![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দুপুরের কড়া মিষ্টি রোদ। চারদিকে পাহাড় বেষ্টিত মাঝখানে এক টুকরো জমি ও ছোট একটা কুয়ো। একদিকে পাহাড়ের কিনারায় একটা গাছের ছায়ায় অমি দাঁড়িয়ে একটা সিগারেট ধরিয়ে টানছি আর দুদিক দেখছি। মাথায় যে রোদকে আসার সময় কড়া মনে হয়েছিল তাকে এখন মিষ্টি লাগছে। কুয়োর পানি শীতল।
আমি যে ঘরের উঠোনে দাঁড়িয়ে আছি বোধহয় তাদেরই একটি কিশোরি কুয়োর ঘাটে বসে থালা বাসন ধুচ্ছে। মেয়েটির ছায়া পড়েছে পানিতে। সে আমাকে দেখতে পায়নি । কুয়োর পাড়ে একটা সাদা বক। ফটাফট কয়েকটা ছবি তুলে নিলাম। আজকাল কত সুবিধা ক্যামেরা বয়ে বেড়ানোর ঝাক্কি নেই। দামী একটা মোবাইল হলেই হয়। এসময় আমার বন্ধুটি মাটির তৈরী দুরুমের ছোট ঘর থেকে বের হয়ে এল। বললাম-দেখেছিস বকটা কেমন নির্বিঘ্নে বসে আছে মেয়েটির কাছে। এ হচ্ছে প্রাণী জগতের সহবাস। সে বকটি দেখেই গাছের সাথে হেলান দিয়ে রাখা এয়ার গানটা তুলে নিল।
আহা! করছিস কি ?
আরে রাখতো তোর কাব্য!
বকটা এত বোকা রুস্তম একবারে কাছে গিয়েই গুলি করল। বুঝতেই পারল না। রুস্তমকে আমার মনে হল বর্বর অসভ্য সমাজের লোক। বাড়ির মলিক জালাল মিয়া উঠোনে দুটি মোড়া রেখে আবার ভিতরে চলে গেল। অমি একটা মোড়া দখল করে বসলাম। রুস্তম শিকার করা বকটা নিয়ে ফিরে আসল। মুখে বিশ্বজয়ের হাসি। জালাল মিয়া একটি মোড়া দুকাপ চা ও পিরিচে করে কিছু মুড়ি নিয়ে আসল। পাহাড়ে হঠাৎ চা পেয়ে আমার মনটা যেন নেচে উঠল। বেশ আয়েস করেই চায়ে চুমুক দিলাম। রুস্তমকে উদ্দেশ্য করে বললাম- তোর এই মরা বকটা এখন বয়ে বেড়াবে কে ?
জালাল মিয়া রান্না করবে। দেখা যাক আর দুটো পাওয়া যায় কিনা।
একি, এখানেই দুপুরের ভাত খাবি নাকি ।
এবার জালালা মিয়া কথা বলে উঠল, গরীব মানুষ। দুইটা ডালভাত খাওয়াইতে পারলে মনটা শান্তি পায়। পরম সৌভাগ্য আমার।
রুস্তম জিজ্ঞেস করে, ঘরে ডিম আছে ?
আছে ।
তাইলে আর বক মারার কাম নাই । ডিম ভাইজা গরম ধোয়া উঠা ভাতের উপর কয়েক ফোটা নুন ছিটিয়ে দিলেই হবে।
আমার কাছে একটু অস্বস্তি লাগছে ঠিকই। কিন্তু এটাই এখানে স্বাভাবিক। রুস্তমরা এ অঞ্চলের প্রভাবশালী লোক। রুস্তমরা এখানে আতিথেয়তা নেয় না। হুকুম তামিল করায়।
গ্রামীণ সমাজের কালচার কিছু আমি জানি। কারণ এই গ্রামেই আমি বেড়ে উঠেছি, বড় হয়েছি। তারপর দীর্ঘ শহরবাসের ফলে দেশের একজন নাগরিক হয়ে উঠেছি। দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হয়েছি। কিন্তু সভ্য সমাজের নিয়মনীতি এখানে খাটে না। এদের কাছে এখনও সভ্য সমাজের ডাক এসে পৌঁছায়নি।
আমি অনেকটা আনমনা হয়ে গিয়েছিলাম তাই জালাল মিয়া আর রুস্তমের কথাবার্তা কোত্থেকে শুরু হয়েছে জানি না।
রুস্তম ভাই, আপনে পোলারে ডাইকা কইয়া দিলে হে আর দ্বিমত করনের সাহস পাইবে না।
রুস্তম তার কথার উত্তর না দিয়ে বলল, কয়েকদিন ধরে রসুরে দেখতেছি তোমার লগে লগে থাকে। মানলাম তুমি তার ওখানে কাজ কর। কিন্তু রসু তোমার ঘরে আসে ক্যান বুজতেছি না। খুইলা কও তো।
জালাল মিয়া চুপ হয়ে যায়। দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে কিছু একটা লুকাতে চেষ্টা করছে। বলে- একসাথে কাম করি তো মাঝে মধ্যে ঘরে আসে আর কি।
রুস্তম বলে, বসিরের মুদির দোকানের খাতায় তোমার যা দেনা সেটা নাকি রসু দেয় । ঠিক নাকি ? রসুর হঠাৎ তোমার প্রতি এত দয়া দেখানোটা মানুষের চক্ষে লাগেতো।
জালাল মিয়া রুস্তমের পায়ের উপর পড়ে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে।
আগামাথা কিছুই বুঝতে পারছি না। চোখের সামনে একটা নাটক মঞ্চস্থ হচ্ছে। ব্যাপার টা বুঝার জন্যে মন আকু পাকু করছে।
জালাল মিয়া বলে, রসু বিয়ে করতে চায়।
কারে ?
কমলিরে।
রসুর বৌবাচ্চা আছে না ? তারা মানবে নাকি ব্যাপারটা ? আইন আদালত আছে না ?
ঐগুলান আপনি বুঝবেন।
যে কিশোরীটি কুয়োর জলে থালাবাটি ধুচ্ছিল তাকে দেখলাম উঠোনের এক কোণে এসে দাঁড়িয়েছে। কেমন যেন উদাস মুখে তাকিয়ে আছে।
হঠাৎ পা সরিয়ে রুস্তম উঠে দাঁড়ায়। আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে, চল রওয়ানা দিই।
জিজ্ঞেস করলাম, কোথায় ?
কোথায় আবার, বাড়ির পথ ধরব। বাড়িতে পৌছতে খুব বেশি হলে ঘণ্টা দেড়েক লাগবে। চল আর থাকতে ইচ্ছে করছে না। জালাল মিয়ার কোন কথায় কর্ণপাত না করে সে হাটা শুরু করল। আমি পিছু নিলাম। কিছুদূর এসে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল, তুই খুব সুখে আছিস, নারে ?
বললাম, একথা বলছিস কেন ?
তোকে কত কদর্য ব্যাপার দেখতে হয় না। আর আমার কারবারই ওদের নিয়ে। মেট্রিকের পর তুই আর আমি শহরে গেলাম পড়তে। ইন্টারমিডিয়েট পাশ করার পর বাবা আমাকে গ্রামে এনে তার বিষয় সম্পত্তি দেখাশুনার ভার দিয়ে বসলেন। হয়ে গেলাম গেঁয়ো । কিন্তু মেয়েটার এমন ফাটা কপাল সহ্য করতে পারলাম না।
কি হয়েছে খুলে বলতো ।
কমলিকে দেখেছিস না
কোনটা ? ঐ কিশোরী মেয়েটা ?
হ্যাঁ। জালাল মিয়া, কমলি আর তার মা থাকে এখানে। কমলীরে তো দেখছস্। এই বয়সী মেয়ে ঘরে রাখা যায় না। জালাল মিয়া বিয়ে দেয়ার অনেক চেষ্টা করল কিন্তু টাকার অভাবে মেয়েটার বিয়ে দিতে পারল না। মাস আট দশেক আগে কমলির এক খালাত ভাই বেড়াতে আসে ওদের বাড়িতে। কমলিকে মনে হয় ওর মনে ধরে যায়। তারপর আরকি বিয়ে করবে বলে আকাম-কুকাম যা করার করছে আরকি। শেষে পেটে যখন বাচ্চা এসে গেল তারপর উধাও।
সেকি, বিয়ে ছাড়া মেয়েকে
এভাবে তুলে দিল কেন ?
সহজ হিসাব। টাকা দেয়ার সঙ্গতি তো নেই। কোন রকমে বাচ্চা এসে পড়লে সমাজের ভয় দেখিয়ে মেয়েটিকে পার করার চেষ্টা আরকি ।
সমাজ এখন কোথায় ?
ওরা কি সমাজকে জিজ্ঞেস করে মেয়েকে তুলে দিয়েছিল ?
দেশে আইন আছে না ?
মূর্খ মানুষ ওরা। আইনের কি বুঝে ?
সমাজ তো আইন বুঝে, তারা কিছু করতে পারে না ?
তুচ্ছ বিষয়ে কথা বলার কার সময় আছে বলতো।
মেয়েটির জন্যে সত্যিই আমি কষ্ট অনুভব করলাম। হঠাৎ রসু নামটা মনে পড়ল। জিজ্ঞেস করলাম, রসুর ব্যাপারটি কি ?সে টুকটাক ব্যাবসা করে। সেও বিয়ের কথা বলে একটু ফুর্তিটুর্তি করছে আরকি। কয়েক দিন পর সেও উধাও হয়ে যাবে। পুকুর পাড়ে বকটি যেখানে গুলি খেয়ে পড়ে গেল আমি সেখানে গিয়ে বকটি নেওয়ার সময় হঠাৎ কমলির দিকে চোখ গেল। সে বকটির দিকে এমন ভাবে তাকিয়েছিল যেন তার আর ঐ বকটির মধ্যে কোন তফাৎ নেই। আমার এমন খারাপ লেগেছিল। পরে যখন ওকে আবার উঠোনে দেখলাম তখন ঐ করুণ দৃষ্টি সহ্য করতে না পেরে চলে এলাম
২| ২২ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১:০৬
৪নিখিল বলেছেন: অারো যতদিন মুর্খ থাকবে সমাজপতিদের তত লাভ ।
©somewhere in net ltd.
১|
২১ শে অক্টোবর, ২০১৫ ভোর ৪:৪২
Km Raju বলেছেন: মূর্খ মানুষ ওরা। আইনের কি বুঝে ? ঠিকই বলেছেন