![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছেলেটার সাথে মেয়েটির ফেসবুকে চ্যাট হয়। মেয়েটার দুর্বলতা আছে ছেলেটির প্রতি। অবশ্য সে তাকে তা বুঝতে দেয় না।পছন্দ হওয়ার মত অনেক গুন আছে তার। বেতিক্রমী একটা ছেলে। খুব সুন্দর ছবি আকে। তার কয়েকটি প্রোট্রেইটও করে পিকচার মেসেজে দিয়েছে সে। ছেলেটি অন্যান্যদের মত নয়। আলাদা ইউনিক কোয়ালিটি আছে। এলিয়েনদের মত যেন। মজার মজার অদ্ভুত সব লজিকের কথা বলে। মুগ্ধ হয়ে যায় মেয়েটি। মেয়েটা সাধারনত কারো মেসেজ রিপ্লাই দেয় না। কত লুল ছেলে ইনবক্সে ফ্লারটিং করে। তাদের পাত্তা দেয়না সে। কিন্তু এই ছেলেকে সে সময় দেয়। রহস্যময় একটা ছেলে। তাকে সে বোঝার চেষ্টা করে। মেয়েটির মতে অনেক ধৈর্য আছে ছেলেটির। এত রাগানোর চেষ্টা করে, অপমান করে, এটিটিউড দেখায়, হেয়ালি করে সে ছেলেটির সাথে, কিন্তু ছেলেটা একটুও রাগে না। এত্ত কিউট!
ছেলেটা মেয়েটাকে একটুও সহ্য করতে পারে না। সুন্দরী মেয়ে। কিন্তু এত দেমাগ কেন মেয়েটার? ঢং করে সেলফি তোলে। বাবার আদরের বখে যাওয়া মেয়ে। ওভার স্মার্ট। ফেসবুকে ঢংগি সব পোষ্ট লেখে, দেখলে পিত্তি জ্বলে যায় ছেলেটির। তবুও লাইক দেয় সে। নিজের উপর তার রাগ হয় কেন সে দুর্বল মেয়েটির প্রতি? এটা কি প্রেম? নাকি হিংসা? কে জানে, বুঝতে পারে না সে। তার মনে জিঘাংসা জাগে। শিক্ষা দেবে মেয়েটাকে, প্রেমের ফাদে ফেলে হলেও। সব সুন্দরী মেয়েদের প্রতি তার এলার্জি আছে। তার মতে সব ঢংগি মেয়েগুলোকে এক লাইনে দাড় করিয়ে জুতা দিয়ে থাবড়ানো দরকার, সেই সাথে তাদের বাপদের যারা আদর দিয়ে মেয়েকে মাথায় তুলেছে তাদের পাছায়ও লাইন ধরে বাড়ি দিতে পারলে মন্দ হতো না।
ছেলেটা জানে কিভাবে মেয়েদের পটাতে হয়। মেয়েটার হেয়ালি কথাবার্তায় রাগে মাথায় আগুন ধরে গেলেও সে দাতে দাত চেপে সহ্য করে। উত্তরে সে আরও প্রেমময় কথা লেখে। পরে সে তার ওপেন করা অনেকগুলো ফেইক একাউন্টের একটি থেকে মেয়েটাকে ভয়ানক অশ্লিল সব গালাগাল দেয়।মেয়েটার স্ট্যাটাস দেখে উচিত যে কথাগুলো মনে এসেছিল তা মনের ঝাল মিটিয়ে কমেন্ট করে। মেয়েটা ব্লক করে দিলে সে আরও একাউন্ট খোলে। সেখান থেকে চলে গালাগালি। মেয়েটা জানতেও পারে না যে সে হচ্ছে তার প্রিয় সেই ছেলেটির মুদ্রার উল্টোপিঠ যাকে সে মন দিয়ে রেখেছে।
ধীরে ধীরে সম্পর্ক গভীর হয়। চ্যাটের মাধ্যমে এক সময় ফোন নাম্বার আদান প্রদান হয়। দেখাও করে দুজন। ছেলেটা এখন মেয়েটার বাসার ঠিকানা জানে। গভীর রাত অবধি দুজন ফোনে কথা বলে। তবে ছেলেটার কথায় মধু মাখানো থাকলেও মেয়েটা ঠিক আগের মতই এটিটিউড নিয়ে কথা বলে। কিন্তু সে ফোনের অপর প্রান্তের ছেলেটির প্রচন্ড অক্রোশে দাতের কিড়মিড় শুনতে পায় না। সে দেখতে পায়না মিষ্টভাষী ছেলেটির মুখ রাগে বিকৃত হয়ে উঠছে। দিন দিন সাইকো হয়ে উঠছে ছেলেটা।
ছেলেটা বলেছিল মেয়েটাকে সে যেন জানালার পাশে বসে তার সাথে কথা বলে, চাদের জোছনা গায়ে মাখলে নাকি ত্বক লাবন্যময় হয়। মন পবিত্র হয়। ছেলেটার কথা বেদবাক্য ভেবে নিয়ে মেয়েটি তাদের দোতলার বাসায় জানালার পাশে খাট নিয়ে এসেছে। সে গভির রাত পর্যন্ত জানালার পাশে বিছানায় বসে চাদের দিকে তাকিয়ে ফোনে কথা বলতে বলতে ঘুমিয়ে পড়ে।
মেয়েটার জানে না ছেলেটা গুড নাইট দিয়ে ফোন রাখার পর তার ঠোটের কোনে পৈশাচিক হাসি ফুটে ওঠে। এতক্ষন ফোনে কথাবার্তায় যে রাগগুলো হজম করেছে, সময় হয়েছে তা উগরে দেওয়ার। প্রতিশোধ না নিলে রাতে ঘুম হবে না তার। যেহেতু সে এখন মেয়েটির বাসার ঠিকানা জানে তাই আর ফেইক আইডি থেকে গালাগাল দিয়ে ক্ষান্ত হয় না। সে তার গোপন সিন্দুক বের করে। মুখে কালি দিয়ে ডোরা কাটে। তার ছোটবেলার প্রিয় ব্যাটম্যানের মুখোশটা পরে নেয়। কালো পোশাক পরে বেরিয়ে পড়ে রাতের অন্ধকারে।
প্রতিদিন ফোনে কথা বলে জানালার পাশে ঘুমানোর পর সকাল বেলা মেয়েটি ঘুম থেকে জেগে আয়নার সামনে গিয়ে দেখে তার মুখে কে যেন কালি মেখে দিয়েছে।
একদিন ঘুম থেকে উঠে সে দেখে তার দুই গালে লম্বা আচড়ের দাগ।কিছুই বুঝতে পারে না সে। ভয় পেয়ে যায়। একদিন কে যেন জানালা দিয়ে হাত বাড়িয়ে তার পিঠে দুম দুম করে কিল দিয়ে পালিয়ে যায়। জানালা দিয়ে তাকিয়ে মেয়েটা শুধু দেখতে পায় পাইপ বেয়ে বাদুড়ের মত কালো এক ছায়ামুর্তি তরতর করে নেমে গিয়ে দ্রুত অন্ধকারে মিলিয়ে গেল।
কে এই ব্যাটম্যান?
বাচ্চাটা ছিল ভীষন চাপা স্বভাবের। রহস্যময়। অভিমানী। কথা খুব কম বলে। বকা দিলে প্রতিবাদ করেনা, মুখ ফুলিয়ে মাথা নিচু করে থাকে। কিন্তু বকা দেওয়ার পরদিন ঘরের কোনো এক প্রয়োজনিয় জিনিস ভাঙ্গা অবস্থায় পাওয়া যায়। কে নষ্ট করল জিনিসটা তার কোনো হদিস পাওয়া যায়না।
হয়ত তার বাবা তাকে একদিন চোখ রাঙিয়ে শাসিয়েছিল। বাচ্চাটা চুপচাপ গম্ভীর মুখে মাথা নিচু করে থেকেছে। পরে সে একদিন তার বাবাকে দুই গ্লাস পানি এনে খাইয়েছিল। বাবা জানতেই পারল না যে সে তাকে কমোডের ভেতর থেকে পানি এনে খাইয়েছে।
হয়ত ছেলেটির বড় বোন তাকে একদিন বকা দিল। পরদিন সকালে উঠে সে আবিষ্কার করল রাতের অন্ধকারে কে যেন তার সামনের দিকের এক গোছা চুল কাচি দিয়ে কেটে নিয়েছে।
এই বাচ্চাটাই বড় হয়ে হয়েছিল সেই ব্যাটম্যান।
ছেলেটার এখন মানিসিক হাসপাতালে সাইকোলজিক্যাল কাউন্সেলিং চলছে। মেয়েটা মাঝে মাঝে দেখতে আসে ছেলেটাকে। ছেলেটা উদগ্রিব হয়ে জিগাসা করে মেয়েটিকে কবে ছাড়া পাবে। বলে সে এখন আমি সত্যিই ভালো হয়ে গেছি, আমাকে তাড়াতাড়ি ছাড়িয়ে নিয়ে যাও। মেয়েটা তাকে আশ্বাস দেয়, এই আর মাত্র কয়েক দিন। কিন্তু ছেলেটা জানে না সে এখনও ঘুমের মধ্যে রাগে দাত কিড়মিড় করে, স্লিপ ওয়াকিং করে জিনিসপত্র ভাংচুর করে। ছেলেটা মেয়ের হাত ধরে বলে
-আমাকে ছেড়ে চলে যাবে না তো তুমি কোনোদিন?
--কক্ষনো না। তোমার অপেক্ষায় বসে আছি।
©somewhere in net ltd.
১|
২৯ শে জুন, ২০১৬ বিকাল ৪:৩১
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন: চমৎকার বুননীতে
অসাধারণ গল্প!!