নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিজেকে নিজেই আবিষ্কারের চেষ্টা করছি।

না ই বললাম

না ই বললাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঢাকা শহর ও আমি

২৩ শে জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১০:১৭

(লেখাটা নিয়মিত রাখতে চাচ্ছিলাম, তাও হচ্ছে না। কোনো কিছুতেই মোটিভেশন পাই না ইদানিং। যা হোক, দেখি আজ কি নিয়ে আদিল-পাচাল করা যায়।)


২০২০ এর মার্চের, লকডাউনের শুরুতে আমি পরিবারের সাথে দেখের বাড়িতে চলে গিয়েছিলাম। প্রায় দুটো বছর সেখানেই ছিলাম। গ্রামীণ প্রকৃতি আমি অনেক ভালোবাসি, তবে একটানা নয়। তাছাড়া এই পুরো পৃথিবীতে ঢাকা শহর আমার সবচেয়ে আপন লাগে।

আমার জন্ম ঢাকায় নয়, এখানে বেড়েও উঠিনি। ২০১১সালে এখানে এসেছি পরিবারের সাথে। অদ্ভুত এক শহর। কেউই এখানের নয়, তবু শহরটা সবারই। প্রথম প্রথম আমার খুব খারাপ লাগতো। সবাই খুব রোবোটিক। যন্ত্রের মতো একটা জীবন। কেউ কারো নয়। কারোই এখানে নাড়ির টান নেই। একটা তিনদিনের ছুটির জন্য মানুষ বুভুক্ষুর মতো অপেক্ষা করে। ছুটি হলেই এ শহর থেকে পালায়। কিন্তু আমি পালাতে চাই না। এটাই আমার শহর। আমার ঢাকা।

আমার জন্মের ঠিক কয়েকমাস আগে আমার বাবা ব্যবসার কাজে গ্রাম ছেড়ে চট্টগ্রাম শহরে এসেছিলেন। সেখানেই আমার জন্ম আর বেড়ে ওঠা। তাই যখন আমরা স্বপরিবারে ঢাকায় আসলাম, চট্টগ্রামের সাথে আমাদের কোনো সম্পর্কই রইলো না। ছুটি পড়লে এখনো গ্রামে যাওয়া হয়। সবার সেখানে ছেলেবেলার স্মৃতি আছে। কিন্তু আমার? আমার ছেলেবেলার কোনো জায়গায় যাওয়া হয় না। চট্টগ্রামে যে আমাদের কিছুই নেই। ভাড়া বাড়িতে থাকতাম আমরা। সে বাড়ি এখন অন্য কারো আবাস। বেশ কিছুদিন নিজের স্থান খুঁজে বেড়িয়েছি এ পৃথিবীতে। এরপর কিভাবে যেনো এ শহরটাকেই আবার আপন করে নিলাম। এই শহরের এটাই যেনো জাদু। জীবিকার টানে পুরো দেশের মানুষ এখানে আসে, আর শহরটাও আপন করে নেয় সবাইকে।
কোনো ছুটি-ছাটায় আমি এটা-ওটা ছুঁতো দিয়ে ঢাকায় থেকে যাই। রাতের ঢাকা আমার ভীষণ প্রিয়। আর ছুটির সময়ের ফাঁকা ঢাকা শহরে আমার অন্য রকম নেশা লাগে। আমি উদ্বাস্তুর মতো একা রাস্তায় হাঁটি। এই শহরের ছোট ছোট জিনিস উপভোগ করি যখনই সম্ভব হয়। প্রতিদিন ঘটা এই ছোট দৃশ্যগুলো আমাকে খুব টানে। সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানাই আমাকে এ শহরে থাকার সুযোগ দেয়ার জন্য। কোথাও যেতে চাই না এ শহর ছেড়ে।
নিয়ন আলোয় নিশিরাতের শহরটাকে কেমন যেনো রহস্যে ঘেরা রূপকথার মতো লাগে। প্রতি রাতে আমি সেই রূপকথার চরিত্র হয়ে থাকতে চাই।
ট্রাফিক জ্যামে দাঁড়িয়ে ফ্ল্যাটের বারান্দায় বাচ্চা কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা গৃহপরিচারিকা বিষ্মিত চোখে দেখে ঢাকার রাস্তা। আমিও একই বিস্ময়ে চিন্তা করি কত সহস্রবার এই শহরে আমি এই একই দৃশ্য দেখতে পারবো।
গরমে লম্বা লোডশেডিং-এর সময় তরুণ ছেলেপেলে রাস্তায় নেমে আসে। বিদঘুটে জেনারেটরের ঘটঘট শব্দ বন্ধ হয়ে গেলে পাঁচতলা থেকেও শোনা যায় রাস্তায় তাদের আড্ডা। হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে আসলে সবার সমস্বরে উল্লাসধ্বনি শোনা যায়। আমি আমার ফ্ল্যাটে বসে সেই চিৎকারের আবেগটুকু হাজারবার অনুভব করতে চাই।
একইভাবে বাংলাদেশের খেলা চলাকালীন সময়, যখন খুব ক্রিটিক্যাল অবস্থা হয়, আমি সেটা সহ্য করতে পারিনা। টিভি বন্ধ করে আমি চুপচাপ রুমে শুয়ে থাকি। কিন্তু আমার কান সজাগ থাকে উল্লাসধ্বনির অপেক্ষায়। কখনো শুনি সেই উল্লাসধ্বনি, কখনো বা রাগান্বিত আফসোস। আনন্দ বা হতাশার সেই তীব্র ধাক্কাটুকু আমি পেতে চাই বার বার।

প্রতি সকালে এলাকা গলিতে সব্জি বিক্রেতার পসরা সাজিয়ে পানি ছিটানোর দৃশ্য…
বন্ধের দিনে বাবার হাত ধরে সেজেগুজে বের হওয়া ছোট্ট মেয়েটি…
বিজয় দিবসের বিকেলে মেলা শেষে কোলে বাচ্চা এবং হাতে মেলা থেকে কেনা সদাই নিয়ে যাওয়া সুখী গৃহিণী…
পহেলা বৈশাখে স্কুলের ফাংশানে নাচের জন্য ভোর সকালে পূর্ণ সাজে রিকশার খোঁজে বের হওয়া কিশোরীর দল…
বর্ষাকালে হঠাৎ বৃষ্টিতে দৌঁড়ে দোকানের শেডে দাঁড়ানো ফাইল হাতে নেয়া কর্পোরেট পোশাকের যুবক…
আর কত কত মানুষ… কত কত স্বপ্ন… রাতেও ঘুমায় না এই নগরী। গভীর রাতে ট্রাক আর বাস সাঁই-সাঁই করে ছুটে চলে। এর মাঝে আবার হঠাৎ টুংটুং করে গলির ভিতর একটা একলা রিকশা।

অবাস্তব লাগে আমার এই শহরটাকে। কিসের যেনো একটা টান আমি এখানে অনুভব করি। কিসের যেনো একটা মোহ। এ শহরে সবাই যেনো আলাদা, আবার কিভাবে যেনো এক সুতোয় বাঁধা।

থেকে যেতে চাই এই বিশাল নগরীর ক্ষুদ্র একটা অংশ হয়েই…

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে জানুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১২:৫৯

মহাজাগতিক চিন্তা বলেছেন: ঢাকার প্রতি আমার কোন আগ্রহ নেই। সব সময় মানুষ ও গাড়ির মিছিল। একদম ভাল্লাগে না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.