নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার প্রিয় কিছু পাপের কাছে আমি বন্দি হয়ে আছি

নাভিদ কায়সার রায়ান

তৃতীয় ধরণের পাগল হল সেয়ানা পাগল। এটা সবচেয়ে কঠিন ধরণের পাগলামি। এই পাগল কি সুস্থ না অসুস্থ সেটা বোঝা খুব কঠিন। যখন সে পাগলামি করছে তখন তার কাজকারবার হবে সুস্থ মানুষের মতো। জটিল সব যুক্তি দিয়ে সে তার পাগলামি প্রতিষ্ঠিত করবে। আবার যখন সে সুস্থ থাকবে তখন তার চিন্তা ভাবনা হবে পাগলের মতো। অফিসে এবং বাসায় নিয়মিত ভাবে আমি এই পাগলের ভূমিকায় অভিনয় করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমার কাছে ভালোই লাগে। শুধু মাঝে মধ্যে আমার মাথার মধ্যে জ্যোৎস্না ঢুকে পড়ে। তখন খুব অস্থির লাগে। কেন লাগে জানি না। আপনারা কেউ কি জানেন?

নাভিদ কায়সার রায়ান › বিস্তারিত পোস্টঃ

তৃতীয় নয়ন

২০ শে জুলাই, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৩৫

গলায় বিশাল একটা DSLR ক্যামেরা নিয়ে ঘোরাঘুরি করাটা আজকাল একটা ফ্যাশন হয়ে গেছে। At least কিছুদিন আগেও আমার এই ধারণা ছিল। রাস্তার পাশ দিয়ে যাবার সময় অনেককে দেখেছি বিচিত্র ভঙ্গিতে কিসের যেন ছবি তোলার চেষ্টা করছে। ছবি তোলার পজিশন নিতে গিয়ে যে রিকশার নিচে পরার উপক্রম হয়েছে সেই খেয়াল নেই। ছবি তোলার নেশায় একদম বুঁদ হয়ে আছে।

এরকম একবার আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে গাজীপুর গিয়েছি বেড়াতে। ছোট বেলায় দেখা ভাওয়াল রাজার জয়দেবপুর এখন অনেক পাল্টে গেছে। একসময় জয়দেবপুরে মূল রাস্তার দু'পাশে ভাওয়াল রাজার আমলের লাগানো পঞ্চাশ-ষাট ফুট উঁচু দেবদারু গাছ ছিল। রহস্যময় ভাওয়াল রাজার বাড়ি, তেপান্তরের রাজবাড়ি মাঠ, ভুতুড়ে শ্মশান ঘাট আর দেবদারু ছাওয়া ছায়াবীথি আমার শৈশবকে অলৌকিক রূপ দিয়েছিল। এখন আর সেসব খুঁজে পাওয়া যাবে না। তারপরও যা টিকে আছে সেটা আমার বন্ধুদের বিমোহিত করল।

এঁদের মধ্যে একজনকে পাওয়া গেল যে সাথে করে DSLR ক্যামেরা নিয়ে এসেছে। এবং যক্ষের ধনের মতো সেটা বুকে চেপে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কাউকে স্পর্শও করতে দিচ্ছে না। আমাদের ছবি না তুলে গাছ, লতা পাতার ছবি তুলছে। এসব দেখে আমাদের মেজাজ চূড়ান্ত খারাপ হয়ে গেল। আমরাও আমাদের স্বভাব মতো ওকে নানা ভাবে ভয় ভীতি দেখালাম। কয়েকজন ওর হাত থেকে ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয়ার দুঃসাহসও দেখাল। আমার বন্ধুটা এমনিতে মুখচোরা, কিন্তু ক্যামেরার উপর অ্যাটাক সে রোমের সেনাপতির মতো একাই রুখে দিল। তার রুদ্র মূর্তি দেখে আমরা পিছিয়ে এলাম। ছবি তোলা নিয়ে শেষ পর্যন্ত একটা বিশ্রী সিচুয়েশন তৈরি হয়ে যাচ্ছিল। ব্যাপারটা স্বাভাবিক করার জন্য আমাকে এগিয়ে আসতে হল। ঠিক কি কারনে জানি না, আমার এই বন্ধু আমাকে রীতিমতো "পীর" জ্ঞান করে। আমি অনায়াসেই ওকে বোঝাতে সক্ষম হই যে যেহেতু আমরাও প্রকৃতির সন্তান সেহেতু সে আমাদের কিছু ছবিও তুলতে পারে। এতে ওর ছবি তোলার প্রতিভার উপর বিরূপ কোন প্রভাব পড়বে না। তাছাড়া বেড়াতে আসার একটা স্মৃতিও থেকে যাবে। আমার কথা শুনে ওর চোখমুখ নরম হয়ে আসে। শেষ পর্যন্ত দেখা যায় আমার বাকি শাখামৃগ বন্ধুরা একেকটা গাছ ধরে নানান ভঙ্গিমায় ঝুলে পড়ছে। আর সে খুশিতে আত্মহারা হয়ে ছবি তুলে যাচ্ছে।

আমি ভাবলাম যাক, আমার যুক্তিতে তাহলে ছেলেটা ঘায়েল হয়েছে। কিন্তু আমার ধারণা যে ভুল ছিল সেটা জানতে পারলাম ঢাকায় ফেরত এসে। মুখ চুন করে পরের দিন আড্ডায় এসে ও জানালো যে আমাদের একটা ছবিও নাকি সেভ হয় নাই। সব ছবি নাকি মুছে গেছে। আমরা বুঝতে পারলাম বদমাইশটা আসলে আমাদের একটা ছবিও তুলে নাই। ছবি তোলার ভান করে সাটার টিপেছে আর আমরা খুশীতে ডুগডুগি বাজিয়েছি।

আমরা যে প্রতারিত হয়েছি সেটা বোঝার সাথে সাথে মিরজাফরকে পাকড়াও করে হালকা উত্তম মধ্যম দেয়া হল। রিমান্ড শেষে অপরাধী শিকার করল যে সে আমাদের সাথে মজা করার জন্য মিথ্যা কথা বলেছে। ছবি তুলেছে সে ঠিকই। “কোন ছবি উঠে নাই” এটা শুনে আমাদের চেহারার কি অবস্থা হয় সেটা ক্যামেরায় ধরে রাখার চিন্তা থেকে সে মিথ্যা কথাটা বানিয়েছে। কিন্তু এই কথার যে এমন রিঅ্যাকশন হবে সেটা সে আন্দাজ করতে পারেনি।

আপরাধ শিকার করার পর আসামীকে ছেড়ে দেয়া হল। ও তৈরি হয়েই এসেছিল। ব্যাগ থেকে ল্যাপটপটা বের করে সেদিনের ছবিগুল বের করে দেখাল। আমরাও হুমড়ি খেয়ে পড়লাম ছবিগুলো দেখার জন্য। ছবি দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলাম সবাই।

আমি আর আমার বন্ধুরা একেকজন স্লেজিং এক্সপার্ট। আমাদের স্লেজিং এর শিকার হয়ে অনেক প্রতিভা অঙ্কুরেই বিনাশ হয়ে গেছে, মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি। আমার ঐ বন্ধু প্রথমে তার তোলা সেই প্রকৃতির ছবিগুলো দেখাতে চায়নি স্লেজিং এর ভয়ে। কিন্তু আমরা ওকে ছেড়ে দেব কেন? স্লেজিং করার সুযোগ আছে আর সেটা “কেউ চায়নি” বলে সেটা আমাদের হাতছাড়া হয়ে যাবে, এটা হতে পারে না। আমরা জোর করে ওর ল্যাপটপ থেকে ছবিগুল খুঁজে বের করলাম। এবং ছবিগুল দেখে আবারো মুগ্ধ হলাম। (আমার মনে হয় আমার মতো কেউ কেউ কিছুটা ঈর্ষান্বিত ও স্লজিং করতে না পেরে হতাশও হয়েছিল।) আমাদের বাদে অর্থাৎ প্রকৃতির যে ছবিগুলো সে তুলেছে সেগুলই বরং অসাধারণ হয়েছে।

প্রশংসা করার মতো ভালো কাজে আমাদের উৎসাহ খুবই কম। কারন ভালো কথার মধ্যে কোন এন্টারটেইনমেন্ট নাই। না বলতে বলতে আজকাল ভালো কথা বলতে গেলে কি যেন একটা গলার মধ্যে কাঁটার মতো আটকে যায়। গলা দিয়ে তখন স্বর বের হতে চায় না। তারপরও আমরা ছবিগুলোর প্রশংসা না করে পারলাম না। কাঁধ ঝাঁকিয়ে ওকে উৎসাহ দিলাম। আমাদের প্রশংসা শুনে ওর চোখে আনন্দাশ্রু চিক চিক করতে থাকে। আমরাও সুযোগ বুঝে ওকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করলাম। মামার চায়ের দোকানে ওর নামে চা আর সিগারেট খেয়ে দু’দিনে দেড় হাজার টাকা বিল তুলে ফেলেছিলাম। বিল দিতে গিয়ে দুঃখে বেচারার চোখের পানি আর নাকের পানি এক হয়ে গিয়েছিল। আমরাও তৃপ্তির হাসি হেসেছিলাম। হেহ হে বাব্বা, ভালো কথার একটা দাম আছে না?

আমি বুঝতাম না ছবি তোলার মধ্যে এমন কি আছে। আমি নিজের চোখে যা দেখতে পাচ্ছি সেটাই তো ক্যামেরা ধরে রাখছে, তাই না? খোলা চোখে আমি যে শব্দ-গন্ধ-আবেগময় পৃথিবী দেখতে পাচ্ছি, সেই ছবি কি ঐ বোবা ক্যামেরা তুলতে পারবে? আমার মনে হয় না।

আমার সেই ভুল ধারণা আস্তে আস্তে ভেঙ্গে যাচ্ছে। ছবি সম্পর্কে আমার রুচি খুব উন্নতমানের বা ফটোগ্রাফি সম্পর্কে আমি একজন বোদ্ধা তা আমি বলব না। কিন্তু আমার কাছে যেটা দেখে ভালো লাগছে তার জন্য অন্য কারো সার্টিফিকেট আমার প্রয়োজন নেই। ব্লগ আর ফেসবুকের কল্যাণে কিছু ফটোগ্রাফারের ছবি দেখে আমার মনে হয়েছে এসব ছবি কেবল শুধু কোন একটা মুহূর্তকেই ধরে রাখেনি। একেকটা ছবি যেন একেকটা গল্প। এর প্রতিটি পিক্সেলে পিক্সেলে শব্দ-গন্ধ-আবেগ মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে।



somewhereinblog এ এক শখের ফটোগ্রাফারের যে ছবিগুলো দেখে মুগ্ধ হয়েছি তার লিংক শেয়ার করলামঃ

Click This Link









মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা আগস্ট, ২০১৩ রাত ৯:০৩

আমি ময়ূরাক্ষী বলেছেন: আমার বন্ধুটা এমনিতে মুখচোরা, কিন্তু ক্যামেরার উপর অ্যাটাক সে রোমের সেনাপতির মতো একাই রুখে দিল।


লেখাটা পড়ে মজা পেলাম।

২| ০২ রা আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৪:৩৭

নাভিদ কায়সার রায়ান বলেছেন: ধন্যবাদ!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.