নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি নিভৃতা। ভালোবাসি পড়তে। একটু আধটু লেখালেখির অপচেষ্টা চলে মাঝেমাঝে।

নিভৃতা

সামুতে আট বছর আগে কোনভাবে যুক্ত হলেও আমার ব্লগিং জীবন আসলে শুরু জানুয়ারি, ২০২০ থেকে।

নিভৃতা › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প: ভয় -১০

৩০ শে জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১২:০৩




১ম পর্ব - Click This Link

৮ম পর্ব - Click This Link

আসলাম খানের পরবর্তী শিকার হলেন আপনি।

এটুকু বলে রূপম থামলো। বীথি স্তব্ধ অপলক চোখে তাকিয়ে রইল রূপমের দিকে। রূপম থামার পরও নিষ্পলক তাকিয়ে রইল। ওর যেন চিন্তা চেতনা সব লোপ পেয়ে গেল। কী বলবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছিল না। তারপর রূপমের সাথে একটি কথাও না বলে, ঘোরগ্রস্তের মত, চুপচাপ হেঁটে ক্লাসে চলে গেল।

মনে হলো ভাবনা চিন্তার সব ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে ও। ক্লাস ছুটির পরও অন্যমনস্ক হয়ে রইল বীথি। আসলাম খান সেটা লক্ষ্য করলেন। কিন্তু এবার তিনি কোন প্রশ্ন করলেন না। শুধু নিজের ঠোঁট দুটো শক্ত করে চেপে ধরে কী যেন ভাবতে লাগলেন। বাড়িতে ফিরে এসে কিছুটা ধাতস্থ হলো বীথি।


আগাগোড়া সব ভাবতে লাগলো। নিজেকে তিরস্কারও করতে লাগলো এই বিষয়টা নিয়ে এত ভাবার জন্য। সবকিছু ভুলে নিজের কাজে মন দিতে চাইলো ও। একটা উটকো লোকের কথায় আসলাম খানকে অবিশ্বাস করার কোন মানেই হয় না। কিন্তু শত চেষ্টা করেও মন থেকে ব্যাপারটা তাড়াতে পারছিল না। ঐ লোকটার কথা ও বিশ্বাস করতে চাইছিল না কোন মতেই। কিন্তু লোকটার কথাগুলোর মধ্যে এমন কিছু ছিল যে কথাগুলো উড়িয়েও দিতে পারছে না।

রাতের বেলা কিছুতেই ঘুম আসছিল না ওর। রাত আড়াইটার দিকে নিজের ঘর থেকে বের হয়ে এলো। ভাবলো একটু হাঁটাহাঁটি করে তারপর ঘুমানোর চেষ্টা করবে। তাতে হয়তো ঘুমটা আসবে। হেঁটে আসলাম খানের দরজাটা পেরিয়ে যাবে এমন সময় আসলাম খানের রুমের ভেতর থেকে মৃদু কথাবার্তার আওয়াজ পেলো বীথি।

ও কান রাখলো দরজায়। দুটো মানুষের কথার আওয়াজ পেলো ও। একটা আসলাম খানের কণ্ঠ। অন্যটি সেই ভারী কণ্ঠ। এতদিন বীথি ভেবেছিল এটা ওর মনের ভুল। ঐদিন আসলে কোন ভারী কণ্ঠ কথা বলেনি। বীথির মনের ভয়ই এমন অলিক কল্পনার জন্ম দিয়েছিল। কিন্তু আজ আবার সেই কণ্ঠ শুনতে পেয়ে বীথির মনে হলো এটা কোন ভাবেই মনের ভুল বা অলিক কল্পনা হতে পারে না। কেউ একজন নিশ্চয়ই ভেতরে আছে।

ভেতরে মৃদু কণ্ঠে কথা হচ্ছিল। এখন আর রাতের বেলা আসলাম খানের কান্না শোনা যায় না। আজও আসলাম খান কাঁদছিলেন না। শুধু মৃদু কণ্ঠে উত্তেজিত কণ্ঠে কথা বলে যাচ্ছেন কারো সাথে।

আসলাম খান--- না, আমি পারবো না। ওকে আমার ভীষণ প্রয়োজন। আমি ওকে ভালোবাসি।

ভারী কণ্ঠ ---- আর সেকারণেই তোকে এটা করতে হবে।

আসলাম খান----আমি আর পারছি না। আমি যে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি।

ভারী কণ্ঠ-----পারতে তোকে হবেই। তোর নিজের জন্যই।

বীথির মনে আবার ভয় উঁকি দিলো। ও ভয়ে ভয়ে দরজাটা খুলার চেষ্টা করলো। কিন্তু আজ দরজাটা ভেতর থেকে লক করা। বীথি ভয় পেলেও ভাবলো, আজ এই রহস্যের সমাধান ও করেই ছাড়বে। এত রাতে কে আসে আসলাম খানের ঘরে? ও ভয়ে ভয়ে ধাক্কা দিলো দরজায়। দুতিনবার ধাক্কা দেয়ার পর আসলাম খান দরজা খুলে দিলেন। অবাক হয়ে বীথিকে বললেন,

----কী ব্যাপার বীথি? এত রাতে তুমি এখানে? ঘুমাওনি? কোন সমস্যা?

বীথি আসলাম খানের কথার উত্তর না দিয়ে ঘরের ভেতরে গিয়ে চারিদিকে তাকিয়ে দেখলো। কিন্তু কাউকে খুঁজে পেলো না। ও বাথরুমটাও গিয়ে চেক করলো। কিন্তু সেখানেও কেউ নেই। তারপর আসলাম খানের দিকে তাকিয়ে বলল,

----আপনি কার সাথে কথা বলছিলেন?
আসলাম খান অবাক হয়ে বললেন,
----আমি আবার কার সাথে কথা বলব?
---আমি স্পষ্ট শুনতে পেলাম আপনি কারো সাথে কথা বলেছিলেন।
এবার আসলাম খান গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,
---তুমি কি আমাকে অবিশ্বাস করছ?
এমন কিছু ছিল আসলাম খানের কণ্ঠে যে বীথি নিজের এই বোকার মত প্রশ্নে লজ্জিত বোধ করলো। তাই তো, এতরাতে রাতে আসলাম খানের ঘরে কে আসতে যাবে? বীথি অনুতপ্ত বোধ করলো। যেকোন সম্পর্কের মূল ভিত্তি হলো বিশ্বাস। সেই বিশ্বাসে যদি চিড় ধরে যায় তাহলে তো সবই শেষ। ও কী করে অবিশ্বাস করতে পারলো আসলাম খানকে? আসলাম খান আবার গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,
----যদি কিছু শুনে থাকো তবে ভুল শুনেছ। যাও, ঘুমোতে যাও।
বীথি কোন কথা না বলে চুপচাপ নিজের ঘরে চলে এলো। ওর খুব কষ্ট হচ্ছিল। ও ভালবাসতে শুরু করেছিল আসলাম খানকে। আর সেই ভালোবাসার শুরুটাই নড়বড়ে করে ফেলল ও আসলাম খানকে অবিশ্বাস করে। বীথির খুব কান্না পেলো। কেন ওর সাথে এসব ঘটছে? কেন ও কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছে না ওর ভালবাসার মানুষটাকে?


বীথি বালিশে মুখ চেপে গুমরে গুমরে কাঁদতে লাগলো। তারপর হঠাৎ ও কান্না থামিয়ে উঠে বসলো। ওর মনে হলো বিশ্বাস এক জিনিস আর অন্ধবিশ্বাস অন্য জিনিস। অন্ধবিশ্বাস বোকামিরই নামান্তর। ও যদি এখন আসলাম খানকে বিশ্বাস করতে গিয়ে নিজের কানে যা শুনেছে সেটাকে এড়িয়ে যায় তাহলে সেটা হবে ওর বোকামি। কারণ ও অন্য কারো কণ্ঠ আসলাম খানের ঘরে ঠিকই শুনেছে। বার বার ওর একই ভুল হওয়ার কথা না।

কে থাকতে পারে এত রাতে আসলাম খানের ঘরে? আর কেনই বা তিনি লোকটাকে লুকিয়ে রাখেন? এর পেছনে কী রহস্য লুকিয়ে আছে? আর লুকিয়েই বা রাখেন কোথায়? বীথি ভেবে কোন কোলকিনারা পাচ্ছিল না। হঠাৎ ওর মনে হলো দখিনের তালাবদ্ধ ঘরটির কথা। তবে কি লোকটি ঐ ঘরেই তালাবদ্ধ থাকে? কিন্তু আসলাম খানের ঘরের ভেতরে তো ও কাউকে দেখতে পেলো না। কোনদিকে পালিয়ে গেলো লোকটা? তবে কি ঐ ঘরে গোপণ কোন রাস্তা আছে?

এলোমেলো ভাবতে ভাবতে ঘুমের কোলে ঢলে পড়লো ও। পরের দিন ছিল ছুটির দিন। কলেজ নেই। তাই বাসায়ই ছিল বীথি। আসলাম খান বাইরে বেরিয়ে গেলেন। বীথি চুপিচুপি আসলাম খানের রুমে গেলো। সব দিক ভাল করে খুঁজে দেখলো কোন গোপণ রাস্তা আছে কি না যেদিকে লোকটা পালিয়ে যেতে পারে। কিন্তু অনেক খোঁজাখুঁজি করেও কোনকিছু খুঁজে পেলো না। তবে কি সব সত্যিই ওর মনের ভুল?

এই রহস্যে ঘেরা বাড়িতে এসে ও কি পাগল হয়ে যাচ্ছে? ওর কি বিভ্রম হচ্ছে? হঠাৎ মনে হলো এই ঘরেই হয়তো ঐ তালাবদ্ধ ঘরের চাবি কোথাও লুকিয়ে রেখেছেন আসলাম খান। ও ঘরের সব জায়গায় চাবিটা খুঁজতে লাগলো। খুঁজতে খুঁজতে একটি ড্রয়ারে একটা বড় চাবির গোছা খুঁজে পেলো। এত বড় গোছাতে কোনটা ঐ ঘরের চাবি কী করে খুঁজে বের করবে ও?

বীথি একটু হতাশ হয়ে পড়লো। এদিকে আসলাম খানেরও আসার সময় হয়ে এলো। শেষ পর্যন্ত আর কোন উপায় খুঁজে পা পেয়ে বীথি পুরো গোছাটা নিয়ে বেরিয়ে এলো। কাজের লোকেরা এই মুহূর্তে কেউ উপরে নেই। বীথি খুব সন্তর্পণে দুরু দুরু বুকে দখিনের ঘরটার সামনে এলো। ওর হাত পা কাঁপতে লাগলো ভয়ে। কাঁপা কাঁপা হাতে ও চাবিগুলো দেখতে লাগলো। কোন চাবিটা আগে লাগাবে ও ভাবছিলো।

হঠাৎ ও খেয়াল করলো সবগুলো চাবিই অব্যবহারে একটু একটু জং ধরে গেছে। শুধু একটা চাবি চকচকে। তারমানে এই চাবিটা বেশি ব্যবহৃত হয়। একটু আশার আলো ফুটে উঠলো বীথির চেহারায়। কিন্তু চাবিটা ধরে ওর হাত কাঁপতে লাগলো ভীষণ। যদি দরজাটা সত্যি খুলে যায় তাহলে কী হবে? কে বেরিয়ে আসবে ঘর থেকে? বীথি আর ভাবতে পারলো না।

কিন্তু ও দমবারও পাত্রী নয়। কোনরকমে সাহস সঞ্চয় করে ও চাবিটা ঢুকালো নবের ভেতরে। তারপর ধীরে ধীরে ঘুরালো চাবিটা। বীথিকে অবাক করে দিয়ে চাবিটা সত্যি ঘুরে গেলো। এক রাশ ভয় বুকে নিয়ে ধীরে ধীরে পা বাড়ালো ঘরটির ভেতরে। বীথি আশা করেছিল ভেতরে ও কাউকে পাবে। কিন্তু হতাশ হতে হলো। ভেতরে কেউই নেই। অন্য সব ঘরের মতই ঘরটি।


কিছু আসবাব, চেয়ার টেবিল আর বিছানা। অস্বাভাবিক কিছুই নেই এখানে। তবে কেন রুমটি তালাবদ্ধ থাকে? কার ঘর ছিল এটা। কী রহস্য তবে জড়িয়ে আছে এই ঘরটির সাথে। বীথি কিছু না পেয়ে ফিরে যাওয়ার জন্য ঘুরে দাঁড়ালো। ঘুরে দাঁড়াতেই চমকে উঠলো ও। দরজায় দাঁড়িয়ে আছেন স্বয়ং আসলাম খান। শান্ত শীতল চোখে তাকিয়ে আছেন তিনি বীথির দিকে। সেই শীতল চোখ দুটির দিকে তাকিয়ে বীথির সারা শরীরে এক ভয়ের শিহরণ বয়ে গেলো। ও চোখ দুটো নামিয়ে নিলো। আসলাম খান এগিয়ে এলেন বীথির দিকে। তারপর বীথির হাত থেকে চাবির গোছাটা নিয়ে ওর একটি হাত মুঠো করে ধরলেন।

চলবে

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১২:২০

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: সাথেই আছি আপি
দেখা যাক কী রহস্য লুকিয়ে আছে গল্প

ভালোবাসা নেবেন

৩০ শে জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১২:২২

নিভৃতা বলেছেন: আমার পক্ষ থেকেও অফুরান ভালোবাসা। ভালো থেকো। সাথে থেকো।

২| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:৪০

রাজীব নুর বলেছেন: সহজ সরল ভাষায় খুব সুন্দর লিখেছেন।

৩০ শে জানুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৩:৫১

নিভৃতা বলেছেন: অনুপ্রাণিত হইলাম খুব। ভুল বানান এবং কোন জায়গায় কোন সমস্যা থাকলে ধরিয়ে দিলে আরো আনন্দিত হবো।

৩| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৪:৩১

নেওয়াজ আলি বলেছেন: সুন্দর ও সাবলীল লেখনী।

৩০ শে জানুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৫৩

নিভৃতা বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে

৪| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৩৬

ময়ূরী বলেছেন: সবকিছুই পরিপাটি।।

৩০ শে জানুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৫৩

নিভৃতা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।

৫| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ৮:০৬

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: ধীরে ধীরে খুলতে যাচ্ছে রহস্যের জট...

কিন্তু শুরুতেই কট!!!!!!!!!!

কি হবে এখন?????

++++

৩০ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ৮:৩৫

নিভৃতা বলেছেন: অশেষ কৃতজ্ঞতা ভাই সাথে থাকার জন্য। অনেক অনেক শুভ কামনা আপনার জন্য।

৬| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৪:০২

নীল আকাশ বলেছেন: আসলাম খানের পরবর্তী শিকার হলেন আপনি। উহু এটা হয় নি-
আসলাম খানের পরবর্তী শিকার হবেন আপনি। ভেবে দেখুন আমি ভুল বলেছি নাকি?
ডুপ্লেক্স পার্সোনালিক্টি নিয়ে আমি একটা লেখা লিখছিলাম। শেষ হয়নি দেখে পোস্ট দেই নি।
আমার নাবিলা সিরিজ পড়েছেন? সাইকোলজি সিরিজ? এখানেই আসবে।
একটা জিনিস বাজে লাগছে। বার বার আসলাম খান নাম পুরোটা পড়তে কেমন যেন লাগছে। এর পরেরবার এক অক্ষরের সুন্দর নাম বাছাই করবেন। আমি নিজে একটা বিরাট লিস্ট করে রেখেছি নামের। বেছে বেছে সেখান থেকে নাম নেই।
শুভ কামনা রইলো।

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৪:০৬

নিভৃতা বলেছেন: আপনার কোন লেখা এখনও পড়া হয়নি। কিন্তু পড়ার ভীষণ ইচ্ছে আছে। পড়বো ইনশাআল্লাহ সময় করে।

হ্যাঁ আসলাম খান নামটা আসলেই খটমট লাগছে। কিন্তু আর কী নাম দেবো বুঝে উঠতে পারিনি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.