নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি নিভৃতা। ভালোবাসি পড়তে। একটু আধটু লেখালেখির অপচেষ্টা চলে মাঝেমাঝে।

নিভৃতা

সামুতে আট বছর আগে কোনভাবে যুক্ত হলেও আমার ব্লগিং জীবন আসলে শুরু জানুয়ারি, ২০২০ থেকে।

নিভৃতা › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প: আক্রোশ - ০৮

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ১০:২০



৭ম পর্ব Click This Link

---ভাই আপনি কেমন আছেন?
----ভালা। আফনে কেমন আছেন সাব?
----ভাল। আপনার বউয়ের শরীর এখন কেমন?
----এখন সে অনেকটাই ভালা আছে।
----আপনার কাজ কি শেষ?
----হ শেষ। সাব আপনে বড় ভালা মানুষ।
----কেমন করে বুঝলেন আমি ভাল মানুষ?
----বুঝা যায় ভাই।
----না রে ভাই। ভাল আর হতে পারলাম কই? তবে ভাল মানুষ হতে চাই ভাই।
----সাব ঐদিন আপনে আমার পা-টা কেমনে কাটসে জানতে চাইসিলেন না? আইজ আপনেরে সব খুইল্লা কইমু।
----আচ্ছা ভাই বলেন।
লোকটা এক হাতে ক্রাচ আর অন্যহাতে ঘাসের বস্তা নিয়ে উঠে দাঁড়ালো। মাঝখানে তার এক পা অবলীলায় এগিয়ে চলল। একটু এগিয়ে গিয়ে একটা গাছের নিচে বাঁধানো জায়গাটায় বসলো। তপুও লোকটার পাশে গিয়ে বসলো।
----আমার বয়েস তখন ছয় কি সাত হইবো। আমার মা কাম করতো চৌধুরী বাড়িতে। ঐ বাড়িতেই থাকতাম আমরা। আমি খুব বান্দরামী করতাম। তিরিং তিরিং নাচতাম খুব। চৌধুরী বাড়ির বড় ছেলের বয়েস আমার সমানই হইবো। একদিন দুই ভাইয়ে মিললা লনে খেলতেসিল। দূরে বইসা আসিল ওগো মা। ওরা বল নিয়া দৌড়াদৌড়ি করতাসিল। আমারো খেলতে ইচ্ছা করতাসিলো। কিন্তু ওরা আমারে খেলায় নিতো না। ছোট লোকের পুলার লগে খেলতে ওগো মায় বারণ কইরা দিসে। আমার খুব রাগ হইতো। খেলতে খেলতে বড় ছেলে বোরহান, অহন যে এম পি হ্ইসে হেয় আমার সামনে আইসা পড়লো। আমার সামনে আসতেই আমার মাথায় বান্দর ভর করলো। দিলাম আমি পা-টা বাড়াইয়া। আমার পায়ে উষ্ঠা খাইয়া বোরহান হুড়মুড়াই গিয়া পড়লো সিঁড়ির উপরে। মাথাডা গেলো ফাইট্টা। তাড়াতাড়ি সবাই ওরে নিয়া হাসপাতালে গেলো। দুইটা সেলাই লাগসিলো। বোরহানের মা ঐদিন যেইভাবে আমার দিকে চাইসিলো আইজও মনে হইলে আমার শরীর কাঁপে। ঐদিন রাতের বেলা আমি ঘুমাইতাসিলাম। মায় তখনো কাম করতাসিলো। হঠাত কেউ আমারে মুখে চাপা মাইরা ধইরা চউখ বাইন্ধা অনেক দূরে কুনুখানে লইয়া যায়। ঐহানে নিয়া গিয়া করাত দিয়া আমার একটা পা কাইটা ফালায়। আমি বেহুশ হইয়া যাই। তারপরে কে আমারে হাসপাতালে নিয়া গেলো তা আর আমি জানি না। হুনছি একেবারে মরণের মুখ থাইকা আমি বাইচ্চা আইসি। ডাক্তার বাঁচার আশা ছাইড়াই দিসিলো।
তপু স্তব্ধ হয়ে লোকটার কথা শুনছিল। ছয় বছরের একটা বাচ্চার পা করাত দিয়ে কেটে ফেলে এমন বর্বর মানুষ কি করে হতে পারে?
----আপনি চিনতে পারেন নি ওরা কারা?
----একজনের গলা চিনসিলাম। হেয় হইলো বোরহানের মার খাস চাকর রমিজ আলি।
----আপনারা কোন মামলা করেন নি তখন?
----না। চৌধুরীদের ভয়ে লোকে কাঁপে। মামলা করন তো দূরের কথা। কেউ একটু এদিক সেদিক করলেই ঐ রমিজ তারে এমন শিক্ষা দিত যে জীবনে আর কুনোদিন হে মাথা তুইলা দাঁড়াইতে পারতো না। ওগো একজন ভাড়াটি খুনীও আছে। খুন কইরা লাশ গুম কইরা ফালায়।
----তার নাম কী জানেন?
----জানি। সবাই চিনে তারে। তার নাম অইলো কালা কুদ্দুস। কালা কুদ্দুসের বাপও চৌধুরীগো লাইগা কাম করতো। মায় কইতো কালা কুদ্দুসের বাপেই আমার পাওটা কাটসে।
----অনেক বছর আগে ওসমান নামে একজন এই মোহনপুরে খুন হয়। আপনি উনাকে চিনতেন?
----চিনতাম সাব। বড় বালা মানুষ আসিলো। গরীবরে খুব মায়া করতো।
----উনাকে কে মেরেছে কিছু জানেন!
----না। কেউ জানে না। হঠাৎ কইরা কে যে ওমন ভালা মানুষটারে মাইরা ফালাইলো।
----ঐ সময় চৌধুরী বাড়িতে যারা কাজ করতো তাদের নাম বলতে পারবেন?
লোকটা কিছুক্ষণ চিন্তা করে তারপর বলল,
----একজনরে জানি সাব। ওর নাম কুলসুম। তয় অহন আর ঐ বাড়িতে কাম করে না।
----সে কি এখনো মোহনপুরেই থাকে?
----হ এইহানেই থাকে।
----------
চৌধরী বাড়ির হলঘরটা বিরাট বড়। একতলার প্রায় পুরোটা নিয়েই হলঘর। হলঘরে ঢুকলে প্রথমেই যে জিনিসটা চোখে পড়ে তা হলো ঘরটার ঠিক মাঝ বরাবর সিলিং থেকে ঝুলানো বিশাল আকারের ঝাড়বাতি। দেয়াল জুড়ে রয়েছে বিশ্ব বিখ্যাত চিত্রকরদের বিখ্যাত সব চিত্রকর্ম। শুধু তাই নয় সারা ঘরময় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে মনকাড়া সব ভাস্কর্য আর অ্যাণ্টিক। শুধু হলঘরের এই সাজ সরঞ্জামের মূল্যই হবে কোটি কোটি টাকা। এই বাড়ির আসল মালিক এখনো বোরহান উদ্দিনের বাবা নিয়াজ উদ্দিন চৌধুরী। দাদা আজিম উদ্দিন চৌধুরী এই বাড়িটা বানিয়েছিলেন প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে। তারপর গ্রাম ছেড়ে চৌধুরীরা চলে আসে মোহনপুরের এই বাড়িটিতে। তখন থেকেই মোহনপুরে চৌধুরীদের দাপট। দাদা আজগর উদ্দিন চৌধুরী মারা যাওয়ার পর বাড়িটির মালিকানা চলে আসে নিয়াজ উদ্দিন চৌধুরীর হাতে। বাড়িটা বিশাল হলেও এত জৌলুস ছিল না আগে। এম পি হওয়ার পর বাড়িটাকে ঢেলে সাজান বোরহান উদ্দিন। বোরহান উদ্দিন শৌখিন মানুষ। সংসদ সদস্য হওয়ার সুবাদে পরিবার সহ তিনি ঢাকায়ই থাকেন। ঢাকায় তার আরো তিনটি বাড়ি রয়েছে। তিনটি বাড়ি তিন ছেলে মেয়েকে লিখে দিয়েছেন তিনি।

ওসমানের কেইসটা রিওপেন হয়েছে জানার পর থেকেই মনের ভেতর খচখচানি শুরু হয়ে গেছে বোরহান উদ্দিনের। শালার ওসমান! মনে মনে ওসমান আহমেদকে গালি দিলেন এম পি বোরহান উদ্দিন। শালা সেই সময়ও আমাকে জ্বালিয়েছে। মরে ভূত হয়ে এখনো জ্বালাচ্ছে। বিশ্বাসঘাতক কোথাকার! আর ঐ বদমাইশটার ছেলে এতদিন ধরে এই মোহনপুরে আছে। এমন কি মোহনপুরের মেয়র পর্যন্ত হয়ে গেছে আর তিনি টেরও পেলেন না! বরং একই দলের হওয়ার সুবাদে পল্লব তার সহায়তাই পেয়েছে। নাকের ডগায় বসে ঐ কুলাঙ্গারের ছেলে এতদূর এগিয়ে গেলো! আগে যদি জানতেন ও সেই স্কাউন্ড্রেলটার ছেলে তাহলে কিছুতেই তাকে ইলেকশনে জিততে দিতেন না বোরহান উদ্দিন।গোড়াতেই খতম করে ফেলতেন। ছোটলোকের বাচ্চা! বোরহান উদ্দিন চৌধুরীর সাথে টক্কর দিচ্ছে! কত্ত বড় সাহস! এর একটা হেনস্থা করতেই হবে। মনে মনে গজগজ করছেন বোরহান উদ্দিন। কিন্তু মুখে তার কোন ছাপ নেই। চমৎকার অভিনেতা এই জননেতা বোরহান উদ্দিন। ভেতরে জ্বালা আর উপরে কোমল, ঠাণ্ডা হাসি মুখ নিয়ে হলঘরে বসে আছেন তিনি তপুর সামনে।
----তা কী যেনো জিজ্ঞেস করছিলেন আপনি?
শান্ত স্বরে জিজ্ঞেস করলেন বোরহান উদ্দিন।
----আপনার আর ওসমান আহমেদের সম্পর্কটা সম্পর্কে জানতে চাইছিলাম।
----ও হ্যাঁ। ওসমান ছিল আমার খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু। কলেজ লাইফ থেকেই আমি রাজনীতির সাথে জড়িত। আর ওসমান ছিল আমার ডানহাত। দারুণ তেজী আর মেধাবী ছিল ও। বেঁচে থাকলে দারুণ একটা কিছু হত ও।
----হয়তো আপনাকেও ছাড়িয়ে যেতেন তাই না?
শালা ডিটেক্টিভ! দাঁড়া তোর ব্যবস্থা আমি করছি। তোর এত্ত বড় সাহস! যত বড় মুখ নয় তত বড় কথা তুই বলিস! মনে মনে দাঁত কটমট করে বললেন বোরহান উদ্দিন। কিন্তু মুখে বললেন,
----হে হে হে হে। তা যা বলেছেন। হয়তো আমাকেও ছাড়িয়ে যেতো। কিন্তু এই "হয়তো" শব্দটার কোন মূল্য যে নাই ডিটেক্টিভ সাহেব।
----ওসমান আহমেদের সাথে আপনার কি কোন রকম শত্রুতা ছিল?
----মোটেই না। বললাম না ও আমার ডানহাত ছিল।
-----কিন্তু শেষের দিকে তো সম্পর্কটা খারাপ হয়ে আসে।
বোরহান উদ্দিন একটু সময় চুপ করে থাকলেন। বুঝতে চেষ্টা করলেন লোকটা কতটুকু জানে। ওসমানের ছেলে যখন ওকে এখানে এনেছে নিশ্চয়ই রজনীর সাথেও লোকটার কথা হয়েছে। এই লোক সবটা জেনেই এখানে এসেছে। তাছাড়া এখানে খোঁজ খবর করেও অনেক কিছুই জেনে গেছে বা জেনে যাবে। অতএব ভেবে চিন্তে কথা বলাটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
-----

বোরহান উদ্দিনের ছোট ভাই আজগর উদ্দিন চৌধুরী। বয়স পঞ্চাশ হবে। আয়েশী বিশাল শরীর। ভাইয়ের ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে মোহনপুরে ভালই রাজত্ব করেন। জায়গা জমি সব দেখাশোনা করেন। উনার স্ত্রী ছেলে মেয়েরাও এখানেই থাকে। হেলে দুলে ভারিক্কি ভঙ্গিতে এক রাশ বিরক্তি মুখে নিয়ে এসে বসলেন তপুর সামনে। আজগর উদ্দিনের স্বভাব ভাইয়ের ঠিক উল্টো। চেহারায় অহংকার আর ক্রোধ বিশেষভাবে জায়গা করে নিয়েছে।
----কী বলবেন তাড়াতাড়ি বলেন। আমার হাতে সময় বেশি নেই।
----বেশি সময় নেবো না আপনার। আপনার সাথে ওসমান আহমেদের সম্পর্কটা কী রকম ছিল?
----সে আমার ভাইয়ের বন্ধু ছিল। সেই সূত্রে বাসায় আসা যাওয়াও ছিল। বড় ভাইয়ের বন্ধুর সাথে যতটা সম্পর্ক থাকে ততটাই সম্পর্ক ছিল ওর সাথে।
----আপনাদের ফেমিলির এত ক্লোজ একজন মানুষ এভাবে খুন হলো, আপনারা কেউ এর বিচার চাইলেন না। ব্যাপারটা খুব আশ্চর্যের।
----সে ক্লোজ ছিল। কিন্তু পরে আর ক্লোজ ছিল না। কী জন্য ছিল না সে নিশ্চয়ই আপনার জানা হয়ে গেছে। তাই অযথা প্রশ্ন না করে কাজের কথা বলুন।
----তার মানে ওর মৃত্যুতে আপনারা খুশিই হয়েছিলেন?
----আপনি আপনার গণ্ডি অতিক্রম করছেন।
চোয়ালটা শক্ত হয়ে উঠলো আজগর উদ্দিনের।
----প্রশ্ন করাটাই তো আমাদের কাজ। এতে এত রাগ করার কী আছে বলুন।
----

সুরাইয়া বেগম। সত্তরের উপর হবে বয়স। কিন্তু দেখলে মনে হয় ষাট। শরীরের কোথাও ভাঙন দেখা দেয়নি এখনো। বুঝা যায় শরীরের খুব যত্ন নেন তিনি। চেহারায় অসাধারণ ব্যক্তিত্বের ছাপ। কিন্তু চোখ দুটোতে এই বয়সেও এক সর্পিল শীতলতা। হালকা মেরুন রঙের জামদানী শাড়ি পরেছেন। দুই হাতে প্রায় দুই ইঞ্চি প্রশস্ত কারুকাজ করা দুটি স্বর্ণের বালা। কানের লতিতে আর গলায় ঝলমল করছে হীরে বসানো টপ আর লকেট। এই বয়সে উনার এই সাজ বাড়াবাড়ি মনে হচ্ছে না মোটেই। বরং উনার ব্যক্তিত্ব আর চৌধুরী বাড়ির আভিজাত্যের সাথে মানিয়ে গেছে ভীষণভাবে। সুরাইয়া বেগমের দু পাশে দুইজন কাজের লোক জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। বুঝা যাচ্ছে এরা সব সময়ই উনার সাথে সাথে থাকে।
----ম্যাডাম আপনার সাথে একা কথা বলতে চাই।
----একা? একাই তো আছি। বলেন।
তপু কাজের লোকদের দিকে তাকালো। সেটা লক্ষ্য করে সুরাইয়া বেগম বললেন,
----ওহ এরা!
এমনভাবে তিনি কথাটা বললেন যার অর্থ হলো "এরা আবার মানুষ নাকি!" সুরাইয়া ইশারায় হাত উঁচিয়ে ওদের চলে যেতে বললেন। তপু অবাক হয়ে দেখলো ওরা পেছন ফেরে যাচ্ছে না। বরং পেছন হেঁটে হেঁটে একে বারে দরজা পর্যন্ত গিয়ে বেরিয়ে গেলো। তপুর মনে হলো সে এ যুগে নয়, সেই ক্রীতদাস আমলে বাস করছে এখনো। ----আপনারা কত বছর হল এখানে এসেছেন?
----প্রায় পঞ্চাশ বছর হবে। বোরহানের বয়স যখন তিন বছর তখন এখানে আসি আমরা।
----ওসমান আহমেদের সাথে আপনার পরিচয়টা কিভাবে হলো?
সুরাইয়া বেগমের চোয়াল শক্ত হলো। চোখের সর্পিল শীতলতায় এক রাশ ঘৃণা এসে ভর করলো।
----সে আমার ছেলের বন্ধু ছিল। সেই হিসেবেই পরিচয়।
সুরাইয়া বেগমের কণ্ঠের গাম্ভির্যই বুকে ভয়ের কাঁপন ধরানোর জন্য যথেষ্ট।
----আপনাদের বাড়িতে তো উনার অহরহ যাতায়াত ছিল। আপনার কী মনে হয়, কে খুন করতে পারে উনাকে?
----সেটা আমি কী করে বলবো?
----আপনার কাউকে সন্দেহ হয়?
----না। ওমন ছোটলোক বেইমানের পরিণাম এমনই হয়।
"জারজ কুলাঙ্গার কোথাকার" দাঁতে দাঁত পিষে বিড়বিড় করে গালি দিলেন সুরাইয়া বেগম। তপু কানটা খাড়া শোনার চেষ্টা করলো উনি কী বলছেন।
----কিছু বললেন?
----কিছু বলিনি। আপনার প্রশ্ন করা শেষ হলে আমি কি এখন উঠতে পারি?
-----
নিয়াজ উদ্দিন চৌধুরী উনার স্ত্রীর ঠিক বিপরীত। বয়স চুয়াত্তর। কিন্তু দেখলে মনে হয় আশি। ভাঙন দেখা দিয়েছে শরীরে। কিছুটা কুঁজো হয়ে গেছেন। লাঠি ভর দিয়ে এসে বসলেন তপুর সামনে। বসলেন ঠিকই কিন্তু মন তার যেনো অন্য কোথাও। চেহারাটা খুব চেনা চেনা মনে হলো। খুব বেশি পরিচিত। কিন্তু কোথায় যে দেখেছে কিছুতেই মনে করতে পারলো না তপু। লোকটার জন্য কেন জানি খুব মায়া হলো। এই চৌধুরী বাড়ির লোকজনের সাথে উনার কোন মিল নেই। তপু দেখলো ঘোর লাগা চোখে চেয়ে আছেন তিনি ওর দিকে। একটু অস্বস্তি নিয়ে তপু জিজ্ঞেস করলো,
----চৌধুরী সাহেব, আপনি কি অসুস্থ?
কোন উত্তর নেই। তপু আরো দুইবার উনাকে ডাকতেই উনি চমকে উঠে বললেন,
----অ্যা কিছু বলছিলেন?
----আপনি কি অসুস্থ?
----হ্যাঁ অসুস্থ। আমি অসুস্থ। তুমি অসুস্থ। পুরো পৃথিবীটাই যে অসুস্থ।
তপুর মনে হলো লোকটার মাথা ঠিক নেই। কেমন যেনো উদ্ভ্রান্তের মত।
----ওসমান আহমেদকে তো চিনতেন আপনি, তাই না?
----ওসমান!
ছলছল করে উঠলো নিয়াজ উদ্দিনের দুটো চোখ।
----বড় ভাল ছিল ছেলেটা। কিন্তু এই পৃথিবীতে ভালদের যে কোন জায়গা নেই। সব অসুস্থরা বেঁচে থাকে। আর ভালরা মরে যায়।
----কে মারলো জানেন?
----জানি।
তপু বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
----জানেন?
----জানিই তো। আমিই মেরে ফেলেছি ছেলেটাকে। আমি খুনি। আমি পাপী।
বলে হু হু করে কাঁদতে লাগলেন নিয়াজ উদ্দিন। তপু হতভম্ব হয়ে চেয়ে রইলো।
-----
(চলবে)

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ১১:১৬

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: সব পর্বই পড়ে নিলাম আপি। মোবাইলে পড়েছি গত পর্বগুলো।

অনেক ভালো লাগতেছে মাশাআল্লাহ
আপনার লেখার হাত ভালো । আল্লাহ আপনাকে আরো সাফল্য দিন।

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১২:১৮

নিভৃতা বলেছেন: এমন অনুপ্রেরণা পেলে ধীরে ধীরে ভালো লিখতে পারবো ইনশাআল্লাহ। অনেক অনেক ভালো থেকো আপুমনি। ভালোবাসা অফুরান।

২| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:৪৮

রাজীব নুর বলেছেন: যারা বাস্তবে সুন্দর করে গুছিয়ে গল্প করতে পারে, তারাই ভালো গল্প লিখতে পারে।

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৩:২৯

নিভৃতা বলেছেন: একদম ঠিক। আমার দুইটারই খুব শখ ছিল। আফসোস আমি কোনটাই পারি না। :(

৩| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:৩৫

নেওয়াজ আলি বলেছেন: সুন্দর উপস্থাপন । ভালো থাকুন।

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৫০

নিভৃতা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। শুভ কামনা রইল।

৪| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:৩৮

ইসিয়াক বলেছেন: ভালো লাগছে আপু্ । আপনার লেখা আমার খুব ভালো লাগে।
শুভকামনা।

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৫২

নিভৃতা বলেছেন: মন্তব্যে অশেষ ভালো লাগা ও কৃতজ্ঞতা। আপনার কবিতাগুলোও আমার দারুণ ভালো লাগে। ভালো থাকবেন। শুভ কামনা জানাই।

৫| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৩৭

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: বেশ ক'দিন মিস হওয়ায় লাভই হল ;)
বিনা অপেক্ষায় একসাথে অনেক গুলো পর্ব পড়তে পাড়লাম :)

বেশ। বরাবরের মতোই ঝরঝরে সাবলীল গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে কাহিনী।
বেশ থ্রিলিং আবার কখনো সিনেমাটিকও মনে হচ্ছে।
আহা স্বপ্নের মোহনপুরের মতো শহর সত্যিই কবে হবে আমাদের দেশে!

হোক গল্পেই বীজ বপন।
ভাল লাগা রইল
++++++++++++

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ৯:৫৩

নিভৃতা বলেছেন: এত্তগুলা প্লাস পেয়ে আমি সত্যি আপ্লুত। অশেষ কৃতজ্ঞতা ভাই। ভালো থাকবেন সব সময়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.