নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভীষণ কঠিন পোড়ামাটিকে আবার সেই কাদামাটিতে ফিরিয়ে আনা,ভীষণ কঠিন আঘাত দেয়া শব্দমালা গুলো ফিরিয়ে নেয়া।ভীষণ কঠিন নিজের সম্পর্কে কিছু বলা।যে চোখ দেখিনি সে চোখ কেমন করে বিশ্বাস করবে জানি না।যে কখনো রাখিনি হৃদয়ের উপর হৃদয়;সে কেমন করে বুঝবে আমায়!

নীল মনি

শিশুর মত চোখ দিয়ে দেখি আমার এই বিশ্ব।মানুষ স্বপ্নের কাছে হেরে যায় না, হেরে যায় নিজের প্রত্যাশার কাছে। প্রত্যাশা থাকে আকাশচুম্বী অথচ প্রচেষ্টায় থাকে শুধুই স্বপ্ন।

নীল মনি › বিস্তারিত পোস্টঃ

"অন্যরকম মা"

০৮ ই মে, ২০১৬ রাত ১২:৩২

সম্পর্ক কী সেটা বুঝত না রুবা,আর উনি কে সেটা বোঝার প্রশ্নই আসেনা।তখনও রুবা বুঝত না, শুধু এটুকু বুঝত আপু যদি বকা দেয় তাহলে উনি কোলে টেনে নেয়,আপু যখন মারতে যায় উনি তখন বকা দিয়ে আড়াল করে নিয়ে যায়।রুবা যখন কাদেঁ উনিই তখন কোথা হতে চকলেট হাতে ধরিয়ে দেয়।রুবা ভীষণ খুশি হয়।রুবা এই উনাকে মা বলে ডাকে।একদিন রাতে রুবার বড় আপু জোর করে রুবাকে তার কাছে আনে।এই আপুটা পচাঁ, কেমন রাগী রাগী হয়ে তাকায়।মা আমার কত্ত ভালো দুষ্টামি করলেও বকেনা,শুধু বলে এমন করলে হয় মাগো,দুষ্টামি করছ, কিন্তু যেন ব্যথা পেওনা।রুবা ভীষণ দুষ্টু, মাকে এক দন্ড স্থির হতে দেয়না,সব সময় ভেজাল,মা আমি পানি খাবো,পানি এনে দিলে বলবে বোতলে এনে দাও,বোতলে এনে দিলে বলবে আমাকে রান্নাঘরে নিয়ে যাও, তা না হলে আমি পানিই খাবোনা।মা হাসি মুখে সব করেন।রুবার চেয়ে বড় দুইবোন বেশ শান্ত।জ্বালাতন করেনা, এক রুবাই পাড়া মাথায় করে ফেলে দুষ্টামি করতে,এই তো সেদিন বাসায় কাজ করতে আসা অশিক্ষিত মেয়েটাকে ঠাস করে মুখে চড় বসিয়ে দিল শুধু এই অপরাধে কেন সে ইংরেজি বই চিনে আনতে পারল না।এইতো সেদিন সে মুখ ভর্তি করে থুথু ওই মেয়েটার গায়ে দিল।দুটো দিন রুবার মা রুবাকে আলাদা করে ডেকেছিল। কিছু বোঝার আগেই রুবা অনেক বড় অন্যায় করে ফেলেছিল এক বছর আগে।কিন্তু রুবার সেখানে দোষ ছিলনা,মা ডেকে সেদিন রুবাকে বলল "সিঁড়ি দিয়ে আমি নামছি আর তুমি আমার হাত ধরে নামছ,নামতে নামতে হঠাৎ তুমি আমার পেটে আঘাত করলে।তীব্র ব্যথায় আমি কুকঁড়ে গেলাম,তোমার একটা ভাই হয়েছিল,যে বাহিরের আঘাত সহ্য করতে না পেরে তখনি পেটের মাঝে মরে গিয়েছিল।" এটা ছিল রুবার কাছে নিছক একটা গল্প,এই গল্প করার সময় রুবার মা কেদেঁছিল,রুবা আলতো হাত মায়ের মুখে দিয়ে জানতে চাইল মা তুমি কাঁদছ কেন? মা বলল"তুমি যে অন্যের সাথে দুষ্টামি কর তাতে আমি মন খারাপ করেছি,এখন থেকে সব দুষ্টামি আমার সাথে কর কেমন"রুবা মেনে নিল,মায়ের উপর রাগ করে,একদিন খুব রাগ করে মায়ের গায়ে থুথু দিয়ে মাকে দু হাত দিয়ে ঘোরাতে লাগল।রুবার মা বসে পড়লেন।এরপর একদিন রাতে রুবার বড় বোন ডেকে তুলল, বলল, এইইইই উঠ আমাদের একটা ভাইয়া হয়েছে।পরের দিন মা কে দেখতে গেল সে,দেখল খুব ছোট্ট ছেলে মায়ের পাশে শুয়ে আছে।রুবা ওর ছোট্ট হাত দিয়ে কোমল শিশুটির নাক টিপে দিল।এভাবেই সময় গড়িয়ে যেতে যেতে রুবা বুঝতে পারল তার মা অন্য সবার থেকে আলাদা।অন্য মায়েরা টিভি দেখে,অন্য মায়েরা বাইরে বেড়াতে যায়,পুরুষ মানুষের সামনে যায়,ঝগড়া করতে পারে,বকা দিতে পারে কিন্তু তার মা এসব কিচ্ছু পারেনা।এমনকি মেয়ে মানুষের সামনে গিয়ে চোখে চোখ রেখে বলতে পারেনা কেমন আছেন? যদিও কোনভাবে বলেন তবে ঠোঁট নাড়ানো বোঝা যাবে কিন্তু শ্রোতার কানে কথা পৌঁছবেনা।অনেকে এটা নিয়ে হাসাহাসি করে, রুবার বেশ মজা লাগে,আরো মজা লাগে যখন বাসায় মেহমান আসে।মা তো জোরে ডাকতে পারেন না তাই উনি রান্নার চামচ বা খুন্তি দিয়ে দরজা বা প্লেটে বাড়ি দেন।যেখানেই ও থাকুক এক দৌঁড়ে মায়ের কাছে চলে যায়।এই তো সেদিন ও ঘুমন্ত মায়ের পায়ে চুমো খাচ্ছে,মায়ের ঘুম ভেঙে গেল,জিজ্ঞেস করল,পায়ে চুমো খাচ্ছ যে? রুবা কী বলেছিল সেদিন"বাহরে! মায়ের পায়ের নীচে জান্নাত তো,আমি আমার জান্নাতকে আদর করছি।।মা কিছু না বলে বুকে টেনে নিল,খুব ইমোশনাল হলে মায়ের মুখের কথাগুলো উলট পালট হয়ে যায়।তোরা যে কী করিস,এই কথা তখন এমন হবে আতাপচা,শুধু এইটুকু শুনার পর রুবা থামিয়ে দিত মাকে।রুবাদের বাড়িতে মেহমান লেগেই থাকত,অথচ রুবার মা কোনদিন রুবাকে বলিনি,এই রুবা আমার এই রান্নাটা করে দাও।একদিন রুবার মা সত্যিই রুবাকে অনেক বড় কাজ দিল।রুবাকে কাছে ডেকে বলল আমাকে একটা পেয়াঁজ কেটে দিবে।পেঁয়াজ কেটে দেবার পর সেই প্রথম রুবা বিস্মিত হল।সামান্য একটা পেয়াঁজ কাটা এটা আহামরি কিছু নয়।সেদিন রুবার মা রুবাকে বলেছিল"ওহ! তুমি আমার যে উপকার করেছ,আমি কী বলব,এই পেয়াঁজটুকু ঠিক সময়ে না দিলে আমার রান্নার কী যে হত।"উল্লেখ্য যে রুবার মা ভীষণ ভালো রাধেঁন।সেই প্রথম রুবা শিখল কী করে অতি সামান্য বিষয়েও কৃতজ্ঞতাবোধ জানানো যায়।
এরপর জীবনের অনেক পরিণতি পার করে এসেছে রুবা,মা আঘাত পান এমন একটি কাজও করিনি রুবা।রুবা কখনো চায়নি মায়ের মুখ থেকে উহ! শব্দটা বের করার,রুবা এখন হাড়ে হাড়ে জানে মা কী!
আজ বাসায় আলু ভাজি হয়েছে,রুবা ওর বাচ্চাদের আলুভাজি খাওয়াতে গিয়ে তার মনে পড়েছে মায়ের হাতের তৈরি সেই আলু ভাজির কথা।ভাবতে ভাবতেইচোখ দুটো জলে টলমল করছে, এখনি মার সাথে কথা বলতে হবে।রুবা মাকে ফোন করে,ওপাশের হ্যালো শুনতেই ওর বুকে ধক করে উঠে।মায়ের গলা দিয়ে কথা বের হচ্ছেনা, মায়ের জ্বর,আর বেশ অনেকদিন ধরে অসুস্থ।চারিপাশের সব কিছু অর্থহীন লাগে।বাচ্চাদুটোকে খাইয়ে ব্যাগ গুছিয়ে রওয়ানা হয় মায়ের কাছে।রুবা মায়ের মাথায় জল ঢালে আর সে জল কখনো কখনো মায়ের চোখ ভিজিয়ে দিচ্ছে,জল পড়ছে মায়ের মাথা থেকে চুইয়েঁ চুইয়েঁ বালতিতে,জল পড়ছে গড়িয়ে গড়িয়ে রুবার গাল বেয়ে।রুবার মেয়ে এসে মাথার কাছে দাঁড়িয়ে বলে "আম্মু!তুমি কাঁদছ কেন?"রুবা তাকিয়ে দেখে মায়ের চোখ বেয়েও অশ্রুজল গড়িয়ে পড়ছে পানির সাথে সাথে।

(দিবস বলে লেখাটা লিখলাম তা শুধু নয়,আমি জানিয়ে দিতে চাইলাম রুবার মার কথা,খুব স্বল্প লিখতে চেয়েও হলনা আরো অনেক কিছু বাকি,ডায়েরির পাতা ভর্তি মায়ের জন্য এমন কত জমানো কথা, জমিয়েছি সে কথা মা জানেন না।আমিই সেই দুষ্ট রুবা।আমার মায়ের জন্য দোয়া করবেন,আল্লাহ্‌ যেন তাঁর সুস্থতা দান করেন।আমীন।প্লিজ দোয়া করবেন।)

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই মে, ২০১৬ দুপুর ১:৪১

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: খুবই টাচি!

সেদিন ও ঘুমন্ত মায়ের পায়ে চুমো খাচ্ছে,মায়ের ঘুম ভেঙে গেল,জিজ্ঞেস করল,পায়ে চুমো খাচ্ছ যে? রুবা কী বলেছিল সেদিন"বাহরে! মায়ের পায়ের নীচে জান্নাত তো,আমি আমার জান্নাতকে আদর করছি।।মা কিছু না বলে বুকে টেনে নিল,খুব ইমোশনাল হলে মায়ের মুখের কথাগুলো উলট পালট হয়ে যায়।তোরা যে কী করিস,

আম্মার সাথৈ আমিও এম করতাম। শেষটা করেছিলাম মাকে যখন সাদা কাপড় দিয়ে ঢেকে আনল। হাসপাতালেই পায়ের কাপড় টুকু ইঠিয়ে শেষ চুমু দিয়েছিলাম।

অন্তহীন জনম জনমের ঋনে বাঁধা একটাই সম্পর্ক মা।

১০ ই মে, ২০১৬ দুপুর ২:১২

নীল মনি বলেছেন: আপনার কমেন্ট পড়ে আমারই কষ্ট লাগছে,মা থাকবেনা এটা ভাবলেই কেমন যে লাগে, মনে হয় তখন আমার আয়ু কমিয়ে দিক, মা বেঁচে থাকুক।আমার আম্মু বেশ অসুস্থ, দোয়া করবেন।আল্লাহ্‌ আপনার আম্মুকে ভালো রাখুন অন্য জগতে।আমীন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.