নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নেগেটিভিটিতে বিশ্বাস করি না; তাই এমন নাম বেছে নিলাম, যা বাস্তব নয়!
লেখাপড়া নিয়ে সাধারণ মানুষের থেকে আমার ভিউটা বেশ ভিন্ন। আমি আমার সন্তানদের উপরে লেখা পড়া নিয়ে হুদাই চাপ তৈরী করতে নারাজ।
২০২২ এ আমার ছেলেকে স্কুলে নিয়ে গেলাম। তাকে কেজিতে ভর্তি নিবে না। বলে ও এখনও সেন্টেন্স লিখতে পারে না! কেজিতে যেখানে অ-আ-ক-খ, A-B-C-D পড়তে পারার কথা না, সেখানে তার সেন্টেন্স লিখতে না পারার বিষয়ে বলায় বেজায় চটেছিলাম। জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে অ-আ-ক-খ, A-B-C-D কে পড়াবে? তাদের মুখের হাসি যদি দেখতেন, উনারা বললেন যে আমার কাছে টিউশনি করাতে পারেন, আগামী বছর নিশ্চিত ভর্তি হতে পারবে।
এমনিতেই দেশ-বিদেশ করে আমার ছেলে বয়সের তুলনায় এক ক্লাস পিছিয়ে পড়েছে, তার উপর আরও এক ক্লাস পিছিয়ে পড়া ভালো লাগেনি। তাই প্রিন্সিপালের সাথে দেখা করে এক প্রকার জোর করেই স্কুলে ভর্তি করা হলো।
এক টিচার মাথা নাড়িয়ে বললেন, কাজটা ঠিক হলো না। বিল্ডিং এর ভিত যদি ঠিক না থাকে তাহলে বিল্ডিং দাড়ায় না। আমি বললাম অ-আ-ক-খ, A-B-C-D এর ভিত ভালো না থাকলেও আশাকরি আমার ছেলে লেখাপড়া করতে পারবে।
এরপর প্রায় ৩মাস টিচারেরা আমার পিছে লেগে পড়ে থাকলো। আমি টিচার-প্যারেন্ট মিটিং এ যাই না ইচ্ছা করে। তারা এ নিয়ে নানান অভিযোগ করে। শেষে একবার গেলাম। টিচার কিছু বলার আগে জিজ্ঞাসা করলাম আমার ছেলের প্রোগ্রেস কি? তিনি অবাক, তিনি নাকি আমাকে ডেকেছেন প্রোগ্রেস জানবেন বলে! আমি বললাম, ও স্কুলে আসে পড়ালেখা শিখতে, সো প্রোগ্রেসতো আপনাদের জানার কথা।
উনি নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন উনি কোন প্রোগ্রেস দেখেন না! আমি সুন্দর করে হেসে দিয়ে বললাম, চাকরী ছেড়ে দেন! বাচ্চাদের পড়ানো আপনার কাজ না। উনি খুব সম্ভবত এই রকম উত্তর কখনও শুনেন নাই। ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বসে থাকলেন, পাশের টেবিল থেকে আর এক টিচারও আমার দিকে রাগ রাগ চোখ করে তাকিয়ে থাকলেন।
উনাদের ব্যাখ্যা করে দিলাম। যখন স্কুলে ভর্তি করেছিলাম, তখন আমার ছেলে স্কুলে আসতে চাইতো না। আর এখন সে আমার আগে রেডি হয়ে বসে থাকে যে স্কুলে যেতে হবে। আগে তাকে পড়তে বসতে বললে খানিক কান্নাকাটি করতো, এখন নিজে নোট বই নিয়ে এসে দেখায় স্কুল থেকে কি কি কাজ দিয়েছে। আমি ক্লিয়ার প্রোগ্রেস দেখছি, তারা প্রোগ্রেস না দেখলে বিশাল বিপদ।
এর পর আর সারা বছর আমি টিচার-প্যারেন্ট মিটিং এ যাই নাই। তারাও আমাকে আর খোঁচায় নাই।
গত বছর গ্রেড১ এ ভর্তি করা হলো, এত্তো গুলান বই। আমিতো মহা বিরক্ত। কিন্তু কিছু করার নাই। বই কিনলাম। কয়েকদিন আগে বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হলো। গতকাল ছিলো পেপার রিভিউ। আমাকে দেখেই টিচার চেয়ার ছেড়ে উঠে গিয়ে আর এক টিচারকে পাঠালেন। বেচারী আমাকে আগে দেখে নি, খুব সম্ভবত।
পেপার রিভিউতে গিয়েতো আমি আবার টিচারদের ধরলাম। গ্রেড ১ এ গল্পের বই দিয়েছে তিনটা। কিন্তু কোনটারই আর্ধেকও শেষ করতে পারে নি। তাহলে তিনটা বই কেন দিতে হবে? টিচার কোন উত্তর না দিয়ে কাঁদো কাঁদো হয়ে তাকিয়ে থাকলেন।
আমাকে পাঠানো হলো বড় টিচারের কাছে। তিনি আমার ছেলের বিষয়ে আমাকে বিশাল লেকচার দিতে গিয়ে ধপ করে বোমা ফেলে দিলেন, এই "কম্পিটিটিভ" লেখা পড়ায় আপনার ছেলে পিছিয়ে!
আমি জিজ্ঞাসা করলাম কম্পিটিশনটা কোথায়। উনি প্রশ্ন বুঝতে পারেন নাই। তাই আবার রিপিট করতে হলো। জানতে চাইলাম যে আমার ছেলে কার সাথে কম্পিটিশন করছে যে সে পিছিয়ে? টিচার এইবার প্রথম বুঝতে পারলেন যে কেন আমাকে তার কাছে পাঠানো হয়েছে।
উনি আমাকে জানালেন যে আমার ছেলে হাতের লেখায়, সোশ্যাল সাইন্স এবং সাইন্সে দুর্বল। এমন হলে বিপদ। তাকে জিজ্ঞাসা করলাম আমার ছেলের স্ট্রেন্থ কিসে? বেচারী আবারও বেকায়দায়।
আমার ছেলের সম্পর্কে বলি। ও ওর ইন্টারেষ্টের জিনিষ গুলি বেশ সহজে এডপ্ট করে নিতে পারে। যেমন ওর বয়স এখন ৮, প্রোগ্রামিং শিখছে ইউডেমি থেকে। গত কয়েকদিন আগে দেখলাম নিজে নিজে কিছু ক্যালকুলেশনের স্ক্রিপ্ট তৈরী করেছে। বয়স যোগ বিয়োগ করার একটা স্ক্রিপ্ট তৈরী করেছে। এদিকে কিবোর্ডে দশ আঙ্গুল দিয়ে টাইট করে। টাইপিং স্পিড টুকটাক ভালোই। কিন্তু ওর হাতের লেখার অবস্থা করুন।
বইয়ে শোস্যাল সাইন্সে সে একদমই আগ্রহী না। আর সাইন্সের বইতে বেশ কিছু কঠিন টার্ম আছে, সেগুলি উচ্চারণ করতে বেকায়দায় পড়তে হয় ওকে।
যাই হোক, টিচারের কাছে ফিরে আসি।
আমি টিচারকে আরও প্রশ্ন করলাম যে তিনি আমার বাচ্চার সাথে ইংরেজী ও আরবীতে কথা বলার চেষ্টা করেছেন কি না। তিনি ভ্যাবলার মত তাকিয়ে থাকলেন।
আমার ছেলে ইংরেজী এবং আরবী বেশ এডপ্ট করেছে। সৌদী আরবের সাইনবোর্ড গুলির লেখা খুব সহজেই পড়তে পারে। যারা শুধু কুরআন দেখে পড়তে পারেন, তাদের কাছে বিষয়টা এমন কিছু মনে হবে না। কিন্তু আপনাকে একবার সাইনবোর্ড গুলি দেখতে হবে। কোন জের-জবর-পেশ থাকে না। তার উপরে ফন্ট একএকটার এক এক রকম হয়। যা পড়া আসলেই কষ্টের।
আমার ছেলের আর একটা বিষয় বেশ সমস্যার হচ্ছে ও খুব বেশীই ইন্ট্রোভার্ট। তাকে ধীরে ধীরে এর থেকে বের করে নিয়ে আসার চেষ্টা করছি। কিন্তু টিচারদের সেই সময় নাই।
আমার ছেলে এখনও সাইকেল চালাতে পারে না। কিন্তু সাঁতার শিখে নিয়েছে। ক্রিকেট খেলতে তার ভালো লাগে না, কিন্তু বাস্কেটবলে তার প্রচন্ড আগ্রহ। তার পড়ে ব্যাথা পাওয়ার ভয় প্রচন্ড হলেও স্কুটি নিয়ে স্ট্যান্টের চেষ্টা করে প্রতি নিয়ত।
কিন্তু যখনই কারও সাথে কথা বলতে যাই (সে হোক টিচার কিংবা বাংলাদেশী কমিউনিটির কেউ), মনে হয় যেন আমার ছেলের মত অথর্ব আর দুনিয়াতে নাই। সবাই প্রচন্ড "কম্পিটিটিভ" হতেই ভালোবাসে।
সবাই কেমন যেন আশা করে বসে থাকে যে তার বাচ্চা পয়দা হতেই জিনিয়াস হয়ে জন্মাক। তাকে সব বিষয়ে পারদর্শী হতে হবে।
Photo by Tim Gouw on Unsplash
০৮ ই জুন, ২০২৪ রাত ১১:৩৭
ঋণাত্মক শূণ্য বলেছেন: হুম।
২| ০৮ ই জুন, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১৮
নূর আলম হিরণ বলেছেন: টিচাররা প্রথমেই উচিত বাচ্চার স্ট্রেন্থ কিসে সেটা বের করা।
টিচারদের কাছে এটা জানতে চাওয়া সঠিক ছিল।
০৮ ই জুন, ২০২৪ রাত ১১:৩৭
ঋণাত্মক শূণ্য বলেছেন: তাদের এত সময় কোথায়। তারা তো কোচিং ধান্ধায় ব্যস্ত।
৩| ০৮ ই জুন, ২০২৪ রাত ৮:২৭
কামাল১৮ বলেছেন: এই বিষয়ে সায়মা ভালো বলতে পারবে।
০৮ ই জুন, ২০২৪ রাত ১১:৩৭
ঋণাত্মক শূণ্য বলেছেন: হয়ত
৪| ০৮ ই জুন, ২০২৪ রাত ৮:৩৮
ফিদাতো আলী সরকার বলেছেন: সব পুচ্ছিরা শেষে আই এম জিপিও ফাইভ। এতো পড়ে কি হবে?
০৮ ই জুন, ২০২৪ রাত ১১:৩৮
ঋণাত্মক শূণ্য বলেছেন: আমি নিজেও জিপিএ ৫ না, আমি চাইও না আমার ছেলেপেলে এইটা হোক।
৫| ০৮ ই জুন, ২০২৪ রাত ৯:২৫
মেঠোপথ২৩ বলেছেন: সৌদিআরবে লোকাল স্কুল কি ইংলিশ মিডিয়াম না আরবি মিডিয়াম?
০৮ ই জুন, ২০২৪ রাত ১১:৩৯
ঋণাত্মক শূণ্য বলেছেন: একদম সরকারী আরবী স্কুলে শুধু আরবী, তবে ইংরেজীও শেখানো হয়।
প্রাইভেট, কিন্তু সরকারী কারিকুলামে পড়ায়, তারা ইংরেজীতেও জোর দেয়।
প্রাইভেট আম্রিকা-ব্রিটিশ কারিকুলামে যারা তারা ইংরেজীতেই জোর দেয়।
©somewhere in net ltd.
১| ০৮ ই জুন, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৪
নতুন বলেছেন: বর্তমানে যেই স্কুলে বেশি পড়া দিচ্ছে বেশি কড়াকড়ী করছে তারাই ভালো স্কুল।
টিচার দের স্কুলে পড়ানোর চেয়ে প্রাইভেটে টাকা আয়ের দিকে নজর বেশি।