![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
"প্রত্যেক প্রাণীই মরণের স্বাদ ভোগ করবে ... এই পার্থিব জীবন কিছু বাহ্যিক ছলনার মাল সামানা ছাড়া আর কিছুই নয়।" {সূরা আল-ই-ইমরান, আয়াত ১৮৫} "সত্যিকার ঈমানদার ব্যক্তি হচ্ছে তারা, যারা আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রসূলের ওপর ঈমান আনে, অতঃপর (আল্লাহ তায়ালার বিধানে) সামান্যতম সন্দেহও পোষণ করে না এবং জীবন ও সম্পদ দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করে; এরাই হচ্ছে সত্যনিষ্ঠ।" {সূরা আল হুজুরাত, আয়াত ১৫}
আল্লাহ তা‘আলা মানব জাতিকে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন। উদ্দেশ্য হল: মানুষ এক আল্লাহর দাসত্ব করবে, তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবে না, সার্বিক জীবন একমাত্র অহীর বিধান অনুযায়ী পরিচালনা করবে, রাসূলুল্লাহ (ছা.)-এর আদর্শকেই একমাত্র আদর্শ হিসাবে গ্রহণ করবে। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের লক্ষে মানব জাতির জন্য ইসলামকে একমাত্র দ্বীন হিসেবে মনোনীত করে তার যাবতীয় বিধি-বিধান অহী মারফত জানিয়ে দিয়েছেন। পথ প্রদর্শক হিসেবে যুগে-যুগে নবী-রাসূলগণকে প্রেরণ করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর আনুগত্যশীল বান্দাদের সম্মানিত করার জন্য সৃষ্টি করেছেন জান্নাত। আর অমান্যকারীদের লাঞ্চিত করার জন্য সৃষ্টি করেছেন জাহান্নাম। মৃত্যুর পরেই মানুষের অবস্থান স্থল নির্ধারিত হবে। সৎকর্মশীল হলে জান্নাতে এবং অসৎকর্মশীল হলে জাহান্নামে চিরস্থায়ীভাবে বসবাস করবে। জান্নাতের সূখ যেমন- মানুষের কল্পনার বাইরে। জাহান্নামের শাস্তিও তেমনি মানুষের কল্পনার বাইরে। এ বিষয়ে আমরা কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে জাহান্নামের শাস্তির স্বরূপ তুলে ধরার প্রয়াস পাব ইন্শাআল্লাহ।
আল্লাহ তা‘আলা মানুষ এবং জ্বিন জাতিকে সৃষ্টি করে পার্থিব জীবন পরিচালনার জন্য ভাল-মন্দ দু’টি পথ দেখিয়ে দিয়েছেন এবং বান্দার প্রতিটি কাজের পূর্ণ প্রতিদান দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ভাল কাজের প্রতিদান স্বরূপ জান্নাত এবং মন্দ কাজের প্রতিদান স্বরূপ জাহান্নাম সৃষ্টি করেছেন। আর এটি হল অহংকারী ও পাপীদের মর্মান্তিক আবাসস্থল। চূড়ান্ত দুঃখ, ধিক্কার ও অনুতাপস্থল। যুগ যুগ ধরে দগ্ধীভূত চূড়ান্ত দাহিকাশক্তি সম্পন্ন ভয়ংকর আগুনের লেলিহান বহ্নিশিখা এই জাহান্নামের স্বরূপ ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরা হবে।
জাহান্নামের অস্তিত্ব :
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর আনুগত্যশীল বান্দাদের জন্য জান্নাত ও অমান্যকারীদের জন্য জাহান্নাম সৃষ্টি করেছেন যা বর্তমানে বিদ্যমান এবং কখনই তা ধ্বংস হবে না। তিনি মানুষ ও জ্বিন জাতি সৃষ্টি করার পূর্বেই জান্নাত ও জাহান্নাম সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তার অধিবাসী সৃষ্টি করেছেন। এ ব্যাপারে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত ঐক্যমত পোষণ করেছেন। তবে মু‘তাযিলা ও ক্বাদারিয়াগণ এ ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করে বলেন- আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামতের দিন জান্নাত ও জাহান্নামকে সৃষ্টি করবেন।*১*
জাহান্নামের বিদ্যমানতা সম্পর্কে কুরআন থেকে দলীল :
প্রথম দলীল : আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘তোমরা জাহান্নামকে ভয় কর যা প্রস্তুত করা হয়েছে কাফিরদের জন্য’ {সূরা আল-ইমরান: ১৩১}।
দ্বিতীয় দলীল : আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই জাহান্নাম গোপন ফাঁদ। সীমালংঘনকারীদের জন্য প্রত্যাবর্তন স্থল’ {সূরা নাবা: ২১-২২}।
জাহান্নামের বিদ্যমানতা সম্পর্কে হাদীছ থেকে দলীল :
প্রথম দলীল : হাদীছে এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রা.) হতে বর্ণিত যে, আল্লাহর রাসূল (ছা.) বলেছেন, তোমাদের কেউ মারা গেলে অবশ্যই তার সামনে সকাল ও সন্ধ্যায় তার অবস্থানস্থল উপস্থাপন করা হয়। যদি সে জান্নাতী হয়, তবে (অবস্থানস্থল) জান্নাতীদের মধ্যে দেখানো হয়। আর সে জাহান্নামী হলে, তাকে জাহান্নামীদের (অবস্থানস্থল দেখানো হয়) আর তাকে বলা হয়, এ হচ্ছে তোমার অবস্থান স্থল, ক্বিয়ামত দিবসে আল্লাহ তোমাকে পুনরুত্থিত করা অবধি।*২*
দ্বিতীয় দলীল : অন্য হাদীছে এসেছে, আবু হুরায়রাহ (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছা.) বলেছেন, আমি আমর ইবনু আমির ইবনে লুহাই খুযআহ্কে তার বহির্গত নাড়িভুঁড়ি নিয়ে জাহান্নামের আগুনে চলাফেরা করতে দেখেছি। সেই প্রথম ব্যক্তি যে সা-য়্যিবাহ্ উৎসর্গ করার প্রথা প্রচলন করে।*৩*
তৃতীয় দলীল : অন্য হাদীছে এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসূল (ছা.)-এর সময় সূর্যগ্রহণ হল। লোকেরা জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা দেখলাম, আপনি নিজের জায়গা হতে কি যেন ধরছেন, আবার দেখলাম, আপনি যেন পিছনে সরে এলেন। তিনি বললেন, আমিতো জান্নাত দেখছিলাম এবং এক গুচ্ছ আঙ্গুরের প্রতি হাত বাড়িয়েছিলাম। আমি তা পেয়ে গেলে দুনিয়া কায়িম থাকা পর্যন্ত অবশ্য তোমরা তা খেতে পারতে। অতঃপর আমাকে জাহান্নাম দেখানো হয়, আমি আজকের মত ভয়াবহ দৃশ্য কখনো দেখিনি। আর আমি দেখলাম, জাহান্নামের অধিকাংশ বাসিন্দা নারী। লোকেরা জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল! কী কারণে? তিনি বললেন, তাদের কুফরীর কারণে। জিজ্ঞেস করা হল, তারা কি আল্লাহর সাথে কুফরী করে? তিনি জবাব দিলেন, তারা স্বামীর অবাধ্য থাকে এবং ইহসান অস্বীকার করে। তুমি যদি তাদের কারো প্রতি সারা জীবন সদাচারণ কর, অতঃপর সে তোমার হতে (যদি) সামান্য ত্রুটি পায়, তাহলে বলে ফেলে, তোমার কাছ থেকে কখনো ভাল ব্যবহার পেলাম না।*৪*
চতুর্থ দলীল : অন্য হাদীছে এসেছে, আবু হুরায়রাহ (রা.) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (ছা.) বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা যখন জান্নাত সৃষ্টি করলেন, তখন জিবরাইল (আ.)-কে বললেন, যাও, জান্নাত দেখে আস। তিনি গিয়ে উহা এবং উহার অধিবাসীদের জন্য যেই সমস্ত জিনিস আল্লাহ তা‘আলা তৈরী করে রেখেছেন, সবকিছু দেখে আসলেন, এবং বললেন, হে আল্লাহ! তোমার ইজ্জতের কসম! যে কেহ এই জান্নাতের অবস্থা সম্পর্কে শুনবে, সে অবশ্যই উহাতে প্রবেশ করবে। (অর্থাৎ, প্রবেশের আকাঙ্খা করবে)। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতের চারপার্শে কষ্টসমূহ দ্বারা বেষ্টন করে দিলেন, অতঃপর পুনরায় জিবরাইল (আ.)-কে বললেন, হে জিবরাইল! আবার যাও এবং পুনরায় জান্নাত দেখে আস। তিনি গিয়ে উহা দেখে আসলেন এবং বললেন, হে আল্লাহ! এখন যা কিছু দেখলাম, উহার প্রবেশপথ যে কষ্টকর। আমার আশংকা হচ্ছে যে, কোন একজনই উহাতে প্রবেশ করবে না। রাসূলুল্লাহ (ছা.) বলেন, অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা যখন জাহান্নামকে সৃষ্টি করলেন, তখন বললেন, হে জিবরাইল! যাও, জাহান্নাম দেখে আস। তিনি দেখে এসে বলবেন, হে আল্লাহ! তোমার ইজ্জতের কসম! যে কেহ এই জাহান্নামের ভয়ংকর অবস্থার কথা শুনবে, সে কখনও উহাতে প্রবেশ করবে না। (অর্থাৎ, এমন কাজ করবে, যাতে উহা হতে বেঁচে থাকতে পারে)। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নামের চারপার্শে প্রবৃত্তির আকর্ষণীয় বস্তু দ্বারা বেষ্টন করলেন এবং পুনরায় জিবরাইলকে বললেন, আবার যাও এবং দ্বিতীয়বার উহা দেখে আস। তিনি গেলেন এবং এবার দেখে এসে বললেন, হে আল্লাহ! তোমরা ইজ্জতের কসম করে বলছি, আমার আশংকা হচ্ছে, একজন লোকও উহাতে প্রবেশ ব্যতীত বাকী থাকবে না।*৫*
জাহান্নামের সৃষ্টি সম্পর্কে বিরোধীদের যুক্তি ও তার জবাব
যুক্তি : যদি বর্তমানে জান্নাত ও জাহান্নাম সৃষ্টি হয়ে থাকে তাহলে ক্বিয়ামতের দিন তা (জান্নাত ও জাহান্নাম) এবং তার অধিবাসীরাও ধ্বংস হয়ে যাবে। এ মর্মে আল্লাহ তা‘আলার বাণী- তাঁর (আল্লাহ) সত্ত্বা ছাড়া সকল বস্তুই ধ্বংসশীল। {সূরা কাছাছ: ৮৮} প্রত্যেক জীবকে মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে। {সূরা আলে-ইমরান: ৮৫} সুতরাং প্রত্যেক জিনিস যেহেতু ধ্বংস হবে, তাই পূর্বে জান্নাত ও জাহান্নাম সৃষ্টি হলে তা অনর্থক হয়ে যায়। আর আল্লাহ তা‘আলা অনর্থক কোন কাজ করেন না।
জবাব : আল্লাহ তা‘আলা যে সকল বস্তু সৃষ্টি করে তার ধ্বংস লিপিবদ্ধ করেছেন ক্বিয়ামতের দিন সে সকল বস্তু অবশ্যই ধ্বংস হয়ে যাবে। কিন্তু জান্নাত ও জাহান্নামকে আল্লাহ তা‘আলা ধ্বংস করার জন্য সৃষ্টি করেননি। অনুরূপভাবে আল্লাহ্র আরশ যা জান্নাতের ছাদ হিসাবে থাকবে*৬* তাও ধ্বংস হবে না।*৭*
ইনশাআল্লাহ চলবে ...
রচনাঃ
শরীফুল ইসলাম বিন জয়নাল আবেদীন
লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়,
সঊদী আরব।
*১* ড: ওমর সুলাইমান আব্দুল্লাহ আল-আশক্বার, আল-জান্নাহ্ ওয়ান নার, দারুস সালাম, পৃঃ ১৩।
*২* বুখারী, ‘মৃত ব্যক্তির সম্মুখে সকাল ও সন্ধ্যায় (জান্নাত ও জাহান্নাম তার আবাস স্থল) পেশ করা’ অধ্যায়, হা/১৩৭৯, বাংলা অনুবাদ, তাওহীদ পাবলিকেশন্স ২/৭২, মুসলিম, হা/২৮৬৬।
*৩* বুখারী, ‘খুযা’আহ গোত্রের কাহিনী’ অধ্যায়, হা/৩৫২১, বাংলা অনুবাদ, তাওহীদ পাবলিকেশন্স ৩/৪৭৬।
*৪* বুখারী, ‘সূর্যগ্রহণ-এর সালাত জামা‘আতের সাথে আদায় করা’ অধ্যায়, হা/১০৫২, বাংলা অনুবাদ, তাওহীদ পাবলিকেশন্স ১/৪৯১, মুসলিম, হা/৯০৭।
*৫* আবু দাউদ, হা/৪৭৪৬, তিরমিযী, হা/২৫৬০, নাসাঈ, হা/৩৭৬৩, মিশকাত, হা/৫৪৫২, বাংলা অনুবাদ, এমদাদিয়া, ১০/১৭২।
*৬* তিরমিযী, হা/২৫৩১, তাহক্বীক: ছহীহ, নাছেরুদ্দীন আলবানী, মাকতাবাহ মা‘আরেফ, রিয়াদ ছাপা, পৃঃ ৫৭০।
*৭* ড: ওমর সুলাইমান আব্দুল্লাহ আল-আশক্বার, আল-জান্নাহ্ ওয়ান নার, দারুস সালাম, পৃঃ ১৮।
০২ রা জুন, ২০১২ সকাল ১০:৫২
মোহাম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকী বলেছেন: তারপরেও কিছু ভ্রান্ত দল যেমন মু‘তাযিলা ও ক্বাদারিয়াগণ এ ব্যাপারে দ্বিমত প্রচার করে থাকে। ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
৩০ শে মে, ২০১২ দুপুর ২:৪৫
দুঃখ হীন পৃথিবী বলেছেন: জান্নাত জাহান্নাম যে আগেই তৈরী করা আছে তা রাসুল (সাঃ) এর মেরাজ বিবরনী তে স্পষ্ট বলা আছে, তাতে সন্দেহের কি আছে?