নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

\'\'অসাধারণ পৃথিবীতে একজন সাধারণ মানুষ\'\'

নিউটনিয়ান

নিজেকে সংজ্ঞায়িত করার কোনো সংজ্ঞা জানা নাই।

নিউটনিয়ান › বিস্তারিত পোস্টঃ

উন্নয়নের খেরো খাতা

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ ভোর ৪:২৫


নির্বাচনের আগ মুহূর্তে সব সদ্য গত হওয়া সরকার তাদের উন্নয়নের ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে থাকে। এখন আপনার সরকার যখন আপনাকে উন্নয়নের লিস্ট দিবে, আপনি কিভাবে উন্নয়ন যাচাই করবেন?

একটি উদাহরন দিয়ে শুরু করা যাক। ধরুন আপনি একটি কোম্পানির শেয়ার হোল্ডার বা ইনভেস্টর। এখন ওই কোম্পানি যদি বছর শেষে বলে এই যে আমাদের এই বছরের প্রোফিট। আপনি কি খুশি হবেন? আপনি যদি সাধারণভাবে চিন্তা করেন, তাহলে ভাববেন কোম্পানি তো প্রফিটেবল, তার মানে আপনার খুশি হবারই কথা। আর আপনি যদি ফাইনান্সিয়াল এনালিস্ট অথবা প্রফেশনাল একাউন্ট্যান্ট হয়ে থাকেন অথবা ফাইনান্স সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকে তাহলে আপনি শুধু ওই প্রোফিট এর উপর নির্ভর করে খুশি হবেন না। আপনি কোম্পানির আপাদমস্তক সবকিছু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করবেন। আপনি প্রথমে রেশিও অ্যানালিসিস করবেন। যেমন, আপনি প্রোফিট ছাড়াও কোম্পানির গ্রোস প্রোফিট, নিট প্রোফিট মার্জিন বের করে দেখবেন কোম্পানির খরচের উপর কন্ট্রল কেমন। রিটার্ন অন্য ক্যাপিটাল এমপ্লয়েড ও রিটার্ন অন্য ইনভেস্টমেন্ট বের করে দেখবেন কোম্পানি কতটুকু ইনভেস্টে কতটুকু রিটার্ন আসছে। গিয়ারিং অ্যানালিসিস করে আপনি কোম্পানির রিস্ক নিরূপণ করবেন। প্রোফিট মানেই ক্যাশ না, সুতরাং আপনাকে কোম্পানির লিকুইডিটি ও ক্যাশ ফ্লো জানতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা হল শুধু রেশিও বের করেই ক্ষান্ত থাকবেন না। উপরোক্ত হিসাবগুলা বের করে বিগত বছরগুলোর সাথে এবং সমমানের অন্য কোম্পানির সাথে মিলিয়ে দেখবেন আসলে কোম্পানি কতটুকু সফল।

আরো দেখবেন, কোম্পানির হিসাব নিকাশ আন্তর্জাতিক আকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ড অনুসরণ করেছে কিনা? তারা নিয়ম কানুন মেনে ব্যবসা করে কিনা? তারা নৈতিক প্রিন্সিপ্যাল গুলা কতটুকু মেনে চলে? স্টেক হোল্ডারদের প্রতি তারা কতটুকু দায়িত্ববান? তাদের কর্পোরেট গভর্নেন্স কতটুকু ভারসাম্যপূর্ণ?

এনালিস্টরা ফাইনান্সিয়াল ফ্যাক্টরগুলোর সাথে সাথে অনেক নন ফাইনান্সিয়াল ফ্যাক্টরগুলাও বিবেচনায় আনে। যেটা নিরূপণের অনেক ম্যাথড বা পক্রিয়া আছে। যা বললে লেখা অনেক লম্বা হয়ে যাবে বা অনেকে নাও বুঝতে পারে। আমরা প্রায়ই দেখি অনেক বড় বড় কোম্পানি বন্ধ হয়ে যায় সব থাকার পরেও, এসব নন ফাইনান্সিয়াল ফ্যাক্টরগুলাই এটার অন্যতম কারণ।

একটু সহজ করে বলি, ধরুন, আপনার কোম্পানির সমমানের কম্পিটিটর যদি ১০০০ টাকা ইনভেস্ট করে ১০০ টাকা প্রোফিট করে আর এই কোম্পানি করল ১০ টাকা। আবার দেখা গেল একি মেশিন আপনার কোম্পানি কিনল যে টাকায়, কম্পিটিটর কিনল অর্ধেক মূল্যে। দেখা গেল কোম্পানির লোণ বেশী, পাওনাদারের থেকে দেনাদার বেশী, ক্যাশ ফ্লো কম ইত্যাদি ইত্যাদি। যার জন্য শুধু প্রোফিট থাকলেই একজন ইনভেস্টর জেনে শুনে একটা ইনিফিশিয়েন্ট কোম্পানিতে ইনভেস্ট করবেনা। আর ইনভেস্টরা চাইবে যে সমমানের কোম্পানি যদি ১০০০ টাকায় ১০০ টাকা নিয়ে আসতে পারে তাহলে তার কোম্পানি ১০০ না হোক অন্তত ৯০ বা ৮০ টাকা রিটার্ন আনুক।

কোম্পানির ক্ষেত্রে যদি এত হিসবের দরকার হয়, তাহলে দেশ তো আরো বড়। দেশ পরিচালনার ভার যার হাতে দিচ্ছেন তার পারফরমেন্স যাচাই জনগণ হিসেবে আপনার অবশ্য কর্তব্য এবং তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে করা উচিত। কারণ সরকার পরিচালনার জন্য যাদের দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে তারা আপনার (জনগণের) দ্বারাই মনোনীত। ওই দায়িত্ব পালনের জন্য তাদেরকে বেতন, ভাতাসহ সকল ধরণের সুযোগ সুবিধা দেয়া হচ্ছে, যা আপনিই প্রদান করতেছেন কিন্তু। সুতরাং তাদের কাছ থেকে হিসেব চাওয়া, তাদের কর্ম পর্যালোচনা করা, প্রয়োজনে জবাবদিহিতার আওতায় আনার অধিকার আপনার আছে। শেয়ার হোল্ডারদের টাকা যেমন ডিরেক্টর বা সিইও দের বেতন দেয়া হয়, তেমনি আপনার ট্যাক্স এর টাকা দিয়ে বা দেশের উপার্জিত অর্থ থেকে সরকারে দায়িত্বরত দের বেতন ভাতা দেয়া হয়। সুতরাং পাই টু পাই হিসেব বুঝে নেয়ার অধিকার আপনার আছে।

এখন একটা সরকার যদি বলে এই এই উন্নয়ন গুলো আমরা করেছি। উন্নয়ন করছে ভালো কথা। কিন্তু আপনি কি পরিমাণ উন্নয়ন ডিসার্ভ করেন, সে পরিমাণ উন্নয়ন হয়েছে কিনা তা তো খতিয়ে দেখবেন। প্রত্যেক সরকারই প্রত্যেক টার্মে কিছু না কিছু নতুন করে থাকে। কিছু কাজ আছে যে সরকারই থাকুক না কেনো করবেই। আর কিছু উন্নয়ন আছে যা অটোমেটিক, যা এমনিতেই হবে। যেমন হাতে হাতে মোবাইল বা ইন্টারনেট। সবচেয়ে দরিদ্র আর দুর্নীতিগ্রস্থ দেশেও হাতে হাতে মোবাইল বা ইন্টারনেট আছে। একে সরকার নিজের অবদান বলে চালিয়ে যেতে পারে না।

একটা ট্রেন্ড হয়ে গেছে যে, ইমারতীয় উন্নয়ন (রাস্তা, ব্রিজ ইত্যাদি) দেখিয়ে উন্নয়ন কে বেশী প্রকাশ করা হয়। একটা দেশের উন্নতির জন্য ইনফ্রাস্ট্রাকচার অবশ্যই দরকার আছে। এখন যে ইনফ্রাস্ট্রাকচার হচ্ছে তা আরো ৫০ বছর আগে হওয়া উচিত ছিল। হয়নি, কি আর করা। দুর্ভাগ্য আমাদের। যাই হোক এসব ইমারতীয় উন্নতির পাশাপাশি আরো অনেক মুখ্য জিনিস আছে যা খুব গুরুত্ব সহকারে দেখা উচিত। যেমন, মানুষের অধিকার রক্ষিত হচ্ছে কিনা? স্বাস্থ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা খাতগুলোতে উন্নতি কতটুকু হচ্ছে? খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ কিনা? নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে কিনা? মানুষের নিরাপত্তা কেমন? বিভিন্ন সেক্টরে দুর্নীতির দমন কতটুকু করা হচ্ছে? সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব চলতেছে কিনা? আইন কে আইনের গতিতে চলতে দেয়া হচ্ছে কিনা? বিচার ব্যবস্থা নিরপেক্ষ কিনা? গণতান্ত্রিক অধিকার মানুষের কতটুকু রক্ষিত হচ্ছে? ইত্যাদি ইত্যাদি বিষয় আপনি উন্নতির হিসেবের সাথে মিলিয়ে দেখবেন।

আরেকটা উদাহরণ দেই, যেমন, এবারের সরকার তাদের উন্নয়নের খেরো খাতায় জিডিপি বৃদ্ধির কথা বলতেছে। আমি হিসেব করতে বসলাম যে, জিডিপি বৃদ্ধিতে এই সরকারের ভূমিকা কি। আমি দেখলাম ৮০ র দশক থেকে বাংলাদেশের জিডিপি গ্র্যাজুয়ালি বৃদ্ধির দিকেই আছে, কোনো একটা বছর নেই যে আগের বছর থেকে কমেছে। এখনে ফরকাস্ট করা যায় যে এখানে যদি অন্য দলও সরকারে থাকত তাহলে জিডিপির হার ঊর্ধ্বমুখিই থাকত। সুতরাং এর পেছনে নিদৃস্ট কোনো সরকারের আলাদা কৃতিত্ব নাই।

এভাবে বহু কিছু আছে আপনি যাচাই করে দেখবেন। একটা গোঁজামিল দিয়ে আপনাকে বুঝ দিয়ে দিল, আর আপনিও খুশি হয়ে মেনে নিলেন। এভাবেই স্বার্থবাদী রাজনীতিবিদরা আপনাদের ঠকিয়ে আসতেছে বছরের পর বছর। তারা আপনাকে বোকা বানিয়ে যাচ্ছে, আপনার সাথে ঠাট্টা মশকরা করে যাচ্ছে, আপনার উপর জোর খাটাচ্ছে, আপনাকে পুতুলের মত নাচাচ্ছে। তারা এমন করে যাচ্ছে কারণ দিন শেষে এই আপনিই আবার তাদের গুণকীর্তন করতেছেন, তাদেরকে হুজুর হুজুর করতেছেন।

একজন সচেতন জনগণ হিসেবে আপনাকে সজাগ থাকা উচিত। আপনার হিস্যা আপনার বুঝে নিতে হবে। কেউ দুর্নীতি করলে প্রতিবাদ জানাবেন, অন্যায় দেখলে রুখে দাঁড়াবেন, ন্যায়ের স্বপক্ষে দাঁড়াবেন, গোঁজামিলের হিসেব দিলে ছুড়ে মারবেন। আপনি যথাযথ হিসাব আদায় করবেন। অনুন্নত দেশেও উন্নয়নের খেরো খাতা আছে। থাকতেই পারে, থাকাটাই স্বাভাবিক। দেশে কি কি উন্নয়ন হয়েছে তার হিসেব থাকা অবশ্যই দরকার আছে। কিন্তু হিসেবটা শুধু আউটপুট এর হলে হবে না, কতটুকু ইনপুটের প্রেক্ষিতে কতটুকু আউটপুট হল তার বিশদ বিবরণী থাকা দরকার।

এবং এই জবাবদিহিতা যে কোনো সরকারের জন্য প্রযোজ্য হওয়া দরকার, সরকার যে দলের অধীনেই গঠিত হোক না কেনো। দেশই আপনার কাছে সবার আগে থাকা উচিত, কোনো নিদৃস্ট দল নয়।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ১০:০৩

রাজীব নুর বলেছেন: নদীর নামটি ময়ূরাক্ষি কাক কাল তার জল ।
কোন ডুবুরী সেই নদীটির পায়নি খুজে তল ।

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:৩০

নিউটনিয়ান বলেছেন: কিছু তল পরিশ্রম করে খুঁজে নিতে হয়

২| ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:৩১

জুনায়েদ বি রাহমান বলেছেন: ঠিক বলেছেন। আমাদের এই সরকার কতটুকু উন্নয়ন করেছে এটা বুঝতে হলে ২০০৭ সালের পৃথিবীর সাথে বাংলাদেশ। এবং ২০১৮ সালের পৃথিবীর সাথে বাংলাদেশের তুলনা করতে হবে।

তুলনা করতে হবে ততকালীন বাংলাদেশের মতো দেশের সাথে। তবেই বুঝা যাবে৷

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:৩৫

নিউটনিয়ান বলেছেন: তা তো বটেই। আমাদের একটু চিন্তার প্রসারতা বাড়াতে হবে। আমাদের যা বোঝায় তাই মেনে নেই বিধায় রাজনীতিবিদরা এই সুযোগ টা নিচ্ছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.