নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মেডলি ট্রাভেল লাভিং ওয়ান।

মোরতাজা

আমি সাধারণের একজন। বেড়াতে, বেড়ানোর আয়োজন করতে ভালোবাসি।

মোরতাজা › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধন্যবাদ হাবিবুল্লাহ পাঠান এবং সুফি মোস্তাফিজ

০৮ ই এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৫:৪৪


নগর সভ্যতার অনন্য নিদর্শন উয়ারী বটেশ্বর। আড়াই হাজার বছরের পুরনো এ সভ্যতার সন্ধান মিলে ১৯৩০ এর দশকে। স্কুল শিক্ষক মোহাম্মদ হানিফ পাঠান উয়ারী বটেরশ্বরকে জনসমপেক্ষ তুলে ধরার প্রায় ৭০ বছর পর এর খনন কাজ শুরু হয়েছিল ২০০০ সালে। খননকাজের নেতৃত্ব দেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমান। তার সাথে ছিলেন হানিফ পাঠানের ছেলে মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ পাঠান।

নরসিংদী জেলার বেলাব উপজেলার দুটো গ্রাম উয়ারী ও বটেশ্বর। ১৯৩৩ সালে স্থানীয় স্কুলশিক্ষক মোহাম্মদ হানিফ পাঠান সেখান থেকে ২০-৩০টি মুদ্রা সংগ্রহ করেন। এগুলো ছিলো বঙ্গভারতের প্রাচীনতম রৌপ্যমুদ্রা। এটিই উয়ারী-বটেশ্বরের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সংগ্রহের প্রথম চেষ্টা। হানিফ পাঠান সে সময়কার সাপ্তাহিক মোহাম্মদীতে "প্রাচীন মুদ্রা প্রাপ্তি" শীর্ষক সংবাদ পাঠালে তা ছাপা হয়।

নিজের ছেলে হাবিবুল্লাহ পাঠানকে প্রতœতাত্ত্বিক উপাদান সম্পর্কে সচেতন করে তোলেন হানিফ পাঠান। ১৯৫৫ সালে বটেশ্বর গ্রামে স্থানীয় শ্রমিকরা দুটি লৌহ পিন্ড পরিত্যক্ত অবস্থায় ফেলে যায়। ত্রিকোণাকার ও এক মুখ চোখা, ভারী লৌহপিন্ডগুলো ছেলে হাবিবুল্লাহ তাঁর বাবাকে নিয়ে দেখালে তিনি অভিভূত হোন। ওই বছরের ৩০ জানুয়ারি দৈনিক আজাদ পত্রিকার রবি বাসরীয় সংখ্যায় "পূর্ব পাকিস্তানে প্রাগৌতিহাসিক সভ্যতা" শিরোনামে হানিফ পাঠানের একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়।

এরপর দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর ১৯৯৬ সালের প্রত্নতত্ত্ব জরিপ সম্পন্ন হওয়ার পরও চার বছর অপেক্ষা করতে হয়েছিল খনন কাজের জন্য। এ জন্য আর্থিক সঙ্কটও ছিল বলে জানিয়েছেন সুফি মোস্তাফাজিুর রহমান।

তিনি বলেন, ১৯৮৯ সালেই হাবিবুল্লাহ পাঠান তার বইয়ে উয়ারী-বটেশ্বরের কথা উল্লেখ করেছেন। পিএইচডি করার সময় আমি মাঝে মধ্যেই উয়ারী-বটেশ্বরে গিয়েছি। তখন থেকেই সাইটটি আমাকে হাতছানি দিচ্ছে। ১৯৯৯ সালে পিএইচডি সম্পন্ন করার পর ২০০০ সালে আমি উয়ারীতে কাজ শুরু করি।

সুফি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, গবেষনার শুরুতে নানা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হলেও স্থানীয় জনগণকে গবেষণাকর্মের সঙ্গে সম্পৃক্ত করার সুবাদে এখন কাজ অনেক সহজ হয়ে গেছে। জেলার ৪টি উপজেলার ৫০টি স্থান নির্ধারণ করে গবেষণা এবং খনন কাজ এগিয়ে চলেছে। এখানে যে আড়াই হাজার বছর আগের সভ্যতা ছিলো তা মোটামুটি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

উয়ারী-বটেশ্বর অঞ্চলের ৫০ টি প্রতœস্থান থেকে আবিষ্কৃত হচ্ছে প্রাগৌতিহাসিক যুগের পাথর ও প্রস্তুরীভূত জীবাশ্ম -কাঠের হাতিয়ার, তা প্রস্তর সংস্কৃতির গর্ভ-বসতি এবং বাংলাদেশের ইতিহাস নতুন করে লেখার তাৎপর্যপূর্ণ সব প্রত্নবস্তু। উয়ারী-বটেশ্বর ছিল বাংলাদেশের প্রাচীনতম মহা জনপদ। দূর্গ নগরটি ছিল সেই মহা জনপদের রাজধানী। এটি গড়ে উঠেছিল সুপরিকল্পিতভাবে। ইতিমধ্যে এখান থেকে আবিষ্কৃত হয়েছে মাটির দূর্গ-প্রাচীর, পরিখা, পাকা রাস্তা, পার্শ্ব রাস্তাসহ ইটনির্মিত অনন্য স্থাপত্য নিদর্শন। পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকায় অবস্থিত উয়ারী-বটেশ্বর ছিল একটি নদী বন্দর ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকেন্দ্র। মনে করা হচ্ছে, টলেমি বর্ণিত সৌনাগড়াই উয়ারী-বটেশ্বর। আরও মনে করা হচ্ছে, উয়ারী বটেশ্বর অঞ্চলে ছিল গঙ্গাঋদ্ধি জাতির বাস। ভারতীয় উপমহাদেশের আদি ঐতিহাসিক কালের অনেক নগর এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও ভূমধ্যসাগর অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল উয়ারী-বটেশ্বরের। ২৩০০ বছরের প্রাচীন ৪০০০ কিলোমিটার দীর্ঘ বিশ্ববিখ্যাত সিলক্ রুটের সঙ্গেও যে উয়ারী বটেশ্বর সংযুক্ত ছিল, নানা নিদর্শনগত প্রমাণ থেকে সম্প্রতি তা উজ্জ্বল হয়ে উঠতে শুরু করেছে। উয়ারী-বটেশ্বরে বিকশিত হয়েছিল স্বল্প-মূল্যবান পাথরের নয়নাভিরাম পুঁতি তৈরির কারখানা। এখানে আবিষ্কৃত উপমহাদেশের প্রাচীনতম ছাপঙ্কিত রৌপ্যমুদ্রা ও মুদ্রাভান্ডার, অনন্য স্থাপত্যকীর্তি , হরেক রকমের পুঁতি, সুর্দশন লকেট ও মন্ত্রপূত কবচ, বাটখারা, পোড়ামাটি ও ধাতব শিল্পবস্তু, মৃৎপাত্র, চিত্রশিল্প ইত্যাদি শিল্পীর দক্ষতা, উন্নত শিল্পবোধ ও দর্শনের পরিচয় বহন করে।

উয়ারী বটেশ্বরকে লালন করে সভ্যতার ইতিহাস উন্মোচন করার নায়ক মোহাম্মদ হানিফ পাঠান, মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ পাঠান এবং সুফি মোস্তাফিজুর রহমানকে ধন্যবাদ। ধন্যবাদ শেকড়ের টানে নির্মোহ গবেষণা কাজের জন্য।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.