নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি নিভৃতা। ভালোবাসি পড়তে। একটু আধটু লেখালেখির অপচেষ্টা চলে মাঝেমাঝে।

নিভৃতা

সামুতে আট বছর আগে কোনভাবে যুক্ত হলেও আমার ব্লগিং জীবন আসলে শুরু জানুয়ারি, ২০২০ থেকে।

নিভৃতা › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প: ভয় -০৯

২৯ শে জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ১১:২৭



১ম পর্ব - Click This Link

৮ম পর্ব- Click This Link

দ্রুত ভাবতে থাকে রূপম। আজ তিন বছরের উপর হতে চলল শুধু ভেবেই চলেছে সে। কিন্তু ভেবে চিন্তে কোন ফল পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু এখন আর একদম ভাবার সময় নেই। যা করার তা খুব দ্রুত করতে হবে। খুব দ্রুত।

আসলাম খানের বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে পার্কিং এ একটা গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে প্রায়ই। গাড়ির ভেতরে ড্রাইভিং সিটে বসে থাকে একটা কম বয়সী ছেলে। আজও গাড়িটা সেখানে পার্ক করা। ছেলেটাও বসে আছে গাড়ির ভেতরে। তার কাজ হলো আসলাম খানের কোন গাড়ি যখন বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় তখন সেটাকে খুব সাবধানে অনুসরণ করা।


আজ দুই বছর যাবত এই একই কাজ করে যাচ্ছে সে। এই কাজ করতে করতে এখন তার বিরক্তি ধরে গেছে। লোকটাকে অনুসরণ করে তেমন কিছু জরুরী তথ্য উদঘাটন করা যায় নি। লোকটা বিভিন্ন ব্যবসার কাজে এখানে সেখানে যায়। আবার বাড়িতে ফিরে আসে। কোন অস্বাভাবিক বা ব্যতিক্রম কিছু ঘটেনি এখনও। শুধু মাঝে মাঝে লোকটা একটা গ্যারেজে যায়। গ্যারেজটা মনে হয় লোকটার নিজেরই। এত বড় বিশাল বাড়ি লোকটার। বাড়ির ভেতরে গ্যারেজও নিশ্চয়ই বিশাল।


সেখানে গাড়ি না রেখে লোকটা এখানে গাড়ি রাখে এবং প্রায়ই গাড়ি অদল বদল করে। এটা একটা রহস্যের ব্যাপার। সাব্বির গুণে দেখেছে মোট তিনটি গাড়ি আছে লোকটার। যে গাড়িতে করে লোকটা ওখানে যায় ঐ গাড়ি রেখে গ্যারেজের ভেতরের গাড়িটা বের করে আনে। তারপর ঐ গাড়িটা নিয়ে যেখানে যাওয়ার চলে যায়। মাঝেমধ্যেই এই কাজটা করে লোকটা। সাব্বির গাড়িতে বসে ছিল এমন সময় ফোনটা বেজে উঠল।

---হ্যালো, স্যার।
---জ্বী স্যার।
---না স্যার এখনও তেমন কিছু দেখতে পাইনি।
---আচ্ছা স্যার। সাথে সাথে আপনাকে ইনফর্ম করবো। আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন।

ফোনটা রেখে দিলো রূপম। নিজের অফিসে বসে আছে ও। কপালে দুশ্চিন্তার রেখা ফুটে উঠেছে। দুই বছর ধরে ছেলেটাকে সে আসলাম খানের পেছনে লাগিয়ে রেখেছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এই আসলাম খান লোকটা বড়ই ধূর্ত। কিছুতেই ওর টিকিটাও ধরতে পারছে না সে।

রূপম একটা প্রাইভেট ফার্মের মালিক। পরিবারে এ মুহূর্তে মা ছাড়া আর অন্য কেউ নেই। মা অনেকদিন ধরেই মানসিক ভারসাম্যহীণ। বাবাকে অনেকদিন আগেই হারিয়েছে রূপম। এক বোন ছিল ওর। প্রাণের চেয়েও প্রিয় ছিল ওর বোনটা। বোন ছোট্ট একটা আঘাত পেলেও কষ্টে ওর বুকটা ফেটে যেতো। বোনের গায়ে আঁচড়টা লাগতে দিতো না ও। বাবা মারা যাওয়ার পর মা একাই ওদের দুই ভাইবোনকে অনেক কষ্টে মানুষ করেন।

দুই ছেলেমেয়ে যখন নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছিল, একটু সুখের মুখ যখন শুধু দেখতে শুরু করেছিলেন ঠিক তখনই আদরের মেয়েকে হারিয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন রূপমের মা। বোনটা আসলাম খানের একটা অফিসে প্রাইভেট সেক্রেটারির কাজ করতো। তারপর হঠাৎই কী হতে যে কী হয়ে গেলো। বোনটার কথা মনে হলে আজও মনটা ভীষণ কাঁদে। ছটফট করে ওর ভেতরটা। নিশপিশ করে ওর দুই হাত।

আজকের দিনটা বড় ঝলমলে। এমন ঝলমলে দিন রূপমের বড় প্রিয়। এমন দিনে অফিসে বসে থাকতে কার ভাল লাগে। ওর ইচ্ছে করছে এখনই অফিস থেকে বেরিয়ে কোথাও দূরে, বহু দূরে হারিয়ে যেতে। কিন্তু তা সম্ভব নয়। অফিসে আজ অনেক কাজ। তার উপর এই আসলাম খান লোকটা ওকে বড় ভাবাচ্ছে।
-----

বীথি নিয়মিত কলেজে যেতে শুরু করেছে। আসলাম খান নিয়ম করে ওকে দিয়ে যান এবং নিয়ে যান। বীথি আসলাম খানের কথামত কারো সাথে কোন বাড়তি কথা বলে না। কেউ যদি যেচে কথা বলতে চায় বীথি তাকে এড়িয়ে যায়। একদিন ক্লাস চলাকালীন সময়ে পিয়ন এসে বলল, একজন লোক বীথির সাথে দেখা করতে চায়।

বীথি চিন্তিত হয়ে পড়লো। আসলাম খান তো এ সময় আসার কথা না। তবে কে আসলো। মনে এক রাশ দ্বিধা নিয়ে ও ক্লাস থেকে বেরিয়ে আসলো। লোকটা কমনরুমে অপেক্ষা করছিল। বীথি লোকটাকে চিনতে পারলো না। বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে রইল লোকটার দিকে। লোকটা বীথির দিকে এগিয়ে এসে বলল,
---বসুন প্লীজ। আপনার সাথে একটু জরুরী কথা আছে আমার।
---কিন্তু আমি তো আপনাকে চিনতে পারছি না।
---আমাকে আপনার চেনার কথা না। জানি ব্যাপারটা আপনার কাছে একটু অস্বাভাবিক লাগছে। হয়তো বিরক্তও হচ্ছেন খুব। এভাবে কলেজ টাইমে এসে কথা বলতে চাওয়া, তাও অপরিচিত লোক। কিন্তু আমার যে আর কোন উপায় নেই। কলেজ টাইম ছাড়া অন্য সময় আপনাকে একা পাওয়া মুশকিল। আর কলেজ শুরু বা শেষে আসলাম সাহেব আপনার সাথে থাকেন সব সময়। আর আমার আপনার সাথে একা কথা বলা ভীষণ দরকার।

বীথি যার পর নাই বিস্মিত হয়ে বলল,

---আমি আপনার কথা কিছুই বুঝতে পারছি না। এমন অপরিচিত একজন লোকের সাথে আপনার কী এমন জরুরী কথা থাকতে পারে? তাও আপনি কথা বলতে চাচ্ছেন আমার স্বামীর অগোচরে। না না ব্যাপারটা আমার কাছে মোটেই ভাল লাগছে না। আমি আসছি।

রাগান্বিত কণ্ঠে কথাগুলো বলে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো বীথি। লোকটি অনুনয়ের স্বরে পেছন থেকে বলল,
---আমি আপনার বেশি সময় নষ্ট করবো না। শুধু দশটি মিনিট আমাকে আপনি দিন, প্লীজ।

লোকটির এমনভাবে কথাগুলো বলল যে, বীথি পা বাড়িয়েও শেষ পর্যন্ত যেতে পারলো না।
----ঠিক আছে বলুন কী বলতে চান।
----মিসেস বীথি, সামনে আপনার ভীষণ বিপদ।
----আমার বিপদ? কী বলছেন এসব আবোলতাবোল?
----জানি আপনি বিশ্বাস করবেন না আমার কথা। কিন্তু আপনাকে সতর্ক করা আমার কর্তব্য। আমার নিজেকে বড় অসহায় লাগছে। আমি বুঝতে পারছি একটা মানুষ মৃত্যুর সাথে বসবাস করছে। কিন্তু তাকে বাঁচানোর কোন চেষ্টা আমি করতে পারছি না।
---আমি কিছুই বুঝতে পারছি না আপনার কথা। কে মৃত্যুর সাথে বসবাস করছে?
----আপনি।
এই লোকটা মনে হয় পাগল। কী সব বলছে, কাকে বলছে লোকটা হয়তো নিজেও জানে না। বীথির একটু ভয় লাগলো। ও চুপচাপ বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। লোকটা সেটা লক্ষ্য করে একটু গলা উঁচিয়ে বলল,
---শুনুন ঐ আসলাম খান একটা ভয়ঙ্কর লোক। সে যে কতটা ভয়ঙ্কর আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না। সে আপনাকে খুন করে গুম করে ফেলবে। সে তার আগের স্ত্রীকেও খুন করেছে। আপনি পালান ওখান থেকে।

বীথি যত দ্রুত সম্ভব সেখান থেকে চলে যাওয়ার চেষ্টা করলো। কিন্তু লোকটার কথাগুলো ওর পিছু ছাড়লো না। ফিরে এসে ও কিছুতেই ক্লাসে মন বসাতে পারলো না। লোকটার কথাগুলো ওর কানে প্রতিধ্বনিত হতে লাগলো।

ওদিকে রূপম বীথিকে কথাগুলো বলতে পেরে কিছুটা স্বস্তি বোধ করলো। যাক বীজটা বপন করা হয়ে গেছে। এবার ধীরে ধীরে শিকড়ও গজাতে শুরু করবে।
------
বাড়িতে ফিরে এসে মনটা অস্থির হয়ে রইল। ঐ লোকটার কথাগুলো মন থেকে কিছুতেই সরাতে পারছিল না বীথি। কী বলল এসব ঐ লোকটা। বার বার ও মনকে বুঝাতে চাইলো ঐ লোকটার কথায় এত গুরুত্ব দেয়ার কোন কারণ নেই। কোথাকার কে? ঐ লোকের কথা নিয়ে কেন এত ভাবছে ও। হয়তো ঐ লোকটার কোন শত্রুতা আছে আসলাম খানের সাথে। তাই এইসব বলে ওর মনকে বিষিয়ে দিতে চাইছে। ওদের সম্পর্ক নষ্ট করতে চাইছে। এমনটা ভেবে মনে একটু শান্তি পেল বীথি।

কিন্তু লোকটাকে তো ভাল মানুষ বলেই মনে হলো। কোন ফালতু টাইপ বা খারাপ লোক বলে মনে হলো না। তখন আবার নিজেই নিজেকে স্বান্তনা দিলো এই ভেবে যে, চেহারা দেখে কি মানুষ চেনা যায়। ভাল মানুষের আড়ালে কত ভয়ঙ্কর শয়তানই তো মুখ লুকিয়ে থাকে। কিন্তু মনের মধ্যে একটা কিছু খচ খচ করতেই থাকে। পড়াশুনায়ও মন বসে না ওর। কী যে এক অশান্তি।

আসলাম খান বীথির এই অন্যমনস্কতা টের পেয়ে কারণ জিজ্ঞেস করলেন। কিন্তু বীথি কিছুই বলতে পারলো না। একবার ভাবলো আসলাম খানকে সব খুলে বলা উচিৎ। উনাকে সব খুলে না বলে ও অন্যায় করছে। কিন্তু কী যেন এক দ্বিধা ওকে বাঁধা দিলো। ও কিছুই বলতে পারলো না। এই সব খুলে বলতে না পারাও ওকে ভেতরে ভেতরে কুরে কুরে খাচ্ছিল। সব মিলিয়ে বীথি বড় এক অশান্ত সময় কাটাচ্ছিল। এক সময় হঠাৎ কী মনে হতেই ও লোকমানের কাছে গেলো। আসলাম খান তখন বাড়িতে ছিলেন না। লোকমান এ বাড়ির সব ঘর ঝেড়ে মুছে পরিষ্কার করে। লোকমানকে ও জিজ্ঞেস করলো,
---লোকমান তুমি তো প্রতিদিন সব ঘর ঝাড়মোছ করো।
---হ্যাঁ ম্যাডাম।
---তুমি সুরভী ম্যাডামের রুম ঝাড়মোছ করো না?
----করি তো। কেন করবো না?
----ঐ ঘরের চাবি কি তোমার কাছেই থাকে?
----না ম্যাডাম। আমার কাছে থাকে না।
----তবে কার কাছে থাকে?
--- স্যারের কাছেই তো থাকার কথা ম্যাডাম।
---ঘর পরিষ্কার করার সময় তো তোমার চাবির দরকার হয়। চাবি কোথা থেকে নাও তুমি?
----চাবির কেন দরকার হবে? ঐ রুম তো সব সময় খোলাই থাকে।
---কী বলছ তুমি? আমি সুরভীর রুমের কথা বলছি।
লোকমান বিস্মিত হয়ে বলল,
---আমিও তো তাই বলছি ম্যাডাম।
এবার বীথির বিস্মিত হওয়ার পালা। ও বিস্মিত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
----দখিনের সবচেয়ে বড় ঘরটা সুরভীর না?
----না ম্যাডাম। ঐ ঘর সুরভী ম্যাডামের হতে যাবে কেন? ঐ ঘর তো সব সময়ই তালাবদ্ধ থাকে। আমি কোনদিন স্যারকে ঐ ঘর খুলতে দেখিনি।
----কী বলছ তুমি? তাহলে সুরভীর ঘর কোনটা?
----আপনার আর স্যারের রুমের পরের রুমটাই উনার ছিল।

বীথি কিছুক্ষণ থ হয়ে রইল। আসলাম খান তবে ওকে মিথ্যে বলেছেন? কিন্তু কেন? কী কারণ থাকতে পারে এর পেছনে? আর যদি একটি মিথ্যে বলে থাকেন তবে উনার আরো অনেক কথাই মিথ্যে হওয়ার সম্ভাবনা আছে। ঐ তালাবদ্ধ রুমের রহস্যটাই বা কী? বীথি কি সরাসরি আসলাম খানকে বিষয়টা জিজ্ঞেস করবে? নাকি আরো অপেক্ষা করবে?

হয়তো এই মিথ্যের পেছনে উনার কোন দূর্বলতা লুকিয়ে রয়েছে যা উনি বীথিকে বলতে চান না এখন। হয়তো এক সময় খুলে বলবেন। উনাকে বিব্রত না করে সেই সময়টার প্রতিক্ষায়ই থাকা উচিৎ ওর। না না এভাবে আসলাম খানকে অবিশ্বাস করা ঠিক হচ্ছে না। কত বড় বিপদ থেকে আসলাম খান ওকে বাঁচিয়েছেন। বীথি কী করে আসলাম খানকে সন্দেহ করতে পারলো, তাও বাইরের অপরিচিত এক লোকের কথায়? বীথির সব ভাবনা কেমন যেন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছিল। ও আর কিছু ভাবতে পারছিল না। মাথাটা কেমন যেন ঝিমঝিম করতে লাগলো।

পরেরদিন কলেজে ক্লাস করার সময় আবার পিয়ন এসে বীথিকে খবর দিলো কেউ ওর সাথে দেখা করতে এসেছে। বীথি প্রথমে ভাবলো লোকটার সাথে দেখা করবে না। পরক্ষণেই মনে হলো, কী এমন ক্ষতি হবে লোকটার সব কথা যদি শুনে। সব শুনলে হয়তো ওর মনে যে হাজারো প্রশ্ন এলোমেলো বিচরণ করছে তার একটা সহজ উত্তর ও দাঁড় করাতে পারবে। ওর উচিৎ লোকটার সব কথা মনোযোগ দিয়ে শোনা এবং তারপর ব্যাপারটা ঠাণ্ডা মাথায় যাচাই করা। বীথি লোকটার সাথে দেখা করতে গেলো।
রূপম বীথিকে দেখে বলল,
---আপনাকে আবার বিরক্ত করতে এসেছি। প্লীজ একটু ধৈর্য্য ধরে আমার সব কথা শুনুন। তারপর আপনি যা ইচ্ছে সিদ্ধান্ত নিন।
---আচ্ছা, বলুন কী বলতে চান।
---আমার নাম রূপম আহমেদ। আমার মাকে নিয়ে একাকী জীবন আমার। আমার মা তিন বছর যাবত মানসিক ভারসাম্যহীণ জীবন যাপন করছেন। আমার একটা ছোট বোন ছিল। নাম ছিল রূপা। আমার মা'র নয়নের মনি ছিল ও। আর আমার ছিল প্রাণ। ও আমাদের বড় আদরের ধন ছিল। এক সময় পড়াশুনা শেষ করে রূপা আসলাম খানের একটা অফিসে চাকরি শুরু করে। এদিকে আমিও আমার ফার্মটা দাঁড় করিয়ে ফেলেছি।

আমার মা'র এতদিনের কষ্টের ফল ফলতে শুরু করেছে। আমাদের সুখের দিন ফিরে এসেছিল। ভালই কাটছিল আমাদের জীবন। আমার মা রূপাকে বিয়ের জন্য তাগাদা দিতে লাগলেন। কিন্তু রূপা কিছুতেই বিয়েতে রাজী হচ্ছিল না। রূপার হাবভাবও কেমন বদলে গিয়েছিল। নতুন প্রেমে পড়লে যেমন মানুষ চঞ্চল হয়ে ওঠে, ছটফট করে তেমন। কিন্তু রূপা কিছুতেই ব্যাপারটা স্বীকার করতে চাইতো না।

আমিও ভাবলাম হয়তো আমার মনের ভুল। আমি আমার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। তারপর হঠাৎ করেই একদিন আমাদের জীবনে এলো সেই ভয়াল দিন। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে দেখলাম রূপা ঘরে নেই। ভাল হাসিখুশি বোনটা আমার রাতে ঘুমোতে গেলো। সকাল হতেই যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো। সব জায়গা পাগলের মত আমি তন্ন তন্ন করে খুঁজলাম। কিন্তু কোথাও ওকে খুঁজে পাওয়া গেলো না। আমার মা এই কষ্ট সইতে না পেরে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেললেন। আমার জীবনের সব রঙ নিভে গেলো।

রূপা নিখোঁজ হওয়ার পর অনেকদিন কেটে যায়। বোন নেই। মা বেঁচে থেকেও মৃত। তবু কেটে যাচ্ছিল আমার এই রঙহীন একাকী জীবন। তারপর একদিন হঠাৎ রূপার ঘরে খুঁজে পেলাম একটা গোপণ ডায়রি। রূপা ডায়রি লিখতো এটা আমার জানা ছিল না। আমি ওর ডাইরিটা পুরোটা পড়লাম। পুরো ডায়রি জুড়েই কেবল আসলাম খানের কথা লিখা। হয়তো ও ডায়রি লিখা শুরু করেছিল আসলাম খানের সাথে সম্পর্ক হওয়ার পর থেকেই। আসলাম খানকে ও পাগলের মত ভালবাসতো এবং ডায়রিতে লিখা ছিল আসলাম খানও ওকে পাগলের মত ভালবাসে।

ওরা বিয়ে করবে। ঘর বাঁধবে। এরকমই অনেক কিছু লিখা ছিল ডায়রিতে। মানে বুঝা যাচ্ছিল ওদের মধ্যে একটা গভীর প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। ডায়রিটা পড়ে আমি ভীষণ অবাক হলাম। আসলাম খানের সাথে ওর এত গভীর সম্পর্ক ছিল অথচ লোকটা ওর নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার পর তেমন কোন প্রতিক্রিয়া দেখালো না। আমার মনে সন্দেহ দানা বেঁধে উঠতে লাগলো। আমার মনে হলো কোন না কোনভাবে রূপার নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার সাথে এই লোকটাই জড়িত। কিন্তু আমার কাছে কোন প্রমাণ নেই যার উপর ভিত্তি করে আমি লোকটাকে অভিযুক্ত করবো।

সেই থেকে আমি প্রতিজ্ঞা করলাম যে করেই আমার বোনের নিখোঁজ হওয়ার রহস্য আমি বের করবোই। আমি আসলাম খানের উপর নজর রাখতে থাকলাম। কিছুদিন পর লোকটা বিয়ে করলো। বউ নিয়ে সুখে সংসার করতে লাগলো। আমি তেমন কিছু উদঘাটন করতে পারলাম না লোকটার বিরুদ্ধে। কিন্তু তবু আমি হাল ছাড়লাম না। বিয়ের দুই বছর পর হঠাৎই একদিন আসলাম খানের স্ত্রী সুরভীরও মৃত্যু হলো। তাও স্বাভাবিক মৃত্যু না। অস্বাভাবিক মৃত্যু। আর আমার সন্দেহ তখন আর সন্দেহ রইলো না। আমি নিশ্চিত হয়ে গেলাম আমার বোনের নিখোঁজ হওয়া এবং সুরভীর মৃত্যু দুটোতেই আসলাম খানের হাত আছে।

চলবে

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১২:১৯

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: আরিব্বাস!

এতো জিলাপীর প‌্যাচ লেগে যাচ্ছে ক্রমেই!
আসলাম খান রহস্যময় হয়ে উঠছে!
কি হবে তবে বীথির! সেকি পারবে রহস্যের সমাধা করতে???

অনেক প্রশ্ন বুকে অপেক্ষার পালা - - -

সিরিজে ++++

২৯ শে জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১:৩৮

নিভৃতা বলেছেন: হা হা হা! প্যাঁচ আর প্যাঁচ। জট খুলে যাবে শীঘ্রই। অশেষ কৃতজ্ঞতা মনোযোগ দিয়ে গল্পটি পড়ার জন্য।

২| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১:০১

করুণাধারা বলেছেন: বনলতা সেন
এতদিন কোথায় ছিলেন?

আটবছর ধরে হাঁটিতে হাঁটিতে সামুতে উদয় হলেন, হওয়া মাত্রই লেখা দিয়ে মন জয় করে নিলেন! চমৎকার হচ্ছে রহস্যের বিস্তার, নিয়মিত হাজির হচ্ছেন এটাও খুব ভালো লাগছে। :D এমন নিয়মিত থাকুন।

২৯ শে জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১:৪৮

নিভৃতা বলেছেন: হা হা হা। লজ্জা পাচ্ছি কিন্তু। আট বছর আগে খেয়ালের বশে যুক্ত হয়েছিলাম এই ব্লগে। তখন ব্লগ কী তাই তো জানা ছিল না। আর লেখালেখির শুরু তো দুই বছর আগে হঠাৎই। তাও হাবিজাবি লেখা। তবু লিখি ভালো লাগে তাই।

বনলতা সেন তো আপনি। হাজারবার আপনার ব্লগে উঁকি দেই, অধীর হয়ে, তৃতীয় পর্বের আশায়। এখন আমি ক্লান্ত প্রাণ এক। বনলতা সেন, তৃতীয় পর্ব নিয়ে হাজির হোন। ক্লান্ত প্রাণেরা একটু শান্তি পাক।

শুভ কামনা অফুরান।

৩| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১:৩৯

রাজীব নুর বলেছেন: বীথির বিপদ।
ভালো মানুষ বিপদে পড়লেও আল্লাহ বিপদ কাটিয়ে নেন। পরীক্ষীত।

২৯ শে জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১:৫০

নিভৃতা বলেছেন: সত্যি তাই। বিপদ কেটে যাবে ইনশাআল্লাহ। বীথির জন্য শুভ কামনা।

আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা।

৪| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ৯:৫০

ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন: অনেক পর্ব লিখেছেন - পড়া শুরু করেছি মাত্র। আপনার ধৈর্যের প্রসংসা করতে হয়।

২৯ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১১:০৩

নিভৃতা বলেছেন: পড়া শুরু করার জন্য অশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। আসলে ধৈর্য্য আমার কম। ধৈর্য্য থাকলে লিখাটা অনেক ভালো হত।

৫| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১১:০৯

আনমোনা বলেছেন: ভালোই প্যাঁচ দেখছি :) । চলুক।

২৯ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১১:১৫

নিভৃতা বলেছেন: অশেষ কৃতজ্ঞতা সাথে থাকার জন্য। শুভ কামনা রইল।

৬| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ১১:৫২

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: রাতে সব কাজ বাদ দিয়ে গল্প পর্বগুলো পড়েছি আপি

রহস্যময় লাগছে। ভালো লাগার গল্প
আসুক তাড়াতাড়ি আগামী পর্ব

ভালো থাকুন

৩০ শে জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১২:১৩

নিভৃতা বলেছেন: কী বলে যে ধন্যবাদ দেবো তোমাকে আপুমনি। কারো মনে একটু হলেও ভালো লাগা সৃষ্টি করতে পেরেছি জেনে অনেক ভালো লাগছে।

অনেক ভালো থাকো তুমি আর আমার গল্পের সাথে থেকো।

৭| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৩:৫০

নীল আকাশ বলেছেন: বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: আরিব্বাস! এতো জিলাপীর প‌্যাচ লেগে যাচ্ছে ক্রমেই!
নারে ভাই এটা জিলাপীর প্যাচ নয়, আমিত্তি চেনেন? সেটার প্যাচ।

যাই হোক গোয়েন্দা গল্প লিখছেন যখন তখন আমি আপনাকে অপু তানভীর ভাইয়ের ব্লগ দেখে আসতে পারেন। সেখানে বেশি কিছু ভালো গল্প আছে। হূট করে এইভাবে রূপমের নিয়ে আসাটা আমার কাছে পছন্দ হয় নি। একটা প্রাইম চরিত্র নিয়ে আসার আগে কিছু ব্যাকগ্রাউন্ড/আবহ/ঘটনা নিয়ে কাজ করতে হয়।
যাই হোক সামনে যাই দেখি কী আছে?
আগ্রহ পাচ্ছি। তবে তালগোল পাঁকিয়ে যাচ্ছে। কী ধরণের গল্প এটা?

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৩:৫৪

নিভৃতা বলেছেন: আমি নিজেও জানি না এটা কী গল্প। নাহ, সেভাবে গোয়েন্দা গল্পও বলা যায় না। তবে রহস্য হয়তো বলা যায়। রহস্যটা ভালো লাগে তাই সেটাই ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছিলাম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.