নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কিস্তি :: ৮৮::
ঘোড়ার গাড়িতে করে পুরনো ঢাকার বাংলা বাজারে যেতাম। এখনো যাই। তবে কুবই কম। আগে ভাড়া ছিল ৫ টাকা। এখন ২০ টাকা। তাতে কী। এই একটা ভ্রমণ আমার কাছে উপভোগ্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর আমার প্রথম রোজগার ছির বাংলা বাজার কেন্দ্রিক।
নোট বই , গাইড বই লিখতাম। ভালোই ইনকাম ছিল। ঘটনাটা এ রকম- আমি ঘুমিয়ে আছি। পাঞ্জেরীর প্রকাশণীর নেসার ভাই আনিস ভাইয়ের সাথে ক্লাস ওয়ান থেকে ফাইভ পর্যন্ত সব ক্লাশের বইয়ের নোট তৈরির আলাপ করছিলেন। তার কথার উচ্চ স্বরে আমি মশারী ফাঁক করে দেখলাম।
আনিস ভাই পরের দিন আমাকে কিছু কাজ দিলেন। একটা বাংলা বইয়ের পুরো নোট ঘন্টা দেড়েকে বানিয়ে দিলাম। আমার লেখা তার ও নেসার ভাইয়ের পছন্দ হলো। তারপর আমি লিখতে শুরু করলাম। তবে প্রকাশনার কাজে জড়িয়ে যে সব বিষয় বেশি সঙ্কটে পড়তাম তা হলো প্যামেন্ট। এখনো স্কলার্স পাবলিকেশন্সের কাছে আমার হাজার পঞ্চাশেক টাকা বাকি পড়ে আছে।
সেই ২০০১ সাল। আর এখন ২০১৪। টাকা দেবো, দিচ্ছি করে ঘুরিয়েছেন, পরে আর যাইনি।
তবে লেখালেখির বিষয়ে আর্থিকভাবে সবচেয়ে সৎ আবদুৃল্লাহ অ্যান্ড সন্স। আমি তাদের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটো স্নাতক শ্রেণীর বই এডিট করে দিয়েছিলাম। এক হাতে কপি নিয়েছে, আরেক হাতে টাকা দিয়েছে।
টাকা নিযে গড়ি মসর কারণে পরে আর লেখা হয়নি। সে সসময় যাত্রাবাড়ি ও পরে বকশিবাজার থেকে পুরনো ঢাকার বাংলা বাজারে যেতাম ঘেড়ার গাড়ি করে। বাস চলতো- মুড়ির টিন। এক টাকায় যাওয়া যেতো গুলিস্তান থেকে সদরঘাট। এতটা কঠিন যানজপট ছিল সেই ১৯৯৯ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত, সে সময়টা বাসে গুলিস্তান থেকে সদরঘাট যেতে কমপক্ষে এক ঘণ্টা, কখনো আরো বেশি সময় লাগতো। এখন কেমন অবস্থা জানি না। কালন আমি এখন যাই শুক্রবারে!
পরে অবশ্য বকশিবাজার থেকে আরমানি টোলা হয়ে শটকাটে ২০ থেকে ২৫ টাকা রিকশা ভাড়ায় চলে যেতাম। এভাবে অনেক দিন গেছি। সেখানে যাবার সুযোগে পুরনো ঢাকার সাথে আমার একটা আত্মিক সম্পর্ক।
শাঁখারি বাজারে গেলাম ২০০০ সালরে দিকের এক বিকালে। আমাদের এলাকার এক বন্ধু পিংকুর সাথে। ওর বোন থাকতো সেখানে। ভাগ্নি নাচ শিখছে, মামাদের নাচ দেখাবে, তাই যাওয়া। একটা সরু গলি ধরে আমরা ভিতরে ঢুকছি, আর মনে হচ্ছে আমি গুহার ভেতরে হারিয়ে যাচ্ছি। আমি একটু মোটাসোটা ছিলাম, তাই সরাসরি ঢুকতে পারিনি, একটু পাথালি হয়ে ঢুকতে হলো। সেখানে আলো ছাড়া একটা মিনিটও কাটে না কারো।
অনেক্ষন ছিলম, মিষ্টি খেলাম। ভাগনির নাচ দেখলাম এবং তার সঙ্গীত প্রতিভার কিঞ্চিত দেখে ফিরে এলাম। এভাবে পুরনো ঢাকা-
সে সময় আমি ওযারীর আল আমিন কোচিংয়ে ক্লাস নিতাম। গিযে দেখি সব মেয়ে। ওই কোচিংয়ে কোনো ছেলেকে পড়ানো হতো না। আমার ক্লাস নেয়ার কথা বাংলা, ইতিহাস, অর্থনীতি ও সমাজ বিজ্ঞানে। সেটি ইন্টার থেকে ডিগ্রির মেয়েদের। কিন্তু অনেক টিচার আসতেন না। তাই আমাদক বদলি খাটতে হতো। নাইট টেনেও পড়িয়েছি।
কোচিং চালাতে 'সায়াদাত' ভাই। তিন বললেন- আমি যাওয়ার কারণে তার শিক্ষার্থী বেড়েছে। আমার বিশ্বাস হলো না। পরে আমি যখন ছেড়ে আসি, উনি খুব মন খারাপ করেছিলেন। সায়াদাত ভাইয়ের স্ত্রী তাকে ছেড়ে গেছেন বা তিনি তাকে ছেড়ে দিয়েছেন। যাকে ভদ্র সমাজে ডিভোর্স বলে। উনার একটা সন্তান ছিল। মাঝে মাঝে তিনি ক্লাসের ফাঁকে তার কাছে ছুটে যেতেন।
কোচিংয়ের সুবাদে আমার দুজন নারীর সাথে ভালো সম্পর্ক তেরি হয়েছিল। তাদের একজন নীলা। আরেকজন ঝুনু। নীলা হালকা পাতলা। আর ঝুনু অনেক মোটা। তবে দুজনই ফর্শা- সুন্দরী। তারা আমার ক্লাশের ছাত্রী না হয়েও আমার লেকটচার শোনার জন্য আসতেন! (নিজেদের কেমন মফিজ মনে লইতাছে!)
নীলা মেয়েটা ইভটিজিংয়ের শিকার হতো, সেটি জানার পর একটা 'ব্যবস্থা' করেছিলাম। দক্ষিণ মুহসেন্দীতে ওদের বাসা। বার কয়েক দাওয়া করেছিল, কিন্তু ভভঘুরে কুদ্দুসের সময় কই! যাওয়া হয়নি।
ঋষিকেশ দাস লেনে ছিল ঝুনুদের বাসা। ওর মা বাবা বেশ কয়েকবার বলেছিল পুররো ঢাকার অতিথি আপ্যায়ন কেমন? তা দেখার সুযোগ নিতে। আমি পারিনি।
আল আমিন কোচিংয়ের চাকুরীটা ছাড়ার আগেই আমার প্রথম আলোর প্রদায়ক সংবাদদাতার কাজটা জুটেছিল। আমি সব সময় কাজের মধ্যে থাকি। নট কাম! কাজ না থাকলে ভালো লাগে না। প্রথম আলোর হয়ে কাজ করার সূচনার ফাঁকে রাজীব ভাই বললেন, আপাতত পেজ বেরুচ্ছে না। তাহলে আমার কী করণীয়!
প্রথম আলোর ৫ নম্বর পাতায় একটা বিজ্ঞাপন চোখে পড়লো- প্রিয় মুখ নামে একটি পাক্ষিক ম্যাগাজিন বের হবে। রাজীব ভাইয়ের অনুমতি নিয়ে সেখানে যোগ দিলাম। অনেক দিন সেখানে কাজ করেছি।
আমার কিছু অদ্ভূত ঘটনা আছে। তার দুটো প্রিয় মুখে থাকার সময়- আমি ভাবলাম দিনের ১০ টা থেকে রাত ১০ পর্যন্ত পানি খাবো না। দেখি কাজটা করা যায় কিনা। তাই হলো। সে সময় ইয়ুথ গ্রপ একটা পানীয় বাজারে আনে- নাম দেয় ভার্জিন। সম্ভবত আমি সেই ব্যাক্তি যে সবচেয়ে বেশি ভার্জিন ড্রিংকস খেয়েছি।
মাস চারেক ভার্জিন ড্রিংকস খাওয়ার পর কমিয়ে আনতে বাধ্য হলাম। দিনে মাত্র দুই লিটার! কারণ আমার পানীয়ের খরচ দিতো প্রিয়মুখ কর্তৃপক্ষ। আর খাবার আসতো এলিফ্যান্ট রোড়ের টেস্টি খাবার ঘর থেকে। সেখানে তারা আমার নামটা বদলে দিয়েছিল। নতুন করে রেখেছিল- ' খাইন্না ভাই'।
আরেকটা ঘটনা- আমি সে সময় আজিমপুরের নিউ পল্টনে একটা মেসে উঠলাম। সেই মেসে আমার রুমমেট হিসাবে নিলাম কায়সার ভাইকে। দেয়ালে পোস্টার লিকে তাকে পাওয়া! ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সায়েন্সের একটা সাবজেক্ট থেকে পাস করে চাকুরীর খুঁজছেন। দুজন মিলে থাকি, ভালোই কাটছে। কিন্তু কায়সার ভাই বাইরে থাকেন, ঠিকমত খাওয়া দাওয়া করেন না। আমারো একই হাল।তাই বুয়া মুক্ত মেস!
যেহেতু বাইরেই খেতে হবে তাই সিদ্ধান্ত নিলাম একমাস টানা চলবে তেহারি এবং বিরিয়ানী । নীলক্ষেতের তেহারির সুনাম আছে। চেষ্টা করলাম এবং সফল হলাম। ঠিক একমাসের শেষ দিন বাড়ি গেলাম। বিকাল ৫ টার দিকে খেতে বসলাম- এক মাস পরে ভাত! তাও আবার মায়ের হাতে! সে কী সুস্বাদু। চার প্লেট ভাত খাওয়ার পর মনে হলো- পেটে আর জায়গা হবে না। তৃপ্তিতে ডুবে আছি।
২০ শে জুন, ২০১৪ রাত ১০:২৭
মোরতাজা বলেছেন: কয়েক মাস ধরেই জানাচ্ছি। এটা ৮৮ তম কিস্তি!
২| ২১ শে জুন, ২০১৪ সকাল ৮:৩৭
আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ভালো লাগলো।
ধন্যবাদ, মোরতাজা।
২১ শে জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৪২
মোরতাজা বলেছেন: পড়ার জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ।
৩| ২১ শে জুন, ২০১৪ দুপুর ১:৪২
গোঁফওয়ালা বলেছেন: অত্যন্ত সুন্দরভাবে আপনার ঘটনা বলে গেলেন। ভালো লেগেছে।।
২১ শে জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৪২
মোরতাজা বলেছেন: ধন্যবাদ, জনাব।
৪| ২১ শে জুন, ২০১৪ রাত ৯:০১
is not available বলেছেন: পড়ে ভাল লাগল! ভাল লিখেছেন!
২১ শে জুন, ২০১৪ রাত ৯:৪০
মোরতাজা বলেছেন: ভালো লেখার সনদ পেয়ে খুশী হলাম। পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
৫| ২২ শে জুন, ২০১৪ ভোর ৪:০৮
এইচ তালুকদার বলেছেন: ভার্জিনের বোতল গুলো খুব অদ্ভুত আকারের ছিলো,২০০৩এর পর বাজারে আর দেখিনী।
২২ শে জুন, ২০১৪ দুপুর ১২:৪৩
মোরতাজা বলেছেন: হুমমম
তকে ক্যান এখনো পাওয়া যায়। বোতোলো দেখেছিলাম সম্প্রতি!
৬| ২২ শে জুন, ২০১৪ ভোর ৫:৫৬
রাজিব বলেছেন: আপনার লেখা পড়ে বেশ ভাল লাগলো। মধ্যবিত্তের জীবনের সুখ আর সংগ্রামের কাহিনী। আমিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি ইংরেজি বিভাগে (১৯৯৩-৯৮), টাঁকা কামানোর জন্য লিখতাম (পত্রিকা আর ম্যাগাজিনে), যাত্রাবাড়ী, গুলিস্তান এসব জায়গায় ঘুরে বেড়াতাম প্রতিদিন। আপনার লেখা পড়ে নিজের জীবনের বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক সৃতিই মনে পড়লো। আপনি সব গুলো পর্ব একত্রিত করে পিডিএফ করে আপলোড করতে পারেন।
২২ শে জুন, ২০১৪ দুপুর ১২:৪২
মোরতাজা বলেছেন: ধন্যবাদ, আপনার পরামর্শের জন্য। আসলে আমাদের এই নগরে টিকে থাকার লড়াইটা দারুণ উপভোগ্য ছিল।
৭| ২২ শে জুন, ২০১৪ সকাল ৭:২০
নীল-দর্পণ বলেছেন: বাহ! ভাল লাগে এধরনের লেখা পড়তে
২২ শে জুন, ২০১৪ দুপুর ১২:৩৮
মোরতাজা বলেছেন: ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ২০ শে জুন, ২০১৪ রাত ১০:১৫
আমি দিহান বলেছেন: আপনার ব্যক্তিগত ঘটনা জানানোর জন্য ধন্যবাদ।