![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পূর্ববর্তী পর্বঃ গ্রিক মিথলজিঃ ইউরেনাস- আ ফেইলড ফাদার (A Failed Father)
ইউরেনাসের ব্যবহারে পাওয়া মনের সমস্ত শোক ক্রোধ বুকে চেপেই গাইয়া সময়ের অপেক্ষায় দিনাতিপাত করছিলেন । ইউরেনাস কিন্তু ঘুণাক্ষরেও গাইয়ার মনের ভিতরে জমে ওঠা জিঘাংসার কথা জানতে পারলেন না। তিনি নিশ্চিন্তে রাজ্য আর গাইয়া বিহার করে যাচ্ছিলেন। গাইয়াও তাকে কোন রকম বাঁধা দিতেন না। দুজনে নতুন নতুন সৃষ্টিতে বুঁদ হয়েছিলেন। এরই মাঝে ইউরেনাস আর গাইয়ার পরবর্তী সন্তানরা জন্ম নিলেন। এরা ছিলেন ১২ জন(কোন কোন ধারনায় ১৩ জন) টাইটান। অলিম্পিয়ান গডসদের পড়েই গ্রিক মিথে স্থান এই ১২ জন টাইটানের এবং তাদের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত হলেন ক্রোনাস । এই টাইটানরাই ছিলেন সকল অলিম্পিয়ান গডসদের জনক। টাইটান্সদের নিয়ে বিস্তারিত থাকবে পরের পর্বে।
এই বারো জন টাইটান তাদের অন্য সহদরদের মত অতটা ভয়ঙ্কর ছিলেন না বরং তারা ছিলেন বুদ্ধিমত্তায় আরেকটু উঁচু শ্রেনীর স্বত্বা। সঙ্গত কারনেই ইউরেনাস তার টাইটান সন্তানদের প্রতি রুঢ় হলেন না। বরং বিভিন্ন শ্বাসন ভারে তাদের নিযুক্ত করলেন।
টাইটানদের প্রত্যেকেই কিন্তু মাতা গাইয়ার খুবই অনুরক্ত ছিলেন। মাতা গাইয়ার ভালবাসার বিকল্প তাদের ছিল না। তাই চেষ্টা করতেন মাতাকেও ভালোবাসাটুকু ফিরিয়ে দিতে। আর ভালোবাসা বলেই সবাই অনুভব করতে পারতেন তাদের মাতার গোপন বিষণ্ণতা। যদিও বিষন্নতার পিছনের কারনটা জানতেন না কেউই। তো একদিন তারা সবাই মিলে গাইয়াকে চেপে ধরলেন মনের গোপনীয়তাগুলোকে প্রকাশ করতে। গাইয়াও বুঝতে পারলেন যে সেটিই ছিলো প্রকৃত সময়। তিনি টাইটানদের কাছে বর্ণনা করলেন তার শোকগাঁথা। সন্তানদের সামনে আকুল ভাসলেন সেই গাঁথার বর্ণনায়।
মায়ের বিলাপ ও ভাইদের সাথে করা ইউরেনাসের অন্যায়ে তারা ক্রুদ্ধ হলেন পিতার প্রতি এবং ভাইদের উদ্ধার করার কৌশল খুঁজতে লাগলেন। কৌশল অবশ্য গাইয়া অনেকদিন আগে থেকেই ভেবে রেখেছিলেন। আর সে কৌশল বাস্তবায়নে ইউরেনাসকে রক্তাক্ত করার প্রয়োজন ছিল। যত ঘৃনারই জন্ম হোক না কেন ইউরেনাসকে আসলে সবাই প্রচন্ড ভয় পেতেন। তাই কোন টাইটানই ইউরেনাসকে রক্তাক্ত করার দায়িত্ব নিতে এগিয়ে আসলেন না। শুধুমাত্র ক্রোনাস ছাড়া।
ক্রোনাস মাতা গাইয়াকে সবচেয়ে বেশী ভালোবাসতেন। মাতার প্রতি অনুরাগ থেকেই তিনি এসময়ে মায়ের পাশে এসে দাড়ালেন। তিনি বললেন যে অন্য কেউই যদি সাহায্য না করে তবে তিনি একাই গাইয়াকে সাহায্য করবেন ইউরেনাসের পতন ঘটাতে। তার এই মাতৃভক্তিকে কাজে লাগালেন গাইয়া। তিনি পাথর দিয়ে একটি বিশাল কাস্তে তৈরি করলেন এবং সেটা তুলে দিলেন ক্রোনাসের হাতে।
অন্যান্য টাইটানরাও যখন দেখলেন ক্রোনাস নিজে থেকেই রক্তপাত ঘটানোর গুরু দায়িত্ব নিয়েছেন তখন তারাও অন্যান্য সাহায্য করতে এগিয়ে এলেন। এরপর সবাই মিলে ইউরেনাসকে বিচ্যুত করার বাদবাকি পরিকল্পনা গুছিয়ে নিলেন।
তো সেদিন রাতে যখন ইউরেনাস ধরার বুকে নামলেন তখন গাইয়া পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী একটি সমুদ্রের পাড়ে শুয়ে ইউরেনাসকে মিলনে আহবান জানালেন। সমুদ্র পারেই ক্রোনাস লুকিয়ে ছিলেন কাস্তে হাতে। রাতের অন্ধকারে ইউরেনাস ক্রোনাসকে দেখতে পেলেন না। তাই কোন রকম সন্দেহ ছাড়াই গাইয়ার সাথে মিলিত হলেন।
ঠিক এমনই দুর্বল সময়ে ক্রোনাস বেড়িয়ে এলেন এবং হতভম্ব পিতার জননাঙ্গটি এক হাতে ধরে অন্য হাতে কাস্তে চালিয়ে সেটাকে শরীর থেকে আলাদা করা ফেললেন। গ্রিক ইতিহাসে অনন্য ( ! ! ! ) এই ঘটনাটি পরিচিত “ইউরেনাসের বন্ধ্যাকরণ” নামে।এরপর ক্রোনাস তার পিতার কর্তিত অঙ্গটি সজোরে সমুদ্র মাঝে নিক্ষেপ করলেন।
এদিকে অমর হওয়া সত্ত্বেও দেবতারা কিন্তু ব্যাথা-বেদনার উরদ্ধে ছিলেন না। তাই প্রচন্ড বেদনায় ইউরেনাস রাতের বেলাতেই নীল রং ধারণ করলেন। তার শরীর থেকে যে রক্তপাত ঘটেছিল তার ধারা প্রবাহিত হয়েছিল পৃথিবীর বুকে। কথিত আছে এই ধারা থেকে জীবন পেয়েছিল তিনটি মিথলজিক্যাল ক্রিচার। গ্রিক মিথিলজিক্যাল ক্রিচারের উপর লেখা অন্য একটি পর্বে এদের সম্পর্কে বলা হবে। এছাড়াও কর্তিত অঙ্গটি সমুদ্রের যেখানে পড়েছিল সেখানে ছড়িয়ে পড়া রক্ত ও সমুদ্রের ফেনা মিলেমিশে জন্ম নিয়েছিলেন গ্রিক প্রেম ও যৌনতার অনন্য দেবী আফ্রোদিতি(রোমান নাম ভেনাস)।
এরপর নিজ হাতে করা সদ্য বন্ধ্যা বেদনায় নীল পিতাকে ঘৃনাভরে ক্রোনাস চিৎকার করে জানিয়ে দিলেন যে, তার শাসনামল শেষ হয়েছে এবং স্ত্রী ও সন্তানের প্রতি নির্মমতাই তার পতনের কারন।
নিজ স্ত্রী আর সন্তানদের দ্বারা প্রতারিত হয়ে ইউরেনাস রাগে-ক্ষোভে ধরাপৃষ্ঠ চিরতরে ত্যাগ করলেন। এরপর তার কি হল সে সম্পর্কে তেমন আর কিছু বর্ণিত হয় নি। হলেও গ্রহণযোগ্যতা পায় নি।
ইউরেনাসের পরে বিশ্বজগতের শাসনকর্তা হলেন ক্রোনাস এবং সিংহাসনে বসে বিয়ে করলেন নিজের সবচেয়ে সুন্দরী বোন টাইটান রিয়া কে।
অন্যান্য টাইটানরা হয়েছিলেন ক্রোনাসের অনুগামী। তারা আগের মতই সবাই স্ব স্ব ক্ষেত্রে নিযুক্ত থাকলেন।
এদিকে ইউরেনাসের পতন হলেও পৃথিবীতে কিন্তু পুরোপুরি শান্তি নামলো না। ইউরেনাস্কে হটানোর পর ক্রোনাস স্বশরীরে টারটারাসে গিয়ে যখন হেকাটঙ্খেইরিস ও সাইক্লোপসদের দেখলেন তিনিও ইউরেনাসের মত একই ভয় পেলেন। ফলশ্রুতিতে গাইয়াকে দেয়া নিজের প্রতিজ্ঞা ভেঙ্গে তাদেরকে সেই টারটারাসেই বন্দী করে রাখলেন।
এতে ক্রোনাসের উপর প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হলেন গাইয়া। যে আশাতে তিনি নিজ স্বামীর বিরুদ্ধে গিয়েছিলেন তা চোখের সামনেই ভেঙ্গে যেতে দেখলেন প্রবল ঘৃণা ভরে। তিনি ক্রোনাসকে অভিশাপ দিলেন। তিনি ভবিষ্যৎবাণী করলেন, ইউরেনাসের যেমন নিজ সন্তানের হাতে পতন হয়েছে তেমনি ক্রোনাসেরও পতন হবে তার নিজ সন্তানদেরই হাতে।
এভাবেই,
অভিশাপ মাথায় নিয়েই পৃথিবীতে শুরু হল টাইটানদের রাজত্ব।
তথ্যসূত্রঃ
১। দ্য গ্রিক মিথস(রবার্ট গ্রেভস);
২। হেসিওডস থিওগনি;
৩। এনসাইক্লোপিডিয়া অফ গ্রিক এন্ড রোমান মিথলজি;
৪। অনলাইন।
ছবি সংগ্রহঃ গুগল এন্ড পিন্টারেস্ট
পরবর্তী পর্বঃ গ্রিক মিথলজিঃ দ্য রেইন অফ ক্রোনাস(The Reign of Cronus)।
০৮ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ৯:৪২
মেহেদী রবিন বলেছেন: দুঃখিত নোমান। এডিটের ভুলে মাঝের একটু অংশ মিস করেছেন। এখন সংশোধন করেছি। কষ্ট করে ওটুকুও পড়বেন। ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো।
২| ০৮ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ৯:৪৩
কক্ষচ্যুত বলেছেন: অনেক ভালো লাগছে , প্লিজ ক্যারী অন ।
০৮ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ৯:৫২
মেহেদী রবিন বলেছেন: কক্ষচ্যুত, ভাই, কষ্ট করে মাঝের অংশটাতে আরেকবার চোখ বোলাবেন প্লিজ। অল্প একটু ভুল সংশোধন করা হয়েছে। আপনার ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম। সাথেই থাকবেন।
©somewhere in net ltd.
১|
০৮ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ৯:৩০
নোমান প্রধান বলেছেন: চমৎকার