নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি নিভৃতা। ভালোবাসি পড়তে। একটু আধটু লেখালেখির অপচেষ্টা চলে মাঝেমাঝে।

নিভৃতা

সামুতে আট বছর আগে কোনভাবে যুক্ত হলেও আমার ব্লগিং জীবন আসলে শুরু জানুয়ারি, ২০২০ থেকে।

নিভৃতা › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প: ভয় - ১২

৩১ শে জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ১১:০০



১ম পর্ব - Click This Link

আসলাম খান ট্যাক্সি থেকে নেমে বীথিকে নামতে বললেন। বীথি ট্যাক্সি থেকে নামলো। আসলাম খান টাকা দিয়ে ট্যাক্সি ছেড়ে দিলেন। বীথি চারদিকে তাকিয়ে এয়ারপোর্টের কোন চিহ্ন কোথাও দেখতে পেলো না। যেহেতু ও কখনও এয়ারপোর্ট দেখেনি তাই ভাবলো আশেপাশেই হয়তো কোথাও এয়ারপোর্ট আছে। কিন্তু ওকে অবাক করে দিয়ে আসলাম খান একটা শাটার লাগানো ঘরের দিকে গেলেন।

বীথি জানতো না বাড়ির বাইরেও যে আসলাম খানের কোন গ্যারেজ আছে। আসলাম খান শাটার তুলে ঘরের ভেতরে গেলেন। তারপর একটা গাড়ি ড্রাইভ করে বাইরে নিয়ে এলেন। তারপর আবার শাটারটা নামিয়ে তালা লাগিয়ে দিলেন। বীথি বোকার মত তাকিয়ে রইল। আসলাম খান বীথির পাশে এসে বললেন,

---গাড়িতে উঠো।
---এটা কার গাড়ি?
---আমারই গাড়ি।
---আপনার গাড়ি এখানে কেন?
---এখানে আমার একটা গ্যারেজ আছে। একটা গাড়ি আমি সব সময় এখানে রাখি।
---কিন্তু আমরা তো ট্যাক্সিতেই এয়ারপোর্টে যেতে পারতাম। এখানে এসে এখন আবার এই গাড়িতে উঠার কী দরকার ছিল? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।
---বুঝবে। আগে গাড়িতে উঠে বস।

বীথি বিপদের গন্ধ পেলো। ওর ভেতর থেকে কেউ একজন বলে উঠলো, "বীথি পালা। বীথি পালা।" বীথি ঠিক করলো এখনই ও দৌড় দেবে। পরে যা হওয়ার তা হবে। বীথি দৌড় দিতে যাবে এমন সময় আসলাম খান খপ করে ওর হাতটা ধরে ফেললেন। বীথি চিৎকার করতে যাবে তার আগেই ওর মুখে একটা ক্লোরোফর্ম মাখা রুমাল জোরে চেপে ধরলেন। কিছুক্ষণ ছটফট করতে করতে  জ্ঞান হারালো বীথি।

আসলাম খান পাঁজা কোলে করে গাড়িতে নিয়ে তুললেন ওকে। তারপর ড্রাইভ করে সোজা চলে এলেন উনার বাড়ির পেছন দিকের ছোট্ট গেটে। গেটের তালা খুলে আবার পাঁজা কোলে করে বীথিকে নিয়ে এলেন ভেতরে। তারপর লোহার সিঁড়িটা বেয়ে সোজা ছাদে চলে গেলেন। ছাদে গিয়ে বাড়ির ভেতরে নামার সিঁড়িটা বেয়ে নিচে নেমে এলেন। সিঁড়ির দরজাটা তিনি আগেই খুলে রেখেছিলেন।

তারপর দখিনের তালাবদ্ধ ঘরটার দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন। বীথি তখনও  বীথিকে দরজার পাশে মেঝেতে শুইয়ে রেখে দরজার লকটা চাবি দিয়ে খুললেন। তারপর আবার বীথিকে পাঁজা কোলে করে রুমের ভেতরের বিছানাটায় শুইয়ে দিলেন। দরজাটা আবার লক করে এবার এগিয়ে গেলেন কাঠের আলমারিটার দিকে।

আলমারিটা একটা চাবি দিয়ে খুললেন। ঝুলানো কাপড়গুলো দুপাশে সরিয়ে দিতে আরেকটা গোপণ দরজার অস্তিত্ব দেখা গেলো সেখানে। আসলাম খান সেই দরজাটাও খুললেন। দরজাটা খুলতেই ভেতরে আরেকটা ঘরের আভাস পাওয়া  গেলো। এবার বীথিকে কাঁধে তুলে নিয়ে ঘরটার ভেতরে গেলেন। একটা হাতলওলা চেয়ারে বীথিকে বসিয়ে দিয়ে ভাল করে দড়ি দিয়ে শক্ত করে বাঁধলেন চেয়ারের সাথে।

তারপর আবার বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলেন এবং গাড়িটা সেই গ্যারেজে রেখে আবার বাড়িতে ফিরে এলেন সেই পেছনের গেট দিয়েই। তার এসব কর্মকান্ডের কিছু কাকপক্ষীও টের পেলো না। বাড়ির সামনে বসে থাকা দারোয়ানও জানতে পারলো না বাড়ির পেছনে কী অঘটন ঘটে গেল এবং ঘটে চলেছে।

ভোরের দিকে বীথির কিছুটা জ্ঞান ফিরলো। ও কিছুতেই চোখ মেলতে পারলো না। শরীরটা এতটুকু নাড়াতে পারছিল না ও। শুধু অনুভব করলো ওকে একটা চেয়ারে বসিয়ে শক্ত করে বেঁধে রাখা হয়েছে। সমস্ত শরীরে অসম্ভব ব্যথা অনুভব করলো ও। গলাটা শুকিয়ে চৌচির হয়ে গেছে। শুকনো ঠোঁটদুটো জিহ্বা দিয়ে একটু চাটার চেষ্টা করলো। হঠাৎ দুজন মানুষের কথার আওয়াজ কানে এলো। একটা আসলাম খানের কণ্ঠ আর আরেকটা সেই ভারী কণ্ঠ। আসলাম খান বলছেন,
---না বাবা, আমি ওকে মারতে পারবো না।  আমি ওকে ভালবেসে ফেলেছি। তাছাড়া একটার পর একটা খুন করে আমি ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। ভারী কণ্ঠ বলছে,

---ভালবাসা আবার কী? ভালবাসা বলতে কিছু আছে নাকি পৃথিবীতে? তোকে এতদিন ধরে আমি কী শিক্ষা দিলাম।

বীথি কোনরকমে চোখটা খুলার চেষ্টা করলো। আধো ঘুম আর আধো জাগরণে ও আবছা দেখতে পেলো আসলাম খানকে। আর কেউ ওর নজরে পড়লো না বীথি আরেকটু ভাল করে তাকানোর চেষ্টা করলো। এবার ও বুঝতে পারলো আসলাম খান একা একাই কথা বলছেন। একবার ভারী কণ্ঠে কথা বলছেন তো আরেকবার স্বাভাবিক কণ্ঠে কথা বলছেন। ভারী কণ্ঠে বলে উঠলেন,

-----তুই যদি আমার কথা না শুনিস তাহলে এখনই আমি তোকে ছেড়ে চলে যাবো।

স্বভাবিক কণ্ঠে আসলাম খান সেদিনের মত গুঙিয়ে গুঙিয়ে কাঁদতে শুরু করলেন।

----প্লীজ, বাবা তুমি আমাকে ছেড়ে যেয়ো না। তুমি চলে গেলে আমি যে মরে যাবো।

----তাহলে ওকে মেরে ফেল। ঐখানে দড়ি দিয়ে ঝুলিয়ে মার। আমি দেখি। দেখে আমার আত্মাটা শান্তি পাক।

   একটু পর বীথির পুরো জ্ঞান ফিরে এলো। প্রচণ্ড ব্যথায় কান্না পেলো ওর। অঝর ধারায় কাঁদতে লাগলো বীথি। এক সময় কান্না কিছুটা স্তিমিত হয়ে এলো।  ও ঘরটার দিকে তাকালো। বুঝে উঠতে পারলো না এটা কোন জায়গা। বদ্ধ গুদামের মত একটি বড় ঘর। একটা বিদঘুটে গুমট পঁচা গন্ধ এসে বীথির নাকে লাগলো। ভীষণ বমি পেলো ওর। দম বন্ধ হয়ে এলো।

আসলাম খান ঘর থেকে কখন বেরিয়ে গেছেন বীথি টের পায়নি। আধো ঘুম আধো জাগরণে ও কিছু শুনতে পেয়েছিল সেটা মনে পড়লো ওর। আসলাম খান দুইরকম কণ্ঠে কথা বলছিলেন। তারমানে আসলাম খান দ্বৈত সত্ত্বার মানুষ। মানে মানসিক ব্যাধিগ্রস্ত। বীথি বইয়ে পড়েছে এ ধরণের মানুষেরা ভয়ঙ্কর হয়। আসলাম খান ওর সাথে কী করবেন? ওকে মেরে ফেলবেন? সুরভী আর রূপার মত? কীভাবে মারবেন ওকে?

বীথির মাথাটা ঝিমঝিম করে উঠলো। হাত পা সব যেন বিবশ হয়ে গেছে। চারদিকে তাকাতে তাকাতে এক জায়গায় গিয়ে ওর নজর আটকে গেলো হঠাৎ। ওর চেয়ার থেকে কিছুটা দূরে একটু অন্ধকার জায়গায় রেলিঙের মত কিছু একটাতে ঝুলে রয়েছে চারটি কঙ্কাল। বীথি আবার জ্ঞান হারালো। মাথাটা ঢলে পড়লো এক পাশে।

সকাল দশটা। কেউ ওর মুখে পানি ছিটিয়ে দিতেই জ্ঞান ফিরে এলো বীথির। চোখটা কোনরকমে একটু খুলে তাকালো ও। দেখলো ওর মুখের সামনে ঝুঁকে আছে আসলাম খানের মুখ।
----বীথি নাও খাবারটা খেয়ে নাও।
বলে বীথির মুখের সামনে  একটা স্যান্ডউইচ ধরলেন আসলাম খান। বীথির খিদা লেগেছিল প্রচুর। কিন্তু ও স্যান্ডউইচে কামড় না দিয়ে অনুনয়ের সুরে কেঁদে কেঁদে বলল,

----প্লীজ, আপনি আমাকে ছেড়ে দিন। আমি আপনার পায়ে পড়ছি। আমি কাউকে কিছু বলবো না। এখান থেকে অনেক দূরে চলে যাবো আমি।
আসলাম খান শীতল কণ্ঠে বললেন,
----দূরে যাতে না যাও তাই তো তোমাকে এখানে বেঁধে রেখেছি। এবার স্যান্ডউইচটা  খাও। না হলে শরীর দুর্বল হয়ে যাবে।
বীথি স্যান্ডউইচে কামড় দিলো না। আড়চোখে কঙ্কালগুলোর দিকে তাকাচ্ছিল ও বার বার। চারটা কঙ্কাল। আর কাকে কাকে মেরেছেন আসলাম খান? ভয়ের শীতল স্রোত ওর শিরদাঁড়া বেয়ে উঠে যাচ্ছিল। আসলাম খান আবার বললেন,
---কী খাবে না?

বীথি কিছু বলল না। চুপ করে রইল। ওর গাল বেয়ে চোখের জল অবিরত পড়ে যাচ্ছিল। হঠাৎ আসলাম খান কষে একটা থাপ্পড় মারলেন ওর গালে। বীথি যেন চোখে সর্ষে ফুল দেখছিল। ওর একটা কানে মনে হলো তালা লেগে গেছে।

---খা বলছি। না হলে এখনই গলায় দড়ি পেঁচিয়ে ঐখানে ঝুলিয়ে মেরে ফেলবো। ঐ কঙ্কালগুলো দেখছিস না, ও গুলোর মত।

গর্জে উঠে কথাগুলো বললেন আসলাম খান। বলে বীথির মুখের মধ্যে ঠেসে ঢুকিয়ে দিলেন স্যান্ডউইচটা। বীথি কোনরকমে কামড়দিলো। ঠোঁটটা একটু মনে হয় কেটেও গেলো। ও রক্তের নুনতা স্বাদ অনুভব করল। 

(আগামী পর্বে সমাপ্ত)

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১২:১৫

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: টপ ক্লাইমেক্স!
দম আটকে রাখা মুহুর্ত....

ইশশশ পুরাই সিরিয়ালের মতো পাঠককেও ঝুলিয়ে রাখলেন! কংকালের মতো ;)
হা হা হা

তারপর?

++++

৩১ শে জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১:৩৭

নিভৃতা বলেছেন: হা হা হা। আর একটু ঝুলে থাকুন কষ্ট করে। রাতেই সব কিছুর অবসান হবে। :)

২| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১:১১

মোহাম্মাদ আব্দুলহাক বলেছেন: দেখি কী হয়

৩১ শে জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১:৩৮

নিভৃতা বলেছেন: দেখা যাক কী আছে বীথির কপালে। যাক, পিশাচেের ভয় থেেকে তো বাঁচলেন।

৩| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১:২২

রাজীব নুর বলেছেন: বেশ লিখেছেন।

৩১ শে জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১:৪১

নিভৃতা বলেছেন: অন্নেক ধন্যবাদ আপনাকে। অবশেষে প্রশংসা পেলাম। প্রশংসা পেলে ভালোই লাগে। সমালোচনাও ভালো লাগে কিন্তু।

আপনি আমার একটা উপকার করুন। এই ব্লগের সব এডমিন মডারেটরদের নামটা একটু কষ্ট করে উল্লেখ করুন। আমি এখনও উনাদের চিনি না। :(

৪| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১:৪৯

মোহাম্মাদ আব্দুলহাক বলেছেন: কাইট্টা কুইট্টা খায় না নি? :-&

৩১ শে জানুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৩:২৯

নিভৃতা বলেছেন: খাইতোও ফারে, কওয়া যায় না। :)

৫| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:৩৮

নেওয়াজ আলি বলেছেন: নান্দনিক লেখনী ।

৩১ শে জানুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:২৪

নিভৃতা বলেছেন: অশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা সাথে থাকার জন্য। ভালো থাকবেন। শুভ কামনা অফুরান।

৬| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৪:৪৩

নীল আকাশ বলেছেন: আসলাম খান দুইরকম কণ্ঠে কথা বলছিলেন। তারমানে আসলাম খান দ্বৈত সত্ত্বার মানুষ। মানে মানসিক ব্যাধিগ্রস্ত। বীথি বইয়ে পড়েছে এ ধরণের মানুষেরা ভয়ঙ্কর হয়।
এটা অস্বাভাবিক। কলেজে পরা একটা মেয়ে এই ডুপ্লেক্স পার্সোনালিটি নিয়ে কোথায় পড়বে যেখানে বীথিরদের ফিনানশিয়াল অবস্থা এতটাই খারাপ লিখেছেন। সেখানে বই কিনে পড়াটা মানায় না। এইসব বিষয় সাইকোলজিতে অনেক উপরের দিকে পড়ানো হয়। এইসব বিষয়ে সাবধান থাকবেন।
আজকে এখানেই শেষ। কালকে বাকি অংশগুলি পড়বো।

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:১২

নিভৃতা বলেছেন: এইখানে একমত হতে পারলাম না। বীথি কিনে কলেজের লাইব্রেরিতে নিয়মিত যেত। সেখানে ডুপ্লেক্স পারসোনালিটি নিয়ে বই বা উপন্যাস পড়তেই পারে। এতে আশ্চর্যের কিছু নাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.