নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভীষণ কঠিন পোড়ামাটিকে আবার সেই কাদামাটিতে ফিরিয়ে আনা,ভীষণ কঠিন আঘাত দেয়া শব্দমালা গুলো ফিরিয়ে নেয়া।ভীষণ কঠিন নিজের সম্পর্কে কিছু বলা।যে চোখ দেখিনি সে চোখ কেমন করে বিশ্বাস করবে জানি না।যে কখনো রাখিনি হৃদয়ের উপর হৃদয়;সে কেমন করে বুঝবে আমায়!

নীল মনি

শিশুর মত চোখ দিয়ে দেখি আমার এই বিশ্ব।মানুষ স্বপ্নের কাছে হেরে যায় না, হেরে যায় নিজের প্রত্যাশার কাছে। প্রত্যাশা থাকে আকাশচুম্বী অথচ প্রচেষ্টায় থাকে শুধুই স্বপ্ন।

নীল মনি › বিস্তারিত পোস্টঃ

মেঘের আড়ালে

১১ ই অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ৮:৩০

কোন গ্রহের অশুভ অসম্পূর্ণতার অভিশাপে বুঝি জীবন এমন হল, সে কথা কোন কালে বিশ্বাস করিনি!তবুও আমারি তো জীবন! কেন বার বার এমন হয়! আমি যতবার চেয়েছি সব কিছু ঠিকঠাক হোক, ঠিক ততবার যেন নতুন করে বেঁধেছে সব।আমারি কি দোষ! নিজের ভুলগুলো কখনো তো প্রশ্রয় দিতে চাই না তবুও মাঝে মাঝে মন বলে উঠে এবার বুঝিয়ে দেয়া উচিত। সব কিছুর সীমা আছে,সত্যি কি তাই?ভালো লাগেনা রোজ রোজ এত সব অশান্তি!
ভেবেছি বিষয় টা বলব প্রান্তের সাথে। তবুও বলিনি।

প্রান্ত আর আমি।সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে,একই সাথে ভোর দেখার সুযোগ এল জীবনে।সেই প্রথম আমরা বসে বসে দেখলাম পাহাড়ের পাশ থেকে উঁকি দেয়া প্রথম সূর্য।কি মিষ্টি রোদ,ঝিকিমিকি আলোয় তোমাকে আমার দেখা।পাখির কলতানে মুখর জীবনের সেই স্নিগ্ধ সকাল।পৃথিবীর রঙ দেখার সাথে সেই দেখেছিলেম জীবনের মধুর রঙ! তাঁবুর মাঝে তখনও আমাদের পড়ার সাথীরা ঘুমুচ্ছে।আমরা বসে বসে ভোরের আলো গায়ে মাখছি।সেই প্রথম প্রান্ত আমার হাত ধরেছিল।ওর হাত কাঁপছিল,সাথে আমারও।মাত্র এক মিনিটের জন্য সেই হাত ধরা ছিল।তারপর ছেড়ে দিয়েছিল পাছে কেউ দেখে ফেলে।তারপর যার যার তাঁবুতে ফিরে এলাম।সেই সুখ স্মৃতি,সেই মুখ,সেই হাত ধরেই কেটে যাচ্ছে ছক্কা খেলা জীবন।

তবুও জীবন,আমার আর আমাদের জীবন।হঠাৎ হঠাৎ সে জীবন কখনো কখনো থেমে যেতে চাইছে যেন।কেন আমি এমন করছি না কেউ আমায় করাচ্ছে সে কথা ক্যামনে বলি।দিনে দিনে জীবনের সৌন্দর্য ক্ষয়ে যাওয়া চাঁদের ন্যায় যাচ্ছে ক্ষয়ে,তবুও আশা বেধেঁ রাখি নতুন চাঁদ উঠবে জীবনে।তার দোষ ক্যামনে বলি আমি।আমি তো এটাই জানি আজ যার কাছে অন্যের দোষের রাজ্য খুলছি, কাল সে আমার নামেই অন্যের কাছে কথা শুনাবে।তবুও মাঝে মাঝে কাউকে বলতে ইচ্ছে করে।খুব করে বলতে ইচ্ছে করে ছোট্ট ব্যথাগুলো।এগুলো সত্যি যে ব্যথা কখনো কখনো বুঝি না, যদি ব্যথা না হয় তাহলে মনে কেন লাগে!!

আমি ঠিক করেছি অন্য কাউকে বলব না,কিন্তু কত সময় এমন দম বন্ধ করে থাকব জানিনা।তবুও ছিলাম এতদিন,যদি না নিশিবোঁ আমায় সব কথা বলত।নিশিবোঁ আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের বান্ধবী।অনেক বছর পর ওর সাথে দেখা।ভেতর ভেতর আমি যে ওকে খুঁজছিলাম সেটা ওর সাথে দেখা না হলে বুঝতামই না।কেন যে আমরা এমন,মনের কথা,চাওয়াগুলো সহজে বুঝিনা!আমরা শুধু অন্যের হৃদয় আকাশে মেঘের গভীরতা বুঝি,বুঝি নির্মল আকাশে পাখির ডানা ঝাপটানোর কারণ তবুও কেন নিজ হৃদয়ের দাবি বুঝি না।
নিশিবোঁকে দেখার পর অভিমান হল এতদিনে বুঝি আমায় দেখতে আসার তোর সময় হল!নিশিবোঁ আমায় দেখে প্রথম বলে উঠল "কি রে তোর এই অবস্থা ক্যান?" চেহারার একি হাল করেছিস?"নিশিবোঁ সেই আগের মতই আছে,শুধু কথায় কথায় চিৎকার।

মাঝ রাত, আর ঘন্টাখানেক পর আবার ভোর হবে।অন্ধকার ঘর,আমরা কেউ কারো মুখ দেখতে পারছি না,জানালার পর্দা দিয়ে ফুটফুটে জ্যোৎস্নার এক টুকরো আলো ঠিকরে বের হয়ে আসতে চাইছে।

নিশিবোঁ কাঁদছে,আমি বুঝতে পারছি। ওর গলা ধরে এসেছে।ওর কথাগুলো যে আমারও কথা!

নিশিবোঁ বলছে "মা কিছুতেই সহ্য করতে পারেনা আমার আর দীপ্তের সম্পর্ক।আমি যখন কাজ করি দীপ্ত এসে সাহায্য করে,মা খুব রাগ করে আমি বুঝি।সেদিন বড় আপা আসল, আমার সামনে দীপ্ত র কথা তুলে বলল সে এখন মেয়ে মানুষ হয়ে গেছে,বউয়ের কাজে হাত লাগায়।

দু'জনে মিলে বাইরে গেলে, দেরি করে একটু বাড়ি ফিরলে মা রাগ করে। কথায় কথায় মা ভুল ধরে।ভুল না করাটাও ভুল।ঘরের মাঝে একটু সাজলেও রাগ করে।দীপ্ত অফিস থেকে ফেরার সময়ে ফুল নিয়ে ফিরলে মা বকে কেন পয়সা নষ্ট করলি!

সেদিন পাশের বাসার খালাম্মা এসে যখন বলছিল তার বউমার কথা,তখন পাশের ঘর থেকে শুনেছি- মা জোরে জোরে বলছে আমার ছেলে পর হয়ে গেল।আমার ছেলে আমারে আর ভালোবাসেনা বুঝলেন আপা!

অথচ এই একই মায়ের কাছে বড় আপা যখন এসে বলে -দুলাভাই, আপার মশারি টানানো,বাচ্চাদের কাপড় ধুয়ে দেয়া,মাঝে মাঝে রান্না করে দেয়া -টুকিটাকি কাজ করে এগিয়ে দেয়, তখন মা বলে লক্ষী জামাই পেয়েছি।আমার মেয়ের রাজকপাল,জামাই আমার মেয়ের খুব যত্ন করে!"

এই একি মা-আপার বেলায় এক নিয়ম আর আমার বেলায় আরেক নিয়ম কেন করে?মা খাবার টেবিলেও এই ভিন্নতা দেখাতে কার্পণ্য করেনা !

তুই হয়ত জানিস না আজকাল মায়ের কিছু কথা আমি দীপ্তকে বলেছি।

দীপ্ত কেমন বদলে যাচ্ছে,ও সেই আগের দীপ্ত নেই,দিন দিন ওর সাথে মানসিক দূরত্ব বেড়ে গেছে রে!

আজকাল ওর মাঝেও কত পরিবর্তন দেখতে পায়,একটু কিছু হলেই আমাকে বকে।যেন সব দোষ আমার! ও আমাকে আর আগের মত স্পর্শও করেনা!

জানিস বলতে পারব না ওর সাথে শেষ কবে বৃষ্টিতে ভিজেছি,শেষ কবে চোখে চোখ রেখে ভালোবাসার হাসির বিনিময় করেছি।কিচ্ছু নেই আর, বুঝলি শুধু একটা লোক দেখানো সামাজিকতা ধরে রেখেছি।"

নিশিবোঁ কাঁদুক আমি বাধা দিব না,কান্না পেলে কাঁদতে হয়,কাঁদতে কাঁদতে মানুষ বেচেঁ থাকার মন্ত্র শিখে যায়।এই যে আমি মন্ত্র শিখে গেছি,বেঁচে আছি। কষ্টের উপর হাসির প্রলেপ মাখিয়ে।কারণ নিশিবোঁ'র সাথে যা যা ঘটে তার চেয়ে আরো অনেক বেশি আমার সাথে ঘটে।।নিশিবোঁ কেঁদে কেঁদে বলতে পারে,আর আমি সেইটুকুও পারিনা.এদের মাঝে সবচেয়ে অসহায় তবে কে, সেই হিসেবে যাব না।
নিশিবোঁ র মাথায় হাত রেখে বললাম শুধু,"এই নিশি! অনেক হল, এবার কান্না থামা।আমার কথাগুলো মন দিয়ে শোন,প্রতিটা পরিবারে কোন না কোন সমস্যা লেগেই আছে,বাহির থেকে শুধু হাসিটুকু সবাই দেখায়,কান্না,কষ্ট সবাই চেপে রাখে।তুই মানুষের হাসি দেখে ভাবিস না তুই একাই শুধু কষ্টে আছিস!
শ্বাশুড়ি মানেই খারাপ নয়,হতে পারে উনি এখনো সম্পর্কে উদার হতে পারেন নি। উনি সেই পুরানো যুগেই আছেন-যেখানে তার স্বামী তাকে কখনও স্ত্রী হিসেবে মর্যাদা দেননি, আর ঘরের কাজ,ঘুরতে যাওয়া সে অনেক পরের ব্যাপার! কল্পনাও করতে পারেন না তারা।তারা এসব থেকে বঞ্চিত হয়েছেন বলে ছেলের এসব কর্মকাণ্ড আদিখ্যেতা, মেয়েলিপনা লাগে।এইজন্য ছেলের বউয়ের যত দোষ হয়! দোষ না করলেও দোষ!
আর মেয়ের জামাই মেয়ের কাজে
ছোট খাটো সাহায্য করলেই সে ভীষণ ভালো।মা খুব খুশি ।জামাই মেয়ের অনেক কাজ করে দেয় মানেই হল- এমন জামাই পাওয়া নিতান্তই ভাগ্যের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।কারণ এখানে ওই একটাই কারণ --তার স্বামী তাকে এসব ব্যাপারে কখনোওই সহযোগিতা করে নি। মেয়ের স্বামী মেয়েকে সাহায্য করছে মানে বিশাল বড় ভাগ্যের ব্যাপার,শুধু দৈর্ঘ্য প্রস্থের কপাল নয়।
মায়েরা কেন এমন দ্বিধা বিভক্ত হয়ে যায় জানিনা নিশিবোঁ, তবে তোকে একটা কথা বলি -দীপ্তের মাকে ভালোবাসতে শেখ, সে যত কষ্ট দিক তাকে আঘাত করিস না,তুই বোঝাতে গেলে সে ওলট পালট বুঝবে,কিছুই বোঝাতে যাবিনা।যখনি তোকে কষ্ট দিবে তখনি মনে মনে ভাববি আমার ভালোবাসার জন্মদাত্রী সে,সে না থাকলে দীপ্তকে কখনো'ই পেতাম না।
তোর অনেক রাগ হবে,বিরক্ত লাগবে,এক সময় মনে হবে আমিও দশটা কথা শুনিয়ে দেয়,তবুও তুই তখন ধৈর্য ধরবি কারণ পৃথিবীতে শাশুড়িরা চিরকাল বেঁচে থাকেন না।
আজ তার কর্মের জন্য খারাপ ব্যবহার করলে -জীবনের কোন এক পর্যায়ে গিয়ে তোর খারাপ লাগা শুরু হবে,আফসোস হবে,মনে হবে মায়ের সাথে এমন ব্যবহার না করলেও পারতি!
মনে করিস না আমি খুব সুখে আছি,তবে যেমন আছি তোর কষ্টের কথা শুনে মনে হল আলহামদুলিল্লাহ্‌ আমি অনেক ভালো আছি।
জানিস আমি চেষ্টা করি মায়ের সাথে সর্বোচ্চ ভালো ব্যবহার করতে,আমি প্রতিনিয়ত আমার সাধ্যের সীমা বাড়িয়ে দেয়।আমি জানি একদিন আমার ভালোবাসার কাছে তিনি পরাজিত হবেন।আর সেই দিন আমি হব এমন একজন মা, যে নিজের মেয়ে ও বউমা- উভয়কেই পরম আন্তরিকতার সাথে ভালোবাসার সুতোয় নতুন করে বন্ধন গড়ে তুলবে।
কাঁদিস না আর কখনো, বদলাতে হবে আমাদেরকেই।আর দীপ্ত ভাইয়া এমনি বদলে যাবে যখন তুই বদলে যাবি।"

বাহিরে মসজিদ থেকে আযান ভেসে আসছে।ফজরের নামায আদায় করে দু'জনে বসে থাকে বারান্দায়।ভোর হচ্ছে,মেঘ সরে যাচ্ছে।সূর্যের আলো ঝিকমিক করছে।সে আলোর রঙে হাসছে একজন নিশিবোঁ ও একজন জারিফা।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ৯:৩২

চাঁদগাজী বলেছেন:


গ্রহ উপগ্রহের প্রভাব পড়েছে, মনে হচ্ছে

১২ ই অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ১১:১৩

নীল মনি বলেছেন: হাহাহা, না আমার উপর পড়েনিতো :) আজকাল আশেপাশে এমন হচ্ছে,বাস্তবিক জীবনে আলহামদুলিল্লাহ্‌ চমৎকার একজন মা( শাশুড়ি) পেয়েছি।
আর তিনি পেয়েছেন একজন মেয়ে :)
শুকরিয়া আপনার মতামতের জন্য

২| ০৯ ই জুন, ২০১৭ দুপুর ১২:৫১

তারুন্যের দামামা বলেছেন: বাহ,খুব ভালো লাগার মত|

২৩ শে জুন, ২০১৭ রাত ২:৩৯

নীল মনি বলেছেন: :) tar mane ki lage ni :) hihi shukoriya

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.