নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মেডলি ট্রাভেল লাভিং ওয়ান।

মোরতাজা

আমি সাধারণের একজন। বেড়াতে, বেড়ানোর আয়োজন করতে ভালোবাসি।

মোরতাজা › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিকালটা আসলেই অসাধারণ, সিগাল উড়ছে, ঢেউ ভেঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে যন্ত্রদানব-জাহাজ!

২৭ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ১২:১২

সন্ধ্যার একটু আগে আমরা সবাই বিচে নেমে এলাম। কালো প্রবালের বিচে আগে নিজে দৌড়ে নেমে যেতাম, এবার নিজের ছেলেকে সামলানোর পালা। একবারেই স্ববিরোধি কাজটি করতে হয়েছে ছেলের মায়ের জন্য। আমি এ সব বাধা--ভয় মানতে চাইনি কখনো। এখনো চাইনা।



সেন্টমার্টিনে ২২ মার্চ, শনি বার বেলা সাড়ে ১২ টায় নামলাম। এ প্রথম কোনো গ্রুপ ছাড়া পরিবার পরিজন নিয়ে সেন্টমার্টিন গেলাম। আমার দু সন্তান- নাজিব ও নাকিব, প্রথম সেন্টমার্টিন্সে পা রাখলো। সে সাথে আমাদের আরো তিনজন - নুহা , রীতি ও আসমা।





আগের মত স্যাঁত স্যাঁতে কিম্বা বালিময় রেস্তোরা নেই। এখন নগরে ছোয়া আনার চেষ্টা সবখানে। যাত্রা পথে বড় রকমের বিপত্ত। রমেশের শ্যামলী পরিবহনের এসি নষ্ট হয়ে গেলো কুমিল্লাতে। তারপর এসি ঠিক করার বৃথা চেষ্টার পর পরকীয়া চাচার চাপে আমরা এসি বিহীন গাড়িতে দম আটকানো ভ্রমণে বাধ্য হয়ে পৌছালাম- দমদমিয়া ঘাটে।



নে টং পাহাড়ের কোলে সুন্দর একটা সকাল। এ রকম এক সকালে -বহু সকালে টেকনাফ হয়ে সেন্টমার্টিন যেতাম আমরা, এখনো যাই। কিন্তু মন ভরে না। একমাসে সেন্টমার্টিন তিনবার যাওয়ার রেকর্ড আমার আছে। কী যে আনন্দ-তার সীমা নাই।



জাহাজ চালু হবার পরেও বাণিজ্যিক ট্যুর না হলে ট্রলারেই সেন্টমার্টিন আমার যাত্রা। আমারা বন্ধুরা ট্রলার জার্ণিটা দারুন এনজয় করি। মাতাল সমুদ্রের ওপর হেলে দুলে চলা ট্রলার আর জলের ছলাৎ ছলাৎ শব্দ এবং লোনা বাতাসে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া ক্লান্তি - এক কথায় অসাধারণ ভ্রমণ।



আমাদের জাহাজ ছেড়ে দেবে, উঠে বসার পর দুঘণ্টার জার্ণি। সকালের তেতে ওঠা রোদের ভেতর আমরা যাচ্ছি সেন্টমার্টিন। নামলাম সুরকি-সিমেন্টর ঢালাই করার জেটিতে। আগে ট্রলার থেকে প্যান্ট গুটিয়ে ট্রলার থেকে লাফ দিতাম, তারপর কিনারে ভিড়ো এবং হেঁটে চলো হোটেলে। এখন সেটি করতে হয় না। কারণ ভ্রমন এখন সায়েবী আরামের পরিণত হয়েছে। টানা ৫ বছর কসরত করে সরকার একটা জেটি বানিয়েছে। সেই জেটিতে অনেক 'পর্যটক' যান সেখানে। তবে এত বেশি পর্যটক ধারণ ক্ষমতা সেন্টমার্টিনের নেই।



জেটিতে পা রেখে দু সন্তানকে দু হাতে ধরে সামনে এগিয়ে যেতে রঙ্গিন কাপড়ের ঝরকাঅলা ভ্যান গাড়ি। তার দুটোতে আমরা ছয়জন বসে পড়লাম। হোটেল চেক ইন ২ টায়। ভোলা যাওয়া মাত্রই একটা রুম দিলো, বললো-ফ্রেশ অন তারেক ভাই। তারপর মাছি ভন ভন রেস্তোরায় দুপুরের খাবার- মেন্যু লাল কোরাল, আলুভর্তা, সবজি এবং ডাল।



রুম বুঝে পাওয়ার পর একটু সময় নিতেই হলো। তবে ঘুম শামীম ছাড়া কেউ যায়নি। বিকালে সবাই নেমে এলাম বিচে। অবকাশের বিচে ইদানিং ভিড়টা বেশি। শিপু ও রীতিকে খুঁজে পাওয়া গেলো প্রবালের লম্বা আইলের মাথায়। আমি আর লিনা মাত্র নামলাম। তারপর কোনা পাড়ার দিকে হাঁটা শুরু করলাম, এর মধ্যে আমাদের সাথে যোগ দিযেছে শামীম, আসমা ও তাদের কন্যা নুহা।



মুগ্ধতার আবেশ ছড়িয়ে ধীরে অস্তায়মান সূর্যটা দেখতে দেখতে আমরা তখন কোনপাড়ায়। নারকেল গাছ, কেওড়া বন আর প্রবাল-সমুদ্র এ সব মিলিয়ে আমাদের বিকাল। শিপুর টর্চের আলো ফেলছে, আমরা দক্ষিণ পাড়ার নারকেল বাগান থেকে সদ্য নামিয়ে আনা ডাবের পানি খেয়ে ফিরছি।



কথা ছিল লাবিবার দ্বিতল রেস্তোরায় সন্ধ্রার খাবারটা হবে- সেটি হয়নি। কারণ 'পইযযটক ' কম তাই পূর্ব আদেশ না পেলে রান্না হয় না। মন খারাপ করের ফিরে এলাম আমরা। তার পর আরো কিছু সময় বিচে কাটানোর পর মনে হলো মাছ ভাজা খাওন দরকার। ডুবো তেলে মাছ ভাজি করার পাঁচক ছিদ্দিক। তার হাসান রেস্তোরায় ঢুঁ মারতে হবে। আমরা গেলামও।



বছর দেড়েক পরে ছিদ্দিকের সাথে দেখা, ব্যবসা ভালো যাচ্ছে- সে খবরটাও জানালেন। ফাঁকে রূপচান্দা, উড়ুক্কু মাছ ফ্রাই করার অর্ডার করা হলো। রীতি মাছ খায় না। কিন্তু এ রকম আয়োজন টা সে মিস করলো না। রাতের খাবারটাও আমরা সেখানে খেয়েছিলাম।



লম্বা একটা ঘুমের পর আমরা সকালে উঠলাম। নাশতাটা সেরে ছুটছি প্রাসাদের বিচে। উদ্দেশ্য জলে ভেজা। এ বিচটা এক সময় অচেনাই ছিল। সেন্টমার্টিনে আসলে কেউ বয়ে পানিতে নামতো না। কোথায় প্রবাল আছে, কোথায় নাই সেটি বোঝা মুশকিল ছিল এক সময়। কিন্তু প্রাসাদের বিচ প্রবাল মুক্ত। এটা ১৯৯৯ সালের দিকে আমাদের দেশের একজন পর্যটক নিশ্চিত হন। তার কাছ থেকে তথ্য নিয়ে ২০০০ সাল থেকে আমরা এখানেই ভিজতাম। এখনো। তবে এখন অনেক বেশি লোকের সমাগম ঘটে থাকে।





প্রাসাদের বিচে , ঢেউয়ের সাথে, অনেকক্ষণ মিতালী শেষে আমরা ফিরছি হোটেলে। বিকালে ছেড়াদ্বীপ যাওয়ার ভাবনা ছিল। কিন্তু আকাশের মন খারাপ। বাচ্চা কাচ্চা নিয়া 'সাহস' করতে পারলাম না। বিকালটাও তাই কাটলো বিচে।



দুপুরেন সেই মাছি ভন ভন রেস্তোরায় খাবার। তবে মাছিটা একটু পরিমান বেশি হয়ে গেছে। তবুও খেলুম।



সন্ধ্যায় রীতির সৌজন্যে মৎস্য ফ্রাই ভক্ষণ পর্ব সমাপ্ত এবং নাজিবকে সামলাতে শিপু ও রীতির প্রণান্ত চেষ্টায় আমি একটু হাওয়া খেলাম, সাথে তিন কাপ চা!



রাত করেই আমরা ফিরলাম। তবে এরকটা পর্ব বাকি ছিল। বার বি কিউ। লাল কোরাল, কালো চাঁন্দা মাছ আর মুরগি- তিনটা আইটেমের বার বি কিউ অর্ডার করা হয়েছে। আমাদের সাথে আরো দু চারটে দম্পতির আয়োজনও ছিল।



তবে বার বি কিউটা নিরামিষ। অনেকটা কর্পোরেটের মতন। কারণ এখানে গান বাজনা বা জলপানের কোনো আয়োজন ছিল না। মারাত্মক ব্যাপার... তবুও আমরা মজটা করেই বার বি কিউ ডিনারটা সেমরে নিলাম গোল ঘরে বসেই।



রাতটা কেটে গেলো ভালোই । সকালে হালকা স্বাস্থ্যগত সমস্যা-পেইন! তাই ছেড়াদ্বীপ যাত্রা বাতিল। তাতে কি। আবার আসবো- তখন যাবো, জানালো রীতি। কিন্তু আমি শামীম কিম্বা শিপু যারা ছেড়াদ্বীপ গেছি, তাদের কাছে বরাবরই মনে হচ্ছিলো- মিস করছি ছেড়াদ্বীপ তোমাকে। তোমার জন্য কলজে ছিঁড়ে যাচ্ছে।



ফিরবো ঢাকায়, সিদ্ধান্ত হলো সাড়ে ২৪ মার্চ বেলা ১২ টার দিকে। আমার কেনাকাটা করার মত কিচ্ছু নাই। কিন্তু লিনার শুটকি লাগবে। শিপু ও শামীম শুটকি কিনবে। শেষ পর্যন্ত হুমায়ূন আহমেদের কাছে জমি বিক্রেতা ফজলুর পোলা আয়াজের কাছ থেকে শুটকি কেনা হলো। বাকি পর্যন্ত দিতে চায়, পোলাটা- বলে শুটকি ভালো হলে টাকা দিয়েন।



আমরা নগদেই কিনলাম। দুপুর ২ টা রুম ছেড়ে ভ্যানে। এর মধ্যে কেনা হয়ে গেলো বার্মিজ ক্যালশিয়াম, বাসার দারোয়ানের জন্য গেঞ্জি। নুহার ক্যাপ। আরো কিছু হয়ত কেনা হয়েছে- সবটা আমি জানি না!!



জাহাজ ছাড়বে- আমরা চেপে বসলাম। বিকাল আসলেই অসাধারণ। সিগাল উড়ছে। জাহাজের পেছনে। ঢেউ ভেঙ্গে দিয়ে যাচ্ছে জলদানব। ফেনা উছলে উঠছে। আমরা সামনের দিকে যাচ্ছি। সিগালগুলো পেছণে ঝাঁকে ঝাঁকে। কী এক অপূর্ব দৃশ্য। মনে রাখার মত একটা বিকাল।



সন্ধ্যার একটু আগে আমরা তখন দমদমিয়া ঘাটে। কাঠের জেটি হয়ে উপরে উঠে এলাম। বাসের জন্য অপেক্ষা। তিনদিনের ভ্রমন পর্ব সাঙ্গ হবার আগে আবারো কেনাকটায় ওরা তিনজন-। বাসে চেপে বসতে বসতে সুপার ভাইজার রাসেল হাত মেলালো। বল ভাই সরি, সেদিন হালকা প্রবলেম এর কারণে এসিটা চালাতে পারিনি।



গাড়ি ছুটছে, আমরা ঢাকা ফিরছি। ইয়াবা সম্রাট বদি ভাইয়ের এলাকা থেকে ফিরছি, তার কিছু ছিঁড়তে অক্ষম নিরাপত্তা রক্ষীরা যাত্রিবাহি বাসে চেক করছে। চেকিং । ঢাকার কাছে মেঘণাঘাটের কাছে শেষ চেকপোস্টে একজনকে পুলিশ নামিয়ে রেখে দিলো। জানা গেলো এ রকম ঘটনা হামেশাই হয়।



তাই বিকার হীন আমরা ফিরে এলাম। বাস থেকে নেমেই নগরে পোড়া আলোর ঝলকানি। সকাল তখন ৯ টা। আরাম বাগ থেকে আমরা ফিরছি বাসায়। শামীম অবশ্য চট্টগ্রাম থেকে গেছে। রাতে। ফিরেছে পর দিন রাতে।





মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ১২:২৫

স্টকহোম বলেছেন: লেখা ভাল হয়েছে।ছবি নাই?

২৭ শে মার্চ, ২০১৪ সকাল ১১:৩০

মোরতাজা বলেছেন: ধন্যবাদ। ছবি তুলছে, শিপু। এখনো হাতে পাই নাই! :(

২| ২৭ শে মার্চ, ২০১৪ ভোর ৫:৪৬

ঢাকাবাসী বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন, ছবি দিলে আরো ভাল হত।

২৭ শে মার্চ, ২০১৪ সকাল ১১:৩০

মোরতাজা বলেছেন: ধন্যবাদ, পড়ার জন্য। ছবি দিতে পারলে আসলে ভালো হতো!

৩| ২৭ শে মার্চ, ২০১৪ সকাল ১০:৩২

শরৎ চৌধুরী বলেছেন: ছবি কই?

২৭ শে মার্চ, ২০১৪ সকাল ১১:৩১

মোরতাজা বলেছেন: ছবি শিপু ও শামীমের ক্যামেরায়, এখনো হাতে পাই নাই!

৪| ২৭ শে মার্চ, ২০১৪ সকাল ১১:৫০

শরৎ চৌধুরী বলেছেন: জলদি জলদি ছবি দিয়ে পোষ্টটাকে আরো সম্মৃদ্ধ ও পূর্নাঙ্গ করে তুলবেন এই প্রত্যাশায় রইলাম।

২৭ শে মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১:০৩

মোরতাজা বলেছেন: শিওর

৫| ২৭ শে মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১:০১

বেলা শেষে বলেছেন: I like such kinds of post.
good description, good collection with Feelings,
বিকালটা আসলেই অসাধারণ, সিগাল উড়ছে, ঢেউ ভেঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে যন্ত্রদানব-জাহাজ! beautiful sensiblity...

২৭ শে মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১:০৬

মোরতাজা বলেছেন: ধন্যবাদ, ডিয়ার।

৬| ২৭ শে মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১:৫৮

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: ছবি না দেয়া পর্যন্ত প্লাস বাকির খাতায় :P

২৭ শে মার্চ, ২০১৪ দুপুর ২:০১

মোরতাজা বলেছেন: ছব্বি দিলাম তো , জনাব!

৭| ২৭ শে মার্চ, ২০১৪ দুপুর ২:৫৯

সাাজ্জাাদ বলেছেন: ভাই, মনটা খারাপ করে দিলেন। কতদিন দেখিনা সেন্টমারটিন। একটা সময় সেন্টমারটিন যাওয়া নেশা ছিল। হেটে হেটে ছেঁড়াদ্বিপ চলে যেতাম। এখন প্রবাসে এসে সব কিছু খুব মনে পরে।

বুজতেই পারছেন, আপনার লেখা ভালো হয়েছে।

২৭ শে মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৪:১৫

মোরতাজা বলেছেন: হুমমম!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.