নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রেজাউন নাঈম

রেজাউন নাঈম › বিস্তারিত পোস্টঃ

পারস্পরিক সম্প্রীতির বাংলাদেশ

১৪ ই আগস্ট, ২০২৪ রাত ৯:৩৮

হিন্দু মুসলমান সম্প্রীতি নিয়ে কখনো লিখতে হবে তা কোনদিন ভাবিনি। রাজনীতিবিদরা সমাজের মধ্যে এমন একটা বিভাজন তৈরি করে দিয়েছে এইটার জন্য একটা দেশ এখন ভুক্তভোগী।

গত ১৫ বছরে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সবগুলো সেক্টর এমনভাবে ধ্বংস করেছে যে এত সহজে এসব মাথা উচু করে দাড়াতে পারবেনা। পুলিশের কথা চিন্তা করুন। পুলিশকে দাড় করিয়েছে আজ জনগণের মুখামুখী করে। আজ যখন জনগণের বিজয় হয়েছে পুলিশ ভয়ে পালিয়েছে। সাধারণ সময়ে একটা সরকার যে যে প্রতিষ্ঠান বা যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে, এই সময়ে তা আর নেই। আমাদের সবাইকে স্ব স্ব অবস্থানে থেকে কোন প্রকার চাপ না দিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সর্বোচ্চ সাহায্য করা উচিৎ। তাদেরকে সোজা হয়ে দাড়াবার জন্য কিছু সময়তো দিতেই হবে।

বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের শাহবাগসহ বিভিন্ন জায়গায় সাম্প্রতিক সমাবেশনিয়ে কিছু কথা বলতে চাই। সমাবেশ বা বিক্ষোভ করা আপনার অধিকার এবিষয়ে কোন সন্দেহ নাই। গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ২.০ অর্জনের পর এই নিয়ে কারো সমাবেশ করার অধিকার নিয়ে প্রশ্ন করা ও উচিৎ নয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের মধ্যকালীন সময়ে দেশের বেশ কিছু হিন্দু সম্প্রদায়ের সাথে অপ্রতিকর ঘটনা ঘটেছে। এই সত্য লুকানোর কিছু নেই । মন্দির ভাঙ্গাটা অপরাধ সেটা একটা ভাঙ্গেন আর ১০ টাই ভাঙ্গেন। কিন্তু এই দুষ্কর্ম কখনোই বাংলাদেশকে উপস্থাপন করে না।

দাড়ি টুপিওয়ালা অগণিত মানুষ রাতে না ঘুমিয়ে হিন্দু প্রতিবেশীর বাড়ি ও মন্দির পাহারা দিয়েছে। রাতে পাহারা দিতে গিয়ে এশা পড়েছে, ফজর পড়েছে সেই মন্দিরের সামনে। এই যে হাজার হাজার মুসলমান আপনার বাড়ি, মন্দির পাহারা দিলো এইটার কারন কিন্তু ভারতের ভয় নয়, এ্টা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ও ভয় না, এটার কারন সে শুধু বাংলাদেশী ই না একজন মুসলমানও বটে। আমার দ্বারা আপনার যেন কোন ক্ষতি সাধন না হয় মুসলমানরা তা মনে প্রাণে চায়।

আপনি যদি মনে করেন, এসব লোক বাঙালি বা বাংলাদেশী বলেই আপনার সাহায্যে এগিয়ে এসেছে, আপনার এই ধারণা ভুল। আপনাকে এই ধরণের থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আমি মুসলমান হিসাবে আপনার প্রতিবেশী হয়ে থাকাটা আপনার জন্য খুবই লাভজনক কারন আমি মুসলমান হবার কারণেই আপনাকে ভালোবাসি। আমার ধর্মটাই আপনাকে ভালোবাসতে শিখিয়েছে।

গত ১৫ বছরে বাংলাদেশী হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি করেছে স্বৈরশাসক আওয়ামীলীগ সরকার। কোন অজানা কারণে আপনারা এই বাস্তব মেনে নিতে পারেন না, সত্যটাকে অকোপটে স্বীকার করতে পারেন না কারণ তা আপনাদের বিপরীতে যায়। শেখ হাসিনা, ভারতীয় সরকার, ভারতীয় মিডিয়া, জাতিসংঘ বা আমেরিকার সিআইএ কখনো আপনাদের রক্ষাকবচ নয় এটা আপনাদের বুঝতে হবে। দেশের অন্য রাগরিকদের মতো আপনাদের ও একমাত্র রক্ষাকবচ হলো বাংলাদেশের আইন। ভারতের সাথে যেমন বাংলাদেশের জনগণের কোন সম্পর্ক নাই, সম্পর্ক আছে শুধু হাসিনা আর তার দলবলের সাথে। একই ভাবে আপনারা ও মনে করেন ভারতের আশির্বাদপুষ্ট আওয়ামিলীগ আপনাদের সুখ দু:খের সঙ্গী, আওয়ামিলীগই আপনাদের সব সময় বাঁচাবে গত ৫০ বছর ধরে আপনার এই মিথ্যা আশ্বাস নিয়ে দিনাতিপাত করছেন।

গত ১৫ বছরে আওমী সরকার যে ইসলামোফোবিক পরিবেশ তৈরি করেছে, আমি আপনাদের পক্ষ থেকে কখনো কোন প্রতিবাদ শুনিনি। দাড়ি টুপি পাঞ্জাবি পরলেই যে হাসিনা সরকার জঙ্গী, জামাত শিবিরের ট্যাগ নিয়মিত দিতো আপনার হিন্দু সম্প্রদায়ে পক্ষ থেকে কোন প্রতিবাদ শুনিনি। হাসিদ কালামের বই, কোরআন পেলেই যখন জঙ্গী বই আখ্যা দেয়া হতো, আপনাদের সম্প্রদায় থেকে কোন প্রতিবাদ করার সুযোগ ছিলোনা? ২০১৩ সালে ৫মে শাপলা চত্তরে হেফাজতের সমাবেশে কওমী মাদ্রাসার ছাত্রদের উপর পুলিশের নির্যাতনে এলিট হিন্দুদের কিছুই বলতে শোনা যায় নি। কিন্তু আপনার মন্দিরের সুরক্ষা দিতে সেই পাঞ্জাবি টুপিওয়ালা লোকগুলি আগে গিয়েছে।


ভারতের “র”, মোদি সরকার, আমেরিকার সিআইএ, হাসিনা, খালেদা, এরা কখনোই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আমাদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি তৈরি করতে পারেনা। দেশের আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি তৈরি হয়ে যাবে। কারন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি হলো সুশাসনেরই একটা ডিরেক্ট প্রোডাক্ট। প্রত্যেকটা মানুষ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সম্ভাবনা নিয়েই জন্মায়। এটা কাউকে দিয়ে কখনো মুখস্ত করানো যায় না। দেশে যদি আইনের শাসন থাকে
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আপনার বিবেক থেকে তৈরি হবে, আর যদি দেশে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি না থাকে তাহলে সব ধর্মের লোককে ভুগতে হবে।

গত ১৫ বছর হিন্দু হবার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা পাশের পর ও ভর্তি করানো হয়নি এমন অনেক শুনেছি। হিন্দু হবার কারণে আপনার যোগ্যতা থাকার পরও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক, বা সিভিল সার্ভিসের গুরত্বপূর্ণ পদে বাদ পড়েছেন আমি কখনো শুনিনি। কিন্তু নিশ্চয়ই শুনেছেন যে, মাদ্রারাসার ছাত্র হওয়াতে এসব পদে যোগ্যতা থাকার পর ও অনেক বাদ পড়েছেন শুধু মাদ্রারাসা ব্যাকগ্রাউন্ডের কারনে। হিন্দু সম্প্রদায়ের কেউ যদি ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীর সাথে জড়িত থেকে খুনি হাসিনার পক্ষে ছাত্রজণতার বিপক্ষে দাড়িয়ে গনঅভ্যুত্থানের পরে সংখ্যালগু নির্যাতনের ব্যানারের নিচে গিয়ে বিচার চায় এটাকি ঠিক?

আপনি ৫০ বছর থেকে এই আওয়ামী সরকারকে মনে করে আসছেন আপনার হিন্দুসম্প্রদায়ের মুখপাত্র, বাস্তবে তারা আপনাদের ধ্বংস করেছে। শহুরে শিক্ষিত হিন্দু ছাড়া কি পেলো গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র হিন্দুরা? আপনারাই একটা দলের কাছে আপনাদের ব্যবহারের সুযোগ করে দিয়েছেন । মিথ্যার আশ্রয়ে একটা গোষ্ঠি কতদিন থাকতে পারে? গত ১৫ বছরের আপনাদের জমি লুট করেছে কারা- এই আওয়ামিলীগ। যে চার বছরের শিশুটির ছবি মাথায় নিয়ে এসেছেন সংখ্যালগু নির্যাতনের স্বারক হিসাবে, সেই আপনাদের মুখপাত্র খুনি হাসিনার গুলিতে মারা যাওয়া। আওয়ামিলীগ মিথ্যা বলছে তাই বলে আপনারাও কেন তার সাথে সুর মিলিয়ে মিথ্যা বলবেন? আওয়ামিলীগ বলছে আর আপনারা ও সায় দিচ্ছেন আর তা লুফে নিচ্ছে ভারতীয় মিডিয়া। আপনারা এসব কেন প্রতিরোধ করছেন না কারন আপনাদের বিরুদ্ধে যায়? আপনাদের এলিট শ্রেনীর তেমন কাউকে এসবের বিরুদ্ধে কথা বলতে শুনিনি। এমন রাজনীতি আজ আপনাদের জন্য ভুমেরাং হয়ে আসছে।

সংখ্যালঘু মন্ত্রনালয় তৈরি হলে সব সমাধান হয়ে যাবে? এতে বরং কিছু শিক্ষিত সংখ্যালগুর চাকুরি হবে, কয়দিন পর পর বীদেশে গরম গরম প্রেজেন্টেশন দিবে আর আপনাদেরকে উত্তেজিত করবে। গ্রামের হিন্দুদের কোন লাভ হবে না। শত শত বছর এই সংখ্যালগুর চক্রে ঘুরপাক খাবেন।

বিএনপি জামাত বা আওয়ামিলীগ আপনাকে রক্ষা করতে পারবে না। আপনাকে রক্ষা করবে বাংলাদেশের আইন। এই আইন তৈরিতে আপনাকে সহযোগীতা করতে হবে । এই কাজে সহযোগীতার জন্য আপনাকে সৎ ও সত্যবাদী হতে হবে। আমার নাগরিত্বের চেয়ে আপনার নাগরিকত্বের ভার একটুও কম নয়, আপনি বরং সেটাকে আরো সমৃদ্ধ করুন।


এই দেশটা মুসলমানেরা কিনে নেয় নাই, দেশটা কারো বাপের না, এইটাতে আপনার সমান অধিকার আছে। আল্লাহ এই পৃথিবীটা শুধু মুসলমানের ভোগের জন্য তৈরি করেন নাই। সব সময় মিথ্যার আশ্রয় নেয়া একটা দলকে সমর্থন দেয়ার কারনে আপনারা নিজেদের সম্মান নষ্ট করছেন । তাই বলি শুধু আওয়ামিলীগ না, মূলধারার সবার সাথে মিশেন, সত্যকে সত্য বলেন, মিথ্যাকে পরিহার করুন। গোবিন্দ চন্দ্র প্রামানিকের প্রতি এজন্যই শ্রদ্ধা আসে হৃদয় থেকে কারন তিনি অকপটে সত্য কথাটাই বলেছেন। চার বছর আগে গোবিন্দ চন্দ্রের বিরুদ্ধে জামাত সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ও এনেছেন আপনাদের অনেকে। তার সাথে আমার আদর্শের মিল নাই তারপর ও তাকে আমার সত্যবাদী ও সৎ মনে হয়। যেখানে সিংহভাগ মুসলিম জনতা স্বৈরাচারী হাসিনার বিদায়ে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছে, সেখানে প্রতিষ্ঠিত হিন্দুদের মধ্য থেকে কয়জনকে এই সুরে সুর মিলাতে শুনেছেন। এই এলিট হিন্দুরা কখনো তা বলবে না কারণ আপনারা সব সময় এই খুনী স্বৈরাচারকে আপনাদের মুখপাত্র বানিয়েছেন। এতে আপনারা শক্তিশালী হবার বদৌলতে আরো দুর্বল হয়েছেন কারন আপনারা বুঝতেই পারেননি যে আপনাদের ব্যবহার করা হয়েছে, আর আপনারা সেই সংখ্যালুগুর চক্রেই পড়ে আছেন। অথচ আপনাদের হওয়ার কথা ছিলো গর্বিত বাংলাদেশী হিন্দু।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.