![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রতিদিন লেখার মতো ডিসিপ্লিন্ড মানুষ আমি আর হতে পারলাম না। তবু চেষ্টা করে যাচ্ছি। আজ দিনলিপিই লিখি।
কয়েকদিন আগেই “লিভিং ইন দ্য পাস্ট”-শিরোনামে লিখেছিলাম যে কেমন যেনো নস্টালজিয়ার এর তীব্র স্পৃহা অনুভব করছি ইদানিং। আশেপাশের সবার পরিবর্তন তো প্রতিনিয়তই চোখে পড়ে। পুরনো পড়া বইগুলো আবার পড়তে গিয়ে আবিষ্কার করলাম যে কতটা পরিবর্তন আমার নিজের হয়েছে। জানি না নিজেকে কি এই অবস্থায় কোনোদিন দেখতে চেয়েছিলাম কি না, কিন্তু আমি তো এখানেই।
কৈশরে জাফর ইকবালের খুব ভক্ত ছিলাম। বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী গোগ্রাসে পড়তাম। তবে হুমায়ূন আহমেদের বই কখনো পড়িনি, পড়ার ইচ্ছেও ছিলো না। এমনিই আউট বই পড়া নিয়ে বহু ঝামেলায় পড়তে হতো, এর মধ্যে যদি কোনোভাবে হুমায়ূন আহমেদের বই আমার কাছে পাওয়া যেতো, তাহলে হয়তো বাসা থেকেই বের করে দিতো। এর পিছনে অবশ্য একটা কারণ আছে। কমবেশি সবাই হুমায়ূন আহমেদের বইকে “ওগুলো প্রেমের বই” “বড়দের বই” “পাগলামির বই”- বলতো, তবে আমাদের পারিবারিক একটা কারণ আছে। আমার এক কাজিন খুব বই পড়তো। তিনি একসময় হুমায়ূন-ভক্ত হলেন। একটানা তার বই পড়তে শুরু করলেন। তার মধ্যে নাকি হঠাৎ কেমন পাগলামি দেখা যেতে শুরু করলো। তখন আমার বয়স ৩/৪, তাই এগুলো সব শোনা কাহিনী। তো একদিন নাকি তিনি অনেকক্ষণ তার রুমের দরজা আটকে রেখেছিলেন, এবং অনেক ধাক্কা-ধাক্কির পরেও কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছিল না। শেষে দরজা ভেঙ্গে রুমে ঢুকে মুখে অনেকটা চুন আর জর্দা একসাথে নিয়ে সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। পরে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ঠিক হয়ে তিনি বলেছিলেন যে হুমায়ূন আহমেদের কোনো একটা বইয়ে কিছু একটা পড়ে তিনি অনুপ্রাণিত হয়ে এটা চেষ্টা করেছিলেন বা কিছু। তৎক্ষণাত সব হুমায়ূন আহমেদের বই ফেলে দেয়া হয়েছিল বা পুড়িয়ে ফেলেছিল বড়রা, আর সেই থেকে আমাদের পরিবারে হুমায়ূন আহমেদ নিষিদ্ধ।
আমার নিজের কৌতুহল থাকলে আমি ঠিকই পড়তাম। কিন্তু পাগল হবার ভয়ে আর পড়িনি। এর উপর আসলেই আমার অতো সমকালীন বা রোমান্টিক ধাঁচের লেখা ভালো লাগতো না। তিন গোয়েন্দা, কিশোর উপন্যাস, আর সায়েন্স ফিকশন নিয়েই পড়ে থাকতাম বেশি।
তো এই অতীত নিয়ে গত কয়েকদিন পড়ে থাকতা গিয়ে হঠাৎ জাফর ইকবাল ও তার পরিবারের বাল্যকালের কাহিনী জানার খুব আগ্রহ ছিল। জাফর ইকবাল তার কলাম/বই সবখানেই তার বাবাকে খুব সম্মান করে বর্ণনা করেন। আমার জীবনে পড়া প্রথম বই-ই ছিলো জাফর ইকবালের আত্নজীবনীমূলক লেখা “আধ ডজন স্কুল”। আমি তখন থেকেই জাফর ইকবালের বাবাকে খুব সম্মান করতাম কেনো জানি। খুব ফ্যামিলি-ম্যান টাইপের ছিলো বলেই হয়তো, কারণ আমার চারপাশে এ ধরনের বাবা তেমন দেখিনি তো। বেশিরভাগ বাবারাই তো ফ্যামিলির দায়িত্ব থেকে একটু দূরে থাকতেন। বাইরেই তাদের কাজ। তাই হয়তো এরকম একজন লাভিং ফাদার হিসেবে তার চরিত্র ভালো লেগেছিলো। তো আমি আবিষ্কার করলাম যে ফয়েজুর রহমানের জীবন সম্পর্কে আরো জানতে চাই। উনার তিন ছেলেই যেহেতু লেখালেখির সাথে জড়িত, সেহেতু নিশ্চয় পড়ার অনেক কিছু পাওয়া যাবে। তাই ঠিক করলাম হুমায়ূন আহমেদ, জাফর ইকবাল, এবং আহসান হাবীবের লেখা সব আত্নজীবনীমূলক বইগুলো পড়বো। পরে আবিষ্কার করলাম উনার স্ত্রী, আয়েশা ফয়েজও একটা আত্নজীবনী লিখেছিলেন।
গত কয়েকদিন ধরে হঠাৎ ছোটবেলার মতো উত্তেজনা নিয়ে কাজ শুরু করলাম। খুব আগ্রহ নিয়ে তাদের লেখা সব বই থেকে খোঁজ খবর নিয়ে প্রায় চল্লিশটার মতো বইয়ের তালিকা যোগাড় করেছি। আরেকটা ব্লগ পোস্টে সেই তালিকা নিয়ে লিখবো ইনশাআল্লাহ্। তারপর নীলক্ষেতে গিয়ে ঘুরে ঘুরে বই কিনে আনলাম। এখন চরম উত্তেজনা নিয়ে অপেক্ষা করছি পড়া শুরু করার জন্য।
বহুদিন পর কোনো কাজে এতটা আনন্দ পাচ্ছি। গত প্রায় ২/৩বছর কোনো কাজেই মোটিভেশন পাই না। শুধু প্রয়োজনের তাগিদে কাজ করে যাই। জানি না কতদিন পর এতো আগ্রহ, এতো উত্তেজনা, নিয়ে কিছু করার জন্য অপেক্ষা করছি। কিন্তু একইসাথে এখনই খুব হতাশ লাগছে এই ভেবে যে এগুলো পড়ে ফেললেই তো শেষ! এরপর তো আবার সে আগের মতো জীবন। চাইলেই তো আমি আর হুমায়ূন আহমেদের লেখা আত্নজীবনী পাবো না, বা জাফর ইকবালের লেখাও তো রাতারাতি আসবে না। এক্সট্রিম পেসিমিজমের এই এক সমস্যা। একটা ভালো কিছুও কেন জানি ঠিকমতো উপভোগ করতে পারিনা। ভালোর আগে খারাপ জিনিসগুলো চোখে পড়ে।
যাক, আপাতত এই নিয়ে পড়ে থাকি কিছুদিন। ভবিষ্যতের চিন্তা যতটুকু পারি বাদ। খুব খারাপ যাচ্ছে না তো সময়। আলহামদুলিল্লাহ্।
©somewhere in net ltd.