![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
তৃতীয় ধরণের পাগল হল সেয়ানা পাগল। এটা সবচেয়ে কঠিন ধরণের পাগলামি। এই পাগল কি সুস্থ না অসুস্থ সেটা বোঝা খুব কঠিন। যখন সে পাগলামি করছে তখন তার কাজকারবার হবে সুস্থ মানুষের মতো। জটিল সব যুক্তি দিয়ে সে তার পাগলামি প্রতিষ্ঠিত করবে। আবার যখন সে সুস্থ থাকবে তখন তার চিন্তা ভাবনা হবে পাগলের মতো। অফিসে এবং বাসায় নিয়মিত ভাবে আমি এই পাগলের ভূমিকায় অভিনয় করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমার কাছে ভালোই লাগে। শুধু মাঝে মধ্যে আমার মাথার মধ্যে জ্যোৎস্না ঢুকে পড়ে। তখন খুব অস্থির লাগে। কেন লাগে জানি না। আপনারা কেউ কি জানেন?
আজকে খুবই মর্মান্তিক একটা দিন। হ্যাঁ, আমি ভালোবাসা দিবসের কথাই বলছি। আমার কথা শুনে অবাক হওয়ার কিছু নাই। সবার অবস্থা দেখে আমার এই মুহূর্তে তাই মনে হচ্ছে। কিছু মানুষের চরিত্র বিশ্লেষণ করলেই ব্যাপারটা পরিষ্কার হবে। এদের কয়টা ভাগে ভাগ করে নেয়া যেতে পারে:
প্রথম দলেই আছে প্রেমিক প্রেমিকারা। এই দিনটা তাদের জন্যই। আমি মনে করি জীবনে যারা ভালোবাসা পেয়েছে তারা নিজেরা আনন্দে আছে এবং তাদের দেখে আমাদের ভালো লাগছে – এমনটাই হওয়া উচিৎ। কিন্তু অত্যান্ত দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে ভ্যালেন্টাইনস ডে-তে ব্যাপারটা উল্টে গেছে। ফেসবুকের কল্যাণে প্রেমিক-প্রেমিকারা এখন পরিণত হয়েছে মূর্তিমান আতংকে!
দিনের শুরুতেই ফেসবুকে নানান গানের কলি এবং সাথে তাদের আনন্দঘন ছবি দিয়ে তারা “কিছু” মানুষের মনে রীতিমত ঈর্ষা জাগিয়ে তুলছে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে সেই ঈর্ষা পরিণত হচ্ছে ক্ষোভে। দিন শেষে সেই ক্ষোভ পরিণত হচ্ছে হতাশায়।
এছাড়াও ইদানিং আপনারা অবশ্যই লক্ষ্য করেছেন সিএনজি কিংবা রিক্সায় বিপরীত লিঙ্গের কাউকে সঙ্গী করে উঠলেই যাত্রীর অভিপ্রায় নিয়ে চালক অত্যান্ত অস্বস্তি বোধ করেন। তাঁর কারণ আমার মনে হয় না আপনাদের বুঝিয়ে বলতে হবে। তারপরও যারা এই ব্যাপারটা বোঝেন না তাদের জন্য এখন সিএনজির ভেতরে এই ধরণের সতর্কবার্তা থাকে – “সিএনজির ভেতরে প্রেম ভালোবাসা নিষেধ”।
এই প্রসঙ্গে একটা কৌতুক না বলে পারছি না।
বল্টু এক ঋষির কাছে গিয়ে জিগ্যেস করল- আচ্ছা ঋষি বাবা, বিয়ের আগে যদি প্রেমিক প্রেমিকা রাতে এক বিছানায় ঘুমায় তাহলে কি পাপ হয়?????
ঋষি : ঘুমালে তো পাপ হয় না বৎস, কিন্তু সমস্যা হল তোরা তো ঘুমাস না........
হা হা হা!
এটাই সমস্যা। প্রেম সব সময়ই নির্জনতা খোঁজে। চারপাশে কোলাহলযুক্ত পরিবেশে “আমি তোমাকে ভালোবাসি”- কথাটা ঠিক দ্যোতনা সৃষ্টি করে না বলেই আমার ধারণা। কিন্তু আমাদের সংস্কৃতি এখনও প্রেমকে নির্জনতা দিতে শেখেনি। সেকারণে এই দিন হাজারে হাজারে যেসব কপোত কপোতী নির্জনতার সন্ধানে সিএনজি কিংবা রিকশায় হুড তুলে ঘুরতে চান তারা পরোক্ষভাবে এই নিরীহ রিক্সা এবং সিএনজি চালকদের মনে প্রবল চাপ তৈরি করেন।
অনিচ্ছা সত্ত্বেও নিজে ভালো থেকে অপরকে খারাপ রাখার এই দৃষ্টান্ত বিরল এবং এই ঘটনা কেবল ভ্যালেন্টাইনস ডে-তেই দেখা যায়। এটা কি একটা মর্মান্তিক ঘটনা নয়? জাতির বিবেকের কাছে প্রশ্ন থাকল। জাতি অবশ্য আজকাল আগেই প্রশ্ন হাতে পেয়ে যায়। নগদ প্রশ্ন করে তাদের মনে হয় না কুপোকাত করা যাবে। এবং এরা সম্ভবত এখন আর কিছু “কেয়ার” করে না।
দ্বিতীয় দলে আছে অবিবাহিত তরুণ-তরুণীরা, যারা এখনও বিয়ের পিঁড়িতে বসেন নি, কিন্তু সেই সম্ভাবনা খব প্রবল হয়ে দেখা দিয়েছে। ফাল্গুনের ঝিরিঝিরি বাতাস এবং মেঘমুক্ত নীলাকাশ দেখে তাদের মনে নানা রকম ভাবের উদ্ভব হলেও তারা সেই ভাবের আদান প্রদান করতে পারছে না। এটা অনেকটা এমন এক গ্যাস ভর্তি বোতলের মতো অবস্থা যার মুখটা ছিপি দিয়ে আঁটা হয়েছে। কাজটা খুব খারাপ হচ্ছে। কারণ ছিপির ফাঁক ফোঁকর দিয়ে যখন তীক্ষ্ণ গতিতে গ্যাস নির্গত হচ্ছে সেই শব্দকে ঠিক ভাষায় প্রকাশ করা যাচ্ছে না। শুধু তাই না, বোতলের ভেতর যদি বিষাক্ত কোন গ্যাস থাকে তাহলে কি অবস্থা হতে পারে সেটা নিশ্চয়ই কাউকে বলে বোঝাতে হবে না! কারণ বিষাক্ত গ্যাস, সেটা বোতলের ভেতরে থাকুক কিংবা বাইরে – দুটোই সমান ভাবে প্রাণঘাতী।
গ্যাসের কথা যখন আসলোই তখন আবারও একটা কৌতুক না বলে পারছি না!
হাবলু গেছে ডাক্তারের কাছে। গিয়ে বলল, আমার পেটে গ্যাসের অনেক সমস্যা। কিন্তু ভালো দিক এই যে আমার গ্যাসের গন্ধ হয় না, আওয়াজও হয় না। এখানে বসে আমি ১৫-২০ বার গ্যাস ছেড়েছি; কিন্তু কেউ টের ই পায় নি।
ডাক্তারকে দেখে বেশ অভিজ্ঞ মনে হল হাবলুর। ডাক্তার খস খস করে প্রেসক্রিপশন লিখে বলল, “এই ওষুধটা খান, আর এক সপ্তাহ পরে আসবেন।”
এক সপ্তাহ পর...
হাবলুঃ এ কি ওষুধ দিলেন ডাক্তার সাহেব, আমার গ্যাসে এখনো আওয়াজ নেই; কিন্তু জঘন্য গন্ধ বের হয়!
ডাক্তারঃ গুড, আপনার নাক ঠিক হয়ে গেছে; এখন আপনার কানের চিকিৎসা করতে হবে...!!
হা হা হা!
ইয়ে, কৌতুকটা একটু কেমন কেমন হয় গেল! যাই হোক, আমরা আবার আমাদের আলোচনায় ফিরে আসি।
এখন সমস্যা হল ভ্যালেন্টাইনস ডে-তে প্রায়ই এই ছিপি খুলে গিয়ে এই দ্বিতীয় দলভুক্তরা অদ্ভুত কিছু কথা বলতে শুরু করে যার বাস্তবিক অর্থে কোন প্রয়োগ নেই কিন্তু সেটা ঠিক ফেলে দেয়াও যাচ্ছে না।
যেমন এই বছর তারা অবিস্কার করেছে – “প্রেম করা অবৈধ।”
না,না বন্ধুগণ, আঁতকে ওঠার মতো কিছু হয়নি। প্রেম করার জন্য আপনাকে থানা পুলিশ করতে হবে না। কেবল মনটাকে স্থির রাখতে হবে এবং বিষয়টা ঠাণ্ডা মাথায় বিশ্লেষণ করতে হবে। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে সাবালক পুরুষ এবং মহিলার খোলামেলা (!) ভাবে মেলামেশা করা ঠিক না। ইহা অত্যান্ত নাজায়েজ কাজ এবং ধর্মের দিক থেকে অত্যান্ত গর্হিত অপরাধ। সিএনজি কিংবা রিক্সা চালকদের মানসিক অবস্থা দেখেই আমরা বুঝতে পারছি এই ধরণের ঘটনা অহরহ ঘটে চলেছে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে এই দ্বিতীয় দল খুব একটা ভুল কথা বলেনি। আবার এমন একটা আনন্দের দিনে এই ধরণের কথা মাথায় আনলেও সমস্যা। তাহলে পরিস্থিতিটা যেমন দাঁড়াচ্ছে সেটাকে কি মর্মান্তিক বলা যায় না?
যাক দ্বিতীয় দলের কথাটা বলার সময় মনে ওপর দিয়ে বেশ চাপ গেল। আল্লাহ্ পা’ক এদের রহম করুণ এবং আগামী ভালোবাসা দিবস আসার আগেই যেন তাদের একটা হিল্লে হয়ে যায় সেই আশা করি।
এবার আসি তৃতীয় দলের কথায়। আহ! এদের কথা ভাবতেই আমার মনটা ভালো হয়ে যায়। কারণ আমি এই দলের একজন আনন্দিত এবং সুখী সদস্য। আর এই কথাটার মধ্যেই অত্যান্ত করুণ একটা গল্প লুকিয়ে আছে। আর সেই গল্পটাই আজকের দিনটাকে মর্মান্তিক করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট।
পৃথিবীতে মানুষের চাওয়া পাওয়ার শেষ নেই। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই মানুষ যা চায় তা পায় না। আর পেয়ে গেলেও এক সময় তাদের কণ্ঠে শোনা যায় – “নদীর এপার কহে ছাড়িয়া নিঃশ্বাস, অপারেতে যত সুখ আমার বিশ্বাস।” এই ভ্রান্ত বিশ্বাসের কারণেই এক সময় তাদের জীবন হয়ে ওঠে দুর্বিষহ।
ভালোবাসার মানুষকে পেয়ে যাবার পরও কেন একজন মানুষের মুখে হতাশার সুর শোনা যায় তাঁর একমাত্র কারণ প্রেম মানুষকে অন্ধ করে দিলেও “বিয়ে” সম্ভবত মানুষের চোখ খুলে দ্যায়। আর চোখ খুলেই সে দেখতে পায় বাস্তবতার নিকষ কালো অন্ধরকার। এই অন্ধকারে আলো জ্বালাতে অর্থের প্রয়োজন এবং দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি অর্থ কেবল আলোই জ্বালায় না কিছুটা অন্ধকারও সাথে করে ডেকে নিয়ে আসে। এক সময় তাদের কাছে প্রিয় মানুষের সান্নিধ্যের থাকার সুযোগ থাকলেও সময় থাকে না। অর্থ সবকিছু এনে দিতে পারলেও সময়কে ফিরিয়ে আনতে পারে না। ভালোবাসা দিবসে এই তৃতীয় দলের লোকেরা বুঝতে পারে তাদের কাছে সব কিছু আছে শুধু সময়টাই নেই!
সব শেষে তাদের কথা বলতে হচ্ছে যাদের প্রতি এই পৃথিবী বড়ই নিষ্ঠুর! ফুলে-ফলে, বসন্ত বাতাসে কিংবা হরেক রকম রঙিন উৎসবের আনন্দ রসে এই পৃথিবী মত্ত হলেও তারা আনন্দিত হতে পারে না এই দিনে। কেনানা বুকের গহীনে এক নিদারুণ শূন্যতা তৈরি করে তাদের প্রিয়জন তাদের ছেড়ে চলে গেছে অথবা চলে যেতে হয়েছে। মানুষের আনন্দে তারা আনন্দিত হতে পারে না কারণ তাদের হৃদয়ে জ্বলতে থাকা আগুন মুহূর্তেই সেই আনন্দ জ্বালিয়ে পুড়িয়ে খাক করে দেয়। এমনকি তারা ঈর্ষান্বিতও হতে পারে না কারণ যে গভীর বিষণ্ণতায় তাদের হৃদয় ভুগছে “ঈর্ষা” সেই তলদেশ ছুঁতে পারে না।
উহ! কি মর্মান্তিক! কি হৃদয় বিদারক ঘটনা! বলতে গিয়ে আমার চোখে পানি চলে এসেছিল! এখন অবশ্য সব ঠিক আছে। এই বয়সে কান্নাকাটি কথাটা ঠিক শোভনীয় না। লোকজন উল্টা পাল্টা ভাবতে পারে।
যাই হোক। অবশেষে আমার মনে হয় আমরা এই ভালোবাসা দিবসের মর্মান্তিক দিকটা উন্মোচন করতে পেরেছি। এটা একটা বিরাট সাফল্য। মজার ব্যাপার হচ্ছে অন্যান্য দেশে Valentine’s Day (অর্থাৎ প্রেমিক-প্রেমিকাদের জন্য নির্ধারিত দিবস) পালিত হলেও আমরা এর নাম দিয়েছি ভালোবাসা দিবস। তাই ভালোবাসা দিবস শুধুমাত্র প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ না রেখে আমরা আমাদের মা-বাবা, ভাইবোন, আত্মীয়-স্বজন এবং বন্ধুদের মধ্যে ছড়িয়ে দেবো। আর এভাবেই একদিন আমরা এই দিনটার সত্যিকার রূপটা দেখতে পারবো। ভালোবাসা হোক সবার জন্য।
HAPPY VALENTINE’s DAY!
০২ রা মার্চ, ২০১৫ রাত ১১:২৭
নাভিদ কায়সার রায়ান বলেছেন:
২| ০২ রা মার্চ, ২০১৫ রাত ১১:৩৫
এনামুল রেজা বলেছেন: মজা পেলাম লেখাটা পড়ে। ভালবাসা বালুবাসা হয়ে যাচ্ছে কিনা কে জানে আজকাল।
০৩ রা মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৪:৪৭
নাভিদ কায়সার রায়ান বলেছেন: হা হা হা
বালুবাসা কথাটা ভাল লাগল
©somewhere in net ltd.
১|
১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:৫৮
হাসান মাহবুব বলেছেন: পড়লাম :-<