নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যেটুকু পাও ছোট্ট সময়/কাজ করে যাও রবের তরে/ক্ষনিক সময় বিস্রাম নিও/ঘুমিও না তুমি অলসতা ভরে//
ঘটনাটা অাজ থেকে পঁয়ত্রিশ ছত্রিশ বছর অাগের। অাধুনিক যুগে সিনেমা টিভি অার রঙ্গিন স্বপ্ন দেখে হয়তো তখনকার চিত্র কল্পোনাও করা কষ্ট কর।তবে অামি চেষ্টা করছি সেদিনের চিত্রটা অাঁকার।
ঘটনাটা অামার অাব্বাকে নিয়ে। তখন তিনি তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র।রাতের সময় স্যারে পড়াইতেন। প্রাইভেট পড়ার জন্য দুই কিলোমিটার পথ পাড়ি দেওয়া লাগতো। এখন হয়তো মনে হতে পারে দুই কিলো, এটা অাবার পথ হলো।পথটা ছিলো এমনঃ বর্ষার মৌসূমে অধিকংশ জায়গাই কাদা হইতো। কিছু কিছু জায়গাই কাদা এতো পরিমান ছিলোযে, হাটুর উপরে কাদা উঠে পড়তো। কারণ তখন রাস্তায়, মহিষ, গরু ও ঘোড়ার গাড়ি চলতো। যার ফলে যা হবার তাই হতো। হাটু হতে কোমর পরিমান কাদা হতো। বসত বাড়ী ছিলো রাস্তা থেকে অনেকটা দুরে। অধিকাংশ জায়গাই বাগান। তখন অনেক বাগানে বাঘও থাকতো। বাগানে বড় বড় গাছ অারও ছিলো গভীর জঙ্গল। রাস্তার মোড়ে বা পথের মাঝে অধিকংশ যায়গায় থাকতো বট গাছ বড় বড় বট গাছ। এসব নিয়ে বিভিন্ন ভুতের গল্পের প্রচলন ছিলো লোক মুখে। কিছু কিছু জায়গা ও বাগান সম্পর্কেও বিভিন্ন কথার প্রচলন ছিলো যে, রাত্রে এখানে বড় বড় চাকা ঘুরে বেড়াই, গরুতে ধান খেয়ে বেড়ায়, ঘোড়া ছুটে বেড়াই। সকালে গেলে তার কোন অালামত পাওয়া যায়না। যাহোক, অাসল কথায় অাসা যাকঃ
বর্ষা কাল। অাজ সন্ধা থেকেই বেশ বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ভারি বৃষ্টি। থামার কোন নাম গন্ধ নেই।অবশেষে, রাত ১০টার দিকে বৃষ্টি একটু বিশ্রাম নিলো। পড়া শেষ করে অাব্বা বাড়ির পথে রওনা হলেন। রাস্তা ঘাটে। তেমন কোন মানুষ জন নেই। গ্রাম অঞ্চলে সাধারণত মানুষ সন্ধার পর বাজারে থাকে না। তাই পথেও কাওকে পাওয়া যায়না। অাজ বৃষ্টিতে অাটকে যাওয়ার কারণে অল্পো কজন বাজারে অাছে। তেমনই একজন ইজ্জত অালী তখনই বয়স ৬৫ বছর, সম্পর্কে সে অাব্বার পাড়াতো দুলাভাই। স্যারের বাসা থেকে অর্ধেক পথ শেষ করে সদর হাসপাতালের কাছে অাসলো। যেখানে কয়েকটি দোকান নিয়ে একটি বাজার গড়ে উঠেছে। ইজ্জত অালী অাব্বাকে অাদর করে বুড়ো ডাকতেন। ইজ্জত অালী বলছেন বুড়ো বাড়ি যাবেতো? হুম, যাবো তুমি যাবেনা? হ, চলো। অাব্বা চিন্তা করছেন যাক একজন সঙ্গী পাওয়া গেলো। সারা পথ গল্পো করতে করতে অাসছে। ইজ্জত অালী পিছু পিছু হাটছে অার গল্পে সাড়া দিচ্ছে।
ঈদগাহ মাঠের এ খানে বড় শড়া গাছ। প্রচলিত অাছে শড়াগাছে ভুত থাকে। যাহোক বিপদে পড়লে এসব কথা অটোমেটিক মনে চলে অাসে। সড়া গাছতলাই ভীষণ কাদা। কোমর পর্যন্ত পুতে যায় কাদায়। কাদা পার হয়ে যখন দুলাভাই বলে ডাকা হলো। কোন সাড়া নেই। পিছনে ফিরে দেখা যায় কেও নেই। গভীর রাত। বৃষ্টির কারণে রাতের নিস্তব্ধতাই নতুন মাত্রা পেয়েছে। গা ছম ছম করছে। শুনেছি শড়া গাছে ভুত থাকে। তবেকি...
ভাবতে গেলেই ভয়ে পুরা শরির ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। সামনে এগোনো ছাড়া কিছুই করার নেই। কারণ বাড়ি পৌছাতে অার হাফ কিলোমিটার বাকী। যা হোক মনে সাহস নিয়ে অাবার পথ চলা শুরু হলো। একটু পথ এসেই দেখে পথে বাঁশ পড়ে অাছে। দেখে মনে হচ্ছে পরিকল্পিত ভাবে পথ রোধ করা হয়েছে। তাহলে এতোক্ষণ যে অামার সাথে ছিলো সে কি অাসলেই ভুত। কিন্তু তা কিভাবে সম্ভব। অামিতো তার সাথে অনেক্ষণ গল্পো করলাম। যাহোক এর শেষ না দেখে ছাড়ছিনা। লোকে বলে জ্বীনেরা অনেক সময় শয়তানি করে পথে বাঁশ ফেলে রাখে। কোন পথচারি বাঁশের উপর এক পা দিলেই বাঁশ দ্রুত উপরে উঠে যায়।অার পথচারি বাঁশে অাটকে ঝুলতে থাকে। তখন উনি চিন্তা রলেন বাঁশের অাগা ধরে পার হতে হবে। তাই বাঁশের উপর দিয়ে না যেয়ে মাঠের কাদা পানিতে নেমে পড়লেন।অার হাত দিয়ে বাশটি ধরে রাখলেন। ততারপার পার হয়ে উঠলে রাস্তায়। শুরু করলেন হাটা। কয়েক কদম সামনে ফেলতেই চোখে পড়লো নতুন সমস্যা। রাস্তার এক পাশে দাড়িয়ে সাদা পোশাক পরে একজন ডাকছে ক্রমাগত অায়... অায়... অায়... অার হাত নাড়ছে। এতো ভীষণ সমস্য। কি করা যায়। হঠ্যাৎ রাগ হয়েগেলো। লুঙ্গী কোছা মারলো,(লুঙ্গী পরার বিশেষ পদ্ধতিকে কোচা মারা বলে) যা হয় হবে ভুতের সাথে মল্লোযুদ্ধে লেগে যাবো। বিভিন্নো ভাবে অামার পথে বাঁধা দিচ্ছে। (একটু উনার সম্পর্কে বললে বিষয়টি পরিস্কার হবেঃ ৪-৫ জন সমবয়সী মল্লোযুদ্ধে এক সাথে অাসলেও হেরে যেতো।) রাগে রাগে কাছে গিয়ে দেখে তুলসী গাছ। তখন যা রাগ হলো, টেনে উপড়ে ফেলে দিয়ে অাসলেন। ভয়লাগার কারণ হলো এই মাঠে ছোট্ট একটি বিল অাছে। ঐ বিলে গুদাং (ভুত) থাকে। যা বিভিন্ন রুপ ধরে মানুষকে ভয়দেখিয়ে থাকে।
যাহোক অাবার পথ চলা শুরু। সামনে এক প্রকান্ড বট গাছ। চিন্তা হচ্ছে এ খানে অাবার কিছু না থাকে। যা হোক তেমন কিছুই অার চোখে পড়লোনা। তবে একটু যেতে না যেতেই রাস্তায় বড় বড় কাদার গর্ত। এ কষ্ট অাছেই। অবশেষে বাড়ী অাসলো।
পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই রাত্রে যে ইজ্জত বে ইজ্জত করেছে তাকে খুজতে বের হলো। অাসলে বিষয়টি কি? অাসলেই ভুত নাকি মানুষ ছিলো রাত্রে ওটা!
: দুলাভাই রাত্রেকি অামার সাথে অাসছিলে?
: হ, বুড়ো
: তাহলে পথের মাঝে কোথাই হারিয়ে গেছিলে?
: কাদা দেখে ঐ পাড়াই থেকে গেছিলাম।
: অামারে বলে যাবা না।
: তুমি যদি ভয় পাও তাই ভাবলাম অার বলছি না।
: এটা কোন কথা হলো। তুমি একটা বেয়াক্কেলের মতো কাজ করলেননা। অামি তো ভাবছিলাম জ্বীন ভুক কি না।
: দেখ দিনি বুড়ো।তুমি ভয় পাবে ভেবে কিছু না কয়েই ও দিকি থেকে গিছিলাম রাতে।
: তোমার অাক্কেল হলোনা। শালার বুড়ো।
: হা হা হা (ইজ্জত নির্লজ্জের মতো হেসে দিলো)
এবার সেই বাঁশের কাছে যেয়ে দেখে বাঁশটি এখনো বাকা হয়ে অাছে। অাসলে ভারি বর্ষণের কারণে বাঁশটি কাত হয়ে শুয়ে পড়ে ছিলো। তখন মনে হচ্ছে তাহলে এটা কোন জ্বীন ছিলোনা।
তুলসী গাছ এমনেতেই ওর পাতা কিছুটা সাদাটে সবুজ। তার উপর রাত্রে বৃষ্টির পানি বেধে ছিলো। অার বৃষ্টি শেষ।অাকাশ পরিস্কার। চাঁদের অালো পড়ছে গাছে ,পানি জমে থাকাই চাঁদনি রাতের অালোই সাদা মানুষ মনে হচ্ছিলো। জোরে দক্ষিনা বাতাস বচ্ছিলো। যার ফলে গাছ নড়ছে এতে মনে হচ্ছিলো হাত নেড়ে ডাকছে। বাতাস জোরে হওয়ার কারণে গাছে বাধা প্রাপ্ত হয়ে যে শব্দ তৈরী করছে তাতে মনে হচ্ছিলো। অায় অায় বলে ডাকছে।
মাঝে মাঝে চিন্তা করি এমন ঘটনা অামার সাথে ঘোটলে সুস্থ ভাবে ফিরে অাসা কঠিন ছিলো। যা হোক যে কোন মূর্হুতে সাহসিকতা একটা বিরাট ভুমিকা রাখে যে কোন ঘটনার ক্ষেত্রে।।
২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ২:১৩
সামিউল ইসলাম বাবু বলেছেন: পাঠ ও মন্তব্যে ধন্যবাদ
কবি নয়ন ভাই।
২| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৩:৫৪
জীবন সাগর বলেছেন: ভূতরা এমনই। আমরা শুধু শুধু ভয় পাই
গল্পে +++++
২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৪:১৭
সামিউল ইসলাম বাবু বলেছেন:
পাঠ করেছেন জেনে ভালোলাগলো।
শুভেচ্ছা নিবেন।
শুভকামনা জানবেন।
৩| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ভোর ৪:২৮
ওমেরা বলেছেন: ও মা গো ভয় পেয়েছি ----------
২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৯:৪৭
সামিউল ইসলাম বাবু বলেছেন: ভয় পাওয়ার দরকার নাই।
যেনো কেও ভয় না পায় সে জন্যই তো গল্পো।
৪| ১৭ ই মার্চ, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:১৫
সুমন কর বলেছেন: বাঘও থাকতো -- একটু বেশি হয়ে গেছে। যাক হোক, গল্প এবং ব্যাখ্যা ভালো লাগল।
১৭ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১০:৩৩
সামিউল ইসলাম বাবু বলেছেন:
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
শুভেচ্ছা নিরন্তন।
ভালো থাকবেন।
©somewhere in net ltd.
১| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ২:০৫
নাঈম জাহাঙ্গীর নয়ন বলেছেন: ভালো লাগা রইলো আপনার আব্বকে নিয়ে স্মৃতিচারণ।
যারা গ্রামে থাকে তারাই বুঝে, আগেকার দিনে গ্রামের রাস্তাঘাট কতটা খারাপ ছিল।