নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Fake world, fake life

ত্রিকোণমিতি

পাপিষ্ঠের দলে প্রথম সারির একটি মেরুদণ্ডী প্রাণী

ত্রিকোণমিতি › বিস্তারিত পোস্টঃ

ডুব[/]

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:০৮

চলুন একজন মধ্যবয়স্ক মানুষের গল্প শোনা যাক। খ্যাতি যার নখদর্পণে ছিল, গল্পে যিনি শেখাতেন ভালোবাসা কারে কয়। কিন্তু নিজেই একটা সময় ভালোবাসার জন্য মাথা কুটে মরেছেন। ভালোবাসার দ্বিধারাজ্যে হারিয়ে বেড়িয়েছেন অনেকটা সময়। ‘ডুব’ দিয়েছেন নিজের হতাশার মাঝে, দূরত্ব তৈরি করে নিয়েছেন নিজের পরিবারের সাথে। ঠিক সে সময়টায় একজন তরুণীর আবির্ভাব হয় তার জীবনে, যে তাকে আবার নতুন করে ভালোবাসতে শেখায়। হতাশায় ডুবসাঁতার কাঁটা মানুষটা সে তরুণীর হাত ধরে আবার উঠে আসে জীবনের চরে। কিন্তু সমাজ তাকে স্থির হতে দেয় না, দেয় না সংসার ও পরিবারের দায়বদ্ধতা। মেয়ের বয়সী কাউকে জীবনসঙ্গী হিসেবে মানতে কষ্ট হয় সমাজের, ব্যক্তিগত কষ্ট ঠুনকো হয়ে যায় তখন। বলছিলাম মোস্তফা সরোয়ার ফারুকী পরিচালিত “ডুব” সিনেমায় জাভেদ হাসান নাম্নি এক নির্মাতার কথা। আরও বলছিলাম “ডুব” সিনেমার কথা।



‘ডুব’ অথবা ‘নো বেড অফ রোজেস’ যে নামই নেই না কেন দুটো নামেই বোঝা যায় দ্বিধা আর কষ্ট নিয়েই এই সিনেমার গল্প। জীবন সহজ না, জীবন ফুলেল না, জীবনে ডুব দিতে হয়। এই ডুব কখনো দিতে হয় কষ্টসাগরে, কখনো দিতে হয় ভালোবাসার মাঝে, কখনো বা হতাশা আর একাকীত্বে। জাভেদ হাসানকে এরকম ডুবে ডুবেই থাকতে হয়েছে অনেকটা সময়। ডুবে থাকতে হয়েছে তার কন্যা সাবেরীকে, ডুবে থাকতে হয়েছে তার নতুন ভালোবাসা নিতুকেও। তাদের সবার ডুবন্ত গল্প নিয়ে “ডুব”।



“ডুব” এর ট্রেইলার মেলানকোলিক। অদ্ভুত এক বিষণ্ণতা পুরো ট্রেইলারজুড়ে। শব্দে সাজাতে হলে বলতাম ‘মেঘলা ট্রেইলার’। বারবার মনে হচ্ছিল বৃষ্টি হবে, বৃষ্টি হবে। এই হয়তো ঝরঝর করে কেঁদে ফেলবেন জাভেদ হাসান চরিত্রে অভিনয় করা ইরফান খান। কিন্তু চোখে একরাশ দুঃখ ও নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ইরফান বলে যান- কেমন আছ বাবা? ইন্টারন্যাশনাল এক্টর ইরফান খানকে বাংলা বলতে দেখে ঠিক সেসময় অবাক লাগে নি আমার। অবাক লাগে তার চোখ দেখে, চোখভর্তি তার অবাক দুঃখ; ইরফানের সে দুঃখ নয়, জাভেদ হাসানের দুঃখ। জাভেদ হাসান চরিত্রটিকে যে পুরোপুরিভাবে নিজের করে নিয়েছেন ইরফান তা তার দুঃখ, দ্বিধা, রাগ আর হতাশার প্রকাশ দেখেই বোঝা যায়। ঠিক যেমন তিশাকেও আবিষ্কার করে দর্শক জাভেদ হাসানের রাগান্বিত কন্যা সাবেরীর চরিত্রে। কখনো রাগী সাবেরীকে ঠিক মনে হয় আমাদের, কখনো সাবেরীর কষ্ট হৃদয় ছুঁয়ে যায়, নিজের সমবয়সী কাউকে বাবার পাশে দেখে অবাক হওয়া সাবেরীর পাশে দাঁড়াতে ইচ্ছা হয়। এরই মাঝে নিতুর অনুপ্রবেশ ঘটে। সমাজের দেয়াল টপকে জাভেদ হাসান তার কাছে না যেতে পারলেও নিতু ঠিকই সমাজের ও বাড়ির দেয়াল টপকে জাভেদের কাছে চলে আসতে পারে। এই ড্যামকেয়ার ভাবই হয়তো মুগ্ধ করে জাভেদকে, তার কাছে নিজ থেকে আসাটাই তাকে সাহসী করে তোলে। কিন্তু জাভেদ আর নিতু চাইলেই তো হবে না, আর কেউ যে চায় না এমনটি। এই দ্বিধা, এই দ্বন্দ্ব, এই সংঘাত, এই ডুব নিয়েই ফারুকী সাজিয়েছেন তার “ডুব” সিনেমাটি।



ট্রেইলারের সবচেয়ে ভালো দিক অবশ্যই সিনেম্যাটোগ্রাফি ও আবহ সঙ্গীত। দুর্দান্ত লোকেশন চোখকে প্রশান্তি দেয়, সবুজের মাঝে মিশে যায় নীল দুঃখ। ফারুকীর ক্যামেরাওয়ার্ক সবসময়ই সিম্বলিক। প্রথমেই নদীতে ডুবে যায় ইরফানের হাতের ঘড়ি, আবার গাড়ির ভেতর দিয়ে ক্যামেরা নিয়ে হুইস্কির বোতল দেখানোর সাথে সাথেই ইরফানের নিয়ন্ত্রণ হারানো রাগ ঝাড়া গৃহপরিচারকের ওপর, সবুজ পাহাড়ি পথে একলা গাড়ির গতি, বিশাল বাড়িতে একলা বসে জাভেদ হাসানের হাঁকডাক, সবই দর্শককে ভাবতে বাধ্য করে। নিতু আর সাবেরীকে বাঙালিআনা সাজে পাশাপাশি বসে থাকতে দেখা যায় তখন প্রশান্তি লাগে কিন্তু যে ঝড় আগত সে ঝড় তো আসবেই। সেই এক ঝড়েই লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় সবার জীবন, সেই ঝড়ের ঝাপটা সহ্য করতে না পেরেই হয়তো জাভেদ হাসান মৃত্যুর কোলে ডুব দেন। কিন্তু মৃত্যুর পরেও তাকে নিয়ে দ্বন্দ্ব চলমান থাকে, জাভেদ হাসান না থেকেও থাকেন চলমান দ্বিধা-দ্বন্দ্বে। নিজের ভালোবাসার মানুষগুলো একে অপরকে সহ্য করতে পারছে না এই কষ্ট তাকে পরকালেও পোড়াবে হয়তো, হয়তো আবার সময়কে ফেরত পেলে সব ভুলগুলো ঠিক করে নিতেন। হয়তো খ্যাতির দিকে যেতেই চাইতেন না, হয়তো সব গুছিয়ে ভালোবাসাময় এক জীবনে ডুব দিতেন যেখানে কোন হতাশা থাকতো না। কিন্তু না, মানুষকে ভুলগুলো নিয়েই বেঁচে থাকতে হয়, মৃত্যুকেও আপন করতে হয় সে ভুলগুলো নিয়েই। ভুলের মাশুল সে দিক কিংবা তার ভালোবাসার মানুষ, ভুলের গল্পের কোন শেষ হয় না। সে গল্পই বলবে “ডুব”।



ট্রেইলার থেকে এটি স্পষ্ট যে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদের ব্যক্তিগত জীবনের আদলেই সিনেমার গল্পটি লেখা হয়েছে। তবে যেহেতু সিনেমাটিকে নির্দেশক বায়োপিকের মর্যাদা দেন নি তাই ক্রিটিসিজম নিশ্চিত হবেই। সাধারণ দর্শক হুমায়ূন আহমেদের সাথে মিলিয়েই গল্পকে দেখার চেষ্টা করবে, সেটা নির্দেশক-অভিনেতারা যতই না চাক। তাই এসব ক্ষেত্রে অনুমতি নিয়েই সিনেমা নির্মাণ করার পক্ষে আমি। তবে সিনেমা যেহেতু একটি ক্রিয়েটিভ মিডিয়াম, তাই ফারুকীর নিজস্ব ইনপুট কতোটা এই সিনেমাকে প্রভাবিত করবে সেটিই নিশ্চিত করবে “ডুব” এর অডিয়েন্স একসেপ্টেন্স।



একটি মেলানকোলিক বিষণ্ণ সিনেমার অপেক্ষায় রইলাম। প্রিয় লেখককে অবমাননা না করে একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে প্রকাশের এই চেষ্টা কতোটা সফল তা “ডুব” দেখার পরেই বলা যাবে। ততদিন পর্যন্ত ডুবে থাকা যাক ভালো কিছুর প্রত্যাশাতেই।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.