নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি নিভৃতা। ভালোবাসি পড়তে। একটু আধটু লেখালেখির অপচেষ্টা চলে মাঝেমাঝে।

নিভৃতা

সামুতে আট বছর আগে কোনভাবে যুক্ত হলেও আমার ব্লগিং জীবন আসলে শুরু জানুয়ারি, ২০২০ থেকে।

নিভৃতা › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাসনা ছুরি - ০৯

০২ রা মার্চ, ২০২০ দুপুর ১:০৮



আগের পর্ব - Click This Link

আমার বুকের ভেতরটা কেঁপে ওঠে। কী অঘটণ নাজানি ঘটালো আবার। বাথরুম, সব ঘর তন্ন তন্ন করে খুঁজে ফেললাম। কিন্তু কোথাও দীনা নেই। সবশেষে রান্নাঘরে খুঁজতে গেলাম। কিন্তু রান্নাঘরে গিয়ে দেখি দরজা ভেতর থেকে লাগানো। অনেক ধাক্কাধাক্কির পরও ও দরজা খুলছিল না। তারপর দরজাটা ভেঙে ফেললাম। কিন্তু ভেতরে গিয়ে দেখি ততক্ষণে সব শেষ হয়ে গেছে। ওর পুরো শরীর পুড়ে একেবারে গলে গেছে। কী যে বিভৎস সেই দৃশ্য বলার মত না!

---আচ্ছা আপনার স্ত্রী নিশ্চয়ই শরীরে আগুন লাগানোর পর বুক ফাটা আর্তনাদ করেছিলেন। একই বাড়িতে থেকেও আপনি সেই আর্তনাদ শুনতে পান নি?

---আমাদের শোবার ঘর থেকে রান্নাঘরটা কিছুটা দূরে। তার উপর ঝড় বৃষ্টি বাজ পড়ার শব্দে অন্য কোন শব্দ কানে আসে নি।

তেরো


---মিসেস তানি, শুনলাম আপনার স্বামীর প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর এক মাস যেতে না যেতেই উনি আপনাকে বিয়ে করেন?

---হ্যাঁ। পরিস্থিতিটাই এমন ছিল যে উনার তখন বিয়ে না করে উপায় ছিল না। তিতলি আমাকে খুব পছন্দ করতো। আর তিতলির জন্যও আমার মনে একটা সফট কর্ণার ছিল। তিতলির বয়স তখন মাত্র তিন বছর। এই বয়সী বাচ্চাকে মা ছাড়া শুধু বাবার পক্ষে সামলানো মুশকিল। তিতলির কথা ভেবেই আমরা বিয়ের সিদ্ধান্ত নেই।

---আপনি তো দারুণ মহান একজন মানুষ দেখছি। শুধু একটা বাচ্চার কথা চিন্তা করে এক বাচ্চার বাপকে বিয়ে করে ফেললেন! এমন মানুষ সত্যিই বিরল।

তানি বুঝতে পারছিল না লোকটা ব্যঙ্গ করে কথাটা বলছে কী না। কারণ পুলিশ অফিসারের কণ্ঠে কোন ব্যঙ্গের সুর নেই। বরং সিরিয়াস। তবু কেন জানি ওর মনে হলো লোকটা ব্যঙ্গ করছে। তানি যতটা সম্ভব নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছিল। যদিও ভেতরে ভেতরে ভয় হচ্ছে ভীষণ।
---আচ্ছা ম্যাডাম আপনি তো বললেন তিতলি আপনাকে খুব পছন্দ করতো। তার মানে কি আপনি এই পরিবারের পূর্ব পরিচিত ছিলেন?
---জ্বী। আমি আর আমার মা এই বাড়ির উপর তলায় ভাড়া থাকতাম।
---ওহ তাই বলুন। কতদিন ধরে ভাড়া ছিলেন?
---দীনা আপুর মৃত্যুর প্রায় পাঁচ ছয় মাস আগে থেকে।
---শুনলাম উনি মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন। সেটা আপনারা আসার পর থেকে না আগে থেকেই ছিল?
তানি কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলো। কী উত্তর দেবে গুছিয়ে নিচ্ছিল। ভেবে চিন্তে প্রতিটা উত্তর দিতে হবে। যাতে সন্দেহের কোন অবকাশ না থাকে।
---কী ব্যাপার? এই উত্তরটা দেয়ার জন্য এত ভাবার তো দরকার আছে বলে আমার মনে হয় না।
---আপনি ভুলে যাচ্ছেন ঘটনাটা তিন বৎসর আগে ঘটেছে।
---তিন বৎসর তো খুব একটা বেশি সময় না ম্যাডাম। তাছাড়া বোঝা যাচ্ছে আপনি ওদের খুব কাছের মানুষ ছিলেন। তো উনি, আপনারা আসার পর অসুস্থ হয়েছিলেন নাকি আপনারা এসেই উনাকে অসুস্থ পেয়েছিলেন সেটা মনে করতে খুব একটা বেগ পাবার কথা নয়।
---সে আমরা আসার আগে থেকেই অসুস্থ ছিল। চুপচাপ থাকতো। কারো সাথে কথা বলতো না। মিশতো না। ধীরে ধীরে অসুস্থতা বাড়তে থাকে।
---কিন্তু আমাদের কাছে তথ্য আছে আপনাদের আসার আগে উনি সম্পুর্ণ সুস্থ ছিলেন। বরং আপনারা আসার পর থেকেই উনি ধীরে ধীরে অসুস্থ হতে থাকেন।
তানি খুব নার্ভাস বোধ করছিল। তবু স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করে কাট কাট গলায় বলল
---আপনারা ভুল ইনফরমেশন পেয়েছেন।
---তারমানে আপনি বলতে চাচ্ছেন মি: আবীর আমাদেরকে ভুল তথ্য দিয়েছেন।
---আবীর? কী বলেছে সে?
---আপনারা আসার পরই মিসেস দীনা অসুস্থ হয়েছেন। এও বলেছেন যে আপনাদের দুজনের খুব ভাল সম্পর্ক ছিল।
চতুর তানি তাড়াতাড়ি নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,
---সেও ঠিক বলেছে। আমিও ঠিক বলেছি। আবীর দীনা আপুর পুরোপুরি অসুস্থ হয়ে যাওয়ার সময়টা বলেছে আপনাদের। কিন্তু দীনা আপু তো একদিনে অসুস্থ হয়নি। ধীরে ধীরে ওর অসুস্থতা বেড়েছে। আমরা যখন এ বাড়িতে আসি তখন ও অনেক চুপচাপ থাকতো। মনে হত সব সময় কী যেন ভাবছে। কিন্তু ও তখন কথাবার্তা ঠিকই বলতো। আমার সাথেও অনেক ভাব হয়ে গিয়েছিল।

---বাহ এই তো দেখছি সব খুব ভাল মনে পড়ে গেছে আপনার? আচ্ছা এমন তো নয় আপনার আর আবীরে সাহেবের মধ্যে কোন গোপণ প্রণয় গড়ে উঠেছিল, আর সেটা মিসেস দীনা জেনে ফেলেছিলেন, তারপর থেকেই উনি মানসিকভাবে অসুস্থ হতে থাকেন?


তানি এই কথা শুনে প্রথমটায় চমকে উঠলো। ঘাবড়ে গেলো ভীষণ। যতই শক্ত নার্ভ থাকুক না কেন পুলিশ দেখলে আপনাতেই একটা ভয় চলে আসে মনে। কিন্তু মনের অনুভূতি বাইরে থেকে এতটুকু বুঝতে না দিয়ে তানি বলল,

---এসব কী বলছেন আপনি অফিসার? আপনি কিন্তু আমাদের অপমান করছেন। ভদ্রলোকের বাড়ি গিয়ে এভাবে অপমান করার আইন কোথায় আছে?
বজলুর রশীদ তাড়াতাড়ি জিহ্বায় কামড় দিয়ে বললেন,
---ছি ছি ম্যাডাম কী যে বলেন। আমি কেন শুধু শুধু আপনাকে অপমান করব বলেন?
তারপর প্রসঙ্গ পাল্টে বললেন,
---আচ্ছা ঘটনার সময় আপনি কোথায় ছিলেন?
---আমরা আমাদের ঘরেই ছিলাম।
---কী করে জানতে পারলেন দীনা আত্মহত্যা করেছেন?
---আবীরের চিৎকার শুনে আমরা ছুটে নিচে চলে আসি। এসে দেখি দীনা আপুর সমস্ত শরীর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। সে কি বিভৎস দৃশ্য আপনাকে বলে বুঝাতে পারবো না।
---কিন্তু সেদিন তো খুব বেশি ঝড় তুফান হচ্ছিল। মি: আবীর নিচতলায় থেকেও উনার স্ত্রীর চিৎকার শুনতে পান নি। আর আপনি উপরের তলা থেকে মি: আবীরের চিৎকার শুনে ফেললেন? ভেরি স্ট্রেঞ্জ!
তানি একটু ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো। এই অফিসার খুবই ধূর্ত মনে হচ্ছে। কোন কথার ফাঁদে ফেলে কোন কথা বের করে নিয়ে আসবে কে জানে। বুকের ভেতরটা ধ্বক ধ্বক করতে থাকে ওর। কিন্তু নিজেকে সামলাতে একটুও দেরি হয় না।
---হয়তো তখন ঝড় বৃষ্টি কমে এসেছিল।
---আচ্ছা, এখন আপনার মাকে ডাকুন।
---উনি বয়স্ক মানুষ। হার্টের রোগী। কেন শুধু শুধু উনাকে পেরশান করবেন?
---রুটিন জিজ্ঞাসাবাদ তো আমাকে করতেই হবে ম্যাডাম। ঘাবড়াবার কিছু নেই। জাস্ট কয়েকটি প্রশ্ন করবো উনাকে।
পুলিশ অফিসার বজলুর রশিদ তিতলিদের বাড়ির বসার ঘরে বসে আলাদা আলাদাভাবে সবার জবানবন্দি নিচ্ছিলেন। তানি বেরিয়ে যাওয়ার পর রুমে এসে ঢুকলেন রওশন আরা। পুলিশ দেখে উনি অনেকটাই নার্ভাস হয়ে পড়েছিলেন।
---আসসালামুআলাইকুম খালাম্মা।
---ওয়ালাইকুম আসসালাম।
---ভয়ের কিছু নেই খালাম্মা। বেশি কিছু জিজ্ঞেস করবো না আপনাকে। মিসেস দীনা তো মানসিক রোগী ছিলেন। তো আপনার মেয়ে বললেন আপনারা আসার পর উনি অসুস্থ হন। কথাটা কি সত্যি?
রওশন আরার গলা শুকিয়ে গেছে। উনি পুলিশ অফিসারের চালাকিটা ধরতে পারলেন না। ঢোক গিলে কিছুটা সময় নিয়ে বললেন,
---জ্বী আমরা আসার পরই ও অসুস্থ হয়।
---আপনারা এসে উনাকে কেমন দেখতে পান?
---প্রথমে খুব হাসিখুশি মিশুক ছিল। তারপর হঠাৎ করেই অসুস্থ হতে শুরু করে।
পুলিশ অফিসার একটু হেসে বললেন,
---সেদিন কী হয়েছিল ঘটনাটা একটু খুলে বলুন তো।
---সেদিন রাতে আবীরের চিৎকার শুনে আমরা নিচে নেমে আসি। এসে দেখি রান্না ঘরে দীনার লাশ। সারা শরীর আগুনে ঝলসানো। চেনার কোন উপায় নেই।
---শুনলাম আপনি অসুস্থ। কী হয়েছে আপনার?
---অ্যা। কে বলল?
---আপনার মেয়েই তো বলল।
---ও আচ্ছা। হ্যাঁ ঐ একটু খারাপ আর কী।
---কী হয়েছে?
রওশন আরা একটু কাশি দেয়ার চেষ্টা করে বললেন,
---এই একটু জ্বর কাশি আর কী।


চৌদ্দ

---আমার কিন্তু খুব ভয় করছে। সব যদি ফাঁস হয়ে যায় তাহলে কী হবে? এই বয়সে আমি জেলের ঘানি টানতে পারবো না বলে দিলাম।
কাঁদো কাঁদো স্বরে বলছিলেন রওশন আরা। তানি বিরক্ত হয়ে বলল,
---চুপ করো তো মা। এত ভয়ের কোন কারণ নেই। ভয় পেলেই সর্বনাশ। কিছুতেই ওদের বুঝতে দেয়া যাবে না আমরা ভয় পেয়েছি। যদি এভাবে তুমি ভয় পেয়ে যাও তাহলে তোমার ঐ ভয়ই আমাদের ফাঁসিয়ে দেবে। আমাদের বিরুদ্ধে কোন ক্লু ওদের কাছে নেই। ওরা কিছুই করতে পারবে না।

তানি মাকে কথাটা বলল ঠিকই কিন্তু ভীতির ছায়া পড়েছে ওর চোখেও। ভয় পেয়েছে আবীরও। ওরা তিনজন আবীরের শোবার ঘরে বসে দরজা লাগিয়ে ফিসফিস করে কথা বলছিলো।
---বললেই তো ভয় উধাও হয়ে যাবে না। পুলিশ দেখলে এমনিতেই আমার হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে যায়। তুই আবার ওদেরকে বলেছিস আমি নাকি অসুস্থ। সেটা আমাকে বলবি না?
---লোকটা এমনভাবে জেরা করছিল ভাবলাম তুমি এই বয়সে এই জেরার মুখে পড়লে সব ফাঁস করে দিবে। তাই মিথ্যে বলতে হল। আর তখন তোমাকে সতর্ক দেয়ার মত পরিস্থিতিও ছিল না। যাক এটা কোন ব্যাপার না। আমাদের খেয়াল রাখতে হবে আমাদের তিনজনের বক্তব্যে যেন কোন গড়মিল না থাকে। এই যেমন আবীর বলেছে দীনা অসুস্থ হওয়ার আগে আমরা এ বাড়িতে ভাড়া এসেছিলাম। আবার আমি বলেছি, দীনাকে আমরা এসে অসুস্থই পেয়েছি। একটুর জন্য ফেঁসে যাচ্ছিলাম। কোনরকমে বুদ্ধি করে ব্যাপারটাকে কাটিয়েছি।

আবীর গম্ভীর হয়ে বসে রয়েছিল। এতদিন পর এমন একটা পরিস্থিতির উদ্ভব হবে সে স্বপ্নেও ভাবেনি। সবকিছু কী সুন্দর তিন বছর আগেই ধামাচাপা দিয়ে লুকিয়ে রেখেছিল। এতদিন পর সেই ধামাচাপা দেয়া পাপ আবার উঁকিঝুঁকি দিতে শুরু করবে কে জানতো।
একটু পর তানি আবীরকে উদ্দেশ্য করে বলল,

---রীণা এতটা সাহস পেলো কী করে? নাক টিপলে এখনও দুধ বের হবে, মেয়ের কী সাহস তুমি দেখেছ? ওর একার পক্ষে কি এসব করা সম্ভব? নিশ্চয়ই অন্য কেউ ওর পেছনে কলকাঠি নাড়ছে। ঐদিন হঠাৎ এতদিন পর ওর এই বাড়িতে আগমনেই আমার সন্দেহ হয়েছিল।
আবীর গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
---ওর পেছনে নিশ্চয়ই বড় কেউ আছে যে ওকে উস্কে দিয়েছে।
---কে হতে পারে বলো তো?
---হয়তো আমার ব্যবসার কোন প্রতিদ্বন্দ্বী।
---আমাদের ভয়ের একটা কারন কিন্তু রয়েই গেছে। ওর একটা ব্যবস্থা না করলেই নয়। নয়তো ঐ কিন্তু আমাদের সর্বনাশের কারণ হয়ে উঠতে পারে।
আবীর বুঝতে পারলো তানি কার কথা বলছে। এতদিন একটা পাপবোধ কুরে কুরে খাচ্ছিল ওকে। অনুশোচনার আগুনে জ্বলে পুড়ে মরছিল। কিন্তু এই মুহূর্তে সেই অনুশোচনা সেই পাপবোধ উধাও হয়ে গেছে আবীরের ভেতর থেকে। বরং নিজেকে বাঁচানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে সে। ভেতরের ঘুমন্ত শয়তানটা জেগে উঠেছে আবার। নিজেকে বাঁচাতে গিয়ে এখন যদি তাকে আরেকটা অপরাধ করতে হয় তবে সে তাই করবে। তানির কথা শুনে আবীর বলল,
---আমিও সেটাই ভাবছিলাম।
---পুলিশ অফিসার আমাদের সম্পর্কে এত তথ্য কী করে পেলো বুঝতে পারছ?
আবীর কোন কথা বলল না। চুপচাপ উঠে গিয়ে মোবাইলটা হাতে নিলো। ওর চোখেমুখে এখন হিংস্রতার ছাপ। ফোনে কাউকে খুব তাড়াতাড়ি দেখা করার জন্য বলল।

পনেরো

সন্ধ্যা ঠিক সাড়ে ছয়টার সময় তিতলিদের বাড়ি থেকে একটু দূরে শিরিষ গাছটার নিচে যে ঘন অন্ধকার সেই অন্ধকারে একটা ছায়ামূর্তি নীরবে এসে দাঁড়ালো। জায়গাটা খুব নির্জন। আশে পাশে কোন জন মানবের চিহ্ন নেই। আবীর বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো। এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলো কেউ আছে কী না। তারপর শিরিষ গাছটার দিকে হাঁটা শুরু করলো। একটু এগোতেই গাছের আড়ালে দাঁড়ানো ছায়ামূর্তিটিকে দেখতে পেলো। ছায়ামূর্তিটির পাশে এসে আবীর বলল,
---করিম মিয়ার দোকানের পেছনের বারান্দাটায় পাবে ওকে। ওখানেই ঘুমায় ও। শেষ করে নদীতে ফেলে দিবে। কোনভাবেই যেন বাঁচতে না পারে।
ছায়ামূর্তিটি একটা বিড়ি মুখে দিয়ে আগুন ধরিয়ে হাতটা পেতে ধরলো আবীরের সামনে। আবীর সেই হাতটায় একটা টাকার বাণ্ডিল গুজে দিয়ে আর কোন কথা না বলে সেখান থেকে ফিরে এলো।
------
রাত দশটা। সন্ধ্যা থেকে বসে পাহারা দিচ্ছে দুজন লোক। বুড়ি সেই সন্ধ্যায় কুকুরটাকে সাথে করে নিয়ে এসে খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। দোকানের পেছনের ঝোঁপটায় বসে নজর রাখছিলো ওরা। করিম মিয়া তার দোকানের শাটার নামিয়ে তালা লাগিয়ে চলে যেতেই দুজন ঝোঁপ থেকে বেরিয়ে এলো। এই সময়টার জন্যই ওরা অপেক্ষা করছিলো এতক্ষণ। আশেপাশে আর কোন মানুষের চিহ্ন নেই এখন। সুনসান নীরবতা চারিদিকে। এটাই ঠিক সময়। ওরা এগোলো বারান্দাটার দিকে। একজন প্যাণ্টের পকেট থেকে একটা রুমাল আর একটা ক্লোরোফর্মের শিশি বের করলো। শিশিটা থেকে কিছু ক্লোরোফর্ম রুমালে ঢেলে বুড়ির নাক ও মুখে এক সাথে চেপে ধরলো। অন্যজন বুড়ির পা চেপে ধরলো। বুড়ির সমস্ত শরীর ছটফট করতে করতে নিস্তেজ হয়ে পড়লো। একজন বুড়ির পুরো শরীরটা কাঁধে তুলে নিলো। একটু দূরেই একটা মাইক্রো দাঁড়িয়ে ছিল। ওরা বুড়িকে বয়ে নিয়ে বারান্দা থেকে নেমে রাস্তায় এসে দাঁড়ালো। তারপর মাইক্রোটির দিকে হাত নেড়ে ইশারা করলো। মাইক্রোটি এগিয়ে এলো। ওরা বুড়িকে মাইক্রোতে তুলে নিয়ে চলে গেলো। নেড়ি কুকুরটা ভয় পেয়ে একটু দূরে গিয়ে অনবরত ভেউ ভেউ করতে লাগলো।

ষোলো

---কী বুঝলেন অফিসার?
মি: আশরাফ রীণাকে সাথে নিয়ে পুলিশ স্টেশনে এসেছেন তদন্তের অগ্রগতি জানতে। বজলুর রশিদ ওদের দিকে তাকিয়ে বললেন,
---সামথিং ইজ ফিশি। ভেরি ফিশি। ওদের একজনের কথার সাথে আরেকজনের কথার কোন সামঞ্জস্য নেই। তাছাড়া আমার এই চোখ অপরাধী চিনতে ভুল করে না। আমি মানুষের চোখে চোখ রাখলেই বুঝি কে অপরাধী আর কে নিরপরাধ।
রীণা বলল,
---তারমানে আপনি বলতে চাইছেন ওরাই খুনটা করেছে।
---না ম্যাডাম। এতটা নিশ্চিত করে বলার সময় এখনও আসেনি। তবে ওদের চোখেমুখে আমি অপরাধের চিহ্ন দেখতে পেয়েছি।
---তাহলে আর দেরি কেন? অ্যারেস্ট করুণ ওদের।
---যতটা সহজ ভাবছেন ব্যাপারটা তত সহজ না ম্যাডাম। উনি একজন নামকরা ব্যবসায়ী। এভাবে একজন সম্মানিত ব্যক্তিকে হুট করে অ্যারেস্ট করা সম্ভব না। তাছাড়া আমাদের কাছে কোন ই
সাক্ষী প্রমাণও নেই।
---তাহলে?
---তদন্ত আরেকটু অগ্রসর হোক, তারপর দেখা যাবে।
ওরা পুলিশ স্টেশন থেকে বেরিয়ে এসে গাড়িতে উঠলো। মি: আশরাফ গাড়িটা একটি কফি শপের সামনে থামালেন। রীণা অবাক হয়ে বলল,
---স্যার এখানে?
---আমার সাথে একটু কফি খেতে তোমার আপত্তি আছে?
রীণা ওর সেই মোহনীয় হাসি দিয়ে বলল,
--মোটেই না স্যার। বরং এ তো আমার সৌভাগ্য।
---তাহলে আর কথা না বলে চুপ করে নেমে আসো।
ওরা কফি শপে গিয়ে একটা টেবিলে মুখোমুখি বসলো। রীণা মি: আশরাফের সাথে এখন অনেকটাই সহজ হয়ে এসেছে। মি:আশরাফও এখন আর ওকে পদে পদে অপদস্থ করেন না। উনার রুঢ়তা এখন অনেক কমে এসেছে। ফলে দুজনের মধ্যে সম্পর্কটা এখন অনেকটা বন্ধুর মত হয়ে গেছে। কফিতে চুমুক দিতে দিতে রীণা জিজ্ঞেস করলো,
---স্যার আপনি কিন্তু এখনো আমাকে বলেন নি আমার বোনের খুনিকে শাস্তি দিয়ে আপনার কী লাভ?
মি: আশরাফের মুখটা বিষণ্ণ হয়ে গেলো। রীণা তাড়াতাড়ি বলে উঠলো,
---স্যরি স্যার। আমার বোধ হয় কথাটা জিজ্ঞেস করা ঠিক হয়নি। আমার কথায় কষ্ট পেলে ক্ষমা করে দেবেন প্লীজ।
রীণা বুঝতে পারছিল মি: আশরাফের একটা কষ্টের অতীত আছে। আর সেই অতীতের সাথে আবীর কোনো না কোনোভাবে জড়িত। কিন্তু সে বিষয়ে প্রশ্ন করে আর মি: আশরাফের কষ্টের বোঝা বাড়াতে চায় না ও। মি: আশরাফ যদি নিজ থেকে বলেন তাহলে অন্য কথা।
---স্যরি বলার মত কিছু হয়নি। তোমার কৌতুহলটা স্বাভাবিক। বরং তোমাকে অনেক আগেই ব্যাপারটা খুলে বলা উচিৎ ছিল আমার। কিন্তু বলতে পারিনি। বলতে গেলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে সেই কষ্টের অতীত। বুকের ভেতরটা হাহাকার করে ওঠে। যাই হোক আজ তোমাকে সব খুলে বলবো। তোমার বোনের খুনিদের শাস্তি দিতে পারলে আমার ভেতরে যে প্রতিশোধের আগুন অনেক দিন ধরে দাউ দাউ করে জ্বলছে সেটা ঠাণ্ডা হবে।
---প্রতিশোধ?
---হ্যাঁ প্রতিশোধ।
---কীসের প্রতিশোধ স্যার?
---আমার একটা ছোট ভাই ছিল, বড় আদরের ছোট ভাই।
---ছিল বলছেন কেন?
---ছিল বলছি কারণ সে এখন আর এই পৃথিবীতে নেই। বুক ভরা অভিমান নিয়ে হারিয়ে গেছে এই পৃথিবীর ওপারে অন্য কোন পৃথিবীতে।
মি: আশরাফের চোখের কোণে জল জমলো। মি: আশরাফের কষ্ট দেখে রীণার বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো। ওদের দুজনের কষ্ট যেন একই সূত্রে বাঁধা। রীণা ওর বোনকে হারিয়েছে। আর মি: আশরাফ হারিয়েছেন ভাইকে। দুজনের কষ্ট তো একই। রীণার খুব খারাপ লাগছিল।
---থাক স্যার বলতে হবে না।
মি: আশরাফ রীণার কথা শুনলেন কি শুনলেন না বোঝা গেলো না। ঘোর লাগা কণ্ঠে বলে চললেন,
---আমার বয়স যখন পাঁচ তখন বাবা ছোট্ট পুতুলের মত একটা মানুষকে আমার কোলে তুলে দিয়ে বললেন, আশরাফ এই নে তোর খেলার সাথী।

মন্তব্য ৩২ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (৩২) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা মার্চ, ২০২০ দুপুর ১:৩০

নেওয়াজ আলি বলেছেন: অনুপম লেখা।

০২ রা মার্চ, ২০২০ বিকাল ৩:২৬

নিভৃতা বলেছেন: ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। ভালো থাকবেন ভাই।

২| ০২ রা মার্চ, ২০২০ দুপুর ১:৪৮

নীল আকাশ বলেছেন: আমি এই ইন্টারগোশনের কথাই বলেছিলাম। আরও শক্ত করে ধরে। যাই হোক। লেখা চলুক। সাথেই আছি।
ধন্যবাদ।

০২ রা মার্চ, ২০২০ বিকাল ৩:৩৪

নিভৃতা বলেছেন: নীল আকাশ, গল্পের সাথ থাকার জন্য ভালো লাগছে খুব। আসলে পুলিশ যদি ইচ্ছে করে তবে সবই পারে। কিন্তু যখন আসামি পক্ষ ক্লোজ কিংবা কেউকেটা কিংবা টাকাওয়ালা কেউ হয়, তখন তাদের অন্যরূপ দেখা যায়। আবার উপরতলার চাপে পরেও তারা অনেক কেইস ক্লোজড করে ফেলে অথবা ঝুলিয়ে রাখে। তবে সবাই এক না। বজলুর রশীদের মত পুলিশ অফিসারও আমাদের দেশে আছেন।
শুভেচ্ছা রইল।

৩| ০২ রা মার্চ, ২০২০ দুপুর ২:৪৬

রাজীব নুর বলেছেন: কতদিন ব্লগে কোনো আনন্দময় গল্প পাই না!!

০২ রা মার্চ, ২০২০ বিকাল ৩:৩৫

নিভৃতা বলেছেন: আপনি লিখেন। শুরু তো করেন। আপনি ভালো লিখতে পারেন। :)

৪| ০২ রা মার্চ, ২০২০ দুপুর ২:৪৯

মোহাম্মাদ আব্দুলহাক বলেছেন: আপনি কেমন আছেন?

০২ রা মার্চ, ২০২০ বিকাল ৩:৩৮

নিভৃতা বলেছেন: আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। আপনি ভালো আছেন নিশ্চয়ই।

৫| ০২ রা মার্চ, ২০২০ দুপুর ২:৫৩

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: আপি তেরো প্যারার ১৬ তম লাইনে রীনা না তানি হবে নামটা

খুব সুন্দর হয়েছে।

০২ রা মার্চ, ২০২০ বিকাল ৩:৩৯

নিভৃতা বলেছেন: যার পর নাই ধন্যবাদ ছবি আপু। ঠিক করেছি। অনেক অনেক ভালোবাসা তোমার জন্য।

৬| ০২ রা মার্চ, ২০২০ বিকাল ৩:৩৯

মোহাম্মাদ আব্দুলহাক বলেছেন: জি, আপনাদের দোয়ার বরকতে ভালো আছি।

০২ রা মার্চ, ২০২০ বিকাল ৩:৪০

নিভৃতা বলেছেন: অনেক অনেক শুভ কামনা আপনার জন্য। ভালো থাকবেন সব সময়।

৭| ০২ রা মার্চ, ২০২০ বিকাল ৩:৪৫

মোহাম্মাদ আব্দুলহাক বলেছেন: আপনার নায়িকা নিশ্চয় অঘটন-ঘটন-পটীয়সী?


আমি ছাওয়াল কালো চৌকিদেখি আছলাম। মাজারর লাগা বাসা।

০২ রা মার্চ, ২০২০ বিকাল ৩:৫১

নিভৃতা বলেছেন: হা হা হা। অঘটন-ঘটন-পটিয়শি না হলে গল্প আগাবে কী করে?

চৌকিদেখি নাম তো হুনছি না। আমি বউতদিন সিলেট থাকসি। শিবগঞ্জ। এমসি কলেজো ফরতাম। শিবগঞ্জ জালালাবাদ একাডেমি নামোর একটা স্কুল প্লাস হোস্টেল আসলো।

৮| ০২ রা মার্চ, ২০২০ বিকাল ৩:৫৩

মোহাম্মাদ আব্দুলহাক বলেছেন: আপনে লণ্ডন না কি তা? :-*

এর লাগিঔ লণ্ডনি বুড়ারে বাদাম দিছলা।

০২ রা মার্চ, ২০২০ বিকাল ৩:৫৯

নিভৃতা বলেছেন: হা হা হা। হাসাইলা দেখি। জ্বী না। আমি দেশোউ থাকি। হবিগঞ্জো জামাইর বাড়ি। শ্রীমঙ্গল বাফোর বাড়ি।

৯| ০২ রা মার্চ, ২০২০ বিকাল ৪:০৮

মোহাম্মাদ আব্দুলহাক বলেছেন: তে ঠিকাছে, আমি মনে মনে ডরাইছলাম।

মাত্র একবার হবিগঞ্জ গেছলাম।

০২ রা মার্চ, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫১

নিভৃতা বলেছেন: ডরানির কুনতা নাই। আমি আফনারে বাদাম দিতাম নায়। আফনার লাখান ভালা মানুষরে বাদাম দিতাম খেনে। :D

১০| ০২ রা মার্চ, ২০২০ বিকাল ৫:১৯

করুণাধারা বলেছেন: গল্পে প্লাস!

গল্পের চেয়ে আমার মাথায় ঘুরছে মোহাম্মাদ আব্দুলহাক কী করে জানলেন আপনি সিলেটি?

কাজী ফাতেমা ছবি তাহলে আপনার ননদ!!

০২ রা মার্চ, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫৪

নিভৃতা বলেছেন: প্লাসে অনেক অনেক ভালো লাগা।

আব্দুল হাক ভাইয়ের সাথে মন্তব্যে কথা বলতে বলতে পরিচয় হয়ে গেছে :D

ছবি আপু ননদ হতে যাবেন কেন? উনি তো আমার ব্লগসম্পর্কীয় বোন। যেমন আপনি তেমন :)

শুভেচ্ছা রইল। ভালো থাকবেন।

১১| ০২ রা মার্চ, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:২৭

ভুয়া মফিজ বলেছেন: হঠাৎ করে নবম পর্ব পড়া ঠিক হবে না। শুরু থেকে পড়া শুরু করবো।

০২ রা মার্চ, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫৮

নিভৃতা বলেছেন: মফিজ ভাই, আপনাকে মন্তব্যে পেয়ে ভালো লাগছে খুব। আমি আপনার আর ভাবীজানের মিষ্টি প্রেমের আরও গল্প পড়ার অপেক্ষায় আছি।
অনেক শুভ কামনা আপনার জন্য।

১২| ০২ রা মার্চ, ২০২০ রাত ৮:০২

ভুয়া মফিজ বলেছেন: প্রেম এখন আর মিষ্টি নাই। আপনার ভাবীজান এখন মুখ খুললেই কাচা লংকা ঝরে ঝরে পরে। তাও যে সে লংকা না, একেবারে বোম্বাই মরিচ!!! :((

০২ রা মার্চ, ২০২০ রাত ৮:০৫

নিভৃতা বলেছেন: হা হা হা। এটাই তো মজা। বোম্বাই মরিচ আমার খুব প্রিয় কিন্তু। বোম্বাই মরিচের একটা নেশা আছে। :)

১৩| ০২ রা মার্চ, ২০২০ রাত ১০:২৫

করুণাধারা বলেছেন: কাজী ফাতেমা ছবির বাড়ি হবিগঞ্জ, আপনার যামাইর বাড়ি হবিগঞ্জ, সেই সম্পর্কে ননদ। ;)

০৩ রা মার্চ, ২০২০ রাত ১২:২০

নিভৃতা বলেছেন: হা হা হা। জানি। কিন্তু আমি তো তাকে বোন ডেকেছি। :)

১৪| ০৩ রা মার্চ, ২০২০ সকাল ৯:২৫

রাজীব নুর বলেছেন: লেখক বলেছেন: আপনি লিখেন। শুরু তো করেন। আপনি ভালো লিখতে পারেন।

আমি মোটেও ভালো লিখি না। সেই প্রতিভা আমার নেই। থাকলে তো সেই রকম একটা ব্যপার হতো!!

০৩ রা মার্চ, ২০২০ দুপুর ১২:১৭

নিভৃতা বলেছেন: গুণীজনেরা বিনয়ী হয়। :)

১৫| ০৩ রা মার্চ, ২০২০ সকাল ৯:৩৩

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: বরাবরের মতোই গতিশীল...

রহস্যের পর্দা খুলে যাচ্ছে ধীরে....
অপেক্ষায়...

+++

০৩ রা মার্চ, ২০২০ দুপুর ১২:১৮

নিভৃতা বলেছেন: মন্তব্যে অশেষ ভালো লাগা বিদ্রোহী ভাই। অনেক অনেক শুভ কামনা।

১৬| ০৩ রা মার্চ, ২০২০ বিকাল ৪:৩৪

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: চমৎকার রহস্যে মোড়া।
এখন অপেক্ষায় রইলাম আশরাফের খেলার সাথী ছোট্ট পুতুলের পরবর্তী ঘটনাটি জানতে।

০৩ রা মার্চ, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫১

নিভৃতা বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। শত ব্যস্ততার মাঝেও আমার গল্পটা পড়ছেন দেখে ভালো লাগছে খুব। আমি নতুন লেখালেখি করছি। তাই অনেক ত্রুটি বিচ্যুতি আছে। যদি সেগুলো মাঝেমাঝে একটু ধরিয়ে দেন তাহলে খুবই উপকৃত হবো।
অনেক অনেক শুভ কামনা। ভালো থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.