নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি নিভৃতা। ভালোবাসি পড়তে। একটু আধটু লেখালেখির অপচেষ্টা চলে মাঝেমাঝে।

নিভৃতা

সামুতে আট বছর আগে কোনভাবে যুক্ত হলেও আমার ব্লগিং জীবন আসলে শুরু জানুয়ারি, ২০২০ থেকে।

নিভৃতা › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প: ভয় -০৫

২৬ শে জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ১১:০৭

১ম পর্ব - Click This Link

৪র্থ পর্ব - Click This Link


দুপুরবেলা অলস সময় কাটছিল বীথির। আসলাম খান নিচে অফিসঘরে কাজ করছেন। বীথির যেন সময় কাটতেই চাইছে না। কখনও লাইব্রেরিতে গিয়ে বই পড়ার চেষ্টা করলো ও, কখনও বা টিভি দেখার চেষ্টা করলো। কিন্তু কোন কিছুতেই মন বসছিল না যেন। আসলাম খান সাথে থাকলে সময় যেন ছুটে চলে, আর উনি দূরে সরে গেলে সময়ের কাঁটা যেন আর নড়তেই চায় না।

সারা বাড়ি আবার হেঁটে হেঁটে দেখছে বীথি। এবার একা একা। এক সময় হাঁটতে হাঁটতে ছাদে চলে গেলো ও। বিশাল ছাদ। যেন তেপান্তরের মাঠ। চারিদিকে সুন্দর রেলিং দেয়া। এক পাশে গোল ছাতার মত করে ধবধবে সাদা শ্বেত পাথরের  শেড তৈরি করা হয়েছে। যেন শ্বেত পাথরের ছোট্ট একটা কুঁড়েঘর। মাঝখানে ছোট্ট একটা গোল টেবিল এবং চারিদিকে চারটা চেয়ার। টেবিল চেয়ারগুলোও শ্বেত পাথরে তৈরি। অবসর সময়ে এখানে বসে চা টা খাওয়া হয়।

বীথির ভীষণ ভাল লাগলো এই জায়গাটা। একটা চেয়ারে গিয়ে বসলো ও। ছাদের চারদিকে ফুলের টব সারি বেঁধে সাজানো। তাতে ফোটে রয়েছে নানান জাতের রঙ বেরঙের ফুল। সুগন্ধি ফুলও আছে অনেক। মৃদু বাতাসে ভেসে আসছিল নাম না জানা নানান ফুলের ঘ্রাণ। বীথি আবার উঠে দাঁড়ালো। হাঁটতে হাঁটতে ফুলগাছগুলো দেখতে লাগলো। আলতো করে একটি একটি করে সবগুলো গাছের পাতা আর ফুলে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো ও। যেন নিজেকে পরিচয় করিয়ে দিলো ওদের সাথে। মানুষ যখন নেই, এই গাছেদের সাথেই না হয় সখ্যতা গড়ে উঠুক ওর। গাছদেরও তো জীবন আছে। মনও আছে হয়তো। হয়তো আছে অনুভূতিশক্তিও। ওদেরও হয়তো জানতে ইচ্ছে করে নতুন কেউ এলে তার পরিচয়।

গাছেদের সাথে কুশল বিনিময় করতে করতে হঠাৎ ওর নজর গেলো একটা সিঁড়ির দিকে। ও যে সিঁড়িটা বেয়ে উপরে উঠে এসেছে এটা ঐ সিঁড়ি না। বীথি কাছে গেলো সিঁড়িটার। সিঁড়িটা লোহার তৈরি। সরু সরু সিঁড়িগুলো সাপের মতো পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে নিচে নেমে গেছে। বীথি সিঁড়িটা দেখে ফিরে আসছিল। আবার কী ভেবে সিঁড়িটার দিকে এগিয়ে গেলো। সাবধানে পা রাখলো একটা সিঁড়িতে। তারপর ধীরে ধীরে নেমে গেলো নিচে।

সিঁড়িটা শেষ হয়েছে বাড়িটার পাঁচিল ঘেষে। বীথি বুঝতে পারলো এটা এই বিশাল বাড়িটার পেছন দিক। এদিকে বাইরে বের হয়ে যাওয়ার একটা ছোট্ট গেটও রয়েছে। বুঝা যায় বাড়ির এই দিকটা কিছুটা পরিত্যক্ত। কেমন যেন স্যাঁতসেঁতে। বাড়িটা যদিও এমনিতেই নিরিবিলি কিন্তু এদিকটা একটু বেশিই নিরিবিলি। বাড়ির সামনের দিকের সাথে এদিকটার যেন কোন যোগাযোগই নেই।

গা ছমছম করে উঠলো বীথির। কেমন যেন ভৌতিক মনে হলো জায়গাটা বীথির কাছে। যদিও ও ভূতে বিশ্বাস করে না তবু এই মুহূর্তে ভীষণ ভূতের ভয় হলো ওর। এদিক থেকে চিৎকার করে ডাকলেও ওদিক থেকে বা বাড়ির ভেতর থেকে কেউ শুনতে পাবে না বোধ হয়। বাড়ির  এদিকটায় যে রুমগুলো আছে সেগুলোও মনে হয় পরিত্যক্ত। কারন জানালা দরজা সব বন্ধ দেখা যাচ্ছে এবং কাজের লোকজনের কোন সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছে না।  ও তাড়াতাড়ি সিঁড়ির দিকে পা বাড়ালো।

   ছাদ থেকে নিচে নেমে এলো বীথি। এখনও ভয় ভয় লাগছিল ওর। বেলা একটা বাজে। এখনও ফেরেন নি আসলাম খান। বীথির কিছুই ভাল লাগছিল না। একটা মানুষ নেই যার সাথে দুটো কথা বলা যায়। কাজের লোকগুলোও সব পুরুষ। একটা মেয়ে নেই কোথাও। ওর কেমন যেন দম বন্ধ হয়ে আসছিল। এভাবে একা একা এই বাড়িতে থাকলে ও তো মরেই যাবে। একটা দিনই যেন কাটতে চাইছে না কিছুতেই। বাকি দিনগুলো কী করে কাটবে।

খোকনের জন্য মনটা কেমন করে উঠলো। না জানি ভাইটা ওর কী করছে এখন। হয়তো বীথির কথা ভেবে কেঁদে চলেছে। ভাইটার জন্য আর কখনও হয়তো মালা গাঁথা হবে না কোনদিন। কোনদিন আর সেই শিউলি তলায় ফুল কুঁড়ানো হবে না। কোনদিন আর মন খুলে মায়ের সাথে কথা বলা হবে না। যতই সৎ মায়ের যন্ত্রণা থাকুক তবু ঐ গ্রামে ওর অনেক কিছুই প্রিয় ছিল। ঐ গ্রাম ঐ বাড়ি সবই ওর আপন ছিল। কষ্টের মাঝেও মধুর একটা বন্ধন ছিল ওখানে। কিন্তু এখানে? এখানে তো কিছুই ওর আপন নয়। এই চাকচিক্য, এই আভিজাত্য সবই কেমন যেন এক অস্বস্তি আর আড়ষ্টতা এনে দেয় ওর মাঝে। এই ঝলমলে পরিবেশে বীথির নিজেকে বড় বেমানান মনে হয়। এখানকার কিছুই যেন বীথিকে আকর্ষণ করতে পারছে না।

মন খারাপেরা দল বেঁধে হানা দেয় ওর মনে। ও অলস পায়ে, উদাস হয়ে এ ঘর থেকে ও ঘর ঘুরে বেড়ায়। নিজেকে মনে হয় এক বন্দিনী, যে কী না আটকে পড়েছে বিশাল এক গোলকধাঁধায়। যার ভেতর থেকে বের হওয়ার কোন রাস্তা খোলা নেই। বাড়িটাকে মনে হয় কেমন যেন রহস্যে ঘেরা। চারিদিকে যেন কী এক রহস্যের ধুম্রজাল। ঠিক যেন রহস্য উপন্যাসে পড়া রহস্যময় বাড়িগুলোর মত।

      হাঁটতে হাঁটতে ড্রেসিং রুমটার সামনে এসে দাঁড়ালো বীথি। দ্বিধাভরা মন নিয়ে ভেতরে পা রাখলো। বিশাল ড্রেসিংরুম। অনেকগুলো বাহারি কারুকাজ করা কাঠের আলিমিরা রাখা। অপূর্ব সুন্দর কারুকাজ করা বিশাল আয়নায় বীথি উপর থেকে নিচ পর্যন্ত নিজের  প্রতিবিম্ব দেখতে পেলো। খুব সাধারণ একটা সালোয়ার কামিজ পরে আছে ও।


বীথি একটা আলমারির কাছে গিয়ে আলমারিটা খুলল। সারে সারে ঝুলানো চোখ ধাঁধানো সব সুন্দর সুন্দর শাড়ি। সবগুলো শাড়িই নীল কিংবা নীলের প্রাধান্য বেশি। কার শাড়ি এগুলো? সুরভীর শাড়িই হবে। সুরভী কি কেবল নীল রঙের শাড়িই পড়তো? সিঁড়ির বাঁকে টাঙানো ছবিটার কথা মনে পড়লো ওর। নাহ, ঐ ছবিতে তো ওর পরনে একটা গোলাপি শাড়ি ছিল।

বীথি এই আলমারি বন্ধ করে আরেকটা আলমারি খুলে। ঐ আলমারিতে সব সাদা রঙের প্রধান্য বেশি এমন শাড়ি রাখা। বীথি আরেকটা আলমারি খুলল। ওটাতে সব গোলাপি শাড়ি। এভাবে একে একে সবগুলো আলমারিই খুলে দেখে ফেলল বীথি। বেশিরভাগই শাড়িতে ভর্তি। আর একেকটা আলমারিতে একেকটা বিশেষ রঙের শাড়ি সারে সারে ঝুলিয়ে রাখা আছে।  দুইটা আলমারি ভর্তি শুধুই গহনার বাক্স।

হঠাৎই বীথির শাড়ি পরতে ইচ্ছে করলো ভীষণ। কিন্তু ওর তো কোন শাড়ি নেই। ও সুরভীর শাড়িগুলো থেকে একটা বেছে নিয়ে পরে ফেলল। তারপর শাড়িটার সাথে মানায় এমন গহনা বের করে পরলো। একদম সুরভীর মত সাজবার চেষ্টা করলো ও।  কিন্তু চুলগুলোকে কিছুতেই সুরভীর মত ঘাড় অবধি সেট করতে পারলো না। হঠাৎ ওর মনে পড়লো একটা আলমারিতে অনেক গুলো বিভিন্ন সাইজের উইগ সাজানো রয়েছে। সেখান একটা বব  উইগ এনে পরলো ও।


আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে যেন চিনতেই পারলো না বীথি। এ যেন ঠিক সুরভী দাঁড়িয়ে রয়েছে আয়নার ওপারে। এমন সময় দরজাতে নক হলো। দরজাটা খুলে দিলো বীথি। আসলাম খান বীথিকে দেখে হতভম্বের মত কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলেন ওর দিকে। বীথিকে চিনতে তার যেন কয়েক মুহূর্ত সময় লাগলো। যখন  চিনতে পারলেন তখন প্রচণ্ড রাগে যেন রুদ্র মূর্তি ধারণ করলেন। চোখ দুটো মুহূর্তেই রক্তবরণ ধারণ করলো। এ যেন  অন্য কেউ। আসলাম খান নন। এই লোকটা যেন হিংস্র এক দানব। আসলাম খান বজ্র কণ্ঠে হুঙ্কার দিয়ে ডেকে উঠলেন,

----বীথি!

আসলাম খানের এই ভয়ঙ্কর মূর্তি দেখে ভয়ে কাঁপতে লাগলো বীথি। আসলাম খান আবার হুঙ্কার দিয়ে বললেন,

----এখনই এসব খুলে রেখে আসো। আর কোনদিনও সুরভীর কোন জিনিসে হাত দিবে না তুমি।

বলেই রাগে কাঁপতে কাঁপতে গটগট করে হেঁটে সেখান থেকে চলে গেলেন আসলাম খান। বীথি বাকরুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল কিছুক্ষণ।  লজ্জায় অপমানে মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করলো ওর। কোনরকমে  পোশাক পাল্টে, সবকিছু জায়গায় রেখে চোখের পানি ফেলতে ফেলতে ছুটে  নিজের রুমে এলো ও এবং বিছানায় পড়ে অঝর ধারায় কাঁদতে লাগলো। ওদিকে দরজাটা খোলাই রয়ে গেছে। কতক্ষণ এভাবে কেঁদেছিল জানে না বীথি। হঠাৎ মাথায় কারও সস্নেহ স্পর্শ অনুভব করতেই তাড়াতাড়ি চোখটা মুছে উঠে দাঁড়ালো ও। আসলাম খান কখন রুমের ভেতরে এসে ঢুকেছেন খেয়ালই করেনি ও।

---বীথি, আমাকে ক্ষমা করে দাও। তোমার সাথে এ রকম আচরণ করা আমার মোটেই ঠিক হয়নি। আসলে হঠাৎ তোমাকে ঐ বেশে দেখে আমার মনে হলো যেন সুরভীই দাঁড়িয়ে আছে। তাই নিজেকে সংযত করতে পারিনি।


বীথি তখনও ফুঁপিয়ে কেঁদে চলেছে। আসলাম খান পরম মমতায় ওর হাতটা নিজের হাতে নিলেন। তারপর ওর চোখের জলটা সযত্নে মুছে দিলেন নিজের রুমাল দিয়ে। বীথি কোনরকমে কান্না থামিয়ে ফুঁপাতে ফুঁপাতে বলল,

---আপনি কেন ক্ষমা চাইছেন? ভুল তো হয়েছে আমার। আমার এভাবে উনার জিনিসে হাত দেয়া উচিৎ হয়নি। আসলে উনার জন্য আপনার ভালবাসা যে কতটা গভীর আমি আন্দাজ করতে পারিনি।

---শোন, বোকা মেয়ে, আর বেশি বুঝতে হবে না। আজকের জন্য বোঝাটা একটু বেশি হয়ে গেছে। একটা কথা জেনে রাখো তুমি যেমনটি আছো তেমনটিই থাকো। তোমার সরলতাটাই তোমার সবচেয়ে বড় অলঙ্কার। আর কিছু দরকার নেই তোমার। কখনও নিজের স্বকিয়তাকে বিসর্জন দিতে যেও না। নিজেকে অন্যের মত করার চেষ্টা করো না।  এবার নিচে চলো। লাঞ্চের সময় পার হয়ে গেলো।

বীথি এই লোকটাকে বুঝতে পারে না কিছুতেই। বাড়িটার মত এই  লোকটাও এক দূর্ভেদ্য ধাঁধা হয়ে রয়ে গেলেন বীথির মনে।
-----

দিনটা এক সময় পার হয়ে গেলো। সকাল থেকে যে সময়টা পাথরের মত থমকে রয়েছিল সেই সময়টা লাঞ্চের পর যেন ফুরুত করে পাখির মত উড়ে গেলো। লাঞ্চের পর বীথিকে নিয়ে বাগানে হাঁটতে বের হলেন আসলাম খান। নাম না জানা ফুলগুলোর সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন বীথির। আসলাম খানের সাথে কথা বলতে বলতে কখন যে বিকেল হয়ে গেলো টেরও পেলো না বীথি। বাগানেও একটি জায়গায় ঠিক ছাদের মত খুব সুন্দর একটা বসার জায়গা আছে। জায়গাটার পাশেই রয়েছে একটা কৃত্রিম ঝর্ণাধারা। সেখানে অবিরত কলকল করে  পানির  ধারা ছুটে চলেছে। পানির সেই মিষ্টি কলকল শব্দ আর বাগানের স্নিগ্ধতামাখা সৌন্দর্য যেন এক মনোমুগ্ধকর পরিবেশের সৃষ্টি করেছে। আর পাশে আসলাম খান থাকায় বীথি যেন এক স্বর্গীয় সুখ অনুভব করছিল।

সেখানে বসে ওরা চা পান করলো। বীথির মন জুড়ে তখন সুখের পায়রাগুলো ওড়াওড়ি করছিল। যতই মনকে ও লাগাম পরাতে চায় ততই মনটা যেন এক লাগামহীণ পাগলা ঘোড়ার মত এদিক ওদিক ছুটতে থাকে। এক সময় বিকেলটাও টুপ করে ঝরে পড়ে। সুখের মুহূর্তগুলো এত ক্ষণস্থায়ী হয় কেন কে জানে। সুখের মুহূর্তগুলোকে যদি খাঁচায় বন্দী করে রাখা যেত তাহলে কী ভালটাই না হত। এমনই সব উল্টা পাল্টা ভাবনায় ডুবে থাকে বীথির মনটা।

রাতের ডিনার শেষে বীথিকে ওর রুমে পৌঁছে দিয়ে নিজের রুমে চলে যান আসলাম খান। আসলাম খান নিজের পাশের রুমটাই দিয়েছেন বীথিকে। একঝাঁক সুখের পায়রা বুকে নিয়ে বীথি বিছানায় শরীরটা এলিয়ে দেয়। বার বার ওর চোখের সামনে আসলাম খানের চেহারাটা ভেসে উঠতে থাকে। ও ভাবতে চায় না তবু লোকটার ভাবনা কিছুতেই যেন ওর পিছু ছাড়তে চায় না। আসলাম খানের সাথে কাটানো প্রতিটা মুহূর্ত বীথির চোখের সামনে ভাসতে থাকে। আসলাম খানের প্রতিটা কথা ওর কানে প্রতিধ্বনিত হতে থাকে। এ এমনই এক জ্বালা যে জ্বালা থেকে মুক্তি পেতেও ইচ্ছে করে না। এ এমনই এক অসুখ যে অসুখের কোন ঔষধ নেই। প্রথম প্রেম এমনই এক চোরাবালি যে চোরাবালিতে শুধু তলিয়েই যেতে হয়। বাঁচার কোন উপায় থাকে না।

   আসলাম খানের ভাবনায় ডুবে থাকতে থাকতে হঠাৎই বীথির মনে হল সারা বাড়ি বড় বেশি নিস্তব্ধ হয়ে পড়েছে। যেন এক নিঝুম পুরিতে এসে পড়েছে ও। কাজের লোকেরা সব চলে গেছে কোয়ার্টারে। বাড়িটা তাই আরও বেশি নিঝুম হয়ে পড়েছে। বীথির একটু একটু ভয় করতে লাগলো এবার। ও ঘুমানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু কিছুতেই দুটি চোখের পাতা এক হচ্ছে না।

গা ছমছমে এক অনুভূতি হতে লাগলো ওর। একটু একটু ঠাণ্ডা পড়েছে। শীতের সময় রাতের নিস্তব্ধতাটা যেন আরও একটু বেশি অনুভূত হয়। বীথি পা থেকে মাথা পর্যন্ত একটা চাদর দিয়ে ভাল করে ঢেকে ভয় থেকে বাঁচার চেষ্টা করলো। কিন্তু তাতে ভয়টা যেন আরও বেড়ে গেলো। ওর মনে হলো এখনই কেউ ওর নাকে মুখে বালিশ চাপা দিয়ে চেপে ধরবে। তাড়াতাড়ি ও মুখের উপর থেকে চাদরটা সরিয়ে মাথাটা আবার বের করলো।


কাছে পিঠেই কোথাও কোন একটা পাখি, প্যাঁচার মত বিদঘুটে স্বরে ডেকে উঠলো। একটা পিন পড়লেও যেখানে চমকে উঠতে হয় সেখানে প্যাঁচাটার  এমন বিদঘুটে ডাকে ভয়ে বীথির প্রাণটাই যেন উড়ে গেলো। নিজের হৃৎস্পন্দনের শব্দ ও যেন নিজেই শুনতে পাচ্ছিল। গ্রামে প্যাঁচার ডাককে অশুভ মানা হয়। যে বাড়িতে প্যাঁচা ডাকে সেই বাড়িতে নাকি কারও মৃত্যু হয় এমনটাই বিশ্বাস করে গ্রামের মানুষ। কোন একটা বইয়েও পড়েছে বীথি, ক্যাথলিক সন্ন্যাসীরা প্যাঁচাকে  ডেভিলের অ্যাসোসিয়েট বলে থাকেন।

প্যাঁচাটা অবিরত ডেকেই চলেছে। বীথির মনে হলো প্যাঁচাটা এখনই ওর প্রাণটা বের করে নিয়ে যাবে। বীথি কানে বালিশচাপা দিলো। ঐ বালিশচাপা অবস্থায়ই ওর মনে হলো কেউ যেন দরজার লকটা খুলার চেষ্টা করছে। বীথি চিৎকার দিতে চাইলো। কিন্তু ওর গলা থেকে কোন আওয়াজই বের হলো না। বীথি চোখ বন্ধ করে কানে বালিশচাপা দিয়ে মনে মনে সূরা পড়তে লাগলো আর আল্লাহকে ডাকতে লাগলো।


কিছু সময় পার হতেই ওর মনে হলো প্যাঁচাটাও আর ডাকছে না, দরজাতেও কেউ নেই। কিছুটা যেন প্রাণ ফিরে পেলো ও। একবার ভাবলো ঘর থেকে বের হয়ে গিয়ে আসলাম খানকে ডেকে বলে ওর ভয়ের কথা। পরক্ষণেই এক রাশ দ্বিধা এসে ওকে ছেয়ে ধরলো। আসলাম খান এমনিতেই ওকে একটা বাচ্চা মেয়ে করেন। এই কথা বললে তো উনি ওকে একটা শিশুই ভেবে বসবেন। বীথি তা কিছুতেই হতে দিতে পারে না। তাছাড়া ওর মনে হলো এই মুহূর্তে দরজা খুলে ঘরের বাইরে পা দিলেই কেউ ওর গলা চেপে ধরবে।


বীথির ভীষণ কান্না পেলো। মনে হল এত বড় বিশাল পৃথিবীতে ওর আপন বলতে কেউ নেই। ও বালিশে মুখ চেপে কাঁদতে থাকলো অবিরত। হঠাৎই ওর কান্নার আওয়াজ ছাপিয়ে আরেকটা কান্নার ক্ষীণ আওয়াজ কানে এলো। কেউ যেন গুঙিয়ে গুঙিয়ে কেঁদে চলেছে। বীথি নিজের কান্না থামিয়ে কানটা খাড়া করে শুনার চেষ্টা করলো। কান্নাটা আরও স্পষ্ট হলো। কোন পুরুষ মানুষের কান্না। সেই স্বপ্নের মত। স্বপ্নে সেই লোকটার কান্না দেখে ভয় পায়নি ও। কিন্তু বাস্তবে এই নিশুতি রাতে সেই কান্না শুনে ভয়ের দমক আবারও যেন এক ধাপ বেড়ে গেলো। বীথি দম বন্ধ করে পড়ে রইল।


এভাবে  ভয়ের সাথে যুদ্ধ করতে করতে কখন যে ও ঘুমের কোলে ঢলে পড়েছিল টেরও পায়নি। ঘুম ভাঙলো প্রচণ্ড জোরে কারও দরজা ধাক্কানোর শব্দে। মনে হচ্ছিল যেন দরজাটা এখনই ভেঙে পড়ে যাবে। আতঙ্কিত বীথি ধড়মড় করে উঠে বসলো বিছানায়।

চলবে

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১:৪২

রাজীব নুর বলেছেন: বীথি বীথি। বীথি।
কত বার বীথি বীথি বলেছেন জানেন?

২৬ শে জানুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৩:১৯

নিভৃতা বলেছেন: একটু বেশিই বলে ফেলেছি। পরেরবার খেয়াল রাখবো। ধন্যবাদ জানবেন।

২| ২৬ শে জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:০২

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন: ঝকঝকে বর্ণণা ভালই লাগলো।

২৬ শে জানুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৩:২০

নিভৃতা বলেছেন: ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।

৩| ২৬ শে জানুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:৪৫

করুণাধারা বলেছেন: মন্তব্য না করাই হলেও সব পর্ব পড়েছি, খুব ভালো লাগছে। বুড়ির গল্পের চেয়ে এটা অনেক ভালো। B-)

২৬ শে জানুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:১১

নিভৃতা বলেছেন: অশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। অনুপ্রাণিত হলাম খুব। বুড়ির গল্প কোনটা বুঝলাম না।
অনেক শুভ কামনা রইল। ভালো থাকবেন।

৪| ২৬ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১০:১০

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: ক্লাইমেক্স আসছে... হরর অনুভূতি... ভালবাসা, দ্বিধা... দানা বাঁধছে সব ধীরে ধীরে....


+++++++

২৬ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১১:১২

নিভৃতা বলেছেন: আন্তরিক ধন্যবাদ গল্পের সাথে থাকায়।

৫| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ১১:৫৪

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: ভালো লাগার গল্প আমার

৩০ শে জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১২:১৫

নিভৃতা বলেছেন: তোমার কবিতাগুলোও অনেক ভালো লাগার।

৬| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১২:১৫

নীল আকাশ বলেছেন: এই পর্ব কিছুটা পড়ার মতো। কিছু অংশ ভালোও লেগেছে।
তবে লেখার পর ভাল করে নিজে পড়ে দেখেন না।
পরের পর্বে যাচ্ছি।

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১২:১৯

নিভৃতা বলেছেন: যাক শেষ পর্যন্ত কিছুটা অন্তত ভালো লাগাতে পেরেছি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.