নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার প্রিয় কিছু পাপের কাছে আমি বন্দি হয়ে আছি

নাভিদ কায়সার রায়ান

তৃতীয় ধরণের পাগল হল সেয়ানা পাগল। এটা সবচেয়ে কঠিন ধরণের পাগলামি। এই পাগল কি সুস্থ না অসুস্থ সেটা বোঝা খুব কঠিন। যখন সে পাগলামি করছে তখন তার কাজকারবার হবে সুস্থ মানুষের মতো। জটিল সব যুক্তি দিয়ে সে তার পাগলামি প্রতিষ্ঠিত করবে। আবার যখন সে সুস্থ থাকবে তখন তার চিন্তা ভাবনা হবে পাগলের মতো। অফিসে এবং বাসায় নিয়মিত ভাবে আমি এই পাগলের ভূমিকায় অভিনয় করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমার কাছে ভালোই লাগে। শুধু মাঝে মধ্যে আমার মাথার মধ্যে জ্যোৎস্না ঢুকে পড়ে। তখন খুব অস্থির লাগে। কেন লাগে জানি না। আপনারা কেউ কি জানেন?

নাভিদ কায়সার রায়ান › বিস্তারিত পোস্টঃ

ত্বকি

১৭ ই জুন, ২০১৩ রাত ৯:৫৮





শীতলক্ষ্যা নদীর ধারে শ্যাওলা ধরা পুরনো একটা ইটের দেয়াল আছে।দেয়ালটা আমার খুব প্রিয়। কেন? অনেক কারন আছে।

প্রথমত এখানে কেউ আসে না। দ্বিতীয়ত জায়গাটা খুব সুন্দর। আর তৃতীয়ত আমার আর ত্বকির এখানে অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে।

ত্বকি আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু। সত্যি কথা বলতে কি ত্বকি ছাড়া আমার আর কোন বন্ধু নেই। ব্যাপারটা ত্বকির ক্ষেত্রেও তাই। আমিও ত্বকির একমাত্র বন্ধু।

স্কুলে আমরা সবসময় একসাথে বসি। আমি সবসময় দেরি করে আসি বলে ত্বকি প্রতিদিন আমার জন্য সিট রাখে। বিকেলে আমরা একসাথে খেলতে যাই। যে দিন খেলি না সেদিন আমরা দেয়ালে বসে গল্প করি।

হাইস্কুলের পিছনে যে একটা পরিত্যাক্ত ইটের ভাটা আছে, সেটা পার হলে পাওয়া যাবে ফুটবল খেলার মাঠ।ইটের ভাটার নামের সাথে নাম মিলিয়ে মাঠের নামও রাখা হয়েছে ভাটার মাঠ। আন্ত জেলা লীগের বড় বড় প্লেয়াররা এখানে এসে প্র্যাকটিস করে। আমি অবশ্য সেই মাঠে খেলি না। আসলে খেলতে পারি না। এই মাঠটা বড়রাই সবসময় দখল করে রাখে। আমরা খেলি হাইস্কুলের ভেতরের মাঠে।

সেই ভাটার মাঠের শেষ প্রান্তে ঢালু হয়ে নদীতে মিশে গেছে। নদীর তীর ধরে কিছু দূর এগিয়ে গেলেই পাওয়া যাবে আমার প্রিয় দেয়াল। শ্যাওলা ধরা, ক্ষয়ে যাওয়া প্রাচীন এক ইটের দেয়াল।

সেই দেয়ালে একদিন আমি একাই বসে আছি। প্রতিদিনের মত পা ঝুলিয়ে নদীর দিকে তাকিয়ে আছি। এখানে এসে বসলে আমি কেমন যেন হারিয়ে যাই। নদীর পানি তীরে মৃদু ছলাৎ ছলাৎ শব্দে আছড়ে পরছিল। কিছুটা পানি দেয়ালে ধাক্কা খেয়ে ছিটকে আমার পাটাকে ভিজিয়ে যাচ্ছিল। কিছুক্ষণ বসে থাকতে থাকতে মনে হয় কেমন যেন একটু অন্য মনস্ক হয়ে গিয়েছিলাম, এমন সময় পেছন থেকে ঝুপ করে ত্বকি দেয়ালে উঠে বসে। আমি একটু চমকে উঠে ওর দিকে তাকাই-

“কিরে কি ভাবিস এত?কখন আসলি? বাদাম খাবি?” বলে ঠোঙ্গাটা আমার দিকে এগিয়ে দ্যায় ত্বকি।

“নাহ, বেশিক্ষণ হয়নি। তুই কোথায় ছিলি?” বাদাম খেতে খেতে জিজ্ঞেস করি।

“আরে, রাস্তায় আসতে আসতে সোহাগের সাথে দেখা। পরশু ফিজিক্স পরীক্ষা আর আজকে আমার কাছে গতি সূত্র বুঝতে চায়।ওকে একটু গতি সূত্রের আইডিয়া দিয়ে আসতে আসতে দেরি হয়ে গেল।’’

“তোর সব পরা শেষ?”

“সমাজ বিজ্ঞান একটু পরা বাকি কিন্তু ফিজিক্স সব পরা শেষ। তুই তো জানিস ফিজিক্স পরতে আমার খুব ভাল লাগে। তোর কি অবস্থা?”

ওর কথার উত্তর না দিয়ে আমি গম্ভীর মুখে বাদাম খেতে খেতে আবার নদীর দিকে তাকাই। “সব পরা শেষ” কথাটা শুনতে আমার ভাল লাগল না কারন আমার এখনো অনেক কিছুই পড়া বাকি।

আর তাছাড়া সবচেয়ে কাছের বন্ধু হিসেবে তাকির উচিৎ ছিল পড়াটা আমাকে প্রথমে বুঝিয়ে দেয়া। কথাকার কোন সোহাগ এসে তোকে বলল আর তুই শুরু করে দিলি?

আমি বুঝে উঠতে পারি না কিভাবে সবসময় ওর পড়া শেষ হয়ে যায় আর আমার সব কিছুই বাকি থেকে যায়। সৃষ্টিকর্তা আমার প্রতি যে আবিচার করেছেন তার প্রতিবাদে নদীতে সর্বশক্তি দিয়ে একটা ঢিল দেই।

ত্বকি সেদিকে তাকিয়ে মনে হয় আমার মনের অবস্থাটা বুঝতে পেরেই বল

“চিন্তা করিস না। সব ঠিক হয়ে যাবে।এখন বাসায় চল নাস্তা করবি।”

আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ত্বকির দিকে তাকাই। ওর হাসি মাখা চোখের দিকে তাকিয়ে আমি যেন একটু ভারসা পাই যে – “সব ঠিক হয়ে যাবে।”

কিছুই ঠিক হয় না।

কিভাবে যেন সব এলোমেলো হয়ে যায়। হঠাৎ একদিন শুনি ত্বকিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আমার একমাত্র বন্ধু ত্বকি হারিয়ে গেছে। কারা যেন ওকে মেরে ফেলেছে।

আজ আমি শীতলক্ষ্যা নদীর ধারে শ্যাওলা ধরা পুরনো একটা ইটের দেয়ালে একা একা বসে আছি। ত্বকির কথা মনে পড়ছে। কিছুতেই চোখের পানি ধরে রাখতে পারছি না।

তোর কথা মনে পড়ছে বন্ধু। তোর কাছ থেকে একটা বই চুরি করে এনেছিলাম। ভেবেছিলাম এত বই তোর, তার থেকে একটা বই আমি নিলে কি হবে? বইটা তোকে ফেরত দেয়া হয়নি। বইটা নিয়ে যা। ওটার দিকে তাকিয়ে থাকতে পারছি না। আমার আর পড়তে ভাল লাগে না।

কে মারল তোকে? খুব ব্যাথা দিয়েছে তোকে? দুনিয়াতে এত লোক থাকতে তোকে কেন মরতে হল! তুই যে বলতি “আমি শার্লক হোমস হব আর তুই হবি ওয়াটসন। দুজন মিলে রহস্য ভেদ করব” এখন তোর মৃত্যুর রহস্য কে বের করবে? সবাই তো যার যার চিন্তায় ব্যস্ত। কেউ ভূগোল পরীক্ষা দেয় আর কেউ বাংলা পরীক্ষা দেয়। তোকে নিয়ে চিন্তা করার কেউ নেই।

তুই চিন্তা করিস না বন্ধু, আমি বড় হয়ে নেই। তোর মত আর কাউকে আমি মরতে দেব না।







সংবাদপত্র থেকে নেয়াঃ



1) Click This Link

2) Click This Link

3) Click This Link



Update

4) Click This Link



5) খুনের জন্য শামীম ওসমানকে দায়ী করলেন ত্বকীর বাবা

হত্যাকাণ্ডের বিচার নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে রফিউর রাব্বি বলেন, “স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী পুলিশ প্রশাসনকে ফোন করে বলেছে, ত্বকী হত্যার ঘটনা নিয়ে বেশি এগোনোর দরকার নাই।”

Link

Click This Link



6) নারায়ণগঞ্জে ত্বকী মঞ্চ, টর্চার সেলের যত কাহিনী



Click This Link



মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.