নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কোন শিরোনাম নাই!

লুমিনি২৪

লুমিনি২৪ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভাঙা থার্মোমিটার এবং নীলের যবনিকাপতন

১৩ ই মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৩:৩৬

স্কুলে সমাজ বইয়ের ঠেলায় পড়ে ইতিহাস গলাধঃকরন করেছি কম বেশি সবাই । সে সূত্রে নীল বিদ্রোহের কথা আমরা শুনেছি মোটামুটি প্রায়ই সবাই । তবে নীল বিদ্রোহের পরে নীলচাষ বন্ধ হওয়া পর্যন্ত বাকি সময়ের ঘটনাগুলো খুব একটা পাওয়া যায় না । তবে নীলচাষ বন্ধের আসল কারন ছিল অবশ্য কৃত্তিম নীলের উদ্ভাবন । নীলচাষের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকেছিল প্রযুক্তি ।

বাংলায় নীলচাষের শুরু হয়েছিল ১৮১০ এর দিকে। নীলের চাষ ভারতীয় উপমহাদেশে শুরু হবার আগে বৃটিশদের প্রধান উৎস ছিল উত্তর আমেরিকা । কিন্তু আমেরিকার স্বাধীনতা লাভের ফলে সেখান থেকে নীলের সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে এ অঞ্চলে নীলচাষ উপযোগী হওয়ায় নীলকরেরা এখানে নীলের চাষ শুরু করে। কিন্তু কোম্পানি শাসনের যুগে বৃটিশ নীলকরদের স্বেচ্ছাচারিতা এবং একচ্ছত্র আধিপত্যের কারনে নীলচাষ পরিণত হয় নীল নির্যাতনে। ১৮৫৯-৬০ এর দিকে নীল বিদ্রোহের ফলে বৃটিশদের বাংলায় নীল উৎপাদনে ঘাটতি পরে। ১৮৫৫ সালে থেকে ১৮৬০ পর্যন্ত নীলের উৎপাদন কমে প্রায় ৪৪ শতাংশ। কিন্তু একেবারে বন্ধ হয়ে যায়নি। বাংলা থেকে নীলকুঠি গুলো বিহারে সরে যেতে থাকে।

কৃত্তিম নীলের আবির্ভাব অবশ্য রাতারাতি হয়নি। ১৮৬০ এর দিক থেকেই এর উপর গবেষণা চলছিল। তবে প্রাকৃতিক নীলের যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে এবং শিল্প-কারখানায় উৎপাদন উপযোগী পদ্ধতি আসতে সময় লেগেছে বহু বছর। ১৮৯০ এর দিকে সুইস বিজ্ঞানী কার্ল হিউমান একটি পদ্ধতি অনুসরণ করেন, কিন্তু আশানুরুপ উৎপাদন পাওয়া যাচ্ছিল না। ১৮৯৬ এর দিকে আসে সেই মুহূর্ত ।

BASF (বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম কেমিক্যাল প্রসেস কোম্পানি) নামক জার্মান এক কোম্পানিতে ঘটে কৃত্তিম নীলের এই বিপ্লব। সেসময়ে কৃত্তিম নীল তৈরির বড় বাধা ছিল থ্যালিক অ্যানহাইড্রাইড নামক একটি রাসায়নিকের । ১৮৯৬ এর দিকে একটা দূর্ঘটনা এর উৎপাদন বহুগুনে বাড়িয়ে দেয়। ইউজিন স্যাপার নামক এক টেকনিশিয়ান রিয়াক্টরের তাপমাত্রা মাপতে গিয়ে ভুলবশত থার্মোমিটার ফেলে দেয় এবং তা ভেঙ্গে গিয়ে পারদ রিয়াক্টরের মধ্যে মিশে যায়। কিন্তু এই ভুলেই বরং দেখা যায় থ্যালিক অ্যানহাইড্রাইডের উৎপাদন বেড়ে যায়। পারদের উপস্থিতি এর উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়। আর এখান থেকেই শুরু হয় নীলচাষের সমাপ্তির। ১৮৯৭ থেকে বানিজ্যিক ভিত্তিতে কৃত্তিম নীলের উৎপাদন শুরু হয় । পরবর্তীতে এর উৎপাদন পদ্ধতিতে আরও পরিবর্তন আসে এবং খরচও কমে আসে ।

১৯১৬-১৭ এর দিকে বৃটিশদের বিহারে অবস্থিত শেষ কুঠি গুলোও বন্ধ হয়ে যায়। কম মূল্যে কৃত্তিম নীলের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় বৃটিশদের একক আধিপত্য শেষ পর্যন্ত তাদের “ছেড়ে দে মা, কেঁদে বাঁচি” ব্যবসায় পরিণত হয়। এক পর্যায়ে বন্ধ হয়ে যায় ভারতবর্ষে বৃটিশদের নীলচাষের ব্যবসা ।



লেখার উৎসঃ
১) কৃষির বাণিজ্যিকীকরণ, বিনয়ভূষণ চৌধুরী, “বাংলাদেশের ইতিহাস (১৭০৪-১৯৭১)”, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি।

২) The synthesis of indigo

৩) The history of indigo

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.