নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভীষণ কঠিন পোড়ামাটিকে আবার সেই কাদামাটিতে ফিরিয়ে আনা,ভীষণ কঠিন আঘাত দেয়া শব্দমালা গুলো ফিরিয়ে নেয়া।ভীষণ কঠিন নিজের সম্পর্কে কিছু বলা।যে চোখ দেখিনি সে চোখ কেমন করে বিশ্বাস করবে জানি না।যে কখনো রাখিনি হৃদয়ের উপর হৃদয়;সে কেমন করে বুঝবে আমায়!

নীল মনি

শিশুর মত চোখ দিয়ে দেখি আমার এই বিশ্ব।মানুষ স্বপ্নের কাছে হেরে যায় না, হেরে যায় নিজের প্রত্যাশার কাছে। প্রত্যাশা থাকে আকাশচুম্বী অথচ প্রচেষ্টায় থাকে শুধুই স্বপ্ন।

নীল মনি › বিস্তারিত পোস্টঃ

৩২ পৃষ্ঠা

৩০ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১২:৫৩

৩২ পৃষ্ঠা

হুট করে এমন নাই হয়ে যাবে এটা জানতে পারলে ওকে একটা মাইর দেয়া যেত। এত জোরে মাইর দিতাম যেন মরে যাবার সময়ও আমার কথা মনে পড়ত।
আচ্ছা মানুষ যখন মরে যায় তখন কী প্রিয় কারো কথা মনে আসে নাকি জীবনের ফেলে আসা অতীতকে সে সামনে দেখতে পায় ? মেয়েটাকে সত্যি সত্যি মারতে ইচ্ছে করছে।ভীষণ রকমের সে ইচ্ছে।যে ইচ্ছেকে দমন করতে বেশ কঠিন মনোবলের প্রয়োজন।

এখন রাত।সন্ধ্যা নেমেছে কয়েক ঘন্টা হয়েছে। বাহিরে ঝিরি ঝিরি বাতাস বয়ে চলেছে।এই আমি প্রতিদিন কয়েকবার করে বারান্দায় আসি। বাসার ভেতর সবচেয়ে প্রিয় জায়গা হল আমার এই বারান্দা।এখানে এলে মনটা অদ্ভুত রকম ভালো হয়ে যায়।অনেক বড় বারান্দা। নানান রকম ফুলের গাছে ভরপুর।সারা বছর কোন না কোন ফুল ফুটে থাকবেই।মা'য়ের ভীষণ ফুলগাছ ও ফুল পছন্দ। বাবার কাজ হল নতুন কোন ফুলের সন্ধান পেলেই সেটা মা'য়ের জন্য হাজির করা ।
যেখানে পৃথিবীর অধিকাংশ মেয়ে শাড়ি,গহনার হিসেব নিয়ে ব্যস্ত সেখানে আমার মা ফুল চাষ নিয়ে ব্যস্ত।ভালো লাগে আমার এই সব ভালো লাগে। ফুলগুলোর দিকে তাকালে, ফুলের রঙ, ফুলের সুগন্ধি সব যেন হৃদয়ের দরজা দিয়ে মনের ভেতর প্রবেশ করে। খুব ইচ্ছে করে রুপিয়াকে ডেকে একবার দেখায়।কিন্তু রুপিয়াকে তো দেখানো যাবে না। রূপিয়া কিচ্ছু দেখবে না আর। রুপিয়া মেয়েটার ছবি মনে আসলে সবার প্রথমে আমি ওর চোখের মণি দেখতে পায়। একদম ব্যতিক্রম দুটো চোখ।সবুজ রঙয়ের মণি।কেমন যেন মায়া ভরা -ঠিক বর্ণনা করা কঠিন।সবুজ চোখের এই মেয়েটিকে প্রথম দেখেছিলাম শীতার্ত মানুষের ত্রাণের সাহায্য চাইতে।আমি বসে ছিলাম বটতলার নিচে।বটতলার একটু অদূরে রাস্তা চলে গেছে।রাস্তা দিয়ে হলুদ রঙয়ের জামা পরিহিতা মেয়েটি ধীর পায়ে আমার কাছে আসে। মেয়েটির সাথে সেদিন আরো একটা ছেলে ছিল।খুব সহজভাবে এসে সাহায্য চাইল অথচ আমি বললাম সরি।কেন জানি আমার সাহায্য করতে ইচ্ছে করল না।অথচ এমন মানুষ আমি নয় !
এই আমি তো সবসময় মানুষকে সাহায্য করতেই ভালোবাসি।মেয়েটি আমার কাছ থেকে বিদায় নেয়ার পর পরই ঘটনাটি ঘটল।মেয়েটি রাস্তা পার হওয়ার সময় অন্য দিক থেকে একটা বাইক আসছিল,বেখেয়ালি হয়ে আচমকা মেয়েটি বাইকের সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেল।আমি এগিয়ে গেলাম।মেয়েটা ব্যথা যা পেয়েছে তার চেয়ে লজ্জা আরো বেশি পেয়েছিল।আশেপাশে কয়েকজন মানুষ জড়ো হয়ে গেছে।মেয়েটি উঠে দাড়াতে পারছিল না।আমি দেখলাম ওর পা'য়ের হাঁটুর দিকটায় অনেকখানি কেটে গেছে।হলুদ রঙয়ের সালোয়ার রক্তে অনেকখানি ভিজে গেছে।মেয়েটিকে মেডিকেলে নেয়া হল।কোন এক অজানা টানে আমিও সেদিন গিয়েছিলাম মেয়েটির সাথে। তারপর জানলাম মেয়েটাও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের।এ বছরই ভর্তি হয়েছে। মেয়েটির বাসা শেরেবাংলা নগর।মেয়েটিকে বললাম আমি তোমায় বাসায় দিয়ে আসব।

আমার কন্ঠে হয়ত কিছু একটা ছিল যা শুনে মেয়েটা না করতে পারল না। একটা সি এনজি নিলাম।পকেটে তখন খুব বেশি টাকা নেই কিন্তু তবুও নিলাম।আমরা পাশাপাশি বসলাম।সারা রাস্তায় আমাদের আর কোন কথা হল না।মেয়েটিকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে আমি ফিরতি বাস ধরে বাসায় চলে এলাম।এরপর কী হল!

প্রায় এক মাস পর আবার দেখা হল।ফটোকপির দোকানের সামনে। মেয়েটি এসে বলে আপনাকে সেদিন ধন্যবাদ দেয়া হল না। তাই এখন দিলাম।খেয়াল করলাম মেয়েটার হাসি খুব সুন্দর।ফুলের উপর শিশির বিন্দু থাকলে ফুলকে যেমন পবিত্র দেখায় ঠিক তেমন দেখায়।এরপর সময়টা আমাদের হাতে চলে আসে।কারণে অকারণে দেখা হতে থাকে। আমি বুঝতে পারি একটা সবুজ ভালোলাগা আমার সমস্ত মনকে আচ্ছন্ন করে আছে।রূপিয়া আমাকে পছন্দ করে তা আমি ওর চোখ দেখে বুঝি। কেমন ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে আমার দিকে।সেদিন ক্লাস শেষ করে আমরা দু'জন যখন চা'য়ের দোকানে তখন ও বলল আজ একটা ভালো কাজ করেছি জানেন?

আমি একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম কী ভালো কাজ?
রূপিয়া বলল মেয়েদের কমনরুমে নামাযের ব্যবস্থা আছে।আমি টিউশনির টাকা জমিয়ে একটা কোরআন শরীফ কিনেছি।ওটাতে বাংলায় তরজমা করা।লিখে দিয়েছি প্রতিদিন একটা করে হলেও আয়াত পড়ি।আমি যখন থাকব না তখন এটা সাদক্বায়ে জারিয়া হবে।আমি সেদিন মাথা ঝাঁকালাম। আমি আসলে জানতাম না সাদক্বায়ে জারিয়া কী! এরপর বাসায় এসে মা'য়ের কাছে কিছুটা শুনেছিলাম এমন কিছু কাজ যা দ্বারা মানুষ বা পশু-পাখি উপকৃত হলে মানুষটি মারা গেলেও সেই সওয়াবটি সে পেতে থাকে।এরপর ভেবেছিলাম একটা বই কিনব এ সংক্রান্ত কিন্তু পরবর্তীতে আর কেনা হয়নি।

এরপর একদিন আমরা উভয়ে বুঝলাম খুব স্বল্প সময়ে একে অপরের কাছাকাছি চলে এসেছি।একটা লাল গোলাপ আর একটা চিঠি লিখেছিলাম রূপিয়াকে।
খুব ছোট্ট দুটো লাইন," পৃথিবীর সব কোলাহল থেমে গেলেও তুমি আমার হৃদয়ে সুরের ঝংকার তুলবে আজীবন।তোমাকে আমি চেয়েছি যেন তোমার মত করে তোমাকে কাছে পায়।"

রূপিয়া আমার চিঠিটা পেয়ে আমার ডান হাতের প্রত্যেকটা আঙুলে চিমটি কেটে দিল।মেয়েটির কান্ড দেখে আমি সেদিন অনেক হেসেছিলাম।রূপিয়াকে বলেছিলাম শুধু তোমার চিমটি খাওয়ার জন্য এমন চিঠি আমাকে তো আবার লিখতে হবে।রূপিয়া আমায় বলল তবে কাল আবার একটা দিও প্লিজ।আমি হাসলাম।সত্যি সত্যি আমি রূপিয়ার জন্য চিঠি লিখে ফেললাম।প্রায় ৩২ পৃষ্ঠার এক চিঠি।সে চিঠিতে কত কী না লেখা,কত স্বপ্ন, কত আবেগ,কত হাসি কত কিছুই না।চিঠিটা নিয়ে গিয়েছিলাম রূপিয়াকে দেব বলে অথচ বাসা থেকে বের হবার সময় চিঠিটা ডায়েরির ভাঁজে রেখে চলে এসেছি।ক্যাম্পাসে আসার পর এত মন খারাপ হল। রূপিয়া এলো যখন ওকে বললাম একটা চিঠি লিখেছি তোমার জন্য।কত পৃষ্ঠার চিঠি বলব না কিন্তু পড়তে পড়তে তুমি ঠিক ক্লান্ত হয়ে যাবে।
রূপিয়া বলে আমার চিঠিটা আমাকে দিতে ভুল করো না।আমি রূপিয়াকে বলি চিঠিটা তোমাকে দিব না আমি কিংবা আমার আর দেয়া হবে না।রূপিয়া ভীষণ মন খারাপ করে।বলে আমাকে আমার চিঠি দিয়ে দিবে।না দিলে কিন্তু তুমি মাইর খাবে।আমি রূপিয়াকে বলি তুমিও চিঠিটা না নিলে আমিও তোমাকে মারব।তারপর রূপিয়ার বাড়ি থেকে ফোন আসে।ওর বাবা অসুস্থ। হাসপাতালে ভর্তি। রূপিয়া সেদিনই বাস ধরে চলে যায় গ্রামে। ঠিক সাতদিন পর ফিরে রূপিয়া।কিন্তু সে ফেরাটা ফিরেও না ফেরার মত। চিঠিটা রূপিয়াকে দিই ঠিকই কিন্তু সে আর পড়ে না।কখনো পড়বেও না।কখনো জানবেও না ৩২ পৃষ্ঠার চিঠিতে একটা মানুষ তার ছোট্ট জীবন বন্দি করেছে অথচ সেখানে রূপিয়ার কথা লিখতে পারেনি।লিখতে পারেনি রূপিয়া নামের মেয়েটি যাকে সে ভালোবাসত সেই মেয়েটি রাস্তা পার হতে গিয়ে গাড়ী চাপায় নিহত হয়েছে। রূপিয়া চলে গেছে অনেক দূরে ;অথচ এই মেয়েটি হুট করে চলে গেছে না ফেরার দেশে।মৃত্যুর কোন বয়স নেই।রূপিয়া নেই এই কথাটি ভাবনায় যখন আসে তখন মনে হয় একটিবার জীবিত হয়ে আমার সামনে এসো,ভালোবাসি বলব না। একটা মাইর দিব যেন আবার মরে যাবার সময় আমার মাইরের কথা মনে আসে।রূপিয়া দেখ জানালা দিয়ে হাত বের করে আছি
প্লিজ একটিবার আমার সব কটা আঙুলে চিমটি কেটে দাও।আমি বিশ্বাস করতে শিখি আমি এখনো বেঁচে আছি। আমি কাঁদছি না,আমি কাঁদতে পারি না।কাঁদতে পারে তারা যারা ভালোবাসতে পারে, আমি তো ভালোবাসতে শিখিনি। এত সব ভাবতে ভাবতে পা'য়ের সাথে ধাক্কা লাগল কাপটার। সন্ধ্যায় চা পান করে আর ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়নি।কাপটা ভেঙে গেছে।
আমি তাকিয়ে আছি ভাঙা কাপের দিকে।বোধ করি এরই নাম জীবন।

©রুবাইদা গুলশান

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ৮:২২

রাজীব নুর বলেছেন: একমাস পর ফোটোকপির দোকানে দেখা!!!

৩০ শে অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ৯:১৩

নীল মনি বলেছেন: হুম্মম।কারণ দেখা হয়নি।

২| ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ৯:৩৪

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
অনেক দিন আপনাকে দেখিনা। ব্যস্ত না কি ?

কেমন আছেন ?

কিছু কথা সত্যি দারুন হয়েছে। কোথাও কোথাও শব্দের ব্যবহার যথাযথ হয়নি।

যেমন-২য় প্যারার শেষ লাইন-এমন মানুষ আমি নয়<নই হবে।

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:০৯

নীল মনি বলেছেন: শুকরিয়া মন্তব্যের জন্য। আমি প্রায় লেখাতে ভুল করি :(। অনিচ্ছাকৃত। আলহামদুলিল্লাহ্‌ কিছুটা ভালো আছি।আপনি?

৩| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:৪২

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
শুকরিয়া ভাল আছি।

ভাল থাকুন।

৪| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:১৪

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:



আপা, কেমন আছেেন? ইদানিং ব্লগে কম দেখছি। পোস্টও গত এক মাস থেকে লিখন নাই। হয়তো ব্যস্থতা বেশি। সময় সুযোগে লিখুন; আপনার লেখা মিস করি। ভাল থাকুন। (ধন্যবাদ)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.