নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি নিভৃতা। ভালোবাসি পড়তে। একটু আধটু লেখালেখির অপচেষ্টা চলে মাঝেমাঝে।

নিভৃতা

সামুতে আট বছর আগে কোনভাবে যুক্ত হলেও আমার ব্লগিং জীবন আসলে শুরু জানুয়ারি, ২০২০ থেকে।

নিভৃতা › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প: আক্রোশ - ০৪

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ৮:০৭



৩য় পর্ব - Click This Link

লোকটা নিবিষ্ট মনে ঘাস কেটে চলেছে। রাস্তার পাশে গজিয়ে ওঠা ঘাসগুলো রোজ সে একমনে কেটে যায়। কেটে কেটে একটা চটের বস্তায় ভরে। দূর থেক দেখলে মনে হবে একজন স্বাভাবিক বয়স্ক মানুষ ঘাস কেটে চলেছেন অবিরত। দূর থেকে এই বয়স্ক লোকটাকে ঘাস কাটতে দেখে হয়তো কিছু নরম মনের মানুষের মনে দয়ার উদ্রেক হবে। তারা লোকটার সাথে দুটো কথা বলার জন্য তার কাছে এগিয়ে যাবে।

কাছে যেতেই তাদের মনের সহানুভূতিটা বিস্ময়ে রূপান্তরিত হবে। লোকটা যে শুধু বয়স্ক তা না। লোকটার পুরো একটা পা-ই যে গোড়া থেকে কাটা। কিন্তু তা নিয়ে লোকটা মোটেই দুঃখিত নয়। বরং তার ঠোঁটের কোণে লেগে আছে এক টুকরো তৃপ্তির হাসি। এই পঙ্গু জীবনটাকে নিয়ে তার কোন অভিযোগ নেই। সে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষদের একজন।

তপু খুব কাছ থেকে লোকটাকে লক্ষ্য করছিল। লোকটা একটা জায়গায় ঘাসকাটা শেষ করে ঘাসগুলো বস্তায় ভরলো। তারপর উঠে দাঁড়ালো। একহাতে তার ক্র্যাচটা আর অন্যহাতে ঘাসের বস্তা মাঝখানে তার একটা পা। পা-টা পুরোটাই দেখা যাচ্ছে। কারণ লুঙ্গিটা তার মালকুচা দিয়ে বাঁধা। সে আরো খানিকটা এগিয়ে এলো। আবার ঘাস কাটতে বসে পড়লো। নিপুণহাতে সে কেটে চলেছে ঘাস। তপু লোকটার কাছে এগিয়ে গেলো।
----ভাই কেমন আছেন?
----আল্লায় ভালাই রাখসে সাব।
----এক পা দিয়ে কাজ করেন, কষ্ট হয় না আপনার?
----না। দুই  পা কুনদিন আসিলো হেইডাই ভুইলা গেসি।
----এই বয়সে কাজ করেন কেন? ছেলে মেয়েরা দেখে না?
----মাইয়ার বিয়া হইয়া গেসে। আর তিন পুলা নিজের সংসার সামলাইবো না আমাগোরে সামলাইবো, কন?
----আপনার মনের শক্তি দেখে অবাক হচ্ছি। আপনার জায়গায় অন্য কেউ থাকলে তো এই একটা পা নিয়ে ভিক্ষার ব্যবসা শুরু করে দিতো।
----আমিও ভিক্ষাই করতাম সাব। ল্যাংড়া মানুষরে কেউ কাম দিতে চায় না। হের লাইগা ভিক্ষা ছাড়া কোন উপায় ছিল না আমার।
---তাহলে এই কাজটা কী করে পেলেন?
----সব মেয়র সায়েবের দয়া। উনার মনটা যেন একেবারে সোনা দিয়া বান্দানো। এমন মাটির মানুষ আইজকাল দেখা যায় না। এমন ক্ষমতা পাইলে যেহানে মানুষ জনগনের সম্পদ দিয়া নিজের আখের গুছাইতেই ব্যস্ত হইয়া পড়ে, সেইহানে এই লোক মানুষেরটা খাইবো কি নিজের যা আছে তাও মানুষরে বিলাইয়া দেয়। এই শহরে এহন আর তেমন ফকির নাই। সবাইরে মেয়র সাব একটা না একটা কাম দিয়া দিসে। কতজনরে যে থাকনের ব্যবস্থাও কইরা দিসে।

তপু ভেবে দেখলো আসলেই মোহনপুরে এক দুইজনের বেশি ভিক্ষুক সে দেখেনি। এমন কি স্টেশনেও ভিক্ষুক তুলনামূলকভাবে একেবারেই কম। অথচ বাংলাদেশের  স্টেশনগুলো হলো ভিক্ষুকদের আসল আখড়া। নাহ, পল্লবের প্রশংসা করতেই হয়। মোহনপুরকে যেন একটি স্বর্গনগরীতে রূপান্তরিত করেছে ও। এমন শহর বাংলাদেশে সত্যি বিরল। ক্ষমতা থাকলে মানুষ কী না করতে পারে। কেবল ইচ্ছে থাকলেই হয়। কিন্তু বাস্তবে একজন ক্ষমতাবান লোকের সব করার ক্ষমতা থাকে, শুধু মানুষের ভাল করার ইচ্ছেটুকু ছাড়া। এই পল্লবই শুধু ব্যতিক্রম।

   একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে তপু।  পল্লবের মত কয়েকজন কাণ্ডারীই দেশটাকে এই অমানিশার অন্ধকার থেকে টেনে আলোতে নিয়ে আসতে পারবে। আজ আঁধারে ছেয়ে যাওয়া  এই দেশটার জন্য এক গুচ্ছ পল্লব বড় বেশি প্রয়োজন। এমন সজিব স্নিগ্ধ  ঘন পল্লবে আচ্ছাদিত হতে পারলেই দেশটা একটা নিষ্পাপ নিষ্কলঙ্ক ফুল হয়ে ফুটে উঠতে পারবে একদিন। যে ফুলকে বাঁচাতে গিয়ে এই দেশে একদিন  মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল, এক সাগর রক্ত ঝরেছিল  সেই ফুলতো আজ অবধি ফুটতেই পারেনি, মেলতে পারেনি তার পাপড়ি  মানুষ নামক কিছু কীটের বিষাক্ত দংশনে।

----চাচা আপনার পা-টা কীভাবে কাটা পড়লো?
মুহূর্তেই লোকটার মুখ থেকে সেই হাসিটা মিলিয়ে গেলো। লোকটা কোন কথা না বলে আরো বেশি করে ঘাস কাটতে লাগলো।

এই পথেই অফিসে যাতায়াত করে সজল। লোকটার সাথে সেও প্রায়ই কথা বলে। তপুকে লোকটার সাথে কথা বলতে দেখে সে এগিয়ে এসে কথাগুলো শুনছিল। তপু লোকটাকে আর জোর করলো না। হয়তো লোকটা সেই কষ্টের স্মৃতি মনে করতে চায় না। তাই লোকটার কষ্ট আর না বাড়িয়ে পেছন ফিরলো চলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। তখনই চোখ পড়লো সজলের উপর। সজল তপুর দিকে তাকিয়ে একটু হাসলো। সেই হাসির প্রতি উত্তরে তপুও হাসলো। সজলের মনে হলো কিছু একটা বলা দরকার। তাই তপুর সাথে হাঁটতে হাঁটতে বলল,
----ভাই কি এখানে নতুন?
----জ্বী আজই আসলাম। স্টেশন থেকে নেমে ঐদিকে যাচ্ছিলাম। গন্তব্য কাছেই তাই রিকশা নেইনি। হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ লোকটার দিকে নজর গেলো। ভীষণ অবাক হলাম লোকটাকে দেখে। একটা পা নেই । তবু কী সুন্দর তৃপ্তি নিয়ে আপন মনে কাজ করে যাচ্ছে।
----আমিও লোকটার সাথে প্রায়ই কথা বলি। লোকটাকে দেখি আর অন্তর্জ্বালায় দগ্ধ হই। এই খোঁড়া লোকটার মুখে একটা তৃপ্তির হাসি লক্ষ্য করেছেন?
----হ্যাঁ লক্ষ্য করেছি। খুব সুখী একটা মানুষ মনে হয়।
----সেই সুখটা সেই তৃপ্তিটা হলো ভেজালমুক্ত পরিশ্রমের। সে পরিশ্রম করে খুব অল্প কয়েকটা টাকা হয়তো পায়। তবু সেই টাকা পরিশ্রমের টাকা। সেই টাকায় কোন ভেজাল নেই। পাপ নেই। আর এটাই তার তৃপ্তি।
----বাহ দারুণ বললেন তো। কিন্তু অন্তর্দাহ কেন হয় সেটা তো বললেন না।
সজল একটু চুপ করে থেকে বলে,
----আমি যে ঐ লোকটার মত তৃপ্তির হাসি হাসতে পারি না। চাকরি করি। পরিশ্রমও করি। পারিশ্রমিকও পাই। মোটামুটি ভাল অঙ্কের পারিশ্রমিক। কিন্তু সেই টাকা আমার মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটাতে পারে না। বরং এক অপরাধবোধ এক পাপবোধ ছেয়ে ধরে।
----ওহ। আপনি কোথায় চাকরি করেন ভাই?
----তাওফা ফুড প্রোডাক্ট এ।
----কিন্তু তওফা ফুড তো অনেক নামী একটা কোম্পানী। এই প্রোডাক্ট এখন প্রায় সারা দেশেই পাওয়া যায়। জনপ্রিয়তাও দিন দিন বাড়ছে। তাহলে আপনার মনঃকষ্টের কারণ কী?

সজলের হঠাৎ মনে হলো সে আবেগপ্রবণ হয়ে একটা অপরিচিত লোককে অনেক গোপন কথা বলে ফেলেছে। তাড়াতাড়ি নিজেকে সামলে নিলো ও।
----ভাই আমাকে বাস ধরতে হবে। যাই এবার। আপনার সাথে কথা বলে অনেক ভাল লাগল।
বলেই দ্রুত হাঁটা শুরু করলো সজল। তপুর একটু সময় ভাবলো। এই লোকটা তার কাজে লাগতে পারে। তাই দৌড়ে সে আবার সজলের কাছে চলে এসে বলল,
----আপনার ফোন নাম্বারটা দেয়া যাবে? আর এতক্ষণ কথা বললাম আমরা, অথচ কেউ কারোর নামই জানলাম না।
-----
চলবে

রচনাকাল- ১৮-০৪-২০১৮
©নিভৃতা

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ৮:২৩

মোহাম্মাদ আব্দুলহাক বলেছেন: পাঠককে ধরে রাখার দক্ষতা আছে।

আপনার সফলতা কামনি করছি।

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১০:৪২

নিভৃতা বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। কৃতজ্ঞতা ও শুভ কামনা।

২| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ৮:৪২

নেওয়াজ আলি বলেছেন: দক্ষ হাতের কমনীয় প্রকাশ

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১০:৪৩

নিভৃতা বলেছেন: অশেষ কৃতজ্ঞতা। ভালো থাকবেন।

৩| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ৯:৩১

রাজীব নুর বলেছেন: ঘাস কেটে কি গরুকে খাওয়াবে?
মোহনপুরে ভিক্ষুক থাকবে না
কেন?
সজল এর সমস্যা কি? ভালো চাকরী করেও তার মন খারাপ কেন??
দেখি সামনের পর্বে কি অপেক্ষা করে আছে।

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১০:৪৬

নিভৃতা বলেছেন: ঘাস কেটে শহর পরিষ্কার রাখবে।
কারণ সবাইকে কোন না কোন কাজে লাগানো হয়েছে।
এর আগের পর্বেই পাওয়া গেছে।
এমন মনোযোগী পাঠক পাওয়া সত্যি সৌভাগ্যের ব্যাপার।
শুভ কামনা রইল। ভালো থাকবেন।

৪| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ৯:৪৬

মুক্তা নীল বলেছেন:
গল্পের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ভালো লাগছে নতুন নতুন চরিত্র
ফুটিয়ে তুলেছেন তাই আরো ভালো লাগছে ।
অনেক শুভকামনা রইলো ।

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১০:৪৮

নিভৃতা বলেছেন: আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন। সাথে কৃতজ্ঞতা।
অফুরান শুভ কামনা। ভালো থাকুন সর্বোদা।

৫| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১২:২০

আনমোনা বলেছেন: সুনদর লিখেছেন।

০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ৯:৫৬

নিভৃতা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। ভালো থাকবেন। শুভ কামনা রইল।

৬| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ভোর ৬:০৬

চাঁদগাজী বলেছেন:



পানির মতো: রং, গন্ধ, স্বাদ কোনটাই নেই

০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ৯:৫৮

নিভৃতা বলেছেন: হুম। আমিও তা জানি। সত্যি কথাটা বলার জন্য অশেষ ধন্যবাদ ভাই। ভালো থাকবেন। শুভ কামনা রইল।

৭| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:০৯

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: অন্ধজনে দেহ আলো:- মোটামুটি এই পর্বের সারমর্ম। গণতান্ত্রিক দেশের জনপ্রতিনিধিরা ইচ্ছে করে অনেক কিছুই পাল্টে দিতে পারে। বাস্তবে না হোক, গল্পে এহেনো মেয়রকে ধন্যবাদ।
আগামীর অপেক্ষায় রইলাম।

শুভকামনা জানবেন।

০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:৩৬

নিভৃতা বলেছেন: মন্তব্যে ভালো লাগা জানবেন।
অশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা ভাই।
ভালো থাকুন সব সময়।

৮| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ১১:৩৪

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: গাজীর কথায় পাত্তা দিবেন না

ভালো লাগতেছে খুব

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১২:০৭

নিভৃতা বলেছেন: পাত্তা না দিলে কি চলে? তোমার মত অনুপ্রেরণাদানকারী যেমন প্রয়োজন, তেমনি উনার মত কঠুর সমালোচকও প্রয়োজন। :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.