নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি নিভৃতা। ভালোবাসি পড়তে। একটু আধটু লেখালেখির অপচেষ্টা চলে মাঝেমাঝে।

নিভৃতা

সামুতে আট বছর আগে কোনভাবে যুক্ত হলেও আমার ব্লগিং জীবন আসলে শুরু জানুয়ারি, ২০২০ থেকে।

নিভৃতা › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প: ভয় -০৬

২৬ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ৯:৪১



১ম পর্ব- Click This Link

৫ম পর্ব - Click This Link

থর থর করে কাঁপতে লাগলো ওর সমস্ত শরীর। ঠিক তখনই দরজা ধাক্কানোর শব্দ ভেদ করে কানে এলো আসলাম খানের কণ্ঠস্বর। উনি জোরে জোরে চিৎকার করে বীথিকে ডাকছেন। বীথি চারদিকে তাকিয়ে বুঝলো সকাল হয়ে গেছে। যেন প্রাণটা ফিরে পেলো ও। তারপর তাড়াতাড়ি উঠে গিয়ে দরজাটা খুলে দিলো।  উদ্বিগ্ন আসলাম খান দাঁড়িয়ে রয়েছেন দরজায়। বীথিকে দেখতে পেয়ে উদ্বিগ্ন কণ্ঠে  বললেন,

---- তুমি ঠিক আছ তো? সেই কখন থেকে দরজাতে ধাক্কাচ্ছি। কিন্তু কোন সাড়া নেই তোমার। আর একটু হলে তো দরজাটা ভেঙেই ফেলতাম। ভীষণ ভয় পাইয়ে দিয়েছিলে।

আসলাম খানকে সামনে দেখে বীথির সব ভয় নিমেষে উড়ে গেল। ও লজ্জিত কণ্ঠে বলল,
----আমি ঠিক আছি।
----কিন্তু তোমার চেহারা দেখে তো ঠিক মনে হচ্ছে না। মনে হচ্ছে এক রাতে কোন ঝড় বয়ে গেছে তোমার উপর দিয়ে। কী হয়েছে ঠিক করে বলো তো। ভয় পেয়েছিলে?

বীথি ভাবলো কিছুতেই নিজের ভয়ের কথা আসলাম খানকে বলা যাবে না। ওর দূর্বলতা টের পেলে উনি ওকে আরো বাচ্চা ভাববেন। ও তাই রাতের ঘটনা গোপণ করে বলল,

----কিছু হয়নি। হঠাৎ করে বাড়ি থেকে অনেক দূরে এসেছি তো। ঠিক মত রাতে তাই ঘুম হয়নি।

----আচ্ছা, ঠিক আছে। ফ্রেশ হয়ে আসো। নাশতা খাবে।

নাশতার টেবিলে বীথি লক্ষ্য করলো আসলাম খান আবার সেই গাম্ভির্যের চাদরে নিজেকে ঢেকে ফেলেছেন। চুপচাপ নাশতা খেয়ে চলেছেন। ও নাশতা খেলো কি খেলো না চেয়েও দেখলেন না। এই গাম্ভির্যের চাদরে মোড়া  লোকটা বড় অপরিচিত ওর কাছে। ইনি যেন অনেক দূরের মানুষ। সেই স্নেহময়, বন্ধুসুলভ মানুষটা ইনি নন। ইনি অন্য কেউ।

আসলাম খান বীথির কলেজে ভর্তির ব্যাপারে কিছুই বলছেন না। উনি কি তবে নিজের প্রতিশ্রুতি ভুলে গেলেন? বীথি একবার ভাবলো ভর্তির ব্যাপারে  জিজ্ঞেস করবে। কিন্তু আসলাম খানের চেহারা দেখে ভয়ে কিছু জিজ্ঞেস করতে পারলো না। আসলাম খানের হঠাৎ করেই এই রঙ পরিবর্তন ভীষণ ভাবনায় ফেলে দেয় ওকে।

আসলাম খান নাশতা শেষ করে উঠে চলে যান। বীথির দিকে ফিরেও তাকান না। বীথি অসহায়ের মত বসে থাকে। ওর খুব অভিমান হয়। বুকের ভেতর একটা কান্না দলা পাকিয়ে ওঠে। কান্নাটাকে কোন রকমে আটকে রাখে ও। কেউ দেখে ফেললে সর্বনাশ হয়ে যাবে। ভীষণ লজ্জার ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে সেটা ওর জন্য।

কোনরকমে নাশতা শেষ করে উঠে আসে বীথি। মনে পড়ে গতকালের বিকেলটার কথা। কী মধুর সময়ই না ও কাটিয়েছিল আসলাম খানের সাথে। কত হাসিখুশি প্রাণচ্ছল লাগছিল আসলাম খানকে। আর আজ? একটা মানুষ রাতারাতি একরাতে এতটা পাল্টে যায় কী করে? অদ্ভুত মানুষ এই লোকটা।

    রাতের ব্যাপারটা ভুলে যেতে চাইলো ও। এসব কেবলই ওর মনের কল্পনা। এমনিতে বীথি খুব সাহসী মেয়ে। সামান্য অলিক ভয় ওকে গ্রাস করে নেবে তা কি হয়? সব কিছুর একটা যৌক্তিক ব্যাখ্যা দাঁড় করানোর চেষ্টা করলো ও। হঠাৎ করে জনমানবশূন্য এত বড় একটা বাড়িতে একা একটি ঘরে থাকায় ওকে ভয় গ্রাস করেছিল। আর ভয় থেকেই জন্ম নিয়েছিল সব অলিক কল্পনা। এরকম একটা যুক্তি দাঁড় করাতে পেরে ভাল লাগলো। মন থেকে ভয় অনেকটাই কেটে গেলো।

এ  বাড়ির পরিবেশের সাথে নিজেকে  মানিয়ে নিতে হবে যে করেই হোক। এছাড়া তো আর কোন উপায়ও নেই। যদিও এই বিশাল প্রাসাদ আর আভিজাত্যের সাথে  মানিয়ে নেয়াটা ওর মত এক গ্রামের মেয়ের জন্য খুবই দুরূহ ব্যাপার, তবু ও মনে প্রাণে চেষ্টা করতে লাগলো মানিয়ে নেয়ার। কাজের লোকদের সাথে কথা বললো। পরিচিত হওয়ার চেষ্টা করলো।

এক সময় অনেকটা স্বভাবিক হয়ে এলো বীথি। আড়ষ্টতা অনেকটা কমে গেলো। প্রাসাদটাকে আরো ভাল করে ঘুরে ঘুরে দেখলো। বাগানে হাঁটলো। আসলাম খান সেই সকালে কোথাও বেরিয়ে গিয়েছিলেন। বীথিকে কিছুই বলে যাননি। তেমন কোন কথাই হলো না আজ আসলাম খানের সাথে। মনটা তাই কিছুটা বিষণ্ন হয়ে রইল। বিষণ্নতার সাথে জোট বাঁধলো এসে এক রাশ অভিমান।

লাইব্রেরিতে সময় কাটানোর চেষ্টা করলো। ডেল কার্নেগির একটা বই খুঁজে বের করলো। গ্রামের কলেজের একজন শিক্ষক উনার কথা খুব বলতেন। উনার বই পড়লে নাকি আত্মিক উন্নয়ন ঘটে। উনার বাণী মনে সাহস যোগায়। নিজেকে চেনার পথ তৈরি করে দেয়। বইটা খুলে মগ্ন হয়ে  পড়তে লাগলো ও। কী সুন্দর সুন্দর কথা বলে গেছেন ডেল কার্নেগি।

"সাফল্য হল আপনি যা চান তা হাসিল করা। আনন্দ হল আপনি যা চান তা পাওয়া।"

"যদি ভালোভাবে বাঁচতে চান তা হলে মনে রাখবেন- সমস্যাকে তুচ্ছজ্ঞান করতে হবে।
কর্মহীন জীবন হতাশার কাফনে জড়ানো একটি জীবন্ত লাশ।"

"অনুকরণ নয়, অনুসরণ নয়- নিজেকে খুঁজুন, নিজেকে জানুন, নিজের পথে চলুন।
আপনি কে বা আপনার কী আছে তার ওপর আপনার সুখ নির্ভর করে না, সুখ নির্ভর করে আপনি কেমন চিন্তা করেন তার ওপর।"

"যা আপনাকে পীড়া দেয়, এমন বিষয় নিয়ে এক মিনিটের বেশি ভাববেন না।
মানুষের গুণ নিয়ে প্রতিযোগিতা করুন, দোষ নিয়ে নয়।"

বিক্ষিপ্ত মন অনেকটাই শান্ত হয়ে গেলো বাণীগুলো পড়তে পড়তে। বিষণ্নতাও কেটে গেলো অনেকটাই।  বাগানে গিয়ে টুকটাক কাজ করতে লাগলো বীথি। আগাছা ছেটে দিলো। কীটনাশক স্প্রে করলো। মালি ওকে দেখিয়ে দিলো কী করে কী করতে হয়।  মালির সাথে অনেক কথা হলো।

অনেক বিদেশী ফুলের গাছ আছে বাগানে। শুধু দশ বারো জাতের গোলাপই আছে বাগান জোড়ে। লাল টুকটুকে চায়না গোলাপগুলো শির উঁচিয়ে যেন তাকিয়ে আছে বীথির দিকে। মালি জানালো গোলাপগুলো সব সুরভীর লাগানো। সুরভী বাগানটাকে বড় ভালবাসতো। বেশি ভালবাসতো গোলাপ। নিজের হাতে ফুলগাছগুলোর যত্ন করতো ও। সুরভীর কথা বলতে বলতে মালির চোখে জল এলো।

মালি আরো বলল,
---বড় ভাল মানুষ ছিলেন ম্যাডাম। মনটা অনেক নরম ছিল। কাজের লোকদের খোঁজখবর নিতেন সব সময়। কারো কোন অসুখ বিসুখ হলে একেবারে  ঘরে গিয়ে খবর নিতেন। চিকিৎসার ব্যবস্থা করতেন। টাকার প্রয়োজন হলে দ্বিতীয়বার ভাবতেন না। সাথে সাথে দিয়ে দিতেন। এত মিশুক ছিলেন যে মনেই হত না এত বড় বাড়ির বউ তিনি।

বীথি এতক্ষণ সুরভীর রূপেই মুগ্ধ ছিল। এখন  সুরভীর জন্য শ্রদ্ধাটাও জায়গা করে নিলো মনে। প্রধান বাবুর্চি বদরুলের কাছে শুনেছে, সুরভীর রান্নার হাতও নাকি দারুণ ছিল। প্রায়ই নতুন নতুন রেসিপি শিখে আসলাম খানের জন্য রান্না করতো ও। শুধু আসলাম খান না সব কাজের লোককেও ও নিজের হাতে রান্না করে খাওয়াতো। এমন কি মাঝে মাঝে অসহায় এতিম বাচ্চাদেরও জড়ো করে নিজের হাতে রান্না করে  খাওয়াতো সুরভী।

সুরভী ছবিও আঁকতে পারতো। ওর আঁকা দারুণ দারুণ সব ছবি এ বাড়ির দেয়ালে দেয়ালে ঝুলে আছে। একটা ছবির দৃশ্য এমন, আসলাম খান আর সুরভী হাতে হাত ধরে বসে, গভীর ভালবাসা দুচোখে নিয়ে তাকিয়ে আছেন একে অপরের দিকে। নিজের ছবি নিজেই এঁকেছে সুরভী। দুচোখে লুকিয়ে থাকা গভীর ভালবাসাটা কী সুন্দর করে ও ফুটিয়ে তুলেছে ক্যানভাসে।

বীথি অনেকক্ষণ ছবিটা থেকে চোখ ফেরাতে পারেনি। এতটাই জীবন্ত ছবিটা। ছবিটার দিকে তাকালে ভুলে যেতে হয় ঐ ছবির একজন মানুষ আর এই পৃথিবীতে নেই।  একটা মানুষ একই সাথে এত গুণের অধিকারি কী করে হতে পারে ভেবে পায় না বীথি। এ বাড়ির একাকিত্বকে পাশ কাটিয়ে ও কী সুন্দর নিজের একটা আলাদা জগৎ তৈরি করে নিয়েছিল। বীথি মালিকে জিজ্ঞেস করলো,

----আচ্ছা মালি ভাই, উনি মারা গেলেন কীভাবে? কোন বড় অসুখ করেছিল বুঝি?

বিষাদের ছায়া নেমে আসে মালির মুখে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে সে উত্তর দেয়,
----কী করে যে মারা গেলো কেউ বলতে পারে না ম্যাডাম। ভাল হাসিখুশি মানুষটা হঠাৎ করেই লাশ হয়ে ফিরে এলো।

----লাশ হয়ে ফিরে এলো মানে? উনি কি তখন এই বাড়িতে ছিলেন না?

----না ম্যাডাম। উনি তখন উনার বাবার বাসায় ছিলেন। কদিন ওখানে থাকবেন বলে গিয়েছিলেন। উনি প্রায়ই যেতেন ওখানে। থাকতেনও। উনার বাবার বাসা বেশি দূরে না। গাড়িতে করে গেলে এখান থেকে দশ মিনিটের পথ হবে।

----ওহ। তারপর কী হলো?

----উনি ওখানে যাওয়ার দুদিন পর ভোরবেলা স্যারের কাছে ফোন এলো।
ফোন পেয়ে স্যার পাগলের মতো বেরিয়ে গেলেন। স্যার তো ভীষণ ভালোবাসতেন ম্যাডামকে। দুজনই দুজনের জন্য পাগল ছিলেন। এমন ভালবাসা আজকাল দেখা যায় না ম্যাডাম। কিন্তু ভাল মানুষেরা বেশিদিন এই পৃথিবীতে থাকে না। এইটাই হল নিয়ম। ম্যাডামও তাই এতো তাড়াতাড়ি চলে গেলেন আমাদেরকে ছেড়ে।

---কিন্তু উনার কী হয়েছিল তা তো বললেন না।
---কী যে হয়েছিল কে জানে? সবাই বলে ম্যাডাম নাকি আত্মহত্যা করেছেন। কিন্তু আমার বিশ্বাস হয় না। এমন হাসিখুশি মানুষ কেন আত্মহত্যা করবে বলেন? স্যারের সাথেও তো কোন বেবনতি ছিল না। হলে নিশ্চয়ই আমরা জানতে পারতাম।

সুরভী আত্মহত্যা করেছে শুনে বীথির বুকের ভেতরটা ধ্বক করে উঠলো। ওর ভাবতেই কষ্ট হলো এত সুন্দর একটা মেয়ে আত্মহত্যা করেছে।

---কীভাবে মারা গেলেন উনি?
---ম্যাডামদের বাসার সামনে একটা লেক আছে। ঐ লেকে ডুবেই মারা গেছেন ম্যাডাম। ভোরবেলা লেকের পানিতে উনার লাশ ভেসে থাকতে দেখা যায়। কীভাবে মরলেন সেটা কেউ বলতে পারে না। বাড়ির লোকেরা রাতের বেলা যখন ঘুমিয়ে ছিল তখন নাকি উনি বেরিয়ে এসেছিলেন ঘর থেকে। কেউ টের পায় নি। এতটুকুই শুনেছি আমি। বাকিটা আল্লাহ জানেন ম্যাডাম।

সব শুনে বীথির শরীর শিউরে উঠলো। সুরভী আত্মহত্যা করেছে এটা ওর জানা ছিল না। আর আসলাম খানের হঠাৎ করে মেজাজের এই পরিবর্তনের কারণটাও ও এখন ধরতে পারছে কিছুটা। ভালবাসার মানুষের এমন প্রস্থান কেইবা সইতে পারে। হয়তো সুরভীর এমন করে চলে যাওয়ার কষ্ট এখনও আসলাম খানকে নীরবে পীড়া দেয়।

কিন্তু সুরভী আত্মহত্যা করলো কেন? কী এমন কষ্ট ওর বুকে লুকিয়ে ছিল যা ওকে আত্মঘাতী করে তুলল? এ বাড়িতে সবার সাথে কথা বলে বীথি যেটুকু জেনেছে তা হলো, সুরভী আর আসলাম খান একে অপরকে পাগলের মত ভালবাসতেন। ওদের মধ্যে কখনোই কোন ঝগড়াঝাটি হতো না। কোন অশান্তি ছিল না ওদের জীবনে। তবে? বীথির মনে ঘোরপাক খেতে থাকে এই একই প্রশ্ন।

----

         সন্ধ্যায় বাড়িতে ফিরে এলেন আসলাম খান। হাতে অনেক গুলো শপিং ব্যাগ। বীথির দিকে ব্যাগগুলো বাড়িয়ে দিয়ে হাসিমুখে বললেন, দেখো তো পছন্দ হয় কি না?

আসলাম খানের হাসিমুখ দেখে বীথির মন থেকে নিমেষেই সব অভিমান দূর হয়ে গেলো। বীথি দ্বিধা নিয়ে ব্যাগগুলো হাতে নিয়ে বলল,
---এগুলো কী?
---তোমার জন্য কিছু কাপড়চোপড় ও দরকারি জিনিস।
বীথি বিস্মিত ও লজ্জিত হয়ে বলল,
---এগুলো কেন আনতে গেলেন? আর এত্ত!
আসলাম খান হেসে বললেন।
---বেশি কিছু তো না।

তারপর  ওরা এক সাথে চা নাশতা খেলো। এবার আর গাম্ভির্যের চাদরে মোড়া নন আসলাম খান। সেই প্রাণচ্ছল মানুষটা আবার ফিরে এসেছে। চা খেতে খেতে আসলাম খান  বললেন একটা কলেজের প্রিন্সিপালের সাথে কথা বলেছেন বীথির ভর্তির ব্যাপারে। কদিনের মধ্যেই বীথি কলেজ যেতে পারবে। খুশিতে নেচে উঠলো বীথির মনটা। আসলাম খান তাহলে ওর পড়াশুনার ব্যাপারটা ভুলে যাননি। কৃতজ্ঞতায় ওর চোখে জল এলো।

রাতে যথারীতি খাওয়াদাওয়া শেষে এক ভাল লাগা আবেশ মনে নিয়ে নিজের রুমে গেলো বীথি। আসলাম খান চলে গেলেন উনার ঘরে। আসলাম খান চলে যেতেই আগের রাতের ভয়ের কথা মনে পড়লো ওর। আজ যদি আবার সেই একই অবস্থা হয়! তারপর নিজেই নিজেকে অভয় দিলো ও।

গ্রাম থেকে নিজের বইপত্র সব সাথে করেই নিয়ে এসেছে। সেগুলো বের করে একটু পড়ার চেষ্টা করলো। বই পড়তে পড়তে কখন যে  ঘুমিয়ে পড়েছিলো টেরও পায়নি। হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলো। দেখলো সারা বাড়ি নিঝুম হয়ে গেছে ততক্ষণে। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখলো রাত একটা বাজে। ভয়টা এসে গ্রাস করার আগেই ও নিজেকে সাহস যোগালো, আজ কিছুতেই ভয় পাওয়া চলবে না।

রাত্রির নিরবতা ভেঙ্গে রাতের কোন পাখি ডেকে উঠলো আবার। গায়ে কাঁটা দিলো বীথির। একটু একটু ভয় পেতে শুরু করলো ও এবার। বলা যায় ভয়ের সাথে যুদ্ধ শুরু হল। ভয়কে ডিঙিয়ে নিজের বিছানায় এলো। মনকে অন্যদিকে ঘোরানোর চেষ্টা করলো। চোখ দুটো বন্ধ করে একশ থেকে উল্টোদিকে গুণতে শুরু করলো।

এভাবে এক সময় চোখের পাতা ঢুলুঢুলু হয়ে এলো। ঘুম মাত্র আসি আসি করছে এমন সময়  সেই গুঙিয়ে গুঙিয়ে কান্নার আওয়াজটা কানে এলো। ভীষণ ভয় পেলো বীথি এবার। তবে গত রাতের মত ভয়ে হিম হলো না আজ। ভয়ে ভয়েই ব্যাপারটা বুঝার চেষ্টা করলো। নিজের মনের অলিক কল্পনা হবে হয়তো।

এক সময় কান্নাটা থেমে এলো। বীথি ভাবলো এটা ওর মনের ভুলই হবে। কান্নাটা থামতেই ও আবার ঘুমানোর চেষ্টা করলো। এক সময় ঘুম চলেও এলো। কিন্তু আবার সেই কান্নার শব্দে ঘুমটা ভেঙে গেলো। বুকের ভেতরটা ভয়ে ঢিপ ঢিপ করতে লাগলো। রাতটা তখন আরও নিঝুম হয়ে গেছে। কান্নাটাকে আরও ভয়ঙ্কর মনে হচ্ছে।

গলাটা শুকিয়ে গেলো। মনে সাহস যুগিয়ে এবার বিছানা থেকে নেমে এলো ও। ঢক ঢক করে গ্লাসে রাখা পানিটা এক নিঃশ্বাসে পুরোটাই খেয়ে ফেলল। নাহ, কান্নার উৎসটা খুঁজে বের করতেই হবে যে করেই হোক। নয়তো এই ভয় ওকে শান্তিতে থাকতে দেবে না। তাছাড়া এমন বিদঘুটে আওয়াজে কে কাঁদে এ বাড়িতে খুঁজে বের করা দরকার। দরজাটা খুলে পা টিপে টিপে বের হলো বীথি। ওর হাত পা  ঠাণ্ডা হয়ে এসেছে ভয়ে। শরীর কাঁপছে। দাঁতে দাঁতে ঘর্ষণ হচ্ছে। কিন্তু তবু থামলো না ও। এগিয়ে গেলো করিডোর ধরে।

চলবে

মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১০:১১

রাজীব নুর বলেছেন: আসল চরিত্র কে বীথি ? না সুরভি?

২৬ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১১:১১

নিভৃতা বলেছেন: বীথি

২| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১:৪৬

চাঁদগাজী বলেছেন:


৩| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১:৪৭

চাঁদগাজী বলেছেন:


এখনো পড়তেছি

২৭ শে জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ১০:৩৬

নিভৃতা বলেছেন: জানি, কষ্ট হচ্ছে। দুঃখিত! :'(

৪| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ২:০০

মোহাম্মাদ আব্দুলহাক বলেছেন: দেখি তারপর কী হয়?

আপনি বর্ণনা সত্যি খুব আকর্ষণীয়, আমি পারিনা :(

২৭ শে জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ১০:৪০

নিভৃতা বলেছেন: আপনি সাহিত্যিক মানুষ। কী যে বলেন এসব! কী সুন্দর করে লেখেন আপনি। এভাবে লিখতে সবাই পারে না। যদি আপনার মত লিখতে পারতাম জীবন ধন্য হয়ে যেত।

৫| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ১০:৪৯

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: উদঘাটিত হোক রহস্য

সুরভীর আত্মার সাথে বীথির যোগাযোগ কি রহস্য উদঘাটিন করবে?
সুরভীর রহস্যজনক প্রস্থানের রহস্যজট খুলবে?
গভীর ভালবাসা প্রতিহংসা পররায় হয়! তেমনকিছু কি ঘটেছে সুরভীর জীবনে?
সুরভীর কোন সে শুন্যতা তার প্রাণ কেড়ে নিল....
বীথির স্বপ্ন কি পূরণ হবে/
অনেক প্রশ্ন অনেক্ বাঁকের মোড়ে দাড়িয়ে .. . .

++++

২৭ শে জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ১০:৫৩

নিভৃতা বলেছেন: দারুণ মন দিয়ে পড়ছেন। অশেষ কৃতজ্ঞতা ভাই। সব রহস্যের জটই খুলবে ধীরে ধীরে।
ভালো থাকবেন। আমার গল্পের সাথে থাকবেন। অনেক শুভ কামনা আপনার জন্য।

৬| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১:০৮

মোহাম্মাদ আব্দুলহাক বলেছেন: শব্দরা আমার সাথে মিলেমিশে খেলতে চায় আমিও তাদেরকে যথেষ্ট সময় দেই।

আপনি অনেক ভালো লেখিকা, আমি সত্যি তন্ময় হয়ে আপনার বর্ণনা পড়ি, এতে চরিত্রের হাবভাব বুঝা যায়।

২৭ শে জানুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৩:৩১

নিভৃতা বলেছেন: তা আপনার লেখা থেকেই বোঝা যায়।

ভালো লেখিকা তখনই হতে পারবো যখন আপনার মত লিখতে পারবো। আপনার প্রশংসা লেখার অনুপ্রেরণা বাড়িয়ে দেয়।

৭| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৪:৫৭

মোহাম্মাদ আব্দুলহাক বলেছেন: আপনি অনেক ভালো লিখেন এবং আরও ভালো হবেন তা িনশ্চিত। আপনার জন্য শুভকামনা।

২৭ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১১:৩৬

নিভৃতা বলেছেন: এমন অনুপ্রেরণা পেলে লিখার আগ্রহ এমনিতেই বেড়ে যায়।

৮| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ১১:৫৩

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: আল্লাহ আপনার লেখার হাত প্রসারিত করুন

৩০ শে জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১২:১৭

নিভৃতা বলেছেন: দোয়া করো আল্লাহ যেন আমাকে একটু ধৈর্য্য দেন। :)

৯| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ৯:০৩

আহমেদ জী এস বলেছেন: নিভৃতা,



আগেরগুলো পড়ে এটাতে মন্তব্য করছি।
বেশ লম্বা করেছেন। অনেক বর্ণনা ছোট করা যেতো মনে হয়। তাতে কাহিনী আটোসাটো হোত।

যাক এপর্বে রহস্য জিইয়ে রাখলেন।

৩০ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ৯:১৪

নিভৃতা বলেছেন: এরপর খেয়াল রাখবো।
মন্তব্য ও পরামর্শের জন্য অশেষ কৃতজ্ঞতা।
পরবর্তী পর্বগুলো পড়ার আমন্ত্রণ রইলো।
ভালো থাকবেন। শুভ কামনা।

১০| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১:৪২

নীল আকাশ বলেছেন: আমার গুরু উপরে যা বলেছেন আমি সেটাই বলি। লেখাটা অনেক ছোট করে নিয়ে আসা যেত। অনেক অপ্রয়োজনীয় বিষয় এসেছে।
আমি পড়ে যাচ্ছি।
ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.