নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিজেকে নিজেই আবিষ্কারের চেষ্টা করছি।

না ই বললাম

না ই বললাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

লিভিং ইন দ্য পাস্ট

২১ শে জানুয়ারি, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:৪৯

চোখের পলকে দুটি দিন শেষ। কি করলাম? তেমন কিছুই না। দিনলিপি লেখার কিছু নেই। বরং কিছু এমনি বকবক করে যাই।

২০২০ এর মার্চের লকডাউনের শুরু থেকেই কেমন যেনো সবকিছু একটা পরাবাস্তব জগতের মতো মনে হয়। জানিনা সবার কি এমনটা হয়েছে কি না। আমার অতীত নিয়ে আমি বরাবরই সুখী ছিলাম। কখনো ভুলগুলোর জন্য আফসোস হয়নি- বরং খুশি হয়েছি এই ভেবে যে ঐ ভুলগুলো আজ আমাকে এ মানুষটি হতে সাহায্য করেছে। তাই “ইস্ যদি তখন ওটা না করতাম!”- কখনোই মনে হয়নি। কিন্তু তাই বলে অতীতে বাস করা মানুষও আমি ছিলাম না। কিছু পারপার্শ্বিক কারণে বছর দশেক আগে আমার জীবনটাকে আমি ঢালাও করে নতুনভাবে সাজিয়েছিলাম। অতীতের উপর কোনো রাগ পুষে না রেখে সেই অতীতকে বিদায় দিয়ে নতুন মনোভাব নিয়ে জীবন শুরু করেছিলাম। নতুন আমিটাকে সমাজের ইচ্ছেমত নয়, বরং নিজের ইচ্ছেমত সাজিয়েছিলাম। সমাজের শেখানো সাম্প্রদায়িকতা, বৈষম্য, ধর্মের নামে অজাচার, সমালোচনা সব ভুলে নিজেকে “Better Human” তৈরী করার প্রক্রিয়াতে অনেক কিছুই পরিবর্তন করতে হয়েছে। একসময় বুঝেছিলাম পিছুটান থাকলে সামনে এগোনো যাবে না। তাই ছিন্ন করেছিলাম অতীতের সাথের সব সম্পর্ক।

এই লকডাউনের শুরু থেকে সেই ফেলে আসা অতীতের কথা খুব মনে পড়ে। তখন নিজেকে পরিবর্তনের কঠিন এই প্রক্রিয়ার মাঝে পুরনো বন্ধু এবং জীবন অনেক বাঁধা তৈরী করেছিলো। কিন্তু এখন তো আমার ম্নোবল যথেষ্ঠ দৃঢ়। এখন তো চাইলে আমি ফিল্টার করে অতীতের ভালো জিনিসগুলোর সাথে আবার একাত্ন হতে পারি।

কিন্তু আসলেই কি তাই?

দশ বছর অনেক সময়। ভেবেছিলাম আবার দেখবো সব আগের মতো আছে, কিন্তু বাস্তবিকই সেটা ভুল। হঠাৎ নিজেকে খুব অসহায় মনে হয়। আমার পরিচয় কি এই ক্ষুদ্র পৃথিবীতে? পরিবারের কয়েকটা মানুষ ছাড়া কেউ নেই আমার। কিছু নেই আমার!
ছোটোবেলায় পড়া বইগুলো নামিয়ে আনলাম তাক থেকে। কি আশ্চর্য! প্রায় ১০-১৫বছর আগে পড়ে তুলে রেখেছিলাম! খুব পছন্দের বই না হলে আমার কখনোই একবার পড়া বই ২য়বার পড়তে ভালো লাগে না। বইগুলো সে আগের মতোই আছে। চরিত্রগুলো সেসময় বয়সে আমার বড় ছিলো। আমি ভাবতাম, কয়েক বছর পর আমিও এসব করবো। এখন এরা সবাই আমার থেকে অনেক অনেক ছোট। কিন্তু আমার যে কিছুই করা হয়নি!

অতীতে বাস করা মানুষ আমি হতে চাই না। এমনিই আমি সারাজীবন ফ্যাসিনেট করেছি ৮০র দশকের বাংলাদেশ নিয়ে। কোনোরকম ডিজিটাল ছোঁয়া ছাড়া, সম্পূর্ণ এনালগ বাংলাদেশ! এখন মনে হচ্ছে আর্লি ২০০০-ও অনেক সুন্দর ছিলো। টিভি সিরিজ দা অফিসের একটা ডায়ালগ আছে এরকম, “I wish there was a way to know you were in the good old days before you actually left them.” কে জানে হয়তো ২০৩০ সালের কোনো একদিন বসে এই আজকের দিনটার জন্যই আফসোস হবে!

আমার জীবনে পড়া জাফর ইকবালের প্রথম বই ছিলো “আধ ডজন স্কুল”। আমি খুব ছোট ছিলাম। সম্ভবত ওটাই আমার জীবনে পড়া প্রথম পূর্ণাঙ্গ বই। খুব ক্রেইভ হয়েছিল ওরকম একটা রঙ্গিন জীবনের। ইচ্ছে ছিলো একদিন আমিও হয়তো এরকম রোমাঞ্চকর একটা জীবন পাবো। কিন্তু আমাদের মা-বাবারা বুঝে গিয়েছিলেন আধুনিক যুগের চাহিদাটা। খুব ছোট থেকেই ক্যাপিটালিস্ট সোসাইটির স্লেইভ হিসেবে ট্রেনিং নেয়া হয়ে গিয়েছে। নিজের ওজনের সমান বই কাঁধে স্কুল করেছি। কৈশোরে দেখেছি সিগারেট খাওয়া এবং “আউট বই পড়া” প্রায় একই ধরনের অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। কোচিং-এর পর স্যার, টিউটরের পর প্রাইভেট, এরপর বাসায় এসে নিজে থেকে পড়তে না বসলে শাস্তি।

ভালো রেজাল্ট করেছি। ডিগ্রী নিয়েছি একটা, চাকরী করছি আরেকটা বিষয়ের উপর। ফরমাল অ্যাটায়ারে যখন অফিসে যাই, মা-বাবা গর্বিত চোখে তাকায়। আমি বলতে পারি না যে এই ইউনিফর্ম আমার দাসত্বের চিহ্ন। মানসিকতাটাও বাঁধা পড়ে গিয়েছে এই নষ্ট কলকব্জায়। মাস শেষে কিছু টাকা নিশ্চিত করে যেনো পরের মাসেও এই পরিমাণ টাকার জন্য খেটে যেতে পারি। এটুকুই!? এটার জন্যই সব?

এই রোবোটিক জীবনের জন্যই কি বিসর্জন দিয়েছিলাম ছেলেবেলার কয়েকশ বিকাল? জীবনে একটাবার মাঠে গিয়ে ফুটবল খেলিনি অন্যদের সাথে। সত্যিকারের ক্রিকেটও খেলা হয়নি কখনো। একটু বড় হয়ে মাঝে মাঝে এটা-সেটা ফাঁকি দিয়ে আড্ডা দিয়ে শিশু একাডেমীতে। তবু ধরা পড়লে শাস্তি পেতে হতো। ইচ্ছে ছিলো সাংবাদিকতা পড়বো। কৈশরে খুব টানতো আমার এই সাংবাদিকতার নেশা। আমার সাথের কত মানুষ এখানে সেখানে লিখতো, এই-সেই ক্লাবে যেতো। আমি কাউকে চিনতাম না যে আমাকে এই দুনিয়ার সাথে পরিচয় করিয়ে দিবে। কয়েকজন ভবঘুরে বন্ধুর পার্টটাইম ফ্রেন্ড হওয়া ছাড়া আমার কোনো গতিই ছিলো না। নিজে নিজে যা কিছু করেছি তাও খুব লুকিয়ে। তবু করতাম। তবু লিখতাম। তবু ঘুরতে যেতাম স্কুল পালিয়ে।
একসময় বাবা-মা বুঝিয়ে বললো সাংবাদিকতা কোনো ভালো পেশা না। প্রভাবশালীদের হাতে বন্দি হয়ে যায় সত্যধারী কলম। কি দরকার জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এসব করার! পড়লাম একটা গৎবাঁধা বিষয়ের উপর। বেশ চাকরীও করছি। সমাজের মাপকাঠিতে আজ আমি প্রতিষ্ঠিত। সাকসেসফুল। আমার আবার দুঃখ কিসের? আমার তো অনেক সুখী হওয়ার কথা।

আমি তা-ই হই। হাহাকারগুলোকে গলা টিপে ধরে মিথ্যে হাসির অলংকার পড়েই নিজেকে উপস্থাপন করি পৃথিবীর সামনে। আমি তো সুখীই।

অফিসের কাজের ফাঁকে ডেস্কে শরীর রেখে মনটাকে নিয়ে যাই ছেলেবেলার সে না-খেলতে যাওয়া মাঠে। অতীতেই বাস করছি গত কয়েক বছর ধরে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.