![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পড়াশুনার জন্য যুক্তরাজ্যে এসেছি। আমার দ্বিতীয় বিদেশ ভ্রমণ। ডায়রী লেখার অভ্যাস আগে থেকেই ছিল। সেপ্টেম্বর এর ১০ তারিখ হিথ্রোতে অবতরণ করার পর থেকে নানা অভিজ্ঞতায় এদেশে সমৃদ্ধ হচ্ছি। আমি খুব ভালো ব্লগার নই, লেখার চাইতে পড়তেই বেশী ভালো লাগে। তবে এদেশের প্রকৃতি, মানুষ,জলবায়ু, সংস্কৃতি নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা সবার সাথে বিনিময় করতে পারলে কারো হয়তো ভালো লাগবে-- এ প্রত্যাশাই আমার অনুপ্রেরণা।
ঢাকা থেকে গালফ এয়ারের ফ্লাইটে সোজা বিলেত। সুলভ শ্রেণীর বিমান যাত্রা খুব আরামপ্রদ নয়, বিশেষ করে বাংলাদেশে আমরা যারা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসে চড়ার অভিজ্ঞতা পেয়েছি। বিমানের দুটো আসনের মধ্যবর্তী স্থানকে Pitch বলে্। গালফ এয়ারের সুলভ শ্রেণীর Pitch খুব বেশীনয়, কোনভাবে বসে থাকা। জানালার পাশে বসার সুযোগ নিয়েছি.....অনন্ত মেঘমালার মাঝে মাঝে সুনীল আকাশ, ভোরের সূর্যোদয়..... অনেক নীচে প্রবাহিত নদী , সবুজ শষ্যময় ফসলের ক্ষেত অপূর্ব। আকাশ থেকে নীচের পৃথিবীর ভূমিরূপ দেখতে ভালোই লাগে। ভারতবর্ষ মোটামুটি এক জাতের, আরব সাগর পাড়ি দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে ঢুকলেই রুক্ষ মরুময় প্রান্তর । জনবসতির চিহ্নমাত্র নেই।
আকাশ থেকে দেখা
বাহরাইনে যাত্রাবিরতি ছিল। বিমানবন্দরটি একেবারেই ছোট, তবে অনেক গোছানো।একটা বিষয় না বললেই নয়। মধ্যপ্রোচ্যে বিপূল পরিমাণ স্বদেশীর কর্মোপলক্ষে বসবাস। মধ্যপ্রাচ্যের বিমান সংস্থাগুলো এজন্য এদেশে ভালোই ফ্লাইট পরিচালনা করে। তবে আমাদের এই অতিসাধারণ মানূষগুলোকে কোন ধরণের প্রশিক্ষণ ছাড়াই যেভাবে আমরা গাঁ গেরাম থেকে সরাসরি বিদেশ পাঠিয়ে দেই, তাতে হয় নানা জাতের সমস্যা। বা্হরাইনে এক ভাইকে দেখলাম লুঙ্গি পড়ে চলছে, বাথরুম খুঁজে বেড়াচ্ছে। বেচারী না জানে আরবী, না জানে ইংরেজী। আমি সামনে পড়লাম বলে রক্ষা। এই সব অসহায়, পরিশ্রমী মানুষগুলুকে দেখলে , তাদের অবদানের কথা ভাবলে, নিজের দেশকে অসম্ভব ভালোবাসতে ইচ্ছা করে।
হিথ্রোতে খুব সময় ন্ষ্ট হয়নি। ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে বিমান ওপাড়ে আসতেই লল্ডনের নগর অঞ্চল শুরূ, কিন্তু বিমান তো আর নামছে না......আকাশ থেকে বোঝা যায় লন্ডন কতো বড়ো মহানগরী। সেপ্টেম্বর এর আবহাওয়া লন্ডনে খুব শীতল নয়, আমাদের জন্য সহনীয় বটে। আমার মূল গন্তব্য লন্ডন থেকে ৪৮৫ কিমি দূরের শহর নিউক্যাসেল।৩ দিন বিলাত ভ্রমণ শেষে তবে নিউক্যাসেল যাত্রা ।
টাওয়ার ব্রীজ, লন্ডন
লন্ডনে সত্যিকার অর্থে আমার মনে হয়েছে ঘুরতে চাইলে ৪-৫ দিনই যথেষ্ঠ।শহরের মূল আকর্ষণ পার্লামেন্ট স্কয়ার। টেমস নদী দেখে যে এত হতাশ হতে হবে তা আগে বুঝিনি। নদীর দেশের মানুষ আমরা । প্রমত্ত পদ্মা, উত্তাল মেঘনা, গভীর যমুনার রূপ দেখে টেমসকে নদী বলতেই খারাপ লাগে। পদ্মার ধূ ধূ বালুচরের মাঝে কাকচক্ষু টলমলে জলে তৃষ্ণা নিবারণের অভিজ্ঞতা নিয়ে টেমসের ঘোলা জল দেখলে বিপুল বিতৃষ্ঞা জাগে। শূধু মনে হয়, এতো সামান্য ঐশ্বর্য নিয়ে এরা পর্যটনের এতা পসড়া সাজিয়ে বসেছে, আমরা কেন যেন পারিনি। টেমসের পাড় সুন্দর করে বাঁধানো, পাড়ে আসন পেতে রাখা। বৈকালিক মুহূর্তগুলো কাটানোর অসাধারণ আয়োজন।
ওয়েস্টমিনিস্টার অ্যাবী
পার্লামেন্ট স্কয়ার সহ সংলগ্ন ট্রাফালগার স্কয়ার, বাকিংহাম প্যালেস, ওয়েস্টমিনিস্টার এ্যাবী, লল্ডন টাওয়ার ,বিগ বেন, টাওয়ার ব্রীজ সব মিলিয়ে টেমস নদীর প্রান্ত জুড়ে এ এলাকাটির অসাধারণ আকর্ষণ রয়েছে।এর প্রমাণ মেলে বিপুল পর্যটকের আনাগোনা দেখে।ঘুরতে চাইলে খরচ ও মেলা । এক ওয়েস্টমিনিস্টার অ্যাবীতে ঢোকার টিকিটের মূল্য ১৬ পাউন্ড। র্পযটন যে বড়ো ধরনের বাণিজ্য , তা এখানে আসলেই ভালো বোঝা যায়। টেমস নদীর উপরে টাওয়ার ব্রীজের নির্মানকাল ১৮৯৪ খ্রী: এটাকে লন্ডন ব্রীজ বলেও অনেকে জানেন।৮০০ মিটার লম্বা এ ব্রীজটি লন্ডনের বড়ো আকর্ষণ। এর মাঝের অংশটা নদীপথে জাহাজ চলাচলের জন্য খুলে দেয়া যায়। ব্রীজের মাঝের দুটো বড়ো পিলার আসলে দুটো টাওয়ার, বলা হয় টুইন টাওয়ার। এখানে বর্তমানে জাদুঘর স্থাপন করা হয়েছে।টাওয়ার ব্রীজের সামনের চত্তরটা সত্যিই চমৎকার। ছবি তোলার এর চাইতে ভালো জায়গা আর হয় না।
বাকিংহাম প্যালেস
বাকিংহাম প্যালেস লল্ডনের একটি সুন্দর স্থাপনা। এটি বৃটেনের রাজপরিবারের লল্ডনস্থ সরকারি বাসগৃহ। সর্বপ্রথম ১৭০৫সালে টাউনহল হিসেবে এটি নির্মাণ করা হয়। পরবর্তীকালে সম্রাট তৃতীয় জর্জ ১৭৬১ সালে রানী শার্লটের জন্য এ প্যালেসটি পরিবর্ধন , সংস্কার করে রাজপরিবারের অধীনে আনেন। এর একটি অংশে বর্তমানে জাদুঘর স্থাপন করা হয়েছে।
লন্ডনের সবচাইতে ভালো লাগার বিষয়টি হচ্ছে পার্ক আর বাগান। লল্ডনে ঠিক কটি পার্ক আছে জানা নেই, তবে শহরের যে কোন স্থান থেকেই হাটা পথে একটি পার্কে যাওয়া যাবে। এতো সুন্দর গোছানো পার্ক, পায়ে চলার পথ, কোথাও জনগণের জন্য শরীরচর্চার সরঞ্জাম,শিশুদের খেলার মাঠ, খেলার স্থাপনা....যেন একটি সত্যিকার অবসর বিনোদন কেন্দ্র। ছুটির দিনে অর্থাৎ শনি আর রোববারে আবহাওয়া ভালো থাকলে মানুষজন সপরিবারে চলে আসে । কাউন্সিলের একটি বড়ো কাজ এই পার্ক ব্যবস্থাপনা। জনপরিবহনের জন্য রাস্তায় প্রচুর লালরঙা দোতলা বাস রয়েছে। পুরো লন্ডনে বাস পরিবহণ অত্যন্ত সুবিন্যস্ত, আমাদের ঢাকার মতো এতো হরেক রকম সার্ভিস নেই।সবই এক, শুধু নম্বর আলাদা। প্রতিটি বাস স্টপেজে কোন বাস কোথায় যায় তার বর্ণনা রয়েছে। বাস ভাড়ার জন্য রয়েছে Oyster card. এ ম্যাগনেটিক কার্ডে টাকা চার্জ করা থাকলে বাস, মেট্রো..... সব স্থানে নির্দিষ্ট স্থানে কার্ড ছোঁয়ালেই চলে। ভাড়ার পয়সা কেটে নেবে। বাসে সারাদিন যতই ঘোরা হোক, ভাড়া সর্বোচ্চ ৪.২ পাউন্ড। এদেশে আসার পর আমি সবচাইতে অবাক হয়েছি লন্ডনের রাস্তার প্রশস্ততা দেখে। ফার্মগেট-শাহবাগ রাস্তার চাইতেও সরু রাস্তা, একটু পরপর বাঁক, রোড সিগনাল। প্রথমে এতো অবাক হয়েছিলাম যে রীতিমতো মন খারাপ হলো্ । এরই নাম লন্ডন! তবে পরে দেখেছি এতো সরু রাস্তাতেও নেই কোন ট্রাফিক জ্যাম। অনবদ্য সুশৃংখল। আরেকটা বিষয় না বললেই নয়। রাস্তায় জেব্রা ক্রসিং য়ে চোখ বুঁজে রাস্তা পার হওয়া যায়, গাড়ী আপনা থেমে যাবে। এই যে অতিকায় দোতলা বাস, জেব্রা ক্রসিংয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়ালেই বাস থেমে যাচ্ছে, আমার তো লজ্জাই লাগে। আমার জন্য এতোগুলো মানুষকে কষ্ট দেয়া্। কোথাও জেব্রা ক্রসিংয়ের বদলে রয়েছে সিগনাল সিস্টেম। রাস্তার পাশে এসে সুইচ টিপে পথচারী অপেক্ষা করবে, বাতি সবুঝ হলেই রাস্তা পার হবে।
হাইড পার্কে গেলাম একদিন। পার্কটির খ্যাতি অনেক। ১৫৩৬ সালে রাজা অষ্টম হেনরী প্রথম এ পার্ক স্থাপন করেন, আদতে যা ছিল রাজপরিবারের বাগান। পরবর্তীতে পার্কের অনেক পরিবর্তন, পরিবর্ধন হয়েছে। পার্কে প্রচুর সাইকেল রাখা। নির্দিষ্ট পযসার বিনিময়ে এই সাইকেলে পার্কে ঘুরে বেড়ানো যায়। পার্কের মধ্যিখানে সুন্দর লেক। চমৎকার একটি স্থান।লন্ডনের আরেকটি বিষয় খুব উল্লেখযোগ্য। শহরের এখানে ওখানে রাস্তায়, মোড়ে রয়েছে অজস্র ভাস্কর্য। এদেশের ইতিহাসে স্মরনীয়, বরণীয় যারাই আছেন তাদের সমৃতি ধরে রাখতেই এই উদ্যোগ। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম হোক আর পর্যটক হোক, বৃটেনের ঐশ্বর্যকে সারা পৃথিবীকে দেখানের উদ্যোগটা অবশ্যই প্রশংসাধন্য।লন্ডনের বাংলাটাউনের কথা না বললেই নয়। শহরের বুকে এক চিলতে বাংলাদেশ। শহীদ আলতাব আলী পার্কের শহীদ মিনার দেশের কখা খুব মনে করিয়ে দেয়!
ইংল্যান্ডের কান্ট্রিসাইড
লন্ডন প্রসঙ্গে পরে নাহয় আবার আসা যাবে, এ যাত্রায় আমার লন্ডন সফরটা অপূর্ণাঙ্গ। ক্রিসমাসের ছুটিতে আরো বিশদ ভ্রমণের ইচ্ছা আছে। এবার তবে যাই নিউক্যাসলে। ভিকটোরিয়া বাস টার্মিনাল থেকে টিউবে কিংস ক্রশ ন্টেশন।এটি একাধারে রেলওয়ে এবং মেট্রো স্টেশন।এখান থেকে নর্থ ইস্ট ট্রেনে নিউক্যাসল। শহরটা ইংল্যান্ডের একবারে উত্তর পূর্বে, স্কটল্যান্ডের কাছাকাছি। হাই স্পিড ট্রেনে ৩.৩০ ঘন্টা সময় লাগে, বাসে লাগে প্রায় ৮ ঘন্টা। স্টেশনটা বেশ বড়ো , আর এর প্লাটফর্ম অনেকগুলো। ট্রেনটা এককথায় অপূর্ব । এত জোরে চলে , কিন্তু গ্লাসের পানি পর্যন্ত নড়ে না। ইংল্যান্ডের কান্ট্রি সাইডের নৈসর্গিক দৃশ্যাবলী অপূর্ব। সত্যিকার ভাবে, এই প্রথম আমি এদেশের রূপ দেখে মুগ্ধ হচ্ছি। বিশাল প্রান্তরের মাঝে একটা দুটো সুনির্মিত বাড়ি, কাঠের স্থাপনা, এক টুকরো উঠোন। পাশে গরুর খামার, মেষের খামার, দূরে চরে বেড়াচ্ছে একপাল ঘোড়া, পাশে ঘোড়ায় আরোহী কৃষক, জনমনিস্যি খুব কম, আর এর মাঝে রেললাইন। ক্ষেতের মাঝে রোল করা খড়ের গাদা, মাঝে মাঝে ছোট ছোট জলাশয়, মনে হয় শিল্পীর আকা একখন্ড ছবি।মুগ্ধ না হয়ে পরা যায় না। মনে হচ্ছিল , যাত্রাপথটা আরেকটু দীর্ঘ হলে ভালো হতো। ...... অবশেষে সাড়ে তিনঘন্টা পর নিউক্যাসেল। অবশেষে পৌঁছলাম। এখানেই থাকব আগামী একটি বছর।
০৯ ই নভেম্বর, ২০১২ রাত ৩:৫৮
সুহৃদ উপল বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।
২| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১২ রাত ৩:৩৫
ত্রেয়া বলেছেন: বাহ! বেশ একটা বিলেতি ভ্রমণ কাহিনী পড়লাম তো
০৯ ই নভেম্বর, ২০১২ রাত ৩:৫৮
সুহৃদ উপল বলেছেন: অনুপ্রেরণা পেলাম।.
৩| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১২ রাত ৩:৪৯
নিমচাঁদ বলেছেন: কোথায় ভর্তি হয়েছেন ?
ইউনিভার্সিটি অফ নিউ ক্যাসেলে আমার কিছু স্মৃতি রয়েছে ।
বিষয় ছিলো Aviation Management (নিউক্যাসেল কলেজে)
অবশ্য সেটা ২০০৬ সালের কথা । অক্টোবর ৩০ তারিখ থেকে ৬ নভেঃ তারিখ পর্যন্ত লন্ডনে ছিলাম , দুবাই হয়ে আজকে ঢাকা এসেছি ।পরে আপনার এই নিউক্যাসেল নিয়ে লিখবো ।
০৯ ই নভেম্বর, ২০১২ ভোর ৪:০৩
সুহৃদ উপল বলেছেন: পরের পর্বটা নিউক্যাসেল নিয়ে। অভিজ্ঞতা আরেকটু জমুক..... আপনারটা শুনতে আগ্রহী.....
৪| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১২ ভোর ৪:১৮
সংবাদ বলেছেন: আমি যেন ঘুরে এলুম এখনি
৫| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১২ সকাল ৯:২৪
নিলু বলেছেন: ভালো
৬| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১২ সকাল ১০:৫২
কেএসরথি বলেছেন: বাহ!
৭| ২৪ শে নভেম্বর, ২০১২ দুপুর ১২:০২
রবিউল ৮১ বলেছেন: সুন্দর বর্ণনা।ভাল লাগলো।
৮| ২৪ শে নভেম্বর, ২০১২ বিকাল ৫:১৯
খন্দ.লিমন বলেছেন: সুন্দর ...
৯| ২৪ শে নভেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৩০
ছায়া-পথিক বলেছেন: “বা্হরাইনে এক ভাইকে দেখলাম লুঙ্গি পড়ে চলছে, বাথরুম খুঁজে বেড়াচ্ছে। বেচারী না জানে আরবী, না জানে ইংরেজী। আমি সামনে পড়লাম বলে রক্ষা।”
আমি যে দু’একবার বাইরে গিয়েছি, প্রায় প্রতিবারই এধরণের অভিজ্ঞতার মুখোমুখী হয়েছি।
ভালো একটি লেখা দিয়েছেন +।
এবার পড়ছি আপনার ২য়টি।
©somewhere in net ltd.
১|
০৯ ই নভেম্বর, ২০১২ রাত ৩:৩৫
মিটুলঅনুসন্ধানি বলেছেন: চমৎকার বর্ণনা। মনে হলো নিজেই ঘুরলাম লন্ডনের পথে আর ইংল্যান্ডের নিসর্গে।
অনেক অনেক শুভকামনা রইলো...ইংল্যান্ডের দিনগুলো শুভ হোক।