![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শিশুর মত চোখ দিয়ে দেখি আমার এই বিশ্ব।মানুষ স্বপ্নের কাছে হেরে যায় না, হেরে যায় নিজের প্রত্যাশার কাছে। প্রত্যাশা থাকে আকাশচুম্বী অথচ প্রচেষ্টায় থাকে শুধুই স্বপ্ন।
প্রিয় সুনীল,
আজ অনেক দিন পর তোমার নাম লিখছি। যেন এক দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর, ভাষাগুলো আমার অন্তরে জমে উঠেছে, তোমার কাছে পৌঁছানোর তাগিদে এক অপরিসীম তৃষ্ণা নিয়ে। তুমি কোথাও আছো, কিন্তু আমার চোখে তুমি ধরা পড়ো না। তুমি যেন মেঘের মধ্যে হারিয়ে যাওয়া এক রূপকথার রাজপুত্তুর-যে কোনো দিন অদৃশ্য হয়ে যায়, আবার ফিরে আসে কেবল স্বপ্নে। কিন্তু আমি জানি, তুমি নেই তবুও তোমার অনুপস্থিতির মধ্যে, এক অন্যরকম উপস্থিতি খুঁজে পাই। তুমি কোথাও আছো, শূন্যতার মাঝে। তোমার ছায়া, তোমার স্মৃতি, তা যেন এক নিঃশব্দ বাতাসে ঢেউ তুলছে।
তবে হ্যাঁ! তুমি নেই এটা তো আমি জানি, কিন্তু এমন একটা অনুভূতি হয়, যেন তুমি ঠিক এখানে, একেবারে আমার কাছে।তোমার মিষ্টি হাসি, তোমার নিঃশব্দ নীরবতা, সব কিছু যেন এক অমোঘ আঁকিবুকি হয়ে ভেসে থাকে মনের মাঝে।
তুমি তো জানো, সুনীল, আমি কখনো ভেঙে পড়তে পারি না। যখন তুমি চলে গেছো, আমি কিছু না বলেই নিজেকে নতুন করে গড়ে তুলেছি, যেন কিছুও পরিবর্তন হয়নি। কিন্তু, এই শূন্যতার মাঝে, তোমার চলে যাওয়া আমাকে কখনো কাঁদায়নি। বরং সে শূন্যতা এক অন্যরকম অনুভূতিতে পরিণত করেছে।
আজ ভোরে, ঘুম ভাঙার ঠিক আগে, আমি তোমাকে দেখলাম স্বপ্নে। তুমি আর আমি পাশাপাশি হাঁটছি, যেন পুরোনো এক যুগের কেউ, যেন আমাদের মধ্যে কোনো সময়ের সীমা নেই। শুধু চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে ছিলাম, যেন কোন এক রহস্যের সমাধান খুঁজছিলাম।
তোমার গায়ে পুরোনো চাদর গেরুয়া রঙের ,মুখে ক্লান্তির ছাপ তবে সেই ক্লান্তি যেন এক ধরনের রহস্যময় সৌন্দর্যে পূর্ণ ছিল। খোঁচানো দাড়ি, যা হয়তো কামাতে ভুলে গেছো, তবু সেই দাড়ি যেন তোমাকে এক অদ্ভুতভাবে পূর্ণ করেছিল। আমরা দাঁড়িয়ে ছিলাম সেই পুরোনো টং দোকানের সামনে, তুমি চা খাচ্ছিলে, ধীরে ধীরে, আর চায়ের কাপ ঠোঁটে তুলতে তুলতে তুমি আমার দিকে তাকালে নির্নিমেষ,শূন্য এক দৃষ্টিতে। দৃষ্টির যে প্রখরতা তা এখনো চোখে আটকে আছে। কিছুতেই মন থেকে সরে না। তোমার বুঝি অসুখ করল! কী হয়েছে তোমার? এই ভেবে ভেবে ঘুম আমার উড়ে গেছে। আমি এক দৃষ্টিতে তোমার চোখে চোখ পেতে রেখেছিলাম। কেন যেন কিছু বলার ইচ্ছে হয়নি। তাকিয়ে ছিলাম শুধু, যেন তোমার চোখের ভেতর থেকে যদি দু:খগাথা বের করে আনতে পারি শিশিরে ভরা পাতা থেকে জল তোলা যায়। কিন্তু কেন জানি, তাও কি সম্ভব? আমাদের মধ্যে যে এক অদৃশ্য শূন্যতা ছিল, তা কখনো ধরা দেয়নি। সে শূন্যতা ছিল এক অচিন্ত্যনীয় যন্ত্রণায় পরিণত, যা হৃদয়ে দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল, আর আমাকে তুমি থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিল।
শোন , মাঝে মাঝে মনে হয় আমরা দুটি নক্ষত্র, আলাদা কক্ষপথে ঘোরাফেরা করেও বারবার একই শূন্যতায় এসে মিশে যাই।
যাইহোক , এটা ওটা ভাবতেই কখন যে ঘুম আসে আর ঘুম ভাঙে। কী বলব আর! তুমি নেই। কিন্তু তোমার চায়ের কাপের সেই নিঃশব্দতা, তোমার চোখে জমে থাকা প্রশ্ন আজকের সকালেও যেন আমাকে শূন্যতার মধ্যে রেখে দিয়েছে। তুমি চলে গেছো, সুনীল ,তবে তোমার ছায়া এখনও আমার সাথে, স্মৃতি, স্পর্শ সব কিছুতেই রয়ে গেছে। তোমার চলে যাওয়ার পরেও, তুমি যেন অমর হয়ে গেছো, এক রাত্রির চাঁদের মতো, যা আলো দেয়, কিন্তু স্পর্শ করতে পারে না। তুমি কখনো চলে যাবে না, সুনীল, তুমি আমার ভেতরে এক অদৃশ্যভাবে স্থির হয়ে আছ। গভীরতায় যে রয় তাকে আর আলাদা করার কী ইবা আছে!
আমি কখনো তোমার রাজ্য বা মুকুট চাইনি। শুধু এক সন্ধ্যার আলোতে, এক কাপ চা,আর তোমার চোখে চোখ রেখে সেই মায়াময় নিশ্চুপ অনুভূতি এটাই চেয়েছিলাম। তুমি, তুমি যেন আমার মাঝে,আমার পৃথিবীকে এক নতুনভাবে সাজাব কতটা চেয়েছিলাম আমি?এটা কি খুব বেশি চাওয়া ছিল, সুনীল?
আজ তোমাকে লিখলাম, কারণ আর বলার কেউ নেই।
তুমি জানো, এতদিন পরেও তুমি আমার ভিতরের সবচেয়ে চেনা মানুষ, আর সবচেয়ে অচেনা শূন্যতাও। আমাকে সব লিখতে হবে। আমার অনেক কিছু তোমাকে বলা যে বাকী। টুস করে যদি চলে যাই তুমি তো দেখতেও আসবে না। তাই তো এতো কথা লিখব ঠিক করেছি যেন আমার অনুপস্থিতি তোমাকে এক মুহূর্তের জন্য শুন্যতা বোধ না করায়। প্রতিনিয়ত তুমি খুঁজে পাবে আমার লেখার বিন্দু বিন্দু শব্দের মায়ায়। আমি তোমার কিছু নাই বা হলাম তবুও মায়া হয়ে হৃদয়ে রয়ে গেলাম। তুমি সরাতে চাইলেও সরাতে পারবে না কোনদিন। অবশ্য তুমিও বা সরাবে কেন! মানুষ ভালোবাসি বলে মুখে ফেনা তোলে সাপের মতন ,আমি তো সাপ নই আর তুমিও নও তাই তো আমাদের কোনদিন বলা হলো না। না হোক তবুও আমাদের মত এমন মজবুত ঘর বল কজনার আছে! সবার ঘর ইট পাথরের বলতে পার মিথ্যে ভালোবাসার জালে জড়ানো মাকড়সার বাড়ি। আমাদের বাড়ি ভেবে বল তো কীসের বাড়ি। জানো সুনীল আমি তোমার সাথে কত যে পথে পথে হেঁটেছি। এই হেঁটে চলার পথ যেন গন্তব্যহীন। পথের শেষে তোমাকে হারাতে চাই না। কিছুই চাই না। তবে আমি কী চাই? আমি চাই আমার খুব অসুখে তুমি দূর হতে হাতটা চেপে বসে রও অনন্তকাল!
তুমি রয়ে গেছো আমার চায়ের কাপে,
প্রতিদিন সকালে, সেই এক কাপ চা হাতে নিই—তোমার কথা মনে পড়ে। জানো, আজকাল চায়ের কাপে আর চা দেখি না, দেখি তোমার মুখ। তুমি নেই তা আমি জানি; তবু কে যেন মনের কোণে বলে, তুমি এখানেই আছো, এই নিরালায়, এই নীরবতায়।আমি চিৎকার করে কাঁদতে চাই,
কিন্তু পারি না। বুকের ভিতর জমে থাকে কান্না, চিৎকার। সে কান্না কেউ শুনতে পায় না তুমি ছাড়া। জানি না কেন, সব কিছু বলার আগেই গিলে ফেলি। সেই না-বলা কথাগুলোই তোমাকে নিবেদন করি, চুপিচুপি।তোমাকে আমি হৃদয়ের এক গোপন কোণে লুকিয়ে রেখেছি,
তুমি জানো না, অথচ আছো। বাইরে থেকে কেউ বুঝতে পারে না কিন্তু আমি জানি, তুমি এখনো আমার মধ্যে আছো। যেমন কোন এক পুরোনো দিনের চিঠি, বারবার নাড়াচাড়া করি, তবু কাউকে বলি না। আচ্ছা যাই -আবার
কথা হবে কেমন।
ইতি, তোমারই নীলিমা
০৪ ঠা মে, ২০২৫ ভোর ৬:৩১
নীল মনি বলেছেন: আলহামদুলিল্লাহ মনে রাখার জন্য অপরিমেয় কৃতজ্ঞতা । এত চমৎকার মন্তব্য কেবল এখানেই পাওয়া যায় তাই বলা যেতে পারে আমি তাঁদের কাছেই ফিরলাম যারা আমাই যত্ন নিতে জানে। ভীষণ সুন্দর মন্তব্যে করেছেন। আমি ভাবছিলাম লেখাটা বুঝি খুব পচা হল। চিঠি লেখার মাঝে যে আন্তরিকতা পাই আর কিছুতে তা লাগে না। তাই তো ঘুরেফিরে কেবল চিঠি লিখি। সংসার,সন্তান ,চাকরি ,দায়িত্ব সব মিলে ব্যস্ততার পাহাড়। তবুও মনে হলো আমি আবার আমার আমি হয়ে লেখা শুরু করি। ফী আমানিল্লাহ্ মহান আল্লাহ আপনাকে ও আপনার পরিবারকে নিরাপত্তা দান করুন আখেরাতে ও দুনিয়ায় । শুকরিয়া
২| ০৪ ঠা মে, ২০২৫ সকাল ১০:০০
রাজীব নুর বলেছেন: সহজ সরল ভাষায় সুন্দর লিখেছেন।
দারুন আবেগময় লেখা।
০৪ ঠা মে, ২০২৫ রাত ৯:৩৮
নীল মনি বলেছেন: শুকরিয়া শুকরিয়া।এ সময়ে মানুষের গতিবেগ এতো বেশি যে আবেগ হারিয়ে ফেলছে ।
©somewhere in net ltd.
১|
০৪ ঠা মে, ২০২৫ ভোর ৫:৫৩
নতুন নকিব বলেছেন:
হারিয়ে যাওয়া প্রেমিক সুনীলকে উদ্দেশ করে নীলিমার এক গভীর আবেগময় চিঠি। স্মৃতি, শূন্যতা আর না-বলা অনুভূতির মিশেলে উঠে এসেছে, কীভাবে সুনীলের অনুপস্থিতিও তার জীবনে এক অদৃশ্য উপস্থিতি হয়ে রয়ে গেছে। ভালোবাসা, বেদনা, অভিমান আর অমলিন মায়ার এই লেখাটি এক নিঃশব্দ ভালোবাসার জার্নাল।
অনেক দিন পরে আপনার লেখা এলো। হয়তো সংসারের ব্যস্ততায় ছিলেন। অনেক ভালো থাকবেন, প্রত্যাশা।