোকানে রীতিমতো কর্মচারী রেখে কাজ চালাচ্ছে। শুধু স্টুডিওতে ছবি তোলা আর এডিটিং এর কাজ করেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখলো না রতন। আমার পরামর্শে সে আশেপাশের বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্টানগুলোতেও ছবি তোলা শুরু করল লোক রেখে। ভাল সাড়াও পেতে লাগল আস্তে আস্তে। এই ছোট্ট মফস্বল এলাকায় বিষয়টা প্রথম প্রথম অনেকের চোখে বেমানান মনে হলেও ধীরে ধীরে তা জনপ্রিয় হতে লাগলো। শহরের মত কার্যক্রম দেখে বিভিন্নজন ভালোই অভিমত ব্যক্ত করতে শুরু করল। তবে কেউ কেউ যে বাঁকা চোখে দেখছে না তাও কিন্তু নয়।
এতসব কিছুর জন্য রতনের বাবাকে কৃতজ্ঞতা জানাতেই হয়। উনি ইনভেস্টমেন্টের ব্যবস্থা না করলে এতকিছু বাস্তবায়ন করা কোনভাবেই সম্ভব হত না। হরিপদ বাবুর কথা মনে পড়তেই, মনে পড়ে গেল ঐদিনটার কথা। যেদিন রতন আমার বাসায় গিয়ে তার কলকাতার ঘটনাগুলো শেয়ার করেছিল। আক্কেলগুড়ুম আমার সেদিন ঠিকই হয়েছিল। যদিও সেটা পুরোটা এখনো আপনাদের কাছে পেশ করা হয়নি। কিন্তু পরে যে আক্কেলটার আরো গুড়ুম হতে হবে তা কে জানত! সে থাক এখন। পরে ওসব নিয়ে ভ্যাজর ভ্যাজর করা যাবে। অন্য প্রসঙ্গে একটু মনোযোগ দেওয়া যাক। যদিও সমসাময়িক ব্যাপার; তাও মনে হয় কম ইন্টারেস্টটিং নয়। বেশ কিছুটা অদ্ভুতও লেগেছে আমার কাছে। দেখা যাক, আপনাদের কেমন লাগে! .... (চলবে)

মন্তব্য ১৫ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই জুলাই, ২০২০ বিকাল ৫:২৯

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: গল্প বলার ঢং আর সাবলীলতা তরতর করে টেনে নিয়ে এল শেষ পর্যন্ত!

বেশ লাগলো।
রতনের সংগ্রামী জীবনের ফাঁকে ফাঁকে জীবনের চড়াই উৎরাই এর গল্প!

+++

০৯ ই জুলাই, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:২৬

না মানুষী জমিন বলেছেন: ধন্যবাদ, মন্তব্যের জন্য।

২| ০৯ ই জুলাই, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:০৯

চাঁদগাজী বলেছেন:


আপনার নিকটা কিভাবে আপনি আবিস্কার করলেন?

০৯ ই জুলাই, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৩৩

না মানুষী জমিন বলেছেন: আসলে পরিচয় সূত্রে এই রকম একজনের জীবনের কিছু সত্যি গল্প জানি। সেটা তার মুখ থেকেই আমার শোনা। সেই সাথে আমার কল্পনা/ অতি কল্পনা মিশিয়ে লেখার চেষ্টা করেছি মাত্র। সত্যি কথা সেই মানুষটার সাথে এখনো মাঝেমধ্যে যোগাযোগ হয়।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।

৩| ০৯ ই জুলাই, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:২৯

চাঁদগাজী বলেছেন:



এটা কি গল্প, নাকি ঘটনা?

০৯ ই জুলাই, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৪০

না মানুষী জমিন বলেছেন: মেলানো মেশানো ।

৪| ০৯ ই জুলাই, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:০৫

তারেক ফাহিম বলেছেন: পরের পর্বে রতনের বিয়ে টিয়ে হবে নাকি? :)

০৯ ই জুলাই, ২০২০ রাত ৮:১৭

না মানুষী জমিন বলেছেন: দেখা যাক। ক্রমশঃ প্রকাশ্য। ধন্যবাদ।

৫| ০৯ ই জুলাই, ২০২০ রাত ৮:০৯

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
বড় গল্প পড়ার ধৈর্য্য এখন আর নাই।
তবে পড়তে পারলে হয়তো মজা পেতাম!

০৯ ই জুলাই, ২০২০ রাত ৮:১৫

না মানুষী জমিন বলেছেন: হয়ত

৬| ০৯ ই জুলাই, ২০২০ রাত ৮:৪৭

নেওয়াজ আলি বলেছেন: নান্দনিক লিখনশৈলী।

০৯ ই জুলাই, ২০২০ রাত ৮:৫৪

না মানুষী জমিন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।

৭| ০৯ ই জুলাই, ২০২০ রাত ১০:৫৯

রাজীব নুর বলেছেন: পুরো লেখাটা মন দিয়ে পড়লাম।
ভালো লেগেছে। আনন্দ পেয়েছি পড়ে।

১০ ই জুলাই, ২০২০ ভোর ৬:৫১

না মানুষী জমিন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।

৮| ১০ ই জুলাই, ২০২০ সকাল ৮:৩৫

আনমোনা বলেছেন: রতনের কাহিনী আগ্রহ নিয়ে পড়ছি। দেখি কিভাবে আক্কেল গুড়ুম হয়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.