নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি নিভৃতা। ভালোবাসি পড়তে। একটু আধটু লেখালেখির অপচেষ্টা চলে মাঝেমাঝে।

নিভৃতা

সামুতে আট বছর আগে কোনভাবে যুক্ত হলেও আমার ব্লগিং জীবন আসলে শুরু জানুয়ারি, ২০২০ থেকে।

নিভৃতা › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প: আক্রোশ - ১১

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ১০:২৭





----না, নিজের হাতে খুন করার মত কাঁচা কাজ ঐ ধূর্ত লোকটা করবে না। খুন বোরহান উদ্দিন করেনি।
-------

রজনী খানম। পঞ্চাশের কাছাকাছি বয়স। এই বয়সেও চেহারায় এক মায়াবী স্নিগ্ধতার মাখামাখি। ভালবেসে অল্প বয়সে বিয়ে করেছিলেন ওসমান আহমেদকে। অফুরন্ত প্রাণ প্রাচুর্যে ভরা টগবগে এক তরুণ ছিলেন ওসমান আহমেদ। তুখোড় বক্তা। মানুষের উপকার করে বেড়ান। সদা হাস্যময় কিন্তু অসাধারণ ব্যক্তিত্বের অধিকারী। এমন একটা ছেলেকে ভাল না বেসে কি পারা যায়? রজনী খানমও বাসলেন। মন প্রাণ উজাড় করে ভালবাসলেন ওসমান আহমেদকে। মাত্র দেড়মাস সংসার করতে পেরেছিলেন সেই ভালবাসার মানুষটির সাথে। তারপর...... তারপরের ঘটনা মনে হলে আজও হাত পা অবশ হয়ে আসে রজনী খানমের। তার মন প্রাণ উজাড় করা ভালবাসা খণ্ডবিখণ্ড হয়ে ভাসছে নদীর জলে। মূক বধির এক পুতুলে পরিণত হয়েছিলেন তিনি সেই সময়। শাশুড়ি যদি শক্ত হাতে তার হাতটি সেদিন না ধরতেন তাহলে তার পক্ষে হয়ত বেঁচে উঠাই মুশকিল ছিল। শাশুড়ির সেবা যত্ন আর ভালবাসায় ধীরে ধীরে আবার তিনি উঠে দাঁড়ান। ছোট্ট পল্লবের মুখের দিকে তাকিয়ে আবার বাঁচার স্বাদ জাগে বুকে।

জাহানারা বেগম। পল্লবের দাদী। সত্তরের কাছাকাছি বয়স। বয়সের ছাপ পড়েছে শরীরে। কিন্তু এক সময় যে অসম্ভব রূপবতী ছিলেন তা এখনো দেখলে আন্দাজ করা যায়। কথায় আছে অতি বড় সুন্দরী না পায় বর। উনার ক্ষেত্রেও কথাটা খুব বেশি সত্যি। যাকে ভালবেসে শরীর মন সব সপে দিয়েছিলেন সেই ভালবাসার মানুষটিই তাকে ধোঁকা দিলো। সেই ধোঁকাবাজের চিহ্ন শরীরে নিয়ে অনেক লাঞ্ছনা গঞ্জনা সইতে থাকেন। লোকটা হয়তো তাকে ভালবাসেনি। কিন্তু তার ভালবাসায় তো কোন খাদ ছিল না। একজন কুমারী মায়ের জন্য সমাজের সাথে যুদ্ধ করে টিকে থাকা আর সেই ভালবাসার চিহ্নকে বাঁচিয়ে রাখা কত যে কষ্টের সেটা একজন কুমারী মা-ই জানেন। এই গ্রাম সেই গ্রাম ঘুরে শেষ পর্যন্ত স্থির হতে পেরছিলেন রূপশপুর গ্রামে। সেই গ্রামেই জন্ম হয় ওসমানের। কত কষ্ট কত সাধনার ধন ছিল তার ওসমান। কত সংগ্রাম করে তিলে তিলে বড় করে তুলছিলেন ছেলেটাকে। কে জানতো তার তিল তিল করে গড়ে তোলা সেই আদরের ধনকেও খেয়ে ফেলবে নরখাদকের দল। বুকের ভেতর কষ্ট গুলো দলা বেঁধে থাকে। মাঝে মাঝে মোচড় দিয়ে ওঠে। বড় ব্যাথা হয়! প্রচণ্ড যন্ত্রণায় দম বন্ধ হয়ে আসে।

তপু দুদিনের জন্য ঢাকা এসেছে। বসে আছে পল্লবদের ঢাকার বাসার বসার ঘরে। কথা বলছে রজনী খানম আর পল্লবের দাদী জাহানারা বেগমের সাথে।
----দাদী আর খালাম্মা, ভেবে দেখুন তো আপনারা আমার কাছে কোন কিছু লুকিয়েছেন কি না?
----আমি তো তোমাকে সবই খুলে বলেছি বাবা। কিছুই লুকাইনি।
বললেন রজনী বেগম।
----দাদী আপনি কি কিছু গোপণ করেছেন?
জাহানারা বেগম চুপ করে রইলেন।
----দাদী কিছু বলেন।
----আমার কিছু বলার নাই। যা বলার বলে ফেলেছি। আর আমি আগেই বলেছি তোমরা যা করছ তাতে আমার কোন মত নেই। যে গেছে সে গেছে। সে তো আর ফিরে আসবে না।
তারপর রজনী বেগমের দিকে তাকিয়ে বললেন,
----বৌমা তোমাকে কত করে বললাম ছেলেটাকে ঐ মোহনপুরে পাঠিও না। তুমি এত পাষণ্ড কী করে হলে বলো তো? মা হয়ে কী করে পারলে ছেলেটাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে?
----মা, আপনাকে অনেক বার বলেছি আমি। আমি আমার স্বামীর খুনের বিচার চাই। এই ভাবে একটা জঘন্য খুনিকে আমরা ছেড়ে দিতে তো পারি না। তখন সম্ভব হয়নি। এখন তো সম্ভব। তবে কেন আমরা চুপ করে বসে থাকবো?
----কী লাভ বলো। যে মরে গেছে তার জন্য কেন যে বেঁচে আছে তাকেও আজ হারাতে চাও? কেন তাকে সেধে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছ?
----আমরা চুপ করে থাকি বলেই ঐসব অন্যায়কারীরা একটা অন্যায় করে পার পেয়ে যায়। তারপর আরো দশটা অন্যায় করতে তখন আর তাদের বুক কাঁপে না। আমরাই সমাজে পাপ আর অন্যায়কে বাড়িয়ে তুলছি। দোষ তো আমাদেরই মা।
----ওসব নীতি কথা আমি শুনতে চাই না। ঐ নাতিই আমার একমাত্র অন্ধের যষ্টি। অনেক হারিয়েছি জীবনে। আর হারাতে চাই না। যদি তোমরা আমাকে স্বার্থপর মনে করো তবে আমি তাই।
তপু এতক্ষণ বউ আর শাশুড়ির শান্ত লড়াই দেখছিল। এবার ও মুখ খুলল।
----দাদী আপনার নাতির কিচ্ছু হবে না। শুধু আপনি একটু মুখটা খুলুন। দেখবেন সব ঠিক হয়ে গেছে। আপনার ছেলের খুনীও শাস্তি পাবে। আর আপনার নাতিও বেঁচে থাকবে। আমার মনে হয় আপনি এমন কিছু জানেন যা এই রহস্যের জট এক মুহুর্তে খুলে ফেলবে।
----তুমি ওদের চেনো না। তাই এই কথা বলছ।
----কাদের চিনি না আমি? তার মানে আপনি জানেন আপনার ছেলেকে কে খুন করেছে?
----না জানি না। আমি কাউকে জানি না।
চিৎকার করে উঠলেন জাহানারা বেগম। তারপর দ্রুত সেই ঘর থেকে চলে গেলেন। ঘটনার আকস্মিকতায় চমকে উঠলেন রজনী বেগম। শাশুড়ির এই রূপ তার অচেনা। এতদিন দেখে এসেছেন ঠাণ্ডা মাথার শান্ত এক মানুষ জাহানারা বেগম। উনার এই রূপ আজ প্রথম দেখলেন রজনী বেগম। তপু খুব একটা অবাক হলো না। কারন সে জানে জাহানারা বেগম কিছু একটা গোপন করছেন।
-----
তপু মোহনপুরে ফিরে এসেছে। পল্লবের বসার ঘরে বসে পল্লবের সাথে কথা বলছিলো ও। পল্লবও নিজের দাদীর এই রহস্যময় আচরণে চিন্তিত। এমন সময় একজন বৃদ্ধ লোক দেখা করতে আসলেন পল্লবের সাথে।
----আমার নাম মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। আমার কিছু কথা ছিল আপনাদের সাথে।
----কী বলতে চান বলুন।
পল্লব বলল।
----আমার অনেক বড় ভুল হয়ে গেছে। ভুল না পাপ।
----কী বলছেন? কী পাপ?
----আমি জানি তোমার বাবাকে কে খুন করেছে। আমি ঐ খুনের চাক্ষুষ সাক্ষী।
পল্লব ও তপু দুজনেই কয়েক মুহূর্ত থ হয়ে বসে রইল। কী বলছে এই লোক? তপু বিস্মিত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো আপনি জানেন কে খুন করেছে?
----হ্যাঁ জানি। কিন্তু ভয়ে কথাটা এতদিন প্রকাশ করতে পারিনি। কিন্তু শান্তিতেও থাকতে পারিনি কখনো। প্রতি মুহূর্ত ঐ ঘটনা আমার বিবেককে দংশন করে চলেছে। আর এই বয়সে এসে সেই দংশন আর আমি সইতে পারছি না। সেই পাপের বোঝা আর বইতে পারছি না আমি। সবাই জানে আমি একজন সৎ আদর্শবান মানুষ। কিন্তু কেউ জানে না আমি কত বড় পাপী। আমি একজন মানুষকে খুন হতে দেখেও তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করিনি। তার উপর চুপ করে থেকে ঐ খুনীকে বাঁচিয়ে দিয়ে ঐ পাপের সমান ভাগীদার হয়ে বসে আছি।
পল্লব কাতর কণ্ঠে বলল,
----দয়া করে সব খুলে বলুন। আমি কথা দিচ্ছি আপনার কোন ক্ষতি হবে না।
----না এখন আর ক্ষতির চিন্তা করি না। ক্ষতির চিন্তা করলে কি এখানে আসতে পারতাম। আমি এখন ভারমুক্ত হয়ে এই পৃথিবী থেকে যেতে চাই। আমি আদালতেও সাক্ষ্য দিতে রাজী আছি।

যে রাস্তাটায় ওসমানকে খুন করা হয় তার কাছেই আমার বাড়ি। রাত তখন বারোটার কাছাকাছি। সবাই তখন একটু তাড়াতাড়িই ঘুমিয়ে পড়তো। আর তাই এগারোটা বাজতে না বাজতেই চারপাশে নিস্তব্ধতা নেমে আসতো। এই রাস্তা দিয়েই ওসমান সব সময় আসা যাওয়া করতো। সেদিন হয়তো কোন কারনে ওর ফিরতে একটু দেরি হয়ে গিয়েছিল। আমিও ঘুমেই ছিলাম সেদিন। কিন্তু হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে যায় আমার। বাড়ির সবাই তখন ঘুমে কাতর। প্রকৃতির ডাকে সারা দিতে আমি বাইরে বেরিয়ে আসি। শৌচাগারের কাজ সেরে ঘরে ঢুকতে যাবো তখনই অনেক দূরে কিছু লোকের মৃদু চিৎকার শুনতে পেলাম। যেখান থেকে চিৎকারটা আসছিল সে জায়গাটায় আর কোন ঘর বাড়ি নেই। এই দিকটায় আমার বাড়িটাই শেষ বাড়ি। আমি চিৎকার অনুসরণ করে সামনে এগোলাম। কথাগুলো ধীরে ধীরে স্পষ্ট হতে লাগলো। দেখলাম তিনটা ছায়ামূর্তি। দুইটা ছায়ামূর্তি একটি ছায়ামূর্তিকে ধরে দুই হাত পেছনে নিয়ে বেঁধে ফেলেছে। যাকে বাঁধা হচ্ছে সে ঐ দুজনকে খুব শাসাচ্ছে আর চিৎকার করছে। আমি আরো ভাল করে দেখার জন্য ঝোপঝাড়ের আড়ালে আড়ালে লুকিয়ে আরেকটু এগিয়ে একটি বড় গাছের আড়ালে লুকিয়ে দেখতে লাগলাম। এবার সবার চেহারা স্পষ্ট দেখতে পেলাম। যাকে বাঁধা হয়েছে সে ওসমান। আর যারা বেঁধেছে তারা হলো আজগর উদ্দিন চৌধুরী আর তাদের খাস চাকর রমিজ মিয়া। ওদের হাতে চকচক করছে ধারালো একটা চাপাতি। আমার হাত পা কাঁপতে লাগলো। ভাবলাম দৌড়ে গিয়ে সবাইকে ডেকে নিয়ে আসি। কিন্তু আমার পা যেনো পাথর হয়ে গেছে। শত চেষ্টা করেও আমি এক পা নড়তে পারলাম না। ভাবলাম জোরে একটা চিৎকার দেই। কিন্তু আমার গলা দিয়ে কোন স্বরই বের হলো না। আমার চোখের সামনে ওরা কোরবানীর গরুর মত ওসমানকে নিচে ফেলে দিলো। রমিজ মিয়া ওসমানের দুই পা চেপে ধরলো। ওসমান ছটফট করতে লাগলো আর ছেড়ে দে, ছেড়ে দে বলে চিৎকার করতে লাগলো। আজগর উদ্দিন চৌধুরী ওসমানের বুকের উপর উঠে বসলো। তারপর কোরবানীর গরু যেভাবে জবাই ঠিক সেইভাবে ওসমানের গলাটা কেটে ফেলল। তারপর হাত পা সব কোপ দিয়ে দিয়ে আলাদা করে ফেলল। এরপর ওসমানের শরীরের টুকরো গুলো একটা চটের বস্তায় ভরে নদীর দিকে নিয়ে গেলো। আমি গাছের আড়ালে কতক্ষণ বসেছিলাম জানি না। আমি চলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছিলাম। আমার বোধ শক্তি লোপ পেয়ে গিয়েছিল। অনেকক্ষন পর কিছুটা শক্তি ফিরে পেলাম। পা টাকে কোন রকমে টেনে নিয়ে এলাম ঘরে। তারপর চুপচাপ শুয়ে পড়লাম। কাউকে কিছুই বললাম না। এমন বিভৎস খুন আমি জীবনে কোনদিন দেখিনি। এমন বিভৎসভাবে একজন মানুষ আরেকজন মানুষকে মারতে পারে আমার কল্পনার বাইরে ছিল! আমি এই খুনের কথা মনে করতেও ভয় পেতে লাগলাম। ফলে কেউ কিছু জানতে পারলো না। খুনটাও চাপা পড়ে গেলো।

পল্লব হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারছিলো না। তার এতদিনের কষ্ট আজ সফল হলো। আসল খুনী কে বেরিয়ে এসেছে। কিন্তু এমন পশুর মত তার বাবাকে লোকটা খুন করেছে এ কষ্ট সে সইতে পারছে না। টপ টপ করে কয়েক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো পল্লবের চোখ থেকে। শুধু ভাইয়ের পছন্দের মেয়েকে আরেকজন বিয়ে করে ফেলেছে এত আক্রোশ! নাকি এর পেছনে লুকিয়ে রয়েছে অন্য কোন বিশাল কারন?
(আগামী পর্বে সমাপ্ত )

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১২:৪৭

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: হুমম

সত্য এভাবেই প্রকাশিত হয়। কখনো অনুসন্ধানে কখনো বিবেকের দংশনে।

সমাপ্তির পথ চেয়ে রইলাম।

+++

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১২:৫০

নিভৃতা বলেছেন: জ্বী। একদিন না একদিন সত্যের জয় হয়ই। অশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানবেন।

২| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:৪০

রাজীব নুর বলেছেন: আগামী পর্বে আজই দিয়ে দেন।

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৩:১৭

নিভৃতা বলেছেন: হ্যাঁ আজই দিয়ে দেবো। আপনার ম্যাসেজ পেয়েছি। ঐটাই আমি :)

৩| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:৪৩

নেওয়াজ আলি বলেছেন: অনন্যসাধারণ লিখনী।

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৩:১৮

নিভৃতা বলেছেন: অশেষ ধন্যবাদ জানবেন ভাই। ভালো থাকবেন।

৪| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:১৭

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: রাইতে পড়মু আপি। লাইক দিয়া গেলাম

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৫০

নিভৃতা বলেছেন: যখন সময় হয় পইড়ো আপুমনি। লাইক এ ভালো লাগা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.