![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
"প্রত্যেক প্রাণীই মরণের স্বাদ ভোগ করবে ... এই পার্থিব জীবন কিছু বাহ্যিক ছলনার মাল সামানা ছাড়া আর কিছুই নয়।" {সূরা আল-ই-ইমরান, আয়াত ১৮৫} "সত্যিকার ঈমানদার ব্যক্তি হচ্ছে তারা, যারা আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রসূলের ওপর ঈমান আনে, অতঃপর (আল্লাহ তায়ালার বিধানে) সামান্যতম সন্দেহও পোষণ করে না এবং জীবন ও সম্পদ দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করে; এরাই হচ্ছে সত্যনিষ্ঠ।" {সূরা আল হুজুরাত, আয়াত ১৫}
বিশ্ব ইতিহাসে প্রথম মানুষ ও প্রথম নবী হিসাবে আল্লাহ পাক আদম (আলাইহিস সালাম)-কে নিজ দু’হাত দ্বারা সরাসরি সৃষ্টি করেন {ছোয়াদ ৩৮/৭৫}। মাটির সকল উপাদানের সার-নির্যাস একত্রিত করে আঠালো ও পোড়ামাটির ন্যায় শুষ্ক মাটির তৈরী সুন্দরতম অবয়বে রূহ ফুঁকে দিয়ে আল্লাহ আদমকে সৃষ্টি করেছেন।*১*
অতঃপর আদমের পাঁজর থেকে তাঁর স্ত্রী হাওয়াকে সৃষ্টি করেন।*২* আর এ কারণেই স্ত্রী জাতি স্বভাবগত ভাবেই পুরুষ জাতির অনুগামী ও পরস্পরের প্রতি আকৃষ্ট। অতঃপর স্বামী-স্ত্রীর মাধ্যমে যুগ যুগ ধরে একই নিয়মে মানববংশ বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে। কুরআন-এর বর্ণনা অনুযায়ী প্রথম দিন থেকেই মানুষ পূর্ণ চেতনা ও জ্ঞান সম্পন্ন সভ্য মানুষ হিসাবেই যাত্রারম্ভ করেছে এবং আজও সেভাবেই তা অব্যাহত রয়েছে। অতএব গুহামানব, বন্যমানব, আদিম মানব ইত্যাদি বলে অসভ্য যুগ থেকে সভ্য যুগে মানুষের উত্তরণ ঘটেছে বলে কিছু কিছু ঐতিহাসিক যেসব কথা শুনিয়ে থাকেন, তা অলীক কল্পনা ব্যতীত কিছুই নয়। সূচনা থেকে এযাবত এই দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় মানুষ কখনোই মানুষ ব্যতীত অন্য কিছু ছিল না। মানুষ বানর বা উল্লুকের উদ্বর্তিত রূপ বলে ঊনবিংশ শতাব্দীতে এসে চার্লস ডারউইন (১৮০৯-১৮৮২) যে ‘বিবর্তনবাদ’ (Theory of Evolution) পেশ করেছেন, তা বর্তমানে একটি মৃত মতবাদ মাত্র এবং তা প্রায় সকল বিজ্ঞানী কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।
প্রথম মানুষ আদি পিতা আদম (আ.)-কে আল্লাহ সর্ব বিষয়ের জ্ঞান ও যোগ্যতা দান করেন এবং বিশ্বে আল্লাহর খেলাফত পরিচালনার মর্যাদায় অভিষিক্ত করেন। সাথে সাথে সকল সৃষ্ট বস্তুকে করে দেন মানুষের অনুগত {লোকমান ৩১/২০} ও সবকিছুর উপরে দেন মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব {ইসরা ১৭/৭০}। আর সেকারণেই জিন-ফিরিশতা সবাইকে মানুষের মর্যাদার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য আদমকে সিজদা করার আদেশ দেন। সবাই সে নির্দেশ মেনে নিয়েছিল। কিন্তু ইবলীস অহংকার বশে সে নির্দেশ অমান্য করায় চিরকালের মত অভিশপ্ত হয়ে যায় {বাক্বারাহ ২/৩৪}। অথচ সে ছিল বড় আলেম ও ইবাদতগুযার। সেকারণ জিন জাতির হওয়া সত্ত্বেও সে ফিরিশতাদের সঙ্গে বসবাস করার অনুমতি পেয়েছিল ও তাদের নেতা হয়েছিল।*৩* কিন্তু আদমের উচ্চ মর্যাদা দেখে সে ঈর্ষাকাতর হয়ে পড়ে। ফলে অহংকার বশে আদমকে সিজদা না করায় এবং আল্লাহ ভীতি না থাকায় সে আল্লাহর গযবে পতিত হয়। এজন্য জনৈক আরবী কবি বলেন,
‘যদি তাক্বওয়া বিহীন ইলমের কোন মর্যাদা থাকত,
তবে ইবলীস আল্লাহর সৃষ্টিকুলের সেরা বলে গণ্য হ’ত’।
শয়তানের সৃষ্টি ছিল মানুষের জন্য পরীক্ষা স্বরূপ :
ইবলীসকে আল্লাহ মানুষের জন্য পরীক্ষা স্বরূপ সৃষ্টি করেন এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত তার হায়াত দীর্ঘ করে দেন। মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুৎ করার জন্য ও তাকে ধোঁকা দেওয়াই শয়তানের একমাত্র কাজ। ‘সে মানুষকে বলে কুফরী কর’। কিন্তু যখন সে কুফরী করে, তখন শয়তান বলে ‘আমি তোমার থেকে মুক্ত। আমি বিশ্বপ্রভু আল্লাহ্কে ভয় করি’ {হাশর ৫৯/১৬}। অন্যদিকে যুগে যুগে নবী-রাসূল ও কিতাব পাঠিয়ে আল্লাহ মানুষকে সত্য পথ প্রদর্শনের ব্যবস্থা অব্যাহত রাখেন {বাক্বারাহ ২/২১৩}। আদম থেকে শুরু করে শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ) পর্যন্ত এক লক্ষ চব্বিশ হাযার পয়গাম্বর দুনিয়াতে এসেছেন*৪* এবং বর্তমানে সর্বশেষ এলাহীগ্রন্থ পবিত্র কুরআনের ধারক ও বাহক মুসলিম ওলামায়ে কেরাম শেষনবীর ‘ওয়ারিছ’ হিসাবে*৫* আল্লাহ প্রেরিত অহীর বিধান সমূহ বিশ্বব্যাপী পৌঁছে দেবার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন {মায়েদাহ ৫/৬৭}। পৃথিবীর চূড়ান্ত ধ্বংস তথা ক্বিয়ামতের অব্যবহিত কাল পূর্ব পর্যন্ত এই নিয়ম জারি থাকবে। শেষনবীর ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী পৃথিবীর এমন কোন বস্তি ও ঝুপড়ি ঘরও থাকবে না, যেখানে আল্লাহ ইসলামের বাণী পৌঁছে দেবেন না।*৬* এতদসত্ত্বেও অবশেষে পৃথিবীতে যখন ‘আল্লাহ’ বলার মত কোন লোক থাকবে না, অর্থাৎ প্রকৃত তাওহীদের অনুসারী কোন মুমিন বাকী থাকবে না, তখন আল্লাহর হুকুমে প্রলয় ঘনিয়ে আসবে এবং ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে।*৭* মানুষের দেহগুলি সব মৃত্যুর পরে মাটিতে মিশে যাবে। কিন্তু রূহগুলি স্ব স্ব ভাল বা মন্দ আমল অনুযায়ী ‘ইল্লীন’ অথবা ‘সিজ্জীনে’ অবস্থান করবে {মুত্বাফফেফীন ৮৩/৭, ১৮}। যা ক্বিয়ামতের পরপরই আল্লাহর হুকুমে স্ব স্ব দেহে পুনঃপ্রবেশ করবে {ফজর ৮৯/২৯} এবং চূড়ান্ত হিসাব-নিকাশের জন্য সকল মানুষ সশরীরে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর দরবারে নীত হবে {মুত্বাফফেফীন ৮৩/৪-৬}।
মানুষের ঠিকানা হ’ল তিনটি : ১- দারুদ দুনিয়া। অর্থাৎ যেখানে আমরা এখন বসবাস করছি ২- দারুল বরযখ। অর্থাৎ মৃত্যুর পরে কবরের জগত। ৩- দারুল ক্বারার। অর্থাৎ ক্বিয়ামতের দিন শেষ বিচার শেষে জান্নাত বা জাহান্নামের চিরস্থায়ী ঠিকানা।
অতএব পৃথিবী হ’ল মানুষের জন্য সাময়িক পরীক্ষাগার মাত্র। জান্নাত থেকে নেমে আসা মানুষ এই পরীক্ষাস্থলে পরীক্ষা শেষে সুন্দর ফল লাভে পুনরায় জান্নাতে ফিরে যাবে, অথবা ব্যর্থকাম হয়ে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। অতঃপর সেখানেই হবে তাদের সর্বশেষ যাত্রাবিরতি এবং সেটাই হবে তাদের চূড়ান্ত ও চিরস্থায়ী ঠিকানা। আল্লাহ বলেন, ‘মাটি থেকেই আমরা তোমাদের সৃষ্টি করেছি। ঐ মাটিতেই তোমাদের ফিরিয়ে নেব। অতঃপর ঐ মাটি থেকেই আমরা তোমাদেরকে পুনরায় বের করে আনব’ {ত্বোয়াহা ২০/৫৫}। অতঃপর বিচার শেষে কাফেরদেরকে হাঁকিয়ে নেওয়া হবে জাহান্নামের দিকে এবং মুত্তাক্বীদের নেওয়া হবে জান্নাতে {যুমার ৩৯/৬৯-৭৩}। এভাবেই সেদিন যালেম তার প্রাপ্য শাস্তি ভোগ করবে এবং মযলূম তার যথাযথ প্রতিদান পেয়ে ধন্য হবে। সেদিন কারু প্রতি কোনরূপ অবিচার করা হবে না {বাক্বারাহ ২/২৮১}।
উল্লেখ্য যে, হযরত আদম (আ.) সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের ১০টি সূরায় ৫০টি আয়াতে বর্ণিত হয়েছে।*৮*
আগামী পর্ব থেকে আদম সৃষ্টির ঘটনাবলী কুরআনে যেভাবে বর্ণিত হয়েছে, তার আলোকে সার-সংক্ষেপ আমরা তুলে ধরার প্রয়াস পাব ইনশাআল্লাহ
চলবে ...
রচনাঃ
প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
পিছনের পর্ব- নবীদের কাহিনী- ভূমিকা
*১* মুমিনূন ২৩/১২; ছাফফাত ৩৭/১১; রহমান ৫৫/১৪; তীন ৯৫/৪ ইত্যাদি
*২* নিসা ৪/১; মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৩২৩৮ 'বিবাহ' অধ্যায় 'নারীদের সাথে সদ্ব্যবহার' অনুচ্ছেদ। আদম এর মূল উপাদান হ'ল মাটি, তাই তাকে 'আদম' বলা হয়। পক্ষান্তরে হাওয়ার মূল হ'লেন আদম, যিনি তখন জীবন্ত ব্যক্তি। তাই তাকে 'হাওয়া' বলা হয়, যা 'হাই' (জীবন্ত) থেকে উৎপন্ন (কুরতুবী), বাক্বারাহ ৩৫; আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ ১/৬২ পৃঃ।
*৩* ইবনু কাছীর, আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ (বৈরুত: দারুল কুতুবিল ইলমিয়াহ, তাবি) ১/৬৭।
*৪* আহমাদ, ত্বাবারাণী, মিশকাত হা/৫৭৩৭ 'ক্বিয়ামতের অবস্থা' অধ্যায় 'সৃষ্টির সূচনা ও নবীগণের আলোচনা' অনুচ্ছেদ।
*৫* তিরমিযী, আহমাদ, আবুদাঊদ মিশকাত হা/২১২ 'ইল্ম' অধ্যায়।
*৬* আহমাদ, মিশকাত হা/৪২ 'ঈমান' অধ্যায়।
*৭* মুসলিম, মিশকাত হা/৫৫১৬ 'ফিতান' অধ্যায়।
*৮* সূরা বাক্বারাহ ২/৩১-৩৭= ৭; আলে ইমরান ৩/৩৩,৫৯; মায়েদাহ ৫/২৭-৩২= ৬; আ'রাফ ৭/১১, ১৯, ২৬, ২৭, ৩১, ৩৫, ১৭২-৭৩= ৮; হিজর ১৫/২৬-৪২= ১৭; ইসরা ১৭/৬১, ৭০; ইয়াসীন ৩৬/৬০ ইত্যাদি এভাবে সর্বমোট= ৫০টি।
১৮ ই জানুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৫:২৪
মোহাম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকী বলেছেন: ভাই আমি আসলে কম বুঝি তো, তাই কোরআন আর সহীহ হাদীছ যা বলেছে তার অতিরিক্ত বুঝতে পারি না।
২| ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৪৫
নোটার্হম বলেছেন: আয়াত ৪/১ এ সকল মানুষকে এক সত্ত্বা থেকে স্সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে। হাওয়াকে আদমের পাঁজরের থেকে বনানো হয়েছে বলে আয়াতে বলা হয়নি। অথচ আপনি সে আয়াতের রেফেরেনছ দিয়ে হাওয়াকে আদমের পাঁজর থেকে বানানো হয়েছে বল্লেন কিভাবে ? এ আয়াতের তফসীরে কোন তফসীরকারক যদি হাওয়াকে আদমের পাঁজর হতে সৃষ্ট বলে থাকেন, তাহলে তাঁর উদ্ধৃতি দিন এবং তিনি কিসের ভিত্তিতে হাওয়া আদমের পাজর হতে সৃষ্ট হয়েছে বলে তফসীর করেছেন তারও উল্লেখ থাকা বান্ছনীয়
আপনারাই বলে থাকেন তাকলীদ হারাম ,অন্ধ অনুকরন হারাম, হারাম, অথচ নিজেরাই অন্ধ অনুকরণে লিপ্ত !!
১৮ ই জানুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৫:২৪
মোহাম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকী বলেছেন: *২* নিসা ৪/১; মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৩২৩৮ 'বিবাহ' অধ্যায় 'নারীদের সাথে সদ্ব্যবহার' অনুচ্ছেদ। আদম এর মূল উপাদান হ'ল মাটি, তাই তাকে 'আদম' বলা হয়। পক্ষান্তরে হাওয়ার মূল হ'লেন আদম, যিনি তখন জীবন্ত ব্যক্তি। তাই তাকে 'হাওয়া' বলা হয়, যা 'হাই' (জীবন্ত) থেকে উৎপন্ন (কুরতুবী), বাক্বারাহ ৩৫; আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ ১/৬২ পৃঃ।
৩| ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১২ রাত ৮:৫৬
নস্টালজিক বলেছেন: মনোযোগ দিয়ে কথাগুলি পড়লাম!
আপনাকে ধন্যবাদ, পোস্টের জন্য!
১৮ ই জানুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৫:৩০
মোহাম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকী বলেছেন: আপনাকেও অশেষ ধন্যবাদ :-)
©somewhere in net ltd.
১|
১৭ ই জানুয়ারি, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৩৩
নোটার্হম বলেছেন: কোরান শরীফের ভূল অনুবাদ দেয়া থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানাই। অন্য কারো থেকে উদ্ধৃত করলে কিং কপি করতেও সাবধানতা অবলম্বন করতে অনুরোধ জানাই। আপনার লেখার সব কটিভুলল ডেখানোর দরকার নেই, নিজেই পরখ করে নিবেন তবে দু একটি দৃষ্টানত দিচ্ছি--
আয়াত ১৭/৭০.প্রকৃত অনুবাদ ( অনুবাদক মাওলানা করীম জওহর, হরফ প্রকাশনী, কলকাতা)
আমি অবশ্যই আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি........এবং যাদেরকে সৃষ্টি করেছি তাদের অনেকের উপর ওদের শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি ।
অথচ আপনি লিখলেন...সবকিছুর উপরে দেন মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব(১৭/৭০)
আল্লাহ বলেছেন....."তাদের অনেকের উপর...." আর আপনি বলে দিলেন.....সবকিছুর ( অর্থাৎ সবার উপর) উপর....