![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
-রিমি দেখ! ওই ছেলেটা বারবার তোর দিকে তাকাচ্ছে
-কোন ছেলেটা?
-আমাদের পিছনে
-ও ওই ছেলেটা? ও আসলে তোর দিকে তাকাচ্ছে
-মোটেই আমার দিকে না, তোর দিকে
-আমি কালও লক্ষ্য করেছি। ও তোর দিকেই তাকিয়ে ছিল
-আমার দিকে না। আমাদের দিকে
-মানে?
-আমরা দুজন তো একসাথে থাকি। কার দিকে তাকায় বুঝবো কি করে?
-তাই তো! তাহলে এখনই পরীক্ষাটা করে ফেলি। একজন ঐ পাশে চলে যাই
-গুড আইডিয়া! আমিই যাচ্ছি
ইরা আর রিমি। দুজন সেই হাইস্কুল থেকে একসাথে আছে। খুব ভাল বন্ধু তারা। এরপর একই কলেজে; কাকতালীয়ভাবে হলেও তারা এখন একই বিশ্ববিদ্যালয়ে এপ্লাইড কেমিস্ট্রি নিয়ে পড়ছে। দুষ্টর শিরমনি যেন ওরা দুজন। সারাক্ষণ একজন আর একজনের পিছে লেগে থাকবেই।
আবীর। সাদামাটা ছেলে। অনেকটা একাই থাকে। অল্প কয়েকজন বন্ধু আছে তার। তাদের সাথে ক্যাম্পাসের সময়টুকু কাটায়। বাকি সময় নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত থাকে। পড়াশুনার বইয়ের জগৎ আর ফেসবুকের ভার্চুয়াল জগতেই সীমাবদ্ধ সে। এভাবে একাকিত্বের মধ্যে কাটিয়েই এবছর একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকোলজি বিভাগে ভর্তি হতে পেরেছে সে। মেয়েলি ব্যাপার তার মাথায় আসে না। একটা প্রেমও জোটেনি কপালে। মেয়েদের দিকে ভালো করে তাকায়ই না, প্রেম জুটবে কি করে?
ভার্সিটিতে কিছু দিন পার করতেই একটা মেয়েকে মনে ধরল তার। চেহারা যে খুব আহামরি, তা কিন্তু না। বেশ সুন্দর করে হাসতে পারে মেয়েটা। আবীরের মনে হচ্ছে এই হাসির জন্য সে সব কিছু করতে প্রস্তুত। বেশ বন্ধুসুলভ মেয়েটা। সারাক্ষণ বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয় আর হাসি ঠাট্টায় মেতে থাকে। এ ধরনের মেয়েদের সাধারনত একাধিক বয়ফ্রেন্ড থাকে। কসমেটিকস বদলানোর মত বয়ফ্রেন্ড চেঞ্জ করে এরা। খোজ নিয়ে আবীর জানতে পারল মেয়েটার নাম রিমি। এপ্লাইড কেমেস্ট্রি, ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে। যতটুকু জানা যায়, এখনও প্রেম করেনি ও। একটু যেন আশার আলো দেখতে পায় আবীর।
কিন্তু ম্যানেজ করবে কি করে?
এসব ব্যাপারে তো একেবারেই আনারি ও।
তাই ওর দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না আবীরের।
Whats Appএ মেসেজ আসলো। ইরা পাঠিয়েছে। Whats App এর ভাল একটা সুবিধা আছে। ওয়ারলেস ফোনের মত কাজ করা যায়। মেসেজটা পড়া দরকার।
-কি রে, কিছু বুঝলি?
-বুঝবো কি করে? গাধাটা বোধহয় টের পেয়ে গেছে। এখন কোন দিকেই তাকাচ্ছে না। স্ট্যাচু হয়ে আছে।
-হুম তাই তো দেখছি। আবার মাঝে মাঝে দু’দিকেই তাকাচ্ছে।
-ও যে কাকে ফলো করে তাই তো বুঝতে পারছি না। ট্যারা নয় তো?
-এই সেরেছে? তাহলে ও আমার দিকে না, তোর দিকে তাকাচ্ছিল!
-একদম বদমায়েশী করবি না। ধুর ছাই! স্যার আসার আর সময় পেল না। চল ক্লাসে যাই।
-চল যাই।
***
প্রায় দু’সপ্তাহ হয়ে গেল। ক্লাস শেষে বারান্দায় এলেই ছেলেটাকে দেখা যায়। আগের মতই চুরি করে ওদের দিকে তাকায় মাঝে মাঝে। কিন্তু কোনদিন কাছে এসে কিছু বলে না। আর গেট-আপের কি শ্রী! ঢিলে জামা, ঢোলা প্যান্ট, মাথায় তেল দিয়েছে প্রায় আধা লিটার। মুখে আবার পাউডারও মেখেছে দেখছি...। দুই বান্ধবী এভাবে আবীরকে নিয়ে মজা করে আর হাসাহাসি করে, যা হয়ত আবীর বুঝতেও পারে না। সে শুধু মুগ্ধ নয়নে রিমির হৃদয়ে ঝড় তোলা হাসির দিকে তাকিয়ে থাকে।
নাহ্ এমন সুহাসিনি মেয়েকে কিছুতেই হারানো যাবে না। যে কোন মূল্যেই ওকে আমার চাই। কিন্তু কিভাবে? এসব মেয়ে পটানোর কাজ তো আমাকে দিয়ে হবে না। অন্তত ভালবাসার কথাটাতো জানানো দরকার। কি যে করি? ভাবছে আবীর।
এত সময় নেয়া ঠিক হবে না। তখন দেখা যাবে অন্য কেউ নিয়ে নিবে আর আমি তাকিয়েই থাকব। আর কিছু না পারি, আমার ভালবাসার কথাটাতো ওকে জানানো দরকার। তাহলেও অন্তত নিজেকে সান্তনা দিতে পারব যে, আমার যা করার আমি করেছি। এরপরও পাইনি।
সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলল আবীর। আজই জানাবে রিমিকে ওর ভালাবাসার কথা। এজন্য নিশ্চয়ই রিমি ওকে শূলে চড়াবে না।
-রিমি, একটু এদিকে আসবে?
রিমি কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে যায়। ইরা আবার ওকে খোঁচা মেরে বলে-
-হয়ে গেল তোর?
-এত এ্যাডভান্স হতে যাস না। হয়ত তোকে ম্যানেজ করার জন্য আমাকে ডেকেছে।
-যা ভাগ! তোর ডালিম কুমার দাড়িয়ে আছে যা।
-যাচ্ছি।
-হ্যা ভাইয়া, বলুন।
-
-কি ব্যাপার, ডেকেছেন কেন? বলুন।
-আমি তোমাকে প্রথম দেখাতেই ভালবেসে ফেলেছি। আমি জানিনা এটা সম্ভব কিনা। তবুও....
পুরোটা না শুনেই সেখান থেকে চলে আসে রিমি। কেন যেন খুব রাগ হচ্ছে ওর। কি অদ্ভুত ছেলে! কোন প্রিপারেশন নাই, ইমপ্রেস করার চেষ্টা নাই, পরিচিত হওয়ার কথা নাই... হুট করে বলে দিল ভালবাসি। এটা কি “শর্টকাট” নাটক পেয়েছে নাকি? অন্তত বন্ধু হওয়ার প্রস্তাব করতে পারত।
-কিরে এত রাগার কি আছে?
-জানিনা। কিন্তু এটা জানি ওকে এখন আমার চিবিয়ে খেতে ইচ্ছা করছে। আমড়া কাঠের ঢেকি একটা।
-নিজের মনের কথা এভাবে সরাসরি বলার মত সাহসী ছেলে খুব কমই আছে।
-সাহসী না ছাই। গিয়ে দেখ, এখনও হাত পা কাপছে ওর।
-ছেলেটা কিন্তু তোকে সত্যিই ভালবাসে রে।
-বাসুক। তাতে আমার কি? আমি তো বাসি না।
-এমন ভালবাসা হেলায় ফিরিয়ে দিবি?
-হ্যা দেবো। কেউ এসে আমাকে বলবে ‘ভালবাসি’, আর আমিও ‘ভালবাসি’ বলে তার গলায় ঝুলে পড়ব নাকি?
-যা ইচ্ছা কর। তবে এমন কিছু করিস না, যাতে তোর মনে হয় জীবনে বড় কিছু মিস করেছিস।
এখন কেন যেন ইরার কথাগুলোও বিষের মত লাগছে রিমির কাছে। তাই কিছু না বলে বাড়ি চলে আসে রিমি।
রাতে ফেসবুকে লগ ইন করতেই মেসেজ পায় রিমি। পাঠিয়েছে “Innocent Abir”। মেসেজটা ওপেন করে রিমি-
Innocent Abir
হয়ত তোমার সাথে আমার একদমই যায় না
হয়ত তোমার পাশে আমাকে একটুও মানায় না
হয়ত তোমার স্বপ্নের প্রেমিকের সাথে আমার মিল নেই কোন
তবুও তোমার কাছে আমার একটাই চাওয়া
ভালবাসবে আমায়???
2/13, 1:39am . Sent from Mobile
এবার বুঝতে পারে ইনোসেন্ট আবীর কে? নামটা ইনোসেন্ট আবীর না হয়ে মিচকে শয়তান আবীর হলে ভাল হত। ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠিয়েছে আবার! কেন যেন আবারও রেগে যাচ্ছে রিমি। করবো না রিকুয়েস্ট একসেপ্ট। বাসব না ভাল ওকে। আবার কাব্যি ছাড়া হচ্ছে। কবি হয়েছে একজন। কবি তো না, যেন ছড়াকার। কি সাহস! আবার ফ্রেন্ড রিকুয়েস্টও পাঠায়। ওর আইডি এখনই সিন্ধুকে পাঠিয়ে দেব। গো টু ব্লকলিস্ট। একি! আমার চোখে আবার পানি আসলো কখন? ধ্যাত, কিছু ভাল লাগেনা। ফেসবুক লগ আউট করে শুয়ে পড়ে রিমি।
এরপর ক্যাম্পাসে গেলে রিমি বারান্দায় এলে দেখা যেত, দূর থেকে আবীর ওর দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কি জানি, হয়ত নিরবে কাঁদছে ছেলেটা। প্রথম প্রথম ওকে দেখলে বারান্দায় আসতো না রিমি। এরপর আবীরকে কষ্ট দিতে ইচ্ছে হলো ওর। তাই সুযোগ পেলেই ওর সামনে ঘোরাফেরা করত। আর দেখত আবীর বেচারা কিভাবে ওর দিকে তাকাচ্ছে। এভাবেই ধীরে ধীরে মায়া পড়ে যায় আবীরের প্রতি। কি জানি, হয়ত ভালই বেসে ফেলেছে আবীরকে।
***
তিন-চার মাস পর।
একদিন মার্কেটে গিয়ে আবীরকে দেখতে পেল রিমি। শার্টের দোকানের সামনে। সম্ভবত ঈদের কেনাকাটা করবে। এগিয়ে গেল রিমি। হুম, যা ভাবছে তাই। সেই ঢিলে শার্ট কেনার প্রস্তুতি নিচ্ছে। দেখে রিমির গা জ্বলে যাচ্ছে যেন। নাহ্ আজ ওকে সাইজ করেই ছাড়বো।
-এই যে ভাইয়া, শার্ট কিনছেন বুঝি?
-হুম। কিন্তু পছন্দ করে উঠতে পারছি না।
-আপনি পারবেনও না। আমার সাথে এদিকে আসুন।
নিয়ে গেল অন্য একটি দোকানে। নামালো বেশ কিছু শার্ট। কোনটার রং নষ্ট হওয়া, কোনটা তালি মারা, কোনটা ছেড়া, কোনটা আবার অধিক উজ্জ্বল রঙের। রিমি বলছে এগুলোর মধ্য থেকে পছন্দ করতে। বুঝলো আবীর, তার কপালে খারাবী আছে। তাই পছন্দ করার ভারটাও রিমির উপর ছেড়ে দিল। রিমি একটা শার্ট, জিন্সের প্যান্ট, টি শার্ট প্যাক করিয়ে আবীরের হতে ধরিয়ে দিলো।
-আমি তো এধরনের শার্ট পরি না।
-এখন থেকে পরবেন।
-জি আচ্ছা।
-আর শুনুন এরকম যদি দেখি আর ঢিলেঢালা পুরোনো আমলের শার্ট প্যান্ট কিনতে, তাহলে আপনাকে আমি ডোবার পানিতে চুবিয়ে মারবো।
-জি আচ্ছা।
-কিসের জি আচ্ছা? এ কোন ধরনের চুল কাটা? বাউল কবি হতে চান নাকি? আমার সাথে আসুন তো।
সেলুনে নিয়ে চুল কাটিয়ে নিয়ে তারপরই ছাড়ল আবীরকে। আবীর তো বিশ্ময়ের ঘোড় কাটিয়েই উঠতে পারছে না।
রাতে ফেসবুকে মেসেজ পেল আবীর। রিমির মেসেজ।
Dreamgirl Rimi
শার্টগুলো পছন্দ হয়েছে তো? পরে দেখেছেন?
6/20, 1:19am
কোন রিপ্লে দিলো না আবীর। ওই দিন ওকে ব্লক করায় রিমির উপর একটু অভিমান জমেছে ওর। কেন ব্লক করবে আমায়? আমি কি ওকে খুব ডিস্টার্ব করতাম? বারবার মেসেজ করতাম? ব্লক করার মত কি এমন করেছি আমি? ইচ্ছে হল ব্লক করে দিলো, এখন আবার ভাব জমাতে এসেছে।
তিন-চার দিন পর।
রিমির মেসেজ গুলো ওপেন করল আবীর।
Dreamgirl Rimi
ভাইয়া কেমন আছেন?
6/26, 1:19am
Dreamgirl Rimi
কি ব্যাপার? কোন রিপ্লে নেই! হাতে ব্যাথা নাকি? :p
7/6, 6:14pm
Dreamgirl Rimi
আপনার সাথে কিছু কথা ছিল। শোনার সময় হবে?
7/7, 10:14pm
Dreamgirl Rimi
কিছু বলবেনা তুমি? রাগ করেছ না কি?
7/8, 4:14am
Dreamgirl Rimi
আর রাগ করে থেকো না প্লিজ। আমি সরি বলছি।
7/13,11:39pm
Dreamgirl Rimi
সরি বললাম তো! এবার তো কিছু বলো।
7/13, 1:49am
Dreamgirl Rimi
এখনও রিপ্লে দিলে না তুমি!
7/14, 2:39am . Sent from Messenger
মেসেজগুলো পড়ে আবীর ভাবছে, আপনি থেকে তুমি! আর রাগ করা ঠিক হবে না। তবে এত সহজেও ছাড়ছি না আমি। যা হোক! কালই দেখা করব আমি। মেসেজ করে স্থান ও সময় জানিয়ে দিল রিমিকে।
***
পার্কে একটা বেঞ্চিতে দুজন পাশাপাশি বসে আছে। রিমির দিকে তাকাতে পারছে না আবীর। রিমির মন আজ ভীষণ খুশি। আজ সে আবীরকে বলবে ওর মনের কথা। ভালবাসার কথা। ভালবাসে যে আবীরকে ও।
-আবীর
-হম
-কি ব্যাপার? কোন কথা বলছ না যে?
-কি বলব?
-কিছু বলার নেই? ও দিকে তাকিয়ে আছ কেন? তাকাও আমার দিকে।
আবীর তাকালো রিমির দিকে। সেই হাসি মুখ। যার জন্য সবকিছু করতে প্রস্তুত ছিল আবীর। আবার মুখ ঘুড়িয়ে নিল।
-কি ব্যাপার! তুমি কি রাগ করেছ আমার উপর?
-না। রাগ করবো কেন?
-তাহলে কোন কথা বলছ না কেন? তাকাচ্ছও না আমার দিকে।
-
-দেখ আমি সরি বলছি। সত্যিই সরি। তোমার ভালবাসায় সাড়া দেইনি তখন। হেলায় ফিরিয়ে দিয়েছিলাম আমি সব।
-
-কি ব্যাপার কিছু বলবে না? ভুল তো মানুষ করে। করে না?
ভুল কি গরু-ছাগল করে? ফেরেস্তা করে? মানুষ তো
মানুষ তো
ভালবাসতাম তো
বুঝি নাই তো
ভালবাসি আমি। আমি বুঝি নাই।
একবার ফিরে তাকাও। এই দেখ আমি কান ধরছি। তবুও এরকম করো না প্লিজ। সরি বললাম তো।
-সরি
-সরি! কিসের সরি? তুমি কেন সরি বলছ? ক্ষমা করবে না আমায়? ভালবাসবে না আমায়?
আবির তাকালো রিমির দিকে। রিমি কাঁদছে। আবীর তো এ মেয়ের কান্না দেখার জন্য ওকে ভালবাসেনি। ভালবাসছে হূদয়ে ঝড় তোলা হাসি দেখার জন্য। তাহলে ওকে কাঁদাচ্ছে কেন আবির?
-রিমি
-হুম
-তুমি একাই সব বলে যাবে? আমি কিছু বলব না?
-না
-ভালবাসবে আমায়?
-কখনও না।
বলেই আবীরের বুকে ঝাপিয়ে পড়ল রিমি।
এ কি! রিমি এখনও কাঁদছে কেন? ভালবাসি বললাম তো!
২| ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:২২
ক্থার্ক্থা বলেছেন: গল্পটা অনেক ভালো লাগলো ।
©somewhere in net ltd.
১|
৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৫৬
হাসান রাকিব বলেছেন: ভালো লাগলো