![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মেয়েটির সাথে ছেলেটির পরিচয় হয় ফেসবুকে।
মায়াবী চেহারার উচ্ছল প্রানবন্ত একটি মেয়ে
প্রেম শুরু হয়েছিল 'তোমার হাসি খুব সুন্দর' এই কথা দিয়ে।
মেয়েটি বৃষ্টি ভালোবাসে। তার সমগ্র চেতনা জুড়ে শুধু বৃষ্টি আর বৃষ্টি।
তার প্রোফাইল পিকচারে হাতে বৃষ্টি নিয়ে খেলা করার ছবি।
ফটো গ্যালারি জুড়ে জানালায় দাঁড়িয়ে, টিনের চালাঘরের বারান্দায় দাঁড়িয়ে নিজের বৃষ্টি উপোভোগের দৃশ্য, বর্ষাকালে গ্রামের দৃশ্য, বৃষ্টির ব্যাকগ্রাউন্ডে মাঠ ঘাট পুকুর, বৃষ্টিতে প্রেমিক প্রেমিকার হেটে চলার রোমান্টিক পেইন্টিং ইত্যাদি।
মেয়েটার সাথে ছেলের এখনো দেখা হয়নি। শুধু ফেসবুকে চ্যাট হয়, ফোনে কথা হয়।
কথায় কথায় মেয়েটা বলে 'চলনা দুজন বৃষ্টিতে ভিজি'
'জানো বৃষ্টি হচ্ছে এখানে, খিচুড়ি রান্না করেছি' ইত্যাদি।
মেয়েটার এই বৃষ্টি বিলাসিতা দেখে ছেলেটা তার নাম দিয়েছে 'বৃষ্টি কন্যা'
তাদের দুজনের প্রেমের কুড়ি কলি হয়ে ধীরে ধীরে পাপড়ি বিকশিত হয়ে পরিপুর্ন রুপ নিল যখন, তখন তারা দেখা করার সিদ্ধান্ত নিল।
রোদেলা এক সকালে তারা কোনো এক পার্কে দেখা করল।
দুজন পাশাপাশি গল্প করতে করতে যখন তারা মাঠে হাটছিল তখন নিল আকাশের সাদা মেঘগুলো ধীরে ধীরে কালো হয়ে গেল। বাতাস বইতে লাগল।
হটাত করেই মেয়েটার উচ্ছল প্রানবন্ত মুখেও যেন দেখা গেল কালো মেঘের ঘনঘটা,আশঙ্কার ছাপ। সে চুপ হয়ে গেল, অনমনা উদাস হয়ে গেল। ছেলেটা এর হেতু বুঝতে না পেরে জিগাসা করল মেয়েটাকে,
-কি হয়েছে তোমার?
--না কিছু হয়নি তো, চলো আমরা ওই ছাতার নিচে বেঞ্চিতে গিয়ে বসি।
মেয়েটার কথামত দুজন পার্কের ছাতার নিচে গিয়ে বসল।
কফির অর্ডার দেওয়া হল। মেয়েটা বলল,' ভুল হয়েছে ছাতি নিয়ে বের হওয়া উচিত ছিল আমার।'
বৃষ্টি বিলাসি মেয়েটার মুখে ছাতার কথা শুনে একটু অবাকই হল ছেলেটা।
এর মধ্যে আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি নামল। বৃষ্টি দেখে ছেলেটার মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। অনেক দিন মনে লালন করছিল সে প্রেওসীকে নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজবে বলে। বলল, চল বৃষ্টিতে ভিজি আমরা
বলতে বলতে সে মেয়েটার হাত ধরে টানতে টানতে বাইরে নিয়ে এল।
মেয়েটা অপ্রস্তুত হয়ে বলতে লাগল,
- এই এই এই কি কর দাড়াও উফফ আমি এখন ভিজতে পারব না প্লিজ
কে শোনে কার কথা। ছেলেটা মেয়েটার আপত্তি উপেক্ষা করে হিড়হিড় করে টানতে একেবারে মাঠের মাঝখানে নিয়ে যেতে লাগল।
হটাত মেয়েটি চিৎকার করে ধমক দিল
-স্টপ ইট!!!
ছেলে চমকে পিছন ফিরে দেখল, রাগে মেয়েটার চোখ দিয়ে যেন আগুন ঝরে ঝরে পড়ছে।
-কি হল তোমার? অবাক হয়ে জিগাসা করল ছেলেটি
--তুমি একটা স্টূপিড।
-কেন তুমি না বৃষ্টিতে ভিজতে ভালোবাসো? থতমত খেয়ে জিগাসা করল ছেলেটি।
--তুমি আস্তা বলদ। কান্ডজ্ঞান নেই তোমার? বৃষ্টিতে ভেজার সময় অসময় আছে না?
মেয়েটা যেন প্রায় কেদেই ফেলবে এবার।
হটাত ছেলেটা লক্ষ্য করল, বৃষ্টির পানির স্পর্শে মেয়ের কালার করা স্ট্রেইট চুল সব কোকড়া হয়ে গেছে। মুখে যে আটা ময়দা মাখা হয়েছিল তা পানিতে ভিজে সাদা ফ্যাকাশে মরা চামড়ার মত হয়ে গেছে, আর মুখের বিভিন্ন যায়গায় মেকাপ উঠে গিয়ে ত্বকের আসল শ্যামলা বর্ন উন্মুক্ত হয়ে গেছে। চোখের কাজল লেপ্টে ছড়ে গেছে। সব মিলিয়ে কিম্ভুত দেখাচ্ছে মেয়েটাকে।
এতক্ষনে ব্যাপার বুঝতে পেরে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল ছেলেটি। মেয়েটা ঠাশ করে চড় লাগিয়ে দিল ছেলেটির গালে।
হতবম্ভ হয়ে গালে হাত দিয়ে মেয়েটির চোখের দিকে তাকিয়ে রইল সে কিছুক্ষন। তারপর সম্বিত ফিরে পেয়ে পকেট থেকে টিস্যু বের করে মেয়ের মুখের মেকাপ মুছে দিল যত্ন করে। বৃষ্টির পানি ছিটিয়ে মুখ ধুয়ে দিল।
তারপর হেসে গাল দুটি টেনে দিয়ে বলল,
-এত সুন্দর কোকড়া চুল তোমার, স্ট্রেইট কেন করতে গেলে? আর তুমি মেকাপ ছাড়াই তো বেশি সুন্দরী।
--যাহ একদম পচা লাগছে আমাকে
-একদমই না। শুধু তোমার এক দিকে ঠোট বাকা করে ভেংচি কাটার মত করে যে মিষ্টি হাসিটা দাও, সেটা আমাকে দিও মাঝে মাঝে। আর কিছু লাগবে না।
--সত্যি?
-চল এইবার বৃষ্টিতে গোসল হোক।
তারপর একে অপরের হাত ধরে বৃষ্টিতে ভিজতে লাগলো তারা। মেয়েটি পরম নির্ভরতায় শক্ত করে ধরে থাকল ছেলেটির হাত।
এর পর থেকে মেয়েটি আর কখনো মুখে আটা ময়দা মাখেনি। তখন থেকে সত্যিই সে বৃষ্টিকে ভালোবাসতে শুরু করে। ছেলেটি পাশে না থাকলেও যখন বৃষ্টি হয় দৌড়ে ছাদে চলে যায় সে। দুহাত মেলে দিয়ে চোখ বন্ধ করে বৃষ্টিতে ভেজে।
©somewhere in net ltd.
১|
১৭ ই জুন, ২০১৬ রাত ১২:৪০
গেম চেঞ্জার বলেছেন: হাঃ হাঃ হাঃ বাস্তব এমন হলে ভালই হতো।