নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি নিভৃতা। ভালোবাসি পড়তে। একটু আধটু লেখালেখির অপচেষ্টা চলে মাঝেমাঝে।

নিভৃতা

সামুতে আট বছর আগে কোনভাবে যুক্ত হলেও আমার ব্লগিং জীবন আসলে শুরু জানুয়ারি, ২০২০ থেকে।

নিভৃতা › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পাংশ (আক্রোশ)

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ১১:৪৪


২য় পর্ব - Click This Link


পুরোনো আমলের টিনশেড ঘরটার বারান্দায় দাঁড়িয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে আছেন সালাউদ্দিন মাস্টার। একটু দূরেই মাটি কামলারা কাজ করছে। এই বাড়িরই আরেকটা অংশ ভেঙে ঐখানে বড় বড় গর্ত খোঁড়া হচ্ছে। একদল মাটি খুঁড়ছে আর অন্য দল টুকরিতে মাটি ভরে মাথায় করে নিয়ে গিয়ে পাশের খালি জায়গাটায় ফেলছে। গর্তগুলোতে পিলার বসানো হবে। নতুন দালান কোঠা উঠবে ওখানে।

কাজের তদারকি করছেন তিনি। দালানটা তার মেজো ছেলে তৈরি করছে। একটা ব্যাংকে চাকরি করে সে। তাই কাজটা দেখার ভার বাবাকেই দিয়েছে। তার বউ বাচ্চা আপাতত ঘর ভাড়া করে একটা বাসায় থাকে। বাড়িটা হয়ে গেলে চলে আসবে। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাজ দেখছেন আর জীবনের পাওয়া না পাওয়ার  হিসেব কষছেন সালাউদ্দিন। আটষট্টি বছরের জীবন তার। পাওয়া না পাওয়ার হিসেব কষলে প্রাপ্তির  পাল্লাটাই ভারী মনে হয়।

তিন ছেলে এক মেয়ে। পঁয়ত্রিশ বছর মাস্টারী করে যে সম্পত্তি বানিয়েছিলেন চার ছেলে মেয়েকে সন্তোষজনকভাবে ভাগ করে দিতে পেরেছেন তিনি। কারোর কোন অভিযোগ নেই। যার যার অংশ তাকে বুঝিয়ে দিয়ে এখন নির্ঝঞ্ঝাট জীবন তার। বড় ছেলেটা ঢাকায় একটা প্রাইভেট ফার্মে চাকরি করে। সপরিবারে সে সেখানেই থাকে। মাঝে মাঝে আসে এখানে। কদিন থেকে ঘুরেফিরে  আবার চলে যায়।

আর ছোট ছেলেটারও কদিন আগে একটা ভাল চাকরি হয়ে গেলো। এই মোহনপুরেই। চাকরিটা অবশ্য তার অনুরোধেই হয়েছে। নইলে এত বড় কোম্পানিতে চাকরি পাওয়া চাট্টিখানি কথা না। কোম্পানির মালিক সালাউদ্দিনের ছাত্র ছিল এক সময়। তাই তার অনুরোধ ফেলতে পারেনি। চাকরিটা হওয়ার পর ছেলেটার বিয়েটাও দিয়ে দিলেন কদিন আগে। লক্ষ্মী একটা বউ হয়েছে ওর।


ছোট ছেলে আর ছেলের বউকে  নিয়ে বাড়ির এই অংশে তিনি থাকেন। বাড়ির এই অংশটা ছোট ছেলের ভাগে পড়েছে। আর বাকি দুই অংশের এক অংশ মেজো ছেলে কিনে নিয়েছে বড় ছেলের কাছ থেকে। ঐ  দুই অংশ ভেঙেই দালানটা তুলছে ও। অনেক পুরোনো বাড়ি। শরীরের একটা অংশের মতই ছিল বাড়িটা। সেই বাড়িটার  দুইটা অংশ বড় বড় হাতুড়ির বাড়িতে ধীরে ধীরে খসে পড়লো।

সেই সময় মনে বড় কষ্ট হয়েছিল। হাতুড়ির একেকটা বাড়ি যেনো আঁতে গিয়ে  আঘাত করতো। বড় কষ্টে তিল তিল করে বাড়িটা বানিয়েছিলেন তিনি। তার রক্ত পানি করা কষ্টের সম্পদ যদি এভাবে খসে খসে পড়ে তাহলে ব্যথা তো একটু লাগবেই। তবু কী আর করা। এই তো জীবন। ভাঙা আর গড়া এই তো জীবনের রীতি।


মেয়েটারও ভালই বিয়ে দিয়েছেন। সুখে আছে মেয়েটা। একটা তৃপ্তির নিঃশ্বাস ফেলেন সালাউদ্দিন। নাহ, শান্তিতে মরতে পারবেন এবার। ছেলে মেয়ে গুলো ঘাটে লেগেছে। একটা মানুষের জীবনে এর চেয়ে বেশি চাওয়ার কী থাকে। শুধু বউটা যদি আরো কটা দিন বেঁচে থাকতো। হঠাৎ করেই তাকে একা ফেলে গত বছর বউটা মরে গেলো। মাঝে মাঝে বউটার জন্য বুকটা খা খা করে। বড় একা লাগে নিজেকে।


ঐ একটাই কষ্ট এই বয়সে তার। নয়তো জীবনটা সব দিক দিয়ে আজ পরিপূর্ণ। সৎভাবে চাকরি করে আজ এতদূর পর্যন্ত এসেছেন। জীবনে কখনোই কোন অন্যায়ের সাথে আপোষ করেন নি। হয়তো শেষ বয়সে জীবনের এই পরিপূর্ণতা তার এতকালের সততার পুরস্কার। হঠাৎই বুকের ভেতর একটা চিন চিন ব্যথা অনুভূত হলো।

সততা! হঠাৎই এক খণ্ড মেঘ কোথা থেকে ছুটে এসে মনটার এক কোণে আসন গেড়ে বসে পড়লো। যতটা সৎ নিজেকে তিনি ভাবেন আদৌ কি ততটা সৎ তিনি থাকতে পেরেছেন? একটি অপরাধবোধ, একটি পাপবোধ  হঠাৎই মনটাকে ছেয়ে ধরে। যখনই তিনি জীবনটাকে নিয়ে একটা তৃপ্তির ঢেকুর তুলতে চান সেই অপরাধবোধ সেই পাপবোধটা অম্বল হয়ে তৃপ্তির ঢেকুরটাকে বড় তেতো, বড় বিস্বাদ করে তোলে। ইহকালের এই একখানা পাপ তার পরকালের সুখটাকে না কেড়ে নেয়। অজানা আশঙ্কায় বুকটা কেঁপে ওঠে। আল্লাহ কি তাকে ক্ষমা করবেন?
রচনাকাল- ১৮-০৪-২০১৮
©নিভৃতা

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ১১:৫৭

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: সুন্দর । অনুতাপ কঠিন জিনিস

এখানেই শেষ নাকি। আরও পর্ব আছে

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১২:১২

নিভৃতা বলেছেন: আরো পর্ব আছে। কিন্তু পোস্ট করবো কিনা ভাবছি।
অনেক ভালোবাসা আপু।

২| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১২:১৩

তারেক_মাহমুদ বলেছেন: জীবনের একটা সময় সম্ভবত সবারই এমন অনুতাপ হয়।

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১২:১৬

নিভৃতা বলেছেন: সত্যি তাই। একটা সময় একটা না একটা অনুতাপ মনে ঠাঁই করে নেয় যা থেকে মুক্তির কোন পথ খোলা থাকে না। পেছনে ফিরে যাওয়ারও কোন উপায় থাকে না।
মন্তব্যে অশেষ কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ।

৩| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১২:১৪

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: পোস্ট করবেন না মানে কী । এসব চিন্তা বাদ দেন। পুরো গল্প চাই
ইনশাআল্লাহ পড়বো।

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১২:১৭

নিভৃতা বলেছেন: তাহলে তো পোস্ট করতেই হয় জাঁহাপনা। :)

৪| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১২:১৮

রাজীব নুর বলেছেন: সালাউদ্দিন মাস্টার সফল হয়েছেন।
সাধারন স্কুল শিক্ষকেরা জীবনে কিছুই পায় না।

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১২:২২

নিভৃতা বলেছেন: পায় না কে বলল? অনেকেেই সফলতা পান। সৎ থেকেই পান। শুধু নাটক সিনেমায় পান না।

৫| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:১১

নেওয়াজ আলি বলেছেন: সুপার লেখা। ♥♥♥

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৪:১৬

নিভৃতা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ও শুভ কামনা

৬| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৩:৩৩

ঘুটুরি বলেছেন: লেখাটা জমে উঠছে, পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৪:১৭

নিভৃতা বলেছেন: অশেষ ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।

৭| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১১:১৪

মুক্তা নীল বলেছেন:
বাহ চমৎকার লেখনি আপনার । জীবনের সবচেয়ে বেশি পাওয়া না পাওয়ার হিসাব কষে অনুতাপের পাল্লাটা কয়জনেরই বা
ভারী হয় ? ভালো লাগা রইলো ।

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১১:২৬

নিভৃতা বলেছেন: আবারও অশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। ভালো লাগায় ভালোবাসা। শুভ কামনা অফুরান।

৮| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫৮

আহমেদ জী এস বলেছেন: নিভৃতা,




মানুষের মনে যে কত সহস্র জটিলতা!
জীবনের মরুভূমিতে পাপবোধের ক্যাকটাস কখনও কখনও কাঁটা হয়েই ফোটে । গল্পের বাস্তবতার সাথে এমন কাঁটার আঘাতের দেখাও মিলবে এমন একটা আভাস মনে হয় দিয়ে গেলেন।

০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ৮:০১

নিভৃতা বলেছেন: জ্বী, আপনি সঠিক ধরেছেন। মন্তব্যে অশেষ ভালো লাগা।
শুভ কামনা রইল।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.