নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নেগেটিভিটিতে বিশ্বাস করি না; তাই এমন নাম বেছে নিলাম, যা বাস্তব নয়!
এখানে এলাম যেভাবেঃ পর্ব ০১
বাস এসে যেখানে থামলো, জায়গাটার নাম ফলতিতা। ফল কেন তিতা হলো, আর সেটা কেনই বা জায়গার নাম হলো সেটা হিসাব করবার আগেই আব্বার তাড়া খেয়ে আমরা দ্রুত নামলাম, চেক করে দেখলাম যে সব ব্যাগ ঠিক আছে কি না। আব্বা নিয়ে ঢোকালেন একটা রেষ্টুরেন্টে। বাঁশের মাচার উপর রেষ্টুরেন্ট! নিচে তাকাতেই গলা শুকিয়ে যাবার উপক্রম। মাটি থেকে অন্তত ১০/১২ ফিট উঁচুতে এই মাচা। আর তার পরেই অনেক নিচুতে খাল। এখানেই আমার সাথে পরিচয় ঘটে দানাদার নামের একটা মিষ্টির। ছোট্ট একটা মিষ্টি, রসালো, তার উপরে চিনির দানা ও গুড়া। এই জিনিষ মুখে পুরে শান্তিতে চোখ বন্ধ হয়ে যাবার কথা যে কারোই।
ফলতিতার এই ঘাট থেকে আমাদের নৌকায় উঠতে হবে। এই নৌকাগুলিতে ছাউনি দেওয়া থাকে। বয়সে যারা বড় তাদের ভিতরে সোজা হয়ে বসতে একটু কষ্টই হয়। এক নৌকায় ৮-১০জন উঠে। এই নৌকা গুলির একটা বিশেষ নাম আছে, টাবুরে নৌকা। সাধারন নৌকার উপরেই ছই (রোলের মত গোল করে ছাদ) দিয়ে দিলেই সেটা টাবুরে নৌকা; মানুষ আনা নেওয়ার কাজে ব্যবহার হয়।
টানা ৩-৪ ঘন্টা নৌকায় থাকতে হবে জেনেই ফলতিতা নামের সাফল্য বুঝতে পারলাম! কিন্তু খাল ছেড়ে যখন নৌকা বিলে ঢুকলো, আমার মনে হতে থাকলো এখানে ৩-৪ ঘন্টা কাটানো খুবই কম; অন্ততকাল এখানে কাটাতে পারলেই যেন শান্তি। বাতাসের যে গন্ধ থাকে, সেদিন প্রথম জানলাম। সেদিন প্রথম জানলাম যে পড়ন্ত বিকেলে সূর্যে যেমন আগুন ধরে যায়, তেমনি সবুজের সমারোহে চোঁখ ধাধিয়ে যায়। সামনে যদ্দুর চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ আর সবুজ।
আরও একটু এগিয়ে যেতেই খেয়াল করলাম আশেপাশে তেমন কোন শব্দ নেই। নৌকার ভিতর আমাদের কথাবার্তাও তখন বিরক্তির লাগছিলো। নৌকার বৈঠার সাথে পানির খেল-তামাশার ছলাৎ ছলাৎ শব্দ, সবুজের মধ্যে দিয়ে চলে যাওয়া আর পাখির কিচির মিচির মিলিয়ে এমন একটা পরিবেশ তৈরী হলো যা আমি সারাজীবন চেষ্টা করলেও লিখে প্রকাশ করতে পারবো না। আব্বা বললেন পানির দিকে লক্ষ্য করে তাকাতে।
পানির ভিতরে তাকিয়ে ধাক্কা খেলাম, নদী/বিলের পানি এত স্বচ্ছ হয়? ৫-৭ ফিট পানির নিচের অদ্ভুত এক জগৎ আমার সামনে। এই জগৎ যে পৃথীবিতে আছে তা জানা ছিলো না। শত শত লতাপাতার মত কি কি যেন। টলমল পানি, তার উপর সূর্যের আলোর চিক-চিক আর নিচে অদ্ভুত অচেনা এক জগৎ।
হঠাৎই নৌকার নিচ থেকে একটা সাপ চলে গেলো, লালটুকটুকে! জানতে পারলাম এটাকে 'পান সাপ' বলা হয় এখানে। পানের পিকের মত লাল বলে। জীবনে প্রথমবারের মত সাপ দেখে না চমকে থাকলাম, বরং বলা চলে মনে মনে দোয়া করতে থাকলাম এমন সাপ যেন আরও দেখা যায়। সে যাত্রায় অবশ্য পান সাপ আর দেখি নি; তবে অন্য কয়েক রকমের সাপ দেখেছিলাম, এমনকি কেউটে (মাঝির কথা অনুযায়ী) দেখেও কেমন যেন আনন্দ লেগেছিলো।
নৌকা ধীরে ধীরে এগিয়ে চলেছে চেচড় বনের মধ্যে দিয়ে। এই চেচড় জিনিষটা প্রথম দেখা, আমরা যেমন স্ট্র দিয়ে ড্রিংকস খাই, তেমন দেখতে, তবে অনেক লম্বা। মধ্যে খানে বাঁশে যেমন জয়েন্ট থাকে, তেমন জয়েন্ট, ছোট ছোট; তবে বাঁশে যেমন বাইরে থেকে দেখা যায়, তেমনটা চেচড়ে দেখা যায় না। এটি দিয়ে এ অঞ্চলের মানুষ পাটি বুনে, সুন্দর সুন্দর ঝাপি এবং বক্স বানায়। এমনকি ঘরের চাল দেওয়ার জন্যও এটিকে শুকিয়ে ব্যবহার করা হয়।
নৌকার পাটাতনে শুয়ে ছইয়ের ফাঁকার মধ্যে দিয়ে বাইরে আঙ্গুল চালান করে দিলাম; ইচ্ছা আঙ্গুল দিয়ে চেচড় গুলিকে ধরবো। মাঝি মানা করলেন। মসৃণ সুদর্শন এই চেচড় গুলি বেশ মারাত্বক, একই জায়গায় বার বার লাগতে থাকলে নাকি হাত খুব বাজে ভাবে কেটে যেতে পারে।
মাঝি বৈঠা ছেড়ে চইড় ধরেছেন। চইড় হচ্ছে বাঁশ, লম্বা বাঁশ; এটা দিয়ে নৌকাকে একপ্রকার ঠেলেই নিয়ে যাওয়া হয়। চেচড় বনের মধ্যে দিয়ে বৈঠা দিয়ে নৌকা চালানো আর নিজেকে খুঁটির সাথে বেধে রেখে দৌড়ানো একই কথা। প্রতিবার চইড় পানিতে ফেললে অদ্ভুত একটা শব্দ হয়, নৌকা একটা ধাক্কা খেয়ে এগিয়ে চলে, দুলে উঠে। মৃদু বাতাস, চইড়ের ঝপাত করে পড়ার শব্দ, নৌকার সাথে পানির মিলনের শব্দ আর চেচড়ের সাথে নৌকার যুদ্ধের শব্দ মিলিয়ে এমন একটা আবহ হলো যেন মনে হলো আমি হারিয়ে গেছি শব্দের দেশে।
হঠাৎই কানে এলো চিঁ চিঁ শব্দ। ছই থেকে মাথা বের করে আকাশে চিল দেখতে পেলাম, চিল কিভাবে পানির মধ্যে ঝাপিয়ে পড়ে মাছ ধরে তাও দেখলাম। এর মধ্যে কানে এলো মানুষের কথাবার্তার শব্দ। আমরা তখন একটি বাজারের কাছে। বিটিভির মাটিও মানুষের উপস্থাপক শাইখ সিরাজের একটি অনুষ্ঠানে এই বাজারটি দেখেছি; এ অঞ্চলের মানুষের এখন দিন রাত কেটে যায় চিংড়ি মাছ চাষের ব্যস্ততায়। শামুকের পঁচা গন্ধ এসে নাকে ঢুকলো।
বাজার পেরুতেই আবার বিল এই বিলে শাপলা দেখে প্রথম বুঝলাম চোয়াল ঝুলে পড়া কাকে বলে। শত শত শাপলার সৌন্দর্য্যের কথা জানতে চান? সেটা না হয় পরের পর্বে বলি? নাকি?
যেখানে যাচ্ছি (৩য় পর্ব)
২৭ শে নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:২৫
ঋণাত্মক শূণ্য বলেছেন:
২| ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:২৪
দিকশূন্যপুরের অভিযাত্রী বলেছেন: পড়ার সময় মনে হচ্ছিল যেনো আমিও ফলতিতা জায়গাটায় চলে গিয়েছি!
২৭ শে নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:২৬
ঋণাত্মক শূণ্য বলেছেন:
৩| ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:৩২
জুন বলেছেন: আপনার বর্ননায় মুগ্ধ। মনে হচ্ছিল আমিও যেন আপনাদের সাথে আছি। অনেক আগে ছোটবেলায় একদিন বাড়ির সবাই এমন ছইআলা নৌকায় বাবার ফুপুর বাড়ি গিয়েছিলাম আড়িয়াল বিল পারি দিয়ে। সেই সৌন্দর্যময় দিনটি চোখের সামনে ভেসে উঠলো সেই সাথে।
সাথে আছি। শুভকামনা।
+
২৭ শে নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:২৮
ঋণাত্মক শূণ্য বলেছেন: ধন্যবাদ।
আপনি কি ঢাকা-মাওয়া রোডের কাছের আড়িয়াল বিলের কথা বলছেন?
৪| ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:৫০
ওমেরা বলেছেন: ব্রিলিয়ান্ট !!
২৭ শে নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:২৮
ঋণাত্মক শূণ্য বলেছেন:
৫| ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:০৮
রাজীব নুর বলেছেন: ছবি ছাড়া এরকম পোষ্ট ঠিক জমে না।
২৭ শে নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:২৯
ঋণাত্মক শূণ্য বলেছেন: কথা সত্য; তবে সমস্যা হচ্ছে ১৯৯৬ সালে আমার কোন ক্যামেরা ছিলো না!
৬| ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:৩৯
মনিরা সুলতানা বলেছেন: প্রশান্তিময় বর্ণনা !
ভালোলাগা পোস্টে।
২৭ শে নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:২৬
ঋণাত্মক শূণ্য বলেছেন:
৭| ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:৫৮
ইসমত বলেছেন: ফলতিতা নামটা টেনে আনলো; ১ম পর্ব সেরে এখানে আবার আসলাম। ভৈরব নদ, রূপসা নদী বড্ড আপন! খুলনা ছেড়ে রূপসা পেরিয়েই গ্রামের বাড়ি যেতে হয় আমাকে। আপনার বর্ণনা অসাধারণ, পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিল আমার সামনে দিয়েই এইতো চলে গেল পান সাপ, শাপলা বিলের সৌন্দর্য্য দেখার প্রতীক্ষায় আছি।
২৭ শে নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:২৭
ঋণাত্মক শূণ্য বলেছেন:
৮| ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৪:০৫
জুন বলেছেন:
জী আপনার ধারনা সত্য। আমি সেই আড়িয়াল বিলের কথাই বলেছি
২৭ শে নভেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৪:৪৩
ঋণাত্মক শূণ্য বলেছেন: আহা.... হৈমন্তীর কথা মনে করায় দিলেন
৯| ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:২৩
করুণাধারা বলেছেন: শব্দ দিয়ে এমন ছবি আঁকেন কি করে!!! একেবারে আপনার পরিবার, মানুষে ঠাসা বাস, শাপলা ভরা বিল, সব কিছু দেখতে পেলাম, আর মুগ্ধ হলাম। খুবই চমৎকার লিখেছেন। লিখতে থাকুন, অপেক্ষায় থাকলাম পরের পর্ব পড়ার জন্য।
২৭ শে নভেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৫৭
ঋণাত্মক শূণ্য বলেছেন: ধইন্যবাদ। আমি আসলে লিখতে পারি না ভালো করে। যেমনটা পাঠক পড়ছে, তেমনটা আসলে তাদের মন - মনের সৃষ্টি শক্তি
১০| ২৮ শে নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ১০:৫৩
ওসেল মাহমুদ বলেছেন: লেখা ভালো লাগছে ! সাথে কিছু ছবি দিলে আরো প্রাণবন্ত হবে !
২৮ শে নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:০৬
ঋণাত্মক শূণ্য বলেছেন: ২২ বছর আগের ঘটনা। তার সাথে ছবি কই পাবো? আর গুগল থেকে ডাউনলোড করা ছবি দিতে লজ্জা লাগে।
আরও একটা কারণে দেই না; কারণ আমি যা দেখেছি/মনে আছে তা তো কোন ছবিতেই পাবো না। বরং পাঠক বিভ্রান্ত হবে। ছবি না দিলেই বরং পাঠক নিজের মনের মত করে কল্পনা করে নিতে পারবে।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
১১| ২৮ শে নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:২৯
হাবিব বলেছেন: আরে ২য় পর্ব কখন এলো টেরই পায়নি......... সেই কবে থেকে অপেক্ষা করছি
২৮ শে নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:১৭
ঋণাত্মক শূণ্য বলেছেন: আর একটু অপেক্ষা করলে তো মনে হয় ৩য় পর্বও পড়ে ফেলতে পারতেন
১২| ২৮ শে নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:৪৫
নীল আকাশ বলেছেন: আপনার বর্ননায় আমি সত্যই মুগ্ধ। মনে হচ্ছিল আমিও যেন আপনাদের সাথে ভ্রমনে আছি। দারুন লিখেছেন। সিরিজ চলুক, এর সাথেই আছি।
শুভ কামনা রইল!
২৮ শে নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:১৯
ঋণাত্মক শূণ্য বলেছেন: জেনে ভালো লাগলো
১৩| ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:১৮
মোস্তফা সোহেল বলেছেন: ভালই লিখেছেন।
২৯ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:৩২
ঋণাত্মক শূণ্য বলেছেন: ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১| ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:১৫
সম্রাট ইজ বেস্ট বলেছেন: চেচড় আর চইড় দুটো নতুন শব্দের সাথে পরিচয় হল। কাহিনী সাবলীলভাবে এগোচ্ছে। চলুক।