নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি নিভৃতা। ভালোবাসি পড়তে। একটু আধটু লেখালেখির অপচেষ্টা চলে মাঝেমাঝে।

নিভৃতা

সামুতে আট বছর আগে কোনভাবে যুক্ত হলেও আমার ব্লগিং জীবন আসলে শুরু জানুয়ারি, ২০২০ থেকে।

নিভৃতা › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাসনা ছুরি - ০৫

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১২:১৫




৪র্থ পর্ব - Click This Link


সাত

আজ অফিস থেকে একটু তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে এসেছে আবীর। তাই বাগানে ফুলগাছ গুলোর একটু যত্ন করছিল। পুকুরের চাতালে বসে যথারীতি পাখিদের ডাক গুণছিল তিতলি। এমন সময় কাঁধে একটা কাপড়ের ব্যাগ ঝুলিয়ে গেটের ভেতরে ঢুকলো রীণা। প্রায় তিন বৎসর পর এই বাড়িতে পা দিয়ে আনন্দ আর বেদনার একটা মিশ্র অনুভূতি হচ্ছিল ওর। কত বড় বড় হয়ে গেছে গাছগুলো। সবগুলো রীণার বড় চেনা। বড় আপন। ফুলের বাগানটাও যেমন তেমনই আছে। আবীরকে ফুলগাছগুলোর যত্ন করতে দেখে ভাল লাগল ওর। রীণাকে দেখে আবীরের মুখটা যেন চুপসে গেলো। ভূত দেখার মত চমকে উঠে আবীর বলল,
---তুমি?
---হ্যাঁ আমি। এত চমকে উঠার কী হল বীরু?
আবীরের চেহারা থেকে এক ঝলকে সব রক্ত সরে গিয়ে যেন ফ্যাকাসে হয়ে উঠলো। আবীর কোন কথা খুঁজে পেল না। রীণা বিনা নোটিশে হঠাৎ এখানে এসে হাজির হতে পারে এটা ওর কল্পনাতেও ছিল না। গলাটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। আবীর জিহ্বা দিয়ে ঠোঁটটা ভেজানোর বৃথা চেষ্টা করলো। রীণা ব্যাপারটা লক্ষ্য করে হেসে উঠে বলল,
---বীরু তুমি এমন ভীরু হলে কবে থেকে বলো তো? বীরুকে কি ভীরুতা মানায়?
আবীর একটু শুকনো হেসে একটু কেশে নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,
---আসলে এতদিন পর এভাবে, কোন খবর না দিয়ে তুমি আসবে ভাবিনি। অনেকদিন হয়ে গেল কোন দেখা সাক্ষাত নেই তো।
---দেখা সাক্ষাত হবে কী করে? তুমি তো সেই পথ রাখোনি বীরু।
আবীর একটু লজ্জিত বোধ করলো। একটু ইতস্তত করে বলল,
---আচ্ছা এসব কথা এখন বাদ দাও। কেমন আছ সেটা বলো?
---আছি একরকম, যেমন থাকা যায়।
---মা, দীপু ওরা সব ভাল?
---দীপু ভালই আছে। তবে মার শরীরটা অনেকদিন ধরেই ভাল নেই। তা সব কথা কি এখানে দাঁড়িয়েই বলবে? আমাকে ভেতরে নিয়ে যাবে না? নাকি বাইরে থেকেই বিদেয় করে দেয়ার ইচ্ছা তোমার? আমি কিন্তু ব্যাগট্যাগ নিয়ে সেই মতলবে এখানে আসিনি।
বলে হাতের কাপড়ের ব্যাগটা উঁচিয়ে দেখালো রীণা। আবীরও এতক্ষণে ব্যাগটা খেয়াল করলো। তারমানে রীণা আজ থাকার উদ্দেশ্যে এখানে এসেছে। শুধু আজই থাকবে নাকি আরো বেশি থাকবে কে জানে। রীণার এই হঠাৎ উদয় মোটেই স্বস্তি দিচ্ছিল না আবীরকে।

আবীরকে চুপ করে থাকতে দেখে রীণার চোখে বিষাদের ছায়া নেমে আসে। ও বুঝতে পারে আবীর ওকে দেখে একটুও খুশি হয়নি। এভাবে অনাকাঙ্খিত হয়ে এ বাড়ির ভেতরে যেতে একটুও মন সায় দিচ্ছিল না ওর। কত পরিচিত এই বাড়ি! কত স্মৃতি মিশে আছে এবাড়ির আনাচে কানাচে। রীণার চোখটা ছলছল করে উঠলো। মনে মনে একটা দীর্ঘশ্বাস গোপণ করলো ও। উপায় নেই। বাড়ির ভেতরে যেতে ওকে হবেই। আবীর বলল,
---অনেকক্ষণ দাঁড় করিয়ে রেখেছি তোমায়। চলো, ভেতরে চলো।
---তুমি অনেক পাল্টে গেছ বীরু। আসলে তোমারও কোন দোষ নেই। পরিস্থিতিই আমাদেরকে পাল্টে দেয়।

বলে আবীরের সাথে সাথে ঘরের দিকে পা বাড়ালো রীণা। আবীরও চুপচাপ এগিয়ে চলল। রীণার কথার কোন উত্তর ও দিতে পারল না। কিছুদূর যেতেই রীণার চোখে পড়লো দুটি উৎসুক চোখ তাকিয়ে আছে দূরের ঐ চাতালটা থেকে। সব আগেরই মত আছে। সেই গাছগাছালি, সেই বাগান, সেই পুকুর। শুধু ঐ চাতালটাই নতুন। ভারী সুন্দর সাজানো বাড়িটা। যেন ছবির মতন। কান্নাটা আবার দলা পাকিয়ে উঠে ভেতরে।

রীণা দিক পরিবর্তন করে চাতালটার দিকে এগিয়ে যায়। চাতালে পৌছানোর আগেই দৌড়ে এসে কচি দুটি হাত জড়িয়ে ধরে রীণাকে। রীণা সেখানেই বসে পড়লো। বসে জড়িয়ে ধরলো ছোট্ট তিতলিকে। তারপর কোলে তুলে নিয়ে চুমুতে চুমুতে ভরে তুলল ওর সারা গাল। আবীর অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। তিতলির এখনো মনে আছে রীণাকে? প্রায় তিন বৎসর হয়ে গেলো তিতলি তো রীণাকে দেখেনি। যখন রীণাকে ও শেষ দেখেছে তখন তিতলির বয়স মাত্র তিন বছর। এত অল্প বয়সের স্মৃতি কি বাচ্চাদের মনে থাকে? দুশ্চিন্তার ছায়া পড়লো ওর মুখে।
---তুলতুলি তুই এখনো আমাকে মনে রেখেছিস?
তিতলি কোন কথা না বলে চুপ করে হেসে রীণার কাঁধে মুখ লুকালো। আসলে তিতলি কী বলবে ভেবে পাচ্ছে না। ওর তো আসলে তেমন করে কিছু মনে নেই। শুধু সবকিছু আবছা আবছা। রীণাকে দেখে ওর মনে হলো এই মানুষটি ওর বড় আপন। বড় কাছের। রীণার মুখটা যেন বড় চেনা। এই চেহারাটাই ও দেখতে পায় মিশু মিসের চেহারায়। তাই তো মিশু মিসকে এত ভাল লাগে ওর। এই অচেনা মানুষের ভীড়ে রীণা যেন বড় চেনা কেউ। তাই তো দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরলো ওকে।

আবীরের চোখে জল এলো। আজ অবধি কোনদিন মেয়েটি এভাবে তাকে জড়িয়ে ধরেনি। কোলে ওঠেনি। অথচ রীণাকে এতদিন পর দেখেও কেমন আপনের মত জড়িয়ে ধরে কোলে উঠে গেল। যেন রীণার মত আপন এই পৃথিবীতে ওর কেউ নেই। এজন্য কাকে দোষ দিবে আবীর? আসলে এজন্য দায়ী সে নিজেই। ও'ই তিতলিকে এতদিনে এতটুকু কাছে টেন নিতে পারেনি। পারেনি এতটুকু আঁচড় কাটতে ঐ ছোট্ট হৃদয়টাতে। এই ব্যর্থতার দায় শুধুই তার নিজের। চোখটা মুছে আবীর এগিয়ে গিয়ে বলল,
---ভেতরে চলো রীণা।

রীণা তিতলিকে কোলে করেই বাড়ির ভেতরে এগোতে লাগলো। আর তিতলি হাসিমুখে খুব করে জড়িয়ে ধরে রাখলো রীণার গলা। যেন ছাড়লেই রীণা পালিয়ে যাবে, তাই কিছুতেই রীণার গলা ছাড়বে না তিতলি। সবাই ওরা ঘরের ভেতরে পা রাখলো। তানি রীণাকে দেখে ভীষণভাবে চমকে উঠলো। তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে কাঠ কাঠ গলায় বলল,
---তুমি?
রীণা হেসে উত্তর দিলো,
---কেন আমি কি আসতে পারি না এ বাড়িতে?
তানি চোয়াল শক্ত করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল। কোন উত্তর দিল না।
রীণা ব্যাপারটা লক্ষ্য করে বলল,
---এত ভয়ের কিছু নেই। একটা রাত থেকে চলে যাব। তিতলির জন্য মনটা ভীষণ কেমন করছিল তো। তাই নিজেকে আটকে রাখতে পারলাম না।
---এতদিন পর তিতলির জন্য মন কেমন করে উঠলো!

তানির কণ্ঠে ব্যাঙ্গের সুর। রীণার ভেতরটা জ্বলেপুড়ে অঙ্গার হয়ে যাচ্ছিল তানিকে দেখেই। তার উপর ওর এই সুরে কথা বলা কিছুতেই সহ্য করতে পারছিল না ও। মনে হচ্ছিল এখনই এখান থেকে ছুটে পালিয়ে যায়। দম বন্ধ হয়ে আসছিল রীণার। কোনরকমে নিজেকে সামলে স্বাভাবিকভাবেই বলল,

---মন তো কেমন করে সবসময়ই। কিন্তু আসতে যে বড় বাঁধে। কিন্তু এবার ঐ বাঁধটাকে সাহস করে ভেঙে দিলাম।

রীণা আর তানির কথোপকথন আবীরকে বড় অস্বস্তির মধ্যে ফেলে দিয়েছিল। সে তানিকে চোখ ইশারা করে থামতে বলল। তারপর রীণাকে বসার জন্য অনুরোধ করলো। তিতলি রীণাকে বসতে না দিয়ে হাত ধরে টেনে ওর ঘরে নিয়ে গেলো। আবীর আর তানি একে অপরের দিকে নীরব দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। তানির চোখ থেকে যেন ঠিকরে আগুন বের হচ্ছিল। ওরা চলে যেতেই তানি বলল,

---কী ব্যাপার ও এখানে আসার সাহস পায় কী করে?
---তার আমি কী জানি। আমি তো নিজেই কিছু বুঝতে পারছি না।
---আমার কিন্তু ভাল ঠেকছে না। ওর সাথে তোমার গোপণে যোগাযোগ নেই তো?
---কী যা তা বলছ?
---তোমার কাছে প্রশ্রয় না পেলে ও এখানে আসার সাহসই পেত না।
---তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে। আমি নিজের বিপদ নিজে ডেকে আনবো? তোমার সবকিছুতেই সন্দেহ। হয়তো তিতলিকে দেখতে এসেছে। অনেকদিন দেখেনি তাই।
---এতদিনে হঠাৎ দরদ উথলে উঠলো কেন?
---শোন, এসব ফালতু প্রশ্নের কোন জবাব আমার কাছে নেই। ও কাল চলে যাবে। ততক্ষণ কোন সিন ক্রিয়েট করো না। নয়তো নিজের বিপদ নিজেই ডেকে আনবে।
তানি কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো। তারপর হঠাৎ মনে পড়তেই বলে উঠলো,
---আচ্ছা এতদিন পর তিতলি ওকে কী করে চিনতে পারলো? যেভাবে ওর সাথে সেঁটে আছে তাতে মনে হচ্ছে খুব ভাল করেই চিনেছে।
---ব্যাপারটা আমাকেও অবাক করেছে।
তানির কপালে দুশ্চিন্তার রেখা ফুটে উঠলো।
---ব্যাপারটা কিন্তু আমাদের জন্য মোটেই স্বস্তির না। আমি কিন্তু বিপদের গন্ধ পাচ্ছি। আবীর কিছু বলল না। সন্দেহটা ওর কাছেও অমূলক মনে হচ্ছে না।
------

রীণা তিতলির ঘরে ঢুকে দেখলো। সব কিছু একদম পরিপাটি করে সাজানো গোছানো।
---বাহ! তোর রুম তো খুব সুন্দর! কে গুছিয়ে দেয় রে?
---কে আবার? আমিই গুছিয়ে রাখি।
---তুই এত সুন্দর করে গুছাতে পারিস?
---বাহ রে! কেন পারব না।
রীণা ভারী অবাক হল। এই ছোট্ট মেয়ে এত সুন্দর করে পুরো ঘর গুছিয়ে রাখে! রীণা তিতলিকে নিয়ে ওর বিছানায় বসলো।
---আচ্ছা, তুলতুলি তুই আমাকে চিনলি কী করে সত্যি করে বলতো।
---জানি না তো। তোমাকে দেখেই মনে হল তুমি আমার খুব কাছের মানুষ। খুব আপন।
রীণার চোখে জল চলে এলো। ও শক্ত করে তিতলিকে জড়িয়ে ধরে হঠাৎই কেঁদে উঠলো। তিতলি অবাক হয়ে বলল,
---কী হল তোমার? কাঁদছ কেন তুমি? আমার কথায় রাগ করেছ বুঝি?
রীণা তাড়াতাড়ি চোখটা মুছে বলে,
---না রে। তোকে কতদিন পর দেখলাম তো, তাই কান্না চলে এসেছে।
---তুমি একদম কাঁদবে না। আমার মন খারাপ হয়। আচ্ছা, তুমি আমাকে তুলতুলি বলে ডাকো কেন বলো তো।
রীণার চোখের সামনে ভেসে ওঠে তিতলির তিন বছর আগের ছবি। কী যে নাদুসনুদুস তুলতুলে ছিল মেয়েটা। রীণা তাই তিতলিকে তুলতুলি বলেই ডাকতো সবসময়। পটর পটর করে কত কথা যে বলতো তিন বছরের তিতলি। রীণার খুব ন্যাওটা ছিল ও। রীণা এই বাড়িতে আসলে ওর সাথে আঠার মত লেগে থাকতো। রীণাও একেবারে মন প্রাণ উজার করে আদর করতো ওকে। খাওয়ানো, পড়ানো, গোসল করানো থেকে সব। দীনা বাধা দিয়ে বলতো,
---তুই বেড়াতে এসেছিস কদিনের জন্য। কেন এত কষ্ট করছিস বল তো?
রীণা অভিমান করে বলতো,
---ও আমি বুঝি তোমার পর। তাই এভাবে বলছ।
দীনা হেসে রীণাকে জড়িয়ে ধরে বলতো,
---পাগলী! তুই আমার পর হতে যাবি কোন দুঃখে। তুই তো আমার কলিজার টুকরা।
---আচ্ছা, আমি এলে তুমি এতো কষ্ট করো কেন বলো তো? পিঠা পায়েস কোরমা পোলাও থেকে শুরু করে কী না করো তুমি! কেন?
---তোর জন্য এসব করার মাঝে কী যে আনন্দ সে তুই বুঝবি না। বিয়ে শাদী হোক। তারপর আমি যখন তোর বাড়িতে যাব তখন বুঝবি।
---তাহলে তিতলির জন্য এসব করার মাঝে যে কী আনন্দ সেও তুমি বুঝবে না।
দীনা হাসতে হাসতে বলতো,
---তুই একটা আস্ত পাগল।
কী যে খুশি হত দীনা, রীণা এ বাড়িতে এলে। কত যে গল্প করত দুই বোনে মিলে। যেন গল্পের ফোয়ারা বইতো তখন এ বাড়িতে। আবীর অবাক হয়ে বলতো,
---আচ্ছা, তোমরা মেয়েরা এত কথা কোথায় খুঁজে পাও বলো তো? সারাবেলা ননস্টপ কথার রেলগাড়ি চলছে তো চলছেই। অফিস যাওয়ার আগে দুই বোনকে দেখে যাই গল্পে মশগুল। এসেও দেখি সেই একই অবস্থা। আর দেখি খালি খিলখিল হাসি। কিছু হাসি আমাকেও ধার দেও না শ্যালিকা।
দুইবোনের গল্পের বাহার দেখে মাঝে মাঝে কৃত্রিম রাগ দেখিয়ে আবীর বলতো,
---তোমার এই বাড়িতে আসা বন্ধ করতে হবে দেখছি। তুমি এলে আমার ভালবাসায় ভাগ বসাও। তোমার বোনকে আর খুঁজেই পাওয়া যায় না।
আবীর এমন অসহায়ের ভঙ্গিতে কথাগুলো বলতো যে দুই বোন হেসে গড়াগড়ি খেত। তখন কি আর রীণা জানতো সত্যিই এ বাড়িতে আসা বন্ধ হয়ে যাবে একদিন ওর।
আবীরও কম খাতিরদারি করতো না রীণার। প্রায়ই অফিস থেকে ফেরার পথে এটা সেটা নিয়ে আসতো। দই রীণার ভীষণ প্রিয়। সেটা জানতো আবীর। তাই রীণা এলে রীণার জন্য সেরা দোকানের সেরা দইটা সব সময়ই হাজির থাকতো এই বাড়িতে। মাঝে মাঝে আবীর ওদেরকে নিয়ে রাত বিরাতে লংড্রাইভে বেরিয়ে পড়তো। আবীরের গানের গলা দারুণ। রীণাও একটু আধটু গান জানে। দুলাভাই আর শ্যালিকা মিলে জ্যোৎস্না রাতে ছাদের উপর গানের আসর বসাতো। কী সুন্দরই না ছিল সেই দিনগুলো। রীণার চোখ দুটো ছল ছল করে ওঠে।
---কী হল? বললে না যে আমাকে তুলতুলি কেন ডাকো?
--- তুই ছোট্টবেলায় অনেক নাদুসনুদুস আর তুলতুলে ছিলি তো। তাই তোকে তুলতুলি ডাকতাম আমি। কিন্তু এখন তুই অনেক শুকিয়ে গেছিস রে। খাওয়া দাওয়া ঠিক মত করিস না, তাই না?
---খাই তো। আচ্ছা আমি তোমাকে কী বলে ডাকবো বলো তো?
---খালামনি। তুই আমাকে ছোট্টবেলায় এই নামেই ডাকতি।
---ওহ, তাহলে তো তুমি মামনির বোন, তাই না?
---না রে। আমি তোর মামনির বোন নই।
---কিন্তু আমি তো জানি মায়ের বোনকেই খালা বলে।
রীণা কী বলবে বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করলো,
তিতলি তোর মায়ের কথা মনে পড়ে?
তিতলি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে কিছু ভাবে। তারপর বলে,
---মা.... মামনির কথা বলছ তুমি?
রীণা হতাশ হয়। মায়ের কোন স্মৃতিই ওর মনে নেই। তানিকেই ও মা মনে করে। অথচ ওকে দেখে যেভাবে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরেছিল তাতে রীণা ভেবেছিল তিতলির বুঝি সব মনে আছে। নাহ, শুধু শুধু বাচ্চা মেয়েটাকে চাপ দিয়ে লাভ নেই। তারপর কথা ঘুরিয়ে বলল,
---তোর কী করতে সবচেয়ে ভাল লাগে বলতো?
---অনেক কিছু ভাল লাগে। চাতালে বসে থাকতে ভাল লাগে। গাছ, পাখি, বেড়াল এদের সাথে কথা বলতে ভাল লাগে। মাছেদের সাথে খেলতে ভাল লাগে।
---শুধু পশুপাখি গাছপালা এসব ভাল লাগে। মানুষ ভাল লাগে না।
---লাগে তো। তুতনকে ভাল লাগে। মায়া বুড়িকে ভাল লাগে। মিশু মিসকে ভাল লাগে। আর তোমাকে ভাল লাগে। জান খালামনি, মিশু মিস না দেখতে একদম তোমার মত। তাই তো মিশু মিসকে আমার এত ভাল লাগে। এতদিন শুধু ভাবতাম মিশু মিস কার মত দেখতে। কেউ খুব আপন কারোর মত লাগতো তাকে। এখন বুঝতে পেরেছি, উনি আসলে তোমার মত।
বলে রাজ্য জয়ের হাসি হাসলো তিতলি। রীণা বলল,
---সবার কথা বললি। নিজের বাবা মার কথা বললি না যে পাগলী।?
তিতলি মুখটা কালো করে বলল,
---বুঝি না যে খালামনি।
রীণার মুখে কালো ছায়া পড়ে। ছ্যাৎ করে ওঠে বুকের ভেতরটা।
---কেন রে? ওরা বুঝি তোকে খুব বকে?
---না তো। খুব আদর করে।
---তবে?
---কী জানি। তবু ওদের আমার কেন জানি ভাল লাগে না।
---তোর বাবাকেও না?
---না।

এতটুকু একটা মেয়ে কেমন যেন জ্ঞানীদের মত কথা বলে। মনে হচ্ছে তিন বছরে যেন ত্রিশ বছর বয়স বেড়ে গেছে ওর। তানি তো সৎ মা। তানিকে পছন্দ নাই করতে পারে। কিন্তু নিজের বাবাকে একটি মেয়ে কেন পছন্দ করবে না। আর কেন পছন্দ করে না এর সঠিক কারণ ও নিজেও জানে না।
রাতে খাওয়াদাওয়ার পর রীণা তিতলির রুমে ঘুমোতে আসলো। তিতলি ওর আঁকা অনেকগুলো ছবি নিয়ে এলো রীণাকে দেখানোর জন্য। রীণা ছবিগুলো হাতে নিয়ে একটা একটা করে দেখতে লাগলো। কী এঁকেছে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। সবগুলো ছবিই সাদাকালো। কালো রঙের ব্যবহারটা বেশি। রীণা খুব মনযোগ দিয়ে ছবিগুলো দেখছিল। এমন সময় রীণার ফোনটা বেজে উঠলো। রীণা ফোনটা ধরলো। বুকটা ধ্বক ধ্বক করছে। সেই ভারী কণ্ঠস্বর। কেন লোকটার সাথে কথা বললেই বুকটা কেঁপে ওঠে কে জানে। রীণা গলাটা নামিয়ে এক রকম ফিসফিস করে হ্যালো বলল। কেউ শুনে ফেললে আবার সমস্যা হবে।

--কোন তথ্য পেলেন?
---না স্যার, তেমন কিছু পাইনি।
---মেয়েটি কিছু বলেছে?
--নাহ। ওর তো কিছুই মনে নেই। আমি তো আপনাকে বলেছিলাম ও তখন মাত্র তিন বছরের ছিল।
---তারপরও চিন্তা করে দেখুন ভাল করে। এমন কিছু যা আপনাকে কিছুটা হলেও বিচলিত করেছে।
রীণা একটু ইতস্তত করলো। তারপর বলল,
---আসলে বুঝতে পারছি না ব্যাপারটাকে গুরুত্ব দেবো কিনা।

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:০৮

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
তিতলির ব্যাপারটা পরিস্কার হলো এ পর্বে। কাহিনীর আরও চমক আছে বুঝা যাচ্ছে।+++

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৩:১৮

নিভৃতা বলেছেন: গল্পের সাথে থাকার জন্য অশেষ ধন্যবাদ আপনাকে। ভালো থাকবেন।
অফুরান শুভ কামনা।

২| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:৩৯

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: খুবই সুন্দর ভাবে এগোচ্ছে। আমার প্রিয় লেখক আপিটা ভালোবাসা নিয়ো

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৩:২০

নিভৃতা বলেছেন: মন্তব্যে অশেষ ভালো লাগা আপুমনি।
অফুরান ভালোবাসা জেনো। ভালো থেকো সব সময়।
শুভ কামনা রইল।

৩| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৩:২২

ইসিয়াক বলেছেন: চমৎকার গতিতে এগুচ্ছে কাহিনী।
শুভকামনা।

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৩:৩২

নিভৃতা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ তোমাকে ভাই। অফুরান শুভ কামনা।

৪| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৪:২৩

নেওয়াজ আলি বলেছেন: ভালো। শুভ কামনা।

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫০

নিভৃতা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। শুভেচ্ছা জানবেন।

৫| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:০৯

রাজীব নুর বলেছেন: গান সবাই পারে। নিজের অজান্তেই সবাই গান গায়।
রীণা ভালো থাকুক ।

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫১

নিভৃতা বলেছেন: মন্তব্যে ভালো লাগা। ভালো থাকবেন। শুভ কামনা রইল।

নাটকটা দেখেছিলেন?

৬| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ৯:২৩

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: শালর্ক হোমসের কাজে নেমেছে দেখছি!

তিতলির কালো রংয়ের রহস্য কি জট খুলতে সাহায্য করবে?
হুম। ছোট ছোট ক্লুতেই বড় বড় রহস্য ভেদ হয়।

তিতলি মনিটা দারুন রুপ পাচ্ছে। আদর করতে ইচ্ছে করে এমন :)

+++++

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১০:৪৬

নিভৃতা বলেছেন: আপনার মাথায় শার্লক হোমসের মতই বুদ্ধি দেখছি। :)

মন্তব্যে এবং প্লাসে অশেষ ভালো লাগা। ভালো থাকবেন।

শুভ কামনা রইল।

৭| ০১ লা মার্চ, ২০২০ সকাল ১১:৪৮

নীল আকাশ বলেছেন: কোন নতুন চরিত্র হুট করে কিভাবে নিয়ে আসতে হয়ে সেটা নিয়ে কাজ করুন।
সবকিছু কথোপকথন দিয়ে প্রকাশ করতে হয় না। অন্যভাবেও লেখা যায়।
ধন্যবাদ।

০৪ ঠা মার্চ, ২০২০ রাত ২:১৮

নিভৃতা বলেছেন: নীল আকাশ, আমি অত্যন্ত দুঃখিত। আপনার এই কমেন্টটা আমি দেখিনি। নোটিফিকেশন ঠিক মত কাজ না করায় এমনটা হয়েছে। এখন মন্তব্যগুলো পড়ে পড়ে লেখাগুলোর উপর কিছুটা কাজ করতে গিয়ে আপনার মন্তব্যটা নজরে পড়লো। আশা রাখি ভুল বুঝবেন না।

জ্বী আমাকে এই ব্যাপারে আরো পড়াশোনা করতে হবে। এই ব্যাপারটায় একটু সমস্যা হয়। আর কথোপকথনটাও কমাতে হবে। অন্যভাবে লেখার চেষ্টা করব। অশেষ কৃতজ্ঞতা।

শুভ রাত্রি উস্তাদজী। মনে কিছু রাখবেন না কিন্তু। :)

৮| ০৭ ই মার্চ, ২০২০ রাত ১১:৩০

আহমেদ জী এস বলেছেন: নিভৃতা,





৩য় ও ৪র্থ পর্ব পড়ে এখানে এসেছি। ঘটনা পরম্পরা একটু এলোমেলো মনে হলেও বুঝতে পারা যাচ্ছে।
যা মনে হলো তাতে ঘটনা সাইকোপ্যাথিক কিছুর দিকে মোড় নিতে পারে সম্ভবত।

০৮ ই মার্চ, ২০২০ রাত ১২:৪৭

নিভৃতা বলেছেন: আপনি ধৈর্য্য ধরে গল্পটা পড়ছেন দেখে ভালো লাগছে খুব। এলোমেলো ব্যাপারটা ধীরে ধীরে গোছালো হয়ে আসবে আশা করি।

অশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। শুভেচ্ছা অফুরান। ভালো থাকবেন সব সময়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.