![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ব্লগীয় সমরে গোঁয়ারতুমির ছোরা হাতে নিয়ে ঘোরার তুলনায় মূর্খতাকে পুষে রাখার অবচেতন ইচ্ছার বিরুদ্ধে নাঙ্গা তলোয়ার হাতে দাঁড়ানোর জন্য অনেক বেশি সচেতন ইচ্ছার প্রয়োজন।
“বিলিয়ন মানুষের মতামতকে অশ্রদ্ধা করা”, “অনুভুতিতে আঘাত”, “বিশ্বাসে আঘাত” ইত্যাকার বিষয়ে অনেকে সরব। হার্ডকোর আরবসাম্রাজ্যবাদী ছাড়াও এই অনুভূতির জ্বরে আক্রান্ত এমন অনেকে, যাদের একদিকে “প্রগতিশীল”, “মুক্তিযুদ্ধে পক্ষশক্তি” হওয়ার খায়েশ আছে, অন্যদিকে “পাছে কেউ নাস্তিক বলে” এই ভয়ে নিজেদের ইসলামিত্ব প্রমাণের একটা তাড়না আছে। তাছাড়া মুক্তিযুদ্ধে পক্ষে মানে “হিন্দুদের দালাল” এই তকমা থেকে বাঁচার জন্যও একটা প্রচেষ্টা লক্ষণীয়। এই যে প্রমাণ করার তাড়না তা শেষ পর্যন্ত জেনে বুঝে ধর্ম পালনের বদলে ধর্মের ইজ্জত বাঁচাতে সরব হওয়াতে পর্যবসিত হয়; জানাতে হয় যে ধর্মের অবমাননায় তাদের অনুভূতি আঘাত প্রাপ্ত হয়েছে।
তারা সপ্তাহে ৩৫ ওয়াক্ত নামাজের জায়গায় ৩৪ ওয়াক্ত নামাজ না পড়ে ভাবেনা যে তারা ইসলামের পাঁচ মূল ভিত্তির একটিতে আঘাত করেছে কীনা। তারা কোরান না পড়ে ভাবেনা যে তারা আল্লাহর আদেশ “ইকরা” কে আঘাত করেছে কীনা। তারা ছবি তুলে ভাবেনা তারা নবীর হাদিসকে আঘাত করেছে কীনা।
তবু অনুভূতিতে আঘাত নিয়ে বাজার গরম, কাঠগড়ায় নির্ধার্মিকরা। দেখে-শুনে-পড়ে-মনে হয় “অনুভূতিতে আঘাত” নামের আয়াত/শ্লোক/ভার্সটা নির্ধার্মিকদেরই নাজিল করা জিনিস। অথচ-
- ইহুদি ধর্মের মুসা নবী তৎকালীন সমাজের মূর্তিপূজারীদের মূর্তিপূজার অসারতা বোঝাতে তাদের মতামতের প্রতি অশ্রদ্ধা জানিয়ে মূর্তি ভেঙেছিলেন। তিনি একই সাথে ইসলামের নবী। মুসা নবীর কাজে কী মূর্তিপূজারীদের অনুভূতিতে আঘাত লাগেনি!
- সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ মূর্তিপূজারীদের বিরুদ্ধে একা নবী অশ্রদ্ধা থেকেই একেশ্বরবাদ প্রচার করা শুরু করেছিলেন। পরে মূর্তি ভেঙে তাদের মতামতকে অশ্রদ্ধাও করেছিলেন। তিনি যা সত্য মনে করেছেন তা তিনি কোন অশ্রদ্ধা/অবমাননার তোয়াক্কা না করেই প্রতিষ্ঠা করেছেন।
- ইসলামিক সত্য “যিশু মারা যানননি, তাঁকে তুলে নেয়া হয়েছে” খৃষ্টানদের বিশ্বাস-অনুভূতিতে আঘাত।
- ইসলামিক সত্য “ইহুদিরা অভিশপ্ত” ইহুদিদের বিশ্বাস-অনুভূতিতে আঘাত।
- ইসলামিক সত্য “খৃষ্টানরা পথভ্রষ্ট” খৃষ্টানদের বিশ্বাস-অনুভূতিতে আঘাত।
ধর্ম বিষয়ে সমালোচনায় যারা অনুভূতিতে আঘাত পায় তাদের নির্ধার্মিকদের দোষারোপ করার আগে ভাবা উচিত যে তাদের ধর্ম প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে ধর্মপুরুষরা সমাজের মতামতকে শ্রদ্ধা করেছিলেন কী না।
এছাড়াও ইসলামের ভেতরও বহু গ্রুপ একে অপরকে অশ্রদ্ধা করে, অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে চলেছে-
- কাদীয়ানীদের অমুসলিম আখ্যা দিয়ে মসজিদে “কাদীয়ানী উপাসনালয়” বোর্ড টাঙিয়ে দেয়া হয়েছিলো, তাদের অনুভূতিতে আঘাত দিয়েই।
- আবার চরমোনাই পীর গ্রুপ ও দেওয়ানবাগী পীর গ্রুপ একে অপরের মত কে অশ্রদ্ধা করে। দেওয়ানবাগী চোরমান ঊএর সাবেক পীর আমিনীকে কামিনী বলে অশ্রদ্ধা করেছে।
- সুন্নীরা শিয়াদের মত কে অশ্রদ্ধা করে।
- আহলে কুরান গ্রুপকে অশ্রদ্ধা করে আহলে হাদিস।
- মাজারবাদীরা অশ্রদ্ধা করে সালাফিদের। সালাফিরা মাজারবাদীদের শিরককারী হিসেবে দেখে। সালাফিরা যে শুধু যুক্তি তর্কে মাজারবাদীদের অনুভূতিতে আঘাত করে তা নয়, তারা বহু মাজার গুড়িয়েও দিয়েছে।
- মডারেট মূর্খরা আলেমদের অশ্রদ্ধা করে “গোঁড়া” ভেবে। আলেম ওলামারা মডারেট মূর্খদের অশ্রদ্ধা করে বেদাতী হিসেবে।
কে কেন কবে কার অনুভূতির তোয়াক্কা করেছে নিজেদের সত্য প্রচারে? তারা নিজেরা যেটাকে সত্য মনে করেছে তাতে কী অন্যদের অনুভূতিতে আঘাতের ভাবনায় তারা চুপ করে গিয়েছে? অশ্রদ্ধা জানানো তে কে কবে কার থেকে কতটা পিছিয়ে ছিলো?
মক্কার কাফেরদের ধর্মমতের বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করায় নবীকে যেমন হেনস্তা হতে হয়েছে আজ ঠিক সেরকমই প্রতিষ্ঠিত ধর্মের বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করায় হেনস্তা হতে হচ্ছে অনেককে। সত্য কী সেটার চেয়েও বড় হয়ে দেখা দিয়েছে গায়ের জোর।
©somewhere in net ltd.
১|
২৬ শে জুন, ২০১৪ রাত ৮:৫২
মহম্মদ মহসীন বলেছেন: মক্কার কাফেরদের ধর্মমতের বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করায় নবীকে যেমন হেনস্তা হতে হয়েছে আজ ঠিক সেরকমই প্রতিষ্ঠিত ধর্মের বিরুদ্ধে। কিক মত প্রকাশ করায় হেনস্তা হতে হচ্ছে অনেককে। সত্য কী সেটার চেয়েও বড় হয়ে দেখা দিয়েছে গায়ের জোর ।
হেনস্থাই শুধু নয় এই সব বদ্ধ চিন্তাজীবীদের হাতে প্রাণ দিতে হচ্ছে
থাবা বাবার মতো মুক্তমনাদের । কি বিভৎস এদের মানসিকতা। এরা চিরকাল অন্ধকুপেই থাকতে চায় ,যুক্তি এদের মস্তিস্কে প্রবেশ করেনা।