![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গত ৩০ শে জুলাই, ২০১৩ প্রায় তিন বছর বন্ধ থাকার পর ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের মধ্যে সরাসরি আলোচনা শুরু হয়েছে। আলোচনার শুরু করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে যুক্তরাস্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রী জন কেরী। যুক্তরাষ্ট্র দুপক্ষকে আলোচনা করা চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য ৯ মাস সময় বেঁধে দিয়েছে। শান্তি আলোচনা আবার শুরুর ব্যপারে সমঝোতা হওয়ার জন্য ইসরাইল ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্রিত দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। গত ১৯ শে জুলাই জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন বলেছেন, “শান্তি আলোচনা অব্যাহত রাখতেই দু দেশের নেতাদের সাহস ও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে”।
এই আলোচনা শুরুর আগে ফিলিস্তিন জানিয়েছিল যে, ১৯৬৭ সালে ৩য় আরব-ইসরাইল যুদ্ধের পূর্বে ফিলিস্তিন এর রাষ্ট্রের সীমানা বহাল রাখার নিশ্চয়তা পেলে আলোচনায় যাবে। কার্যত কোন ধরনের নিশ্চয়তা না পেলেও ফিলিস্তিন অংশ নিয়েছে।
ফিলিস্তিন স্বাধীনতা অর্জনে ৬ টি বাধা চিহ্নিত করা হয়েছে।
[১] ফিলিস্তিনে অবৈধ ইহুদি বসতি নির্মাণঃ ইসরাইলে অধিকৃত পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে ইসরাইল অবৈধ ভাবে ইহুদি বসতি নির্মাণ করে চলছে। এতে ফিলিস্তিন নতুন রাষ্ট্র করার কাংখিত জায়গাটিতে বসতি স্থাপনের বিষয়টি শান্তি প্রতিষ্ঠার পথে বা ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা অর্জনের পথে বড় বাধা। বসতি নির্মাণ কে কেন্দ্র করে দু পক্ষের মধ্যে সরাসরি আলোচনা থেমে যায় ২০১০ সালে। ৩ বছর আলোচনা বন্ধ থাকার পর যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে আবার আলোচনা শুরু হয়। আগষ্ট ২০১৩ তে রামাল্লায় দুপক্ষের দু দফা বৈঠক সম্পন্ন হবার হয়। আলোচনা চলমান অবস্থায় ইসরাইল ১২০০ অবৈধ বসতি নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে ফিলিস্তিন এর আলোচন সায়েব ইরাকাত প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন এই পদক্ষেপ শান্তি প্রক্রিয়ায় তাদের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্নের দেখা দিয়েছে।
[২] জেরুজালেম সমস্যাঃ ফিলিস্তিন ও ইসরাইল মধ্যে শান্তি আলোচনায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাধা হল জেরুজালেম। ফিলিস্তিন ও ইসরাইল উভয়েই জেরুজালেমকে তাদের নিজ নিজ ভু-খন্ডের রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করেছে। উল্লেখ্য যে, জেরুজালেম কে শুধু একটি ভু-খন্ড নয় বরং এটি একটি চেতনা যা সম্মানের সাথে সম্পর্কিত হয়ে উঠেছে। ইতোমধ্যে ইসরাইল জানিয়েছে যে তারা আলোচনা এবং শান্তি চায় তবে তা জেরুজালেমকে বিভাজন করে নয়। উল্লেখ্য ধর্মীয় ভাবে জেরুজালেম মুসলিম, খ্রীষ্টান ও ইহুদি দের কাছে এক পবিত্র জায়গা।
[৩] এরিয়া “C” সমস্যাঃ ১৩ ই আগষ্ট, ১৯৯৩ সালে ওয়াশিংটনে ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের মধ্যে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তিকে অসলো চুক্তি বলা হয় কারন। এই চুক্তিতে পশ্চিম তীর এবং গাজা এলাকা ফিলিস্তিনিদের স্বশাসন দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়। এই সময়ে পশ্চিম তীর কে A, B এবং C তিনটি এরিয়াতে ভাগ করা হয়। চুক্তিতে বলা হয় এরিয়া “C” থাকবে ইসরাইলের অধীনে। ফিলিস্তিনের সাথে চুড়ান্ত চুক্তির পর এই জায়গা তাদেরকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। উল্লেখ্য পশ্চিম তীরের ৬১% এলাকা পড়েছে এরিয়া “C” এর মধ্যে। পশ্চিম তীরের উর্বরতর ভূমি ও পড়েছে এখানে। ইসরাইলের উগ্রবাদিরা বলছে এরিয়া “C” আনুষ্ঠানিকভাবে ইসরাইলের দখনে নিতে হবে। আর ফিলিস্তিন চায় তাদের এলাকা বুঝে পেতে।
[৪] ফাত্তাহ-হামাস দ্বন্দ্বঃ ফিলিস্তিনের আভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব হচ্ছে ফাত্তাহ-হামাস দ্বন্দ্ব।ফাত্তাহ ও হামাসের মধ্যে সংঘর্ষ হলে অনেক ফিলিস্তিন হতাহত হয়। এর মধ্য দিয়ে পশ্চিম তীর চলে যায় ফাত্তাহ দের দখলে আর গাজা চলে যায় হামাসের দখলে। আর এই অন্তর্দ্বন্দ্ব লাভবান হচ্ছে ইসরাইল। ২০১২ সালে দোহায় ফাত্তাহ ও হামাসের মধ্যে ঐক্য হওয়ার জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু তা কার্যকর হয়নি। ১৪ ই মে, ২০১৩ সালে মিশরে তিন মাসের মধ্যে ফাত্তাহ ও হামাসের মধ্যে পুন-একত্রীকরণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তাও কার্যকর হয়নি।
[৫] শান্তি প্রক্রিয়ার কাঠামোঃ ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের মধ্যে শান্তি প্রক্রিয়ার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত একই কাঠামোতে রয়েছে। এই কাঠামো শান্তি প্রক্রিয়া সফল করতে পারবে বলে মনে হয় না। একারণে এই কাঠামোর পরিবর্তনে দাবী উঠেছে। ৩০ শে জুলাই। ২০১৩ সালে আলোচনার সুধুর দিকে রাশিয়া এক বিবৃতিতে এই কাঠামোর পরিবর্তনের আহবান জানায়। এই আহবানে বলা হয়, শান্তি প্রক্রিয়ায় ইরান, চীন লেবানন ও রাশিয়ার অংশগ্রহণ প্রয়োজন। এতে ইসরাইলের ও যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা ভূমিকা হ্রাস পাবে।
[৬] গণভোটঃ ৩০ শে জুলাই, ২০১৩ সালে আলোচনা শুরুর পর ইসরাইল সরকার নতুন একটি আইন শুরু করেছে। এই আইনে বলা হয়েছে যে ফিলিস্তিনের সাথে যেকোনো চুক্তি স্বাক্ষরের পূর্বে ইসরাইলে গণভোট হবে। গণভোটে জনগণ সমর্থন দিলে চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। এটি অনুমান করা অপ্রাসঙ্গিক যে, ইসরাইলের জনগণ যেকোন চুক্তির বিষয় প্রত্যাখ্যান করবে।
এই কথা অনস্বীকার্য যে ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের শান্তি আলোচনা সফল করার জন্য অনেক জটিল পথ অতিক্রম করতে হবে। আলোচনা সফল হলে সীমানা নিয়ে সমস্যা দেখা দিবে। ১৯ শে মে, ২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ঘোষণা করেন যে ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরাইল যুদ্দ্বের পূর্ববর্তী সীমানা হবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের সীমানা। আরব জাতিগুলো স্বাগত জানালেও ইসরাইল অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করে। ইহুদিদের অবৈধ নির্মান বন্ধ করতে হবে। এরিয়া “C” নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে সমস্যার সমাধান হবে না। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল ইসরাইলের প্রতি মার্কিনীদের মনোভাব। ইসরাইল ফিলিস্তিনদের ভুমি দখলের নিরন্তর সাম্রাজ্যবাদী প্রচেষ্টা এবং ইসরাইলের এই অনৈতিক আগ্রাসনকে এগিয়ে নিতে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামরিক সমর্থন বন্ধ হবে না। আর তাই ফিলিস্তিন স্বাধীনতা অর্জনের এগুলো একেকটি অন্তরায়। আর তাই অস্থিতিশীল মধ্যপ্রাচ্যে।
Find / Follow me on Facebook:
https://www.facebook.com/neelchy/
©somewhere in net ltd.